অকাট্য তথ্যপ্রমাণের অভাবে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর রহস্য অনেক সময় রহস্যই থেকে যায়৷ ডিজিটাল অটোপ্সি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইউরোপে সেই পরিস্থিতি বদলানোর চেষ্টা চলছে৷ এভাবে পরিবহণ ব্যবস্থা আরো নিরাপদ করার উদ্যোগ চলছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলিতে বছরে প্রায় ২৩,০০০ মানুষ পরিবহণ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও মৃত্যুর কারণ ও দুর্ঘটনার নিখুঁত বিবরণ দ্রুত জানা যায় না৷ অনেক প্রশ্নের জবাব কখনোই পাওয়া যায় না৷
অনেক শতাব্দী ধরে মানুষ ময়নাতদন্তের শরণাপন্ন হচ্ছে৷ জুরিখ শহরের ফরেন্সিক প্যাথোলজিস্ট প্রোফেসর মিশায়েল টালি ও তাঁর টিম নতুন পথ খুঁজছেন৷ তারা ‘ভার্চুয়াল অটোপ্সি' ক্ষেত্রের পথিকৃৎ৷ এই পদ্ধতিতে আরও দ্রুত মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে৷ যেমন বিশেষ একটি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তাঁরা পুলিশের হয়ে জানার চেষ্টা করছেন, যে গাড়ি ঠিক কোন দিক থেকে মৃত পথচারীকে চাপা দিয়েছিল৷
ময়নাতদন্তেরডিজিটালপদ্ধতি
‘ভির্টোস্ক্যান' নামের নতুন এক প্রযুক্তি তাঁদের সেই কাজে সহায়তা করছে৷ এর আওতায় প্রথমে সামনে থেকে ১৮০ ডিগ্রি তারপর পেছন থেকে লাশের শরীরে বাহ্যিক ক্ষত নিখুঁতভাবে নথিভুক্ত করা হয়৷
নির্দিষ্ট এই দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, চালক কেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন? গাড়ি ঠিক কোন দিক থেকে পথচারিকে ধাক্কা মেরেছিল? কে সেই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী? সেই ফরেন্সিক রহস্য উন্মোচন করতে তদন্তকারীরা মৃত মানুষের জবানবন্দি জানতে পারেন না৷ মৃত্যুর রহস্যের জট ছাড়াতে অন্যদের এগিয়ে আসতে হয়৷ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে স্ক্যানার দুর্ঘটনায় মৃত মানুষের ভার্চুয়াল যমজ শরীর সৃষ্টি করতে পারে৷
আলোচিত যত সড়ক দুর্ঘটনা
বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ২০-২২ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন৷ এর মধ্যে নানা কারণে শুধু অল্প কিছু ঘটনা সারা দেশের মানুষের আলোচনায় আসে৷
ছবি: DW/Samir Kumar Dey
তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীর
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের এক গ্রামে ছবির শুটিং স্পট দেখে ঢাকা ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন খ্যাতিমান চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ এবং শহিদ বুদ্ধিজীবী, নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর ছেলে এটিএন নিউজের প্রধান নিবার্হী মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন৷ এ দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ ও শিল্পী ঢালী আল-মামুনসহ চারজন আহতও হয়েছিলেন৷
ছবি: DW/S. K. Dey
ক্ষতিপূরণ
দুর্ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা বাস মালিক, চালক ও বিমা কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দু'টি মামলা দায়ের করেন৷ সেই মামলার একটির চূড়ান্ত রায়ে গত ডিসেম্বরে তারেক মাসুদের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট৷ আগামী তিন মাসের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়া হলেও এখনও তা কার্যকর হয়নি৷
দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক ছিলেন৷ ১৯৮৯ সালে মতিঝিলের আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বাংলাদেশ বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজের গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন তিনি৷ এরপর তাঁর স্ত্রী রওশন আরা ১৯৯১ সালে আর্থিক ক্ষতিপূরণ চেয়ে কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেন৷ ২০১৪ সালের ২০ জুলাই সাংবাদিক মন্টুর পরিবারকে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ৷ তবে তা এখনও পাননি মন্টুর পরিবার৷
