1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ম্রিয়মান তাজমহলের ঐতিহাসিক সৌন্দর্য

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
৪ আগস্ট ২০১৮

সরকার যদি তাজমহলের সৌন্দর্য ও নির্মাণশৈলী রক্ষা করতে অপারগ হয়, তাহলে এই স্মৃতিসৌধ ভেঙে ফেলাই উচিত – জানিয়েছে ভারতের শীর্ষ আদালত৷ সুপ্রিম কোর্টের কথায়, উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবই তাজমহলের দুরবস্থার জন্য দায়ী৷

ছবি: DW/S. Bandopadhyay

সপ্তদশ শতকে আগ্রায় যমুনার তীরে মোঘল সম্রাট শাহজাহানের নির্মিত বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম এই তাজমহল৷ কিন্তু আজ তাজমহলের সৌন্দর্য ম্লান৷ কারণ শুধুমাত্র উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব৷ কিন্তু সেই দায়িত্ব কার? সেই নিয়ে চলেছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে চাপানউতোর৷ একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে৷

সুপ্রিম কোর্ট এই ধরনের প্রবণতার জন্য তিরস্কার করেছে উত্তর প্রদেশ সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে৷ জারি করেছে একগুচ্ছ নির্দেশ৷ তাতে বলা হয়েছে, তাজমহলের আসল সৌন্দর্য পুনরুদ্ধার করতে প্রথমেই দরকার তাজমহলের চারপাশটা দূষণমুক্ত রাখা৷ তাজমহলের চারপাশে এখনো রয়েছে দূষণ ছড়ানো ১১৬৭টি কলকারখানা৷ তাজমহলের শ্বেত পাথরের দেয়ালে আজ হলুদের ছাপ৷ এই দূরবস্থার জন্য ইউনেস্কো যদি তাজমহলের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ট্যাগ তুলে নেয়, তাহলে সেটা হবে ভারতের পক্ষে খুবই লজ্জার৷

‘কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়কেই হাত মেলাতে হবে, সঙ্গে থাকবে পুরসভা’

This browser does not support the audio element.

শীর্ষ আদালত সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগের মহা অধিকর্তা, আগ্রার ডিভিশনাল কমিশনার এবং পরিবেশ দপ্তরের যুগ্ম সচিবের উপর তাজমহলের রক্ষণাবেক্ষণের সামগ্রিক দায়িত্বভার ন্যস্ত করেছে৷ ভবিষ্যতে তাজমহল সংক্রান্ত হলফনামা আদালতে পেশ করতে হলে ঐ তিনজনের মধ্যে যে-কোনো একজন করতে পারবে৷ তাজমহলের চারিদিকের অঞ্চলের দূষণ রোধের দায়িত্ব নিতে হবে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এবং আগ্রা ডিভিশনের কমিশনারকে৷ তাজের আশপাশের ১০৪০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা রাখতে হবে সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত৷ তা না হলে তাজমহলকে বাঁচানো সম্ভব হবে না৷ তাজমহলের মৌলিক স্থাপত্যকলা অক্ষুণ্ণ রাখতে নিয়োগ করতে হবে বিশেষজ্ঞদের৷ তার জন্য অর্থবরাদ্দের দায়িত্ব সরকারের৷ এর পাশাপাশি তাজমহলের ভেতরের চত্বরে যে মসজিত আছে, সেখানে আগ্রার স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া বাইরের কাউকে শুক্রবারের নামাজ পড়ে দেওয়া হবে না, শীর্ষ আদাতের রায়ে এমনটাই বলা হয়েছে৷

গত ২৪শে জানুয়ারি আগ্রার অতিরিক্ত জেলা শাসকের জারি করা এক নির্দেশিকায় বলা হয়, বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ তাজমহলের সুরক্ষা বিঘ্নিত করতে পারে৷ এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছিলেন এক ব্যক্তি৷ সেই মামলার শুনানিতে এই রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷ এমনিতে প্রতি শুক্রবার তাজমহল বন্ধ থাকে৷ শুধু নামাজ পড়ার জন্য খোলা রাখা হয়৷ সেখানে নামাজের জন্য আগ্রায় থাকেন এমন মুসলমানদের বৈধ পরিচয়পত্র দেখালে তবেই ঢুকতে দেওয়া হবে৷ এটা শুধু দূষণের জন্য নয়, নিরাপত্তার প্রশ্নও জড়িত৷

ক্ষতির মুখে তাজমহল

02:03

This browser does not support the video element.

