মশার বংশবৃদ্ধির হার কমিয়ে এনে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের এক নতুন অস্ত্র হাতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ জিন কাঠামো বদলে দিয়ে তাঁরা এমন এক ধরনের মশা উদ্ভাবন করেছেন, যার বংশধরদের ৯৫ শতাংশই হবে পুরুষ৷
বিজ্ঞাপন
গবেষকরা বলছেন, সাধারণ মশার প্রজননের ক্ষেত্রে স্ত্রী ও পুরুষের সংখ্যা হয় প্রায় সমান সমান৷ গবেষণাগারে জন্ম নেয়া জেনেটিক্যালি মডিফায়েড (জিএম) মশা ৯৫ শতাংশ পুরুষ মশার জন্ম দিলে স্ত্রী মশার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে৷ তাতে এক পর্যায়ে মশার বংশবৃদ্ধি কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে৷
এই গবেষক দলের প্রধান লন্ডন ইমপেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক আন্দ্রেয়া ক্রিসান্তি বলেন, ‘‘নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে ম্যালেরিয়া ব্যাপক প্রাণহানির কারণ হতে পারে৷ এ কারণে আমাদের প্রায়ই নতুন নতুন কৌশল খুঁজতে হয়৷ এই প্রথম আমরা পরীক্ষাগারে জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে মশার বংশবৃদ্ধির হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি৷ ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে এটি হতে পারে একটি কার্যকর পদ্ধতি৷''
ম্যালেরিয়ার জীবাণু মানুষের দেহে ছড়ায় অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর এ রোগে ছয় লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, যাদের অধিকাংশই আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলের শিশু৷
এক কামড়ে হতে পারে মৃত্যু
ভারত-বাংলাদেশে মশা, মশার কামড় অথবা ম্যালেরিয়া নতুন কিছু নয়৷ আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আফ্রিকায় প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে মারা যায় এক জন শিশু৷ অথচ এ রোগ প্রতিরোধে আজও কোনো টিকা বের হয়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Cabezas
মশার আক্রমণ
আফ্রিকার সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণীর নাম এনোফিলিস মশা৷ লম্বায় ছয় মিলিমিটার এই মশা ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী৷ প্রতি বছর সারা বিশ্বের প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ এ রোগে মারা যায়৷
ছবি: imago/blickwinkel
বৃত্তাকারে ঘোরা
হলুদগুলো জীবাণু৷ আর নীলগুলো জীবাণুর চলার পথ৷ গবেষকরা কতগুলো জীবাণুকে তরলপূর্ণ একটি গ্লাসে ছেড়ে দিয়েছেন৷ জীবাণুগুলো বাঁকানো বলে তারা একটি বৃত্তের মধ্যে ঘুরছে৷ মাত্র ৩০ সেকেন্ডে তারা বৃত্ত পূরণ করতে পারে৷
ছবি: Colourbox
কামড় খাওয়ার ১২ দিন পর মৃত্যু
মানুষের শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ঢোকার পর সেটা কিছুদিন যকৃতে বাসা বাঁধে৷ কিন্তু যার শরীরে ঢোকে সে টের পায় না৷ যকৃতে গিয়ে জীবাণুগুলো রক্তকোষকে আক্রমণ করে শরীরকে অসুস্থ করে ফেলে৷
ছবি: AP
রক্তধারায় জীবাণু
শরীরে ঢোকার এক থেকে তিনদিনের মধ্যে জীবাণুগুলো রক্তকোষ ভেঙে ফেলে৷ ফলে জ্বর হয়৷ অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে রোগ নির্ণয় করা সহজ হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Ordonez
জীবন রক্ষাকারী