ছবি: Rawshan Aktar
জাহানারা কাঞ্চন
তিনি চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী ছিলেন৷ ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর স্বামীর শ্যুটিং দেখতে যাওয়ার পথে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি৷ সে বছরই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ এবং সড়ক চলাচল সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্য ও দাবি নিয়ে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন ইলিয়াস কাঞ্চন৷ সমাজসেবায় ২০১৮ সালের একুশে পদক পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেতা৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/GettyImages
রাজীব হোসেন
৩ এপ্রিল ঢাকার কারওয়ান বাজারে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে মধ্যে পড়ে প্রথমে হাত হারিয়েছিলেন তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেন৷ মাথায়ও আঘাত পান তিনি৷ এরপর দুই সপ্তাহ চিকিৎসাধীন ছিলেন৷ তবে তাঁকে বাঁচানো যায়নি৷ পরে রাজীবের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট৷ দুর্ঘটনার পর দুই বাসের মাঝে এক হাত ঝুলে থাকার ছবি প্রকাশিত হলে সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি আলোচিত হয়েছিল৷
ছবি: bdnews24.com
মানজারুল ইসলাম রানা
২০০৭ সালের ১৬ মার্চ খুলনায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার৷ ২৩ বছর বয়সি রানা জাতীয় দলের হয়ে ছয়টি টেস্ট ও ২৫টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন৷
ছবি: Tawhid Zaman
জগলুল আহমেদ চৌধুরী
২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, বাসস-এর সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক জগলুল আহমেদ চৌধুরী কারওয়ানবাজার এলাকায় বাস থেকে নামতে গিয়ে সেই বাসের পেছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন৷
ছবি: DW/M. Mamun
নাজিম উদ্দিন
ঢাকা ট্রিবিউনের বিজ্ঞাপন বিভাগের একজন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ছিলেন৷ ১৭ মে শনির আখড়া থেকে মোটর সাইকেলে গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিলেন৷ এই সময় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে দুই বাসের প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে একটি বাসের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন তিনি৷ ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়৷ নাজিম উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর পরিবারকে কেন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে সম্প্রতি রুল জারি করেছে হাইকোর্ট৷
ছবি: Privat
8 ছবি1 | 8
কিন্তু ভার্চুয়াল এই ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে শুধু দ্রুততাই মূল বিষয় নয়৷ ডিজিটাল পদ্ধতিতে জমা রাখা হয় বলে তদন্তকারীরা অনেক বছর পরেও তথ্যপ্রমাণের নাগাল পেতে পারেন৷ কম্পিউটার টোমোগ্রাফির ইমেজও সংরক্ষিত থাকে৷
লাশের উপর কয়েক হাজার বার এক্স-রে করে সেই ছবি সৃষ্টি হয়৷ ফলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মৃতদেহের ভেতরের ডিজিটাল প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে৷ কিন্তু সেই ছবি থেকে কী জানা যায়? এ ক্ষেত্রে কি বাম দিক থেকে পথচারীকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল?
