1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ম্লাদিচের গ্রেপ্তারের পরেও বদলায়নি সার্বিয়ার সমাজ

১৬ জুলাই ২০১১

যুদ্ধাপরাধের বিচার একটি বিষয়, কিন্তু যে জাতির নামে যুদ্ধাপরাধ করা হয়েছে, সেই জাতির মনোভাবে পরিবর্তন আরও কঠিন এক প্রক্রিয়া৷ স্রব্রেনিৎসা গণহত্যার ১৬ বছর পর সার্বিয়া এমন এক সন্ধিক্ষণে এসে পৌঁছেছে৷

epa02819331 A Bosnian Muslim family share their grief at one of the caskets at the Potocari Memorial Center, during the funeral in Srebrenica, Bosnia and Herzegovina, 11 July 2011, where 613 newly-identified Bosnian Muslims were buried. The burial was part of a memorial ceremony to mark the 16th anniversary of the Srebrenica massacre, considered the worst atrocity of Bosnia's 1992-95 war. More than 8,000 Muslim men and boys were executed in the 1995 killing spree after Bosnian Serb forces overran the town. EPA/FEHIM DEMIR
স্রব্রেনিৎসার নির্মম ঘটনার শিকার স্বজনদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলিছবি: picture alliance / dpa

১৯৯৫ সালের ১১ই জুলাই বসনীয় সার্ব জেনারেল রাতকো ম্লাদিচের নেতৃত্বে এক বাহিনী প্রায় ৮,০০০ মুসলিম পুরুষকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে৷ ২০১০ সালের মার্চ মাসে সার্বিয়ার সংসদ প্রথম বারের মতো প্রকাশ্যে স্রব্রেনিৎসার ঘটনার নিন্দা জানায়৷ সম্প্রতি ম্লাদিচকে গ্রেপ্তার করে দ্য হেগে জাতিসংঘের যুদ্ধাপরাধ আদালতে পাঠিয়েছে সার্বিয়ার সরকার৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এর মাধ্যমে সার্বিয়ার মানুষের মনে কি ইতিহাসের এই কালো অধ্যায়ের অবসান ঘটেছে? তারা কি উগ্র জাতীয়তাবাদের ভাবধারা ত্যাগ করে বহু জাতি-ধর্ম-বর্ণের ইউরোপীয় সমাজে নিজেদের স্থান করে নিতে পেরেছে?

সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে এক যুব গোষ্ঠী সেদেশে মানবাধিকারের বিষয়গুলি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে৷ এই উদ্যোগের প্রধান মায়া মিচিচ মনে করেন, সার্বিয়ার অধিকাংশ মানুষের মনোভাব তেমন বদলায় নি৷ তিনি বললেন, ‘‘রাতকো ম্লাদিচকে গত ২৬শে মে দ্য হেগে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে আমরা এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি৷ এটা সত্যি এক বিশাল পদক্ষেপ৷ কিন্তু ২৭শে মে আমরা আবার এমন এক সমাজে ফিরে গেছি, যেমনটা ঠিক তার আগের দিন পর্যন্ত ছিল৷''

ফাইল ছবিছবি: picture alliance / dpa

মিচিচ মনে করেন, যে সার্বিয়ার রাজনীতি ও সার্বিয়ার সংবাদ মাধ্যম ম্লাদিচের গ্রেপ্তারের আসল কারণ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে খোলাখুলি কথা বলার সুযোগ হাতছাড়া করেছে৷ বলা হয়েছে ম্লাদিচ আসলে উন্মাদ, তার বয়স নিয়েও কথা হয়েছে৷ কিন্তু একবারের জন্যও তাদের কথা শোনা যায় নি, যারা ম্লাদিচের নৃশংস ও অমানবিক আচরণের শিকার হয়েছিলেন৷ সারাইয়েভো শহরের অবরোধ ও স্রব্রেনিৎসার গণহত্যার মতো জঘন্য অপরাধের কথা শোনা যায় নি৷ সার্বিয়ার টেলিভিশনে স্রব্রেনিৎসার শিকার হয়েছেন, এমন কারো বক্তব্য তুলে ধরা হয় নি৷ প্রেসিডেন্ট বরিস তাদিচ সহ অনেক রাজনীতিক শুধু বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের স্বার্থেই ম্লাদিচকে প্রত্যর্পণ করা জরুরি ছিল৷

বেলগ্রেডের ইউরো-অ্যাটলান্টিক কেন্দ্রের প্রধান ইয়েলেনা মিলিচ মনে করেন, ইইউ কোনো স্পষ্ট শর্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি করে সার্বিয়াকে প্রার্থী হিসেবে স্বীকার করে নিলে তা হবে এক মারাত্মক ভুল৷ তাঁর মতে, ‘‘আমার মনে হয়, প্রেসিডেন্ট তাদিচ, তাঁর মন্ত্রিসভা ও উপদেষ্টারা দৃঢ় মনোবল ও রাজনৈতিক সাহসিকতা দেখিয়ে যদি নিজেদেরই এক প্রকৃত তদন্ত প্রক্রিয়ার সামনে ঠেলে দেন, তা হবে সঠিক দিশায় এক জোরালো পদক্ষেপ৷ রাতকো ম্লাদিচ ও তার আগে রাদোভান কারাজিচ কীভাবে এতদিন ধরে আত্মগোপন করে থাকতে পেরেছিলেন, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে৷ আমার মনে হয়, পশ্চিমা দেশগুলির লাগাতার চাপ ছাড়া এটা সম্ভব হবে না৷ সার্বিয়ার জন্য এটা মোটেই কোনো সুখবর নয়৷''

সার্বিয়ায় এখনো প্রকাশ্যে এমন আত্মসমালোচনার পরিণাম মোটেই সুখকর হয় না৷ জবাবে উগ্র জাতীয়তাবাদীরা ভূরি-ভূরি কারণ খাড়া করেন বা অন্যান্য সমস্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ সার্বিয়া বর্তমানে কীভাবে রসাতলে যাচ্ছে, তার উদাহরণ তুলে ধরেন৷ এমনকি শিক্ষিত, উদারমনা মানুষ – যারা ইউরোপীয় সমন্বয় প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে আগ্রহী, তাদের মধ্যেও অনেককে বলতে শোনা যায়, সার্বিয়ার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে৷ এখনো সার্ব জাতিকে অশুভ শক্তি হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে৷ রাতকো ম্লাদিচের মতো জেনারেলের নৃশংস কার্যকলাপ জানাজানি হওয়ার পরও অনেকে বলেন, আসলে যুদ্ধের তো অনেক দিক রয়েছে৷ হতে পারে, ম্লাদিচ যুদ্ধাপরাধী৷ কিন্তু ক্রোয়াট ও মুসলিমরাও তো কম যায় না৷ তারাও যুদ্ধের সময় অনেক অপরাধ করেছে৷

মায়া মিচিচ'এর মতো মানবাধিকার কর্মী মনে করেন, এই মনোভাব মেনে নেওয়া যায় না৷ সার্বিয়া যতদিন না খোলা মনে নিজস্ব ইতিহাসের কালো অধ্যায় ও জাতি হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে কথা বলতে পারবে না, ততদিন গোটা অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই৷ সেক্ষেত্রে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে যা ঘটেছিল, তার যে পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই বলে মনে করেন মিচিচ৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