ম্যালেরিয়া থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায় মশার কামড় না খাওয়া৷ ক্রিম ও স্প্রে ব্যবহার এবং মশারি খাটিয়ে ঘুমানো এক্ষেত্রে ভালো ফল দিতে পারে৷
ছবি: DW/A.Bacha
দ্বিগুণ সুরক্ষা
গবেষকরা বিশেষ ধরণের মশারি তৈরি করেছেন যার সুতায় কীটনাশক লাগানো আছে৷ ফলে মশা মশারির উপর বসলেই মারা যাবে৷
ছবি: Kerry Skyring
কঠোর পদক্ষেপ
মশা দমনে মুম্বইয়ে কীটনাশক ছড়ানো হচ্ছে৷ কিন্তু মশা মারতে এটা কার্যকর হলেও স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ যেখানে কীটনাশক ছিটানো হয় সেখানকার খাদ্য চক্রের উপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে৷
ছবি: Reuters
দ্রুত রোগ নির্ণয়
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ম্যালেরিয়া শনাক্ত করা যায়৷ আফ্রিকার দেশ মালিতে একটি ছেলের শরীরে ম্যালেরিয়া জীবাণু ঢুকেছে কিনা সেটা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সময়ের সঙ্গে পাল্লা
ওষুধের মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ধ্বংস করা যায়৷ কিন্তু সময় যত বাড়ছে জীবাণুগুলো ততই ওষুধের বিরুদ্ধে জয়ী হচ্ছে৷ অর্থাৎ ওষুধের কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে৷ যেমন ‘ক্লোরোকুইন’ নামের একটি ওষুধ বিশ্বের কয়েকটি অঞ্চলের মানুষের দেহে আর কার্যকর হচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Mukherjee
ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিন?
ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এখনো কোনো ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি৷ তবে গবেষকরা কাজ করে যাচ্ছেন৷ তারা খুব শীঘ্রই এতে সফলতা আশা করছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Cabezas
10 ছবি1 | 10
দেখা গেছে, এক প্রজাতির মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ তৈরি করা হলে তা অন্য প্রজাতির ওপর কাজ করে না৷ আবার কীটনাশক ব্যবহারের কারণে অনেক এলাকায় মশার জিনবিন্যাস দ্রুত বদলে যায়৷ ফলে ওষুধেও আর মশা মরে না৷ এ সব কারণে মশা মারার বদলে এর বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের ওপরই জোর দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা৷
লন্ডন ইমপেরিয়াল কলেজের গবেষকরা গত ছয় বছর ধরে কাজ করছেন অ্যানোফিলিস গাম্বিয়া প্রজাতির মশা নিয়ে৷ এ প্রজাতির মশাই আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে ম্যালেরিয়া ছড়ানোর জন্য দায়ী৷
তাঁরা পুরুষ মশার ভ্রুণে বিশেষভাবে তৈরি ডিএনএ বসিয়ে দিয়েছেন যাতে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় ওই মশার শুক্রাণুতে এক্স ক্রোমোজমের সংখ্যা কমে আসে৷ এতে করে ওই শুক্রাণু থেকে যেসব মশা হবে, তার বেশিরভাগই হবে পুরুষ৷
এ পদ্ধতির কার্যকারিতা দেখতে পাঁচটি বাক্সে ৫০টি করে পুরুষ জিএম মশা এবং ৫০টি স্বাভাবিক স্ত্রী মশা রাখা হয়৷ দেখা যায়, ছয় প্রজন্ম পর পাঁচটি খাঁচার মধ্যে চারটিতে মশার বংশ ধ্বংস হয়ে গেছে স্ত্রী মশার সংখ্যা কমে আসার কারণে৷
এর আগে ডেঙ্গি জ্বর প্রতিরোধেও জেনেটিক্যালি মডিফায়েড মশা ব্যবহার করা হয়েছিল, যাতে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই মশার মৃত্যু হয়৷ ব্রাজিল ও মালয়েশিয়া ইতোমধ্যে এ ধরনের জিএম মশা উন্মুক্ত করেছে৷ পানামাও আগামী জানুয়ারিতে এ পদ্ধতি ব্যবহার করবে বলে জানিয়েছে৷