নিখুঁতবিশ্লেষণেরসুযোগ
দেখা গেল, হাড়ের মাঝের অংশ ভেঙে গেছে৷ সেটা সত্যি বড় ধাক্কা৷ তিনটি জায়গায় তার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে৷ মাথার খুলিও পরীক্ষা করে দেখতে হবে৷ বাম দিকে আঘাত লেগে থাকলে সেখানে কিছু পাওয়া যেতে পারি৷ সব দেখেশুনে বোঝা যাচ্ছে যে বাম দিকেই ফ্র্যাকচার ঘটেছে৷ আঘাতের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে৷
কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশের প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেল৷ প্রচলিত অটোপ্সি করালে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা সময় লেগে যেত৷
ভয়ংকর দুর্ঘটনায় ইলন মাস্কের কোম্পানির গাড়ি, সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন
ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলার মডেল এস গাড়ির দুর্ঘটনায় দুই আরোহীর মৃত্যু টেক্সাসে। গাড়িটি তখন অটোপাইলট মোডে ছিল। তদন্ত শুরু।
ছবি: Scott J. Engle/REUTERS
ইলন মাস্কের গাড়ি কোম্পানি
ইলন মাস্কের টেসলা উন্নত প্রযুক্তির গাড়ি তৈরি করে। অটোপাইলট মোডের এই গাড়ি চালক ছাড়াই চালানো যায়। সেই গাড়িরই দুর্ঘটনা হয়েছে।
ছবি: Scott J. Engle/REUTERS
টেক্সাসে দুর্ঘটনা
দুর্ঘটনার সময় মাস্কের টেসলা কোম্পানির মডেল এস গাড়ি অটোপাইলট মোডে চলছিল বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। গাড়িটি একটা বাঁক মিস করে। তারপর সোজা তা একটা গাছে গিয়ে ধাক্কা মারে। গাড়িতে আগুন ধরে যায়। দুই জন আরোহীর মৃত্যু হয়।
ছবি: Scott J. Engle/REUTERS
এক লাখ লিটার জল
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাড়ির আগুন নেভাতে এক লাখ লিটার জল লেগেছে। গাড়ির ব্যাটারিতে বারবার আগুন ধরে যাচ্ছিল।
ছবি: Scott J. Engle/REUTERS
কেউ গাড়ি চালাচ্ছিলেন না
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাড়িটি কেউ চালাচ্ছিলেন না। কারণ, আগুন নেভানোর পর তারা দেখেন চালকের পাশের আসনে এক আরোহী পুড়ে মারা গেছেন। আরেকজন পিছনের আসনে বসেছিলেন। গাড়ি চলছিল অটোপাইলট মোডে।
ছবি: Scott J. Engle/REUTERS
মাস্কের দাবি
এই দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেই মাস্ক দাবি করেছিলেন, টেসলার অটোপাইলট গাড়ির দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অন্য সাধারণ গাড়ির তুলনায় অনেক কম। বস্তুত তার দাবি, সাধারণ গাড়ির দুর্ঘটনার সম্ভাবনা টেসলার তুলনায় ১০ গুণ বেশি।
ছবি: picture-alliance/Pressebildagentur ULMER
বিশেষ তদন্ত
এরপরই অ্যামেরিকার ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্রাফিক সেফটি অর্গানাইজেশন এবং ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড দুর্ঘটনার বিশেষ তদন্ত শুরু করেছে। তারা টেসলাকে গাড়ির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে।
ছবি: Artur Widak/Nur Photo/picture alliance
সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন
টেসলার গাড়ির সুরক্ষা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেছে। কনজিউমার রিপোর্টস-এর কেলি ফাঙ্কহাউস জানিয়েছেন, ''কয়েক বছর ধরেই টেসলা তাদের গাড়ির সুরক্ষা রিপোর্ট নিয়ে ঠিক তথ্য দিচ্ছে না। গাড়ির কার্যকারিতা নিয়ে তাদের দাবিই বিশ্বাস করতে হবে।''
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Margot
7 ছবি1 | 7
বিশেষজ্ঞদের কাছে এটা স্পষ্ট যে মানুষটিকে বাম দিক থেকে ধাক্কা মারা হয়েছিল৷ পায়ে ও মাথায় আঘাত লেগেছে৷ একটি জায়গায় বিশাল ফ্র্যাকচার হয়েছে৷ সেটি এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ মৃত্যুর আসল কারণ৷ ফলে মূল প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেছে৷
পথচারীর অপমৃত্যু সংক্রান্ত রহস্যের না হয় সমাধান হলো৷ কিন্তু চালকের কী হয়েছিল? যে দুর্ঘটনায় তাঁরও মৃত্যু হয়েছে, সেটির কারণ কী ছিল? অন্য অনেক ঘটনার মতো এ ক্ষেত্রেও গাড়ির চালক দুর্ঘটনার আগে ভোর পর্যন্ত পার্টিতে ছিলেন৷ গাড়িতে ওঠার সময় তিনি কি মাতাল ছিলেন?