এক অভিজ্ঞ সংরক্ষণ স্থপতি নবীন পিপলানি মনে করেন, তাজমহলের সংস্কারের কাজে আরো বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা দরকার৷ দরকার এ জন্য আরও অর্থ বরাদ্দ করার৷ কিন্তু এই ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধের গরিমা পুনরুদ্ধারে সরকারের ঢিলেমি চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে৷ অর্থ সংগ্রহের জন্য দরকার হলে বেসরকারি পর্যটন শিল্প সংস্থাগুলির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে৷ নজর দিতে হবে তাজমহলের পেছনের দিকে বহমান যমুনা নদীর সংস্কার করা৷ বর্তমানে যমুনা প্লাস্টিকসহ আবর্জনায় দূষিত৷

যমুনা দূষণ তাজমহলের কতটা ক্ষতি করতে পারে এবং সেটা ঠেকানোর উপায় কী জানতে চাওয়া হলে বিজ্ঞান ও পরিবেশ সেন্টারের গবেষক সুস্মিতা রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নদীর জল দূষণ রোধে আমরা অনেকগুলি নীতি এবং প্রযুক্তি স্থির করেছি৷ নদীতে জলের মাত্রা যত কম থাকবে, দূষণের মাত্রা তত বাড়বে৷ সেটার জন্য নদীর জলকে আরও ডাইলিউট বা তরল রাখতে হবে৷ দ্বিতীয়ত, জলকে রি-সাইকেল করতে হবে যাতে ঐ জলকে আবার ব্যবহার করা যায়৷ নদীতে প্লাস্টিক আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে৷ তৃতীয়ত, নালি-নর্দমার নোংরা জলও যাতে নদীতে গিয়ে না পড়ে, সেটাও দেখতে হবে৷ প্লাস্টিক আবর্জনা নদীতে পড়ার আগে সেটা সেগ্রিগেড করা বা আলাদা করা জরুরি৷''

প্রশ্ন হলো, এটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার? পরিবেশ গবেষক সুস্মিতা রায় জানান, ‘‘প্রাথমিক দায়িত্ব মিউনিসিপালিটির এবং ন্যাশনাল মিশন অফ ক্লিন ওয়াটার-এর৷ যমুনা ক্লিনিং এবং গঙ্গা ওয়াটার ক্লিনিং কর্মসূচির অধীনে পড়ে এটা৷ সোজা কথা, কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়কেই হাত মেলাতে হবে, সঙ্গে থাকবে পুরসভা৷''

এত গেল এক দিক৷ অন্যদিকে তাজমহলের মালিকানাসত্ত্ব দাবি করেছে উত্তর প্রদেশের সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড৷ সম্রাট শাহজাহান স্বয়ং নাকি তাজমহলের ওয়াকফনামা দিয়ে গেছেন সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে৷ কাজেই তাজমহল সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগের সম্পত্তি নয়৷ দীর্ঘদিন ধরে এই নিয়ে মামলা ঝুলে থাকায় মামলাকারীরা এই দাবি নিয়ে যান শীর্ষ আদালতে৷ আদালত দাবির প্রমাণ দেবার জন্য বাদশা শাহজাহানের স্বাক্ষরিত সব নথিপত্র পেশ করতে বলে উত্তর প্রদেশ ওয়াকফ বোর্ডকে৷ শাহজাহান মারা যান ১৬৬৬ সালে৷ মৃত্যুর প্রায় ১৮ বছর আগে তিনি তাজমহল তৈরি করেছিলেন, পত্নী মমতাজের স্মৃতিরক্ষায়৷ তাই শীর্ষ আদালতের কথায়, এই ধরনের দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা নেই৷ কারণ শাহজাহান তখন ছেলে ঔরঙ্গজেবের হাতে আগ্রাফোর্টে গৃহবন্দি৷ তাহলে কীভাবে তিনি সই করতে পারেন ঐ ওয়ারিশনামায়? তাই এই ধরনের মামলা আদালতের সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই নয়, জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷

আপনার কোনো মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