মৃত্যুরপরেওঅ্যালকোহলশনাক্তকরারপদ্ধতি
ভারচুয়াল অটোপ্সি টিমকে আদালতের এই প্রশ্নেরও জবাব খুঁজতে হচ্ছে৷ এখনো পর্যন্ত অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মৃতদেহ থেকে তন্তু সংগ্রহ করে অ্যালকোহল বিশ্লেষণ করতে হয়৷ ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স স্পেকট্রোস্কোপি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরও দ্রুত এবং কার্যকরভাবে বিশেষ করে মস্তিষ্কে অ্যালকোহলের চিহ্ন নির্ণয় করা সম্ভব৷
এমআরটি যন্ত্র চৌম্বক ক্ষেত্র ও বেতার তরঙ্গের ভিত্তিতে কাজ করে৷ আমাদের শরীরের হাইড্রোজেন পরমাণুর কোর বা মূল চৌম্বক ক্ষেত্রের স্ংস্পর্শে এসে প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের বেশি পানিভরা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও পেশি দৃশ্যমান করে তোলা যায়৷ পরীক্ষার সময়ে পানির অণুর মধ্যে হাইড্রোজেন পরমাণুর সংকেতের ভিত্তিতে সেটা সম্ভব হয়৷
তাইওয়ানে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এক ট্রেন দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ সে দেশের পরিবহণ ও যোগাযোগ মন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘটনার দায় নিয়ে তিনি পদত্যাগে প্রস্তুত৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Ann Wang/REUTERS
ট্রাকের কারণে ট্রেন লাইনচ্যূত
তাইওয়ানের পূর্বাঞ্চলের হুয়ালিয়েনে একটি ট্রেন লাইনচ্যূত হলে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে৷ ট্রেন লাইনের ওপরে কাছেই নির্মাণকাজ চলছিল৷ সেখান থেকে একটি ট্রাক পিছলে ঢাল বেয়ে পড়ে যাওয়ায় ৫০০ যাত্রীবাহী ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়ে৷
ছবি: Ann Wang/REUTERS
ট্রাক-ট্রেন সংঘর্ষ
ওপর থেকে হঠাৎ মেনটেনেন্স ট্রাকটি দ্রুত নেমে এসে তাইপে থেকে তাইতুংয়ের দিকে রওনা হওয়া দ্রুতগামী ট্রেনটিতে আঘাত করে৷
ছবি: Ann Wang/REUTERS
অনেক হতাহত
দুর্ঘটনাস্থল থেকে এ পর্যন্ত ৫০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ আহত ২০০ জনের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক৷ ওপরের ছবিতে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন-এর হাসপাতালে গিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতদের দেখার দৃশ্য৷
ছবি: Taiwan Presidential Office/REUTERS
একজন গ্রেপ্তার
ট্রাকটি যেখান থেকে ব্রেক ফেল করে নিচে পড়েছিল, সেই কন্সট্রাকশন সাইটের এক ব্যবস্থাপককে গ্রেপ্তারের আদেশ দেয় আদালত৷ সেই আদেশ ইতিমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে৷ ছবিতে দুর্ঘটনায় নিহতদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া৷
ছবি: Annabelle Chih/REUTERS
মন্ত্রীর আশ্বাস
তাইওয়ানের পরিবহণ ও যোগাযোগ মন্ত্রী লিন চিয়া-লুং দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেছেন, ঘটনার ‘রাজনৈতিক’ দায় নিতে তিনি প্রস্তুত৷ দুর্ঘটনা-সংশ্লিষ্ট সব বিষয় সামাল দেয়ার পর পদত্যাগ করতে পারেন- এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি৷ ট্রন দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য শোক পালন করছে তাইওয়ান৷ সারা দেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে৷
ছবি: Annabelle Chih/REUTERS
5 ছবি1 | 5
পানি ছাড়া ইথানল, অর্থাৎ অ্যালকোহলের মতো অন্য কোনো অণুর মধ্যে হাইড্রোজেন পরমাণু থাকলে সংকেতের ফ্রিকোয়েন্সি বদলে যায়৷ এভাবে এমআরটি স্পেকট্রোস্কোপির সাহায্যে অ্যালোকহলের অস্তিত্ব শনাক্ত করা সম্ভব৷ ফলে টিস্যুর নমুনা ছাড়াই ফরেনসিক প্যাথলজিস্টরা মৃত ব্যক্তির মস্তিষ্কে অ্যালকোহলের ঘনত্ব নির্ণয় করতে পারেন৷ বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী ফলাফল শূন্য দশমিক আট থেকে এক প্রোমিল৷
আরওগভীরতদন্ত
তবে তরুণ চালকের শরীরে পরীক্ষার ফল কিন্তু নেগেটিভ৷ তিনি মোটেই অ্যালকোহল পছন্দ করতেন না, পার্টিতে তাই শুধু পানি খেয়েছিলেন৷ তাহলে কি গাড়ির উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর পেছনে অন্য কোনো শারীরিক কারণ ছিল?
একই ধরনের অন্য এক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে জুরিখের ফরেনসিক প্যাথলজিস্টরা আরও একবার ডিজিটাল পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন৷ পোস্ট-মর্টাল অ্যাঞ্জিওগ্রাফি প্রক্রিয়ায় কনট্রাস্ট মিডিয়া শরীরের টিস্যুতে আঘাতের চিহ্ন দৃশ্যমান করে তোলে৷
এ ক্ষেত্রেও চালক আচমকা গাড়ির উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন৷ হৃৎপিণ্ড বা আশেপাশের কোনো জায়গায় আঘাতের কারণেই কি এমনটা ঘটেছিল? এমন কিছু হয়ে থাকলে কম্পিউটার টোমোগ্রাফিতে তা ধরা পড়ার কথা৷ কিন্তু ফরেনসিক প্যাথলজিস্টরা হৃৎপিণ্ডের মধ্যে কোনো চিহ্ন খুঁজে পেলেন না৷ তা সত্ত্বেও কি ভার্চুয়াল অটোপ্সির মাধ্যমে দুর্ঘটনার কারণ জানা সম্ভব?
বিশ্বের ভয়াবহ যত রেল দুর্ঘটনা
ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার উদাহরণ বিশ্বে নতুন নয়৷ ছবি ঘরে দেখুন বিশ্বের এমটি কয়েকটি রেল দুর্ঘটনার খবর৷
ছবি: picture-alliance/Construction/I. Masterton
আল আয়াত দুর্ঘটনা: মিশর
২০ ফেব্রুয়ারি ২০০২ সালের ঘটনা৷ মিশরের কায়রো থেকে লুক্সরগামী ট্রেনের একটি বগিতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে৷ মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে ট্রেনের অন্যান্য বগিতে৷ এ ঘটনায় ট্রেনটির সাতটি বগি পুড়ে যায় আর নিহত হয় ৪০০ মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/A. Gomaa
আওয়াশ রেল দুর্ঘটনা: ইথিওপিয়া
আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার আওয়াশ শহরের নিকটে ১৪ জানুয়ারি ১৯৮৫ সালের ট্রেন দুর্ঘটনাটি আফ্রিকার ভয়াবহতম দুর্ঘটনা হিসেবেই পরিচিত৷ আওয়াশ গিরিখাতের পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়া ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে খাদে পড়ে গেলে ৪২৮ জন নিহত হয় বলে জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpaMarthe van der Wolf
টরে ডেল বিয়েরজু রেল দুর্ঘটনা: স্পেন
৩ জানুয়ারি ১৯৪৪ সালের ঘটনা৷ স্পেনের টরে ডেল বিয়েরজু গ্রামে অবস্থিত ২০ নাম্বার টানেলে একটি মেইল ট্রেইন প্রবেশ করে৷ এসময় বিপরীত দিক থেকে কয়লাবাহী আরেকটি ট্রেনের সাথে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে দুটো ট্রেনের৷ ট্রেন দুটিতে বেশ কিছু যাত্রী থাকলেও তারা টিকেট ছাড়াই ভ্রমণ করছিল৷ যে করণে হতাহতের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি৷ তবে সংঘর্ষের ফলে ট্রেন দুটিতে সৃষ্ট আগুন টানা দুদিন ধরে জ্বলছিল
ছবি: picture-alliance/AP/P. White
গোয়াদালাজারা রেল দুর্ঘটনা: মেক্সিকো
১৯১৫ সালের এ দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ছিল ৬০০৷ মেক্সিকো বিপ্লব তখন বেশ তুঙ্গে৷ যাত্রীসমেত একটি ট্রেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে৷
ছবি: Getty Images/J.Moore
বিহার রেল দুর্ঘটনা: ভারত
১৯৮১ সালের ঘটনা এটি৷ প্রায় এক হাজারের যাত্রী নিয়ে বিহারের বাঘমতি নদীতে পড়ে যায় একটি ট্রেন৷ টেনটি যখন সেতুর কাছে এসেছিল ঠিক সে মুহূর্তে একটি গরু ট্রেনলাইন পার হচ্ছিল৷ গরুটিকে বাচানোর চেষ্টা করতে গেলে রেলের নিয়ন্ত্রণ হারায় চালক৷ পাঁচশর অধিক যাত্রী নিহত হয়েছিল এ দুর্ঘটনায়৷
ছবি: Strdel/Afp/Getty Images
সিউরেয়া রেল দুর্ঘটনা: রোমানিয়া
১৯১৭ সালের ঘটনা৷ রোমানিয়ার সিউরেয়া স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকায় একটি ট্রেনে আগুন ধরে গেলে অন্তত ছয়শ’ যাত্রী নিহত হন, কোনো কোনো হিসেবে সংখ্যাটি
ছবি: DW / Cristian Stefanescu
সেইন্ট মিশেল-ডে-মাউরিএনে রেল দুর্ঘটনা: ফ্রান্স
১৯১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর৷ প্রচণ্ড গতির কারণে আল্পস পর্বতের পাশ দিয়ে যাওয়া ফ্রান্সের সৈন্যবাহী একটি ট্রেনের ব্রেকে আগুন ধরে যায়৷ ধারণা করা হয় এ দুর্ঘটনায় যাত্রীদের সবাই নিহত হয়৷
ছবি: Reuters/C. Platiau
সুনামি রেল দুর্ঘটনা: শ্রীলংকা
২০০৪ সালের সুনামির দিনে প্রায় ১৫শ’ যাত্রী নিয়ে সমুদ্র থেকে মাত্র ২১৭ গজ দুরে অবস্থান করছিল একটি ট্রেন৷ সুনামির প্রথম ঢেউটি আসার সময়ে স্টেশনের আরো অনেক যাত্রী টেনটিকে নিরাপদ ভেবে আশ্রয় নেয়৷ সতেরশর অধিক মানুষ এ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Eranga Jayawardena
8 ছবি1 | 8
এবার মূল ধমনী পরীক্ষা করার পালা৷ সেটাই সঠিক পথ৷ সিটি ইমেজে ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেল৷ রক্তপাতের চিহ্ন স্পষ্ট৷ হৃৎপিণ্ডের উপরে মূল ধমনীর সীমানায় রক্তপাত হয়েছে৷ অর্থাৎ চালকের আসনে অস্বাভাবিক কিছু ঘটে নি৷ মৃত্যুর কারণ এয়র্টিক আর্চে রক্তপাত৷
ফরেনসিক প্যাথলজিস্টদের রায় অনুযায়ী এয়র্টায় ফাটলের কারণে তরুণ চালকের মৃত্যু ঘটেছে৷ সেটাই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কারণ৷ রক্ত অনিয়ন্ত্রিতভাবে শরীরে চলাচল করলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী৷ নতুন প্রযুক্তির কল্যাণে এমন সব জটিল রহস্য আরো দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে৷