তিনি নিজেও একসময়ের যক্ষ্মা আক্রান্ত৷ এখন তাঁর কাজ টিবি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাউন্সেলিং৷ জীবনের পথ দেখাচ্ছেন মুম্বইনিবাসী নন্দিতা ভেঙ্কাটেশন৷
বিজ্ঞাপন
মুম্বইয়ের বাসিন্দা নন্দিতা ভেঙ্কাটেশন এক আশ্চর্য কাজ বেছে নিয়েছেন৷ অন্যান্য কাজের ফাঁকে নিয়ম করে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুদের প্রশ্নের উত্তর দেন৷ আপাতদৃষ্টিতে এর মধ্যে কোনো নতুনত্ব নেই৷ ট্রেনে বাসে সোশ্যাল মিডিয়া খুলে বসে পড়া নতুন কিছু নয়৷ কিন্তু নন্দিতা কেবলমাত্র গল্প করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া খোলেন না৷ তাঁর একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে৷
মুম্বইয়ের ট্রেনে প্রতিদিন যাতায়াত করেন নন্দিতা৷ ট্রেনে বসেই তিনি মেসেজে উত্তর দেন৷ তাঁর বন্ধুরা সকলেই টিবি বা টিউবরকিউলেসিসে আক্রান্ত৷ নানারকম প্রশ্ন তাঁদের৷ কিন্তু সমাজে সকলের কাছে সে সব প্রশ্ন করতে তাঁরা ভয় পান৷ লজ্জা পান৷ একসময় ভারতে টিবি-র কোনো ওষুধ ছিল না৷ মনে করা হতো এটি একটি ছোঁয়াচে অসুখ৷টিবি আক্রান্তদের একঘরে করা হতো৷ সময় বদলে গিয়েছে৷ সহজেই এখন টিবি-র চিকিৎসা হয়৷ কিন্তু সামাজিক সমস্যাটি এখনো কোনো কোনো জায়গায় থেকে গিয়েছে৷ এখনো টিবি রোগীদের একঘরে করে রাখার বা তাদের সঙ্গে না মেশার একটা মনোভাব আছে৷ টিবি রোগীরাও তাঁদের রোগ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠাবোধ করেন৷ সেই সমস্ত মানুষদের জন্যই অবারিত দ্বার খুলে দিয়েছেন নন্দিতা৷ সকলের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কাজটিই তিনি করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়৷
প্রশ্ন নানা রকমের৷ এক তরুণী নন্দিতাকে জিগ্যেস করেছেন, বয়ফ্রেন্ডকে টিবি-র কথা বলা উচিত হবে কি না৷ আরেক তরুণী জানতে চেয়েছেন, টিবি-র ওষুধের জন্য তাঁর পিরিয়ড মিস হচ্ছে কি না৷ ২০ বছরের একটি মেয়ে তাঁকে প্রশ্ন করেছেন, টিবি তাঁর পরবর্তী যৌন জীবনে কোনো সমস্যা তৈরি করবে কিনা৷ সব প্রশ্নেরই উত্তর দেন নন্দিতা৷ কার্যত কাউন্সেলিং করেন৷
যক্ষ্মার সঙ্গে লড়তে ‘নায়ক ইঁদুর’!
ফসলের ক্ষতি করে বলে ‘ইঁদুর নিধন অভিযান’-এর কথা আমরা হামেশাই শুনি৷ কিন্তু মানুষের যক্ষ্মা রোগ সারাতে ইঁদুরের সহায়তা নেয়া হয়, তা কি শুনেছেন? তানজানিয়ায় কিন্তু এমন কাণ্ডই চলছে৷
ছবি: APOPO
চিনে নিন নায়ক ইঁদুরকে
টিউবারকুলোসিস, অর্থাৎ টিবি বা যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ে সহায়তার জন্য বেলজিয়ান বেসরকারি সংস্থা আপোপো বিশেষ প্রজাতির ইঁদুরের প্রজনন করাচ্ছে৷ আফ্রিকার এই ধরনের ইঁদুরের নাম দেয়া হয়েছে ‘গিলবার্ট’৷ তানজানিয়ার মোরোগোরো শহরের পরীক্ষাগারে এক চৌকোনা খাঁচায় মানুষের থুথুর নমুনা রাখা হয়৷ গিলবার্টরা গন্ধ শুঁকেই জানিয়ে দেয় থুথুতে সংক্রমণ হয়েছে কিনা৷ এমন চল্লিশটি ‘নায়ক ইঁদুর’ আছে সেই পরীক্ষাগারে৷
ছবি: Jeroen van Loon
ইঁদুরেরও চাই প্রেরণা
সংক্রমণ সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে এমন থুথুর নমুনায় গিলবার্ট যতবার তার সামনের থাবা দিয়ে আঁচড় কাটে, ততবারই তাকে পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয় কলা আর মটরশুঁটি মেশানো খাবার৷ খাবার পেলে নতুন উদ্যমে আবার কাজ শুরু করে গিলবার্ট৷
ছবি: Jeroen van Loon
গিলবার্টরা আরো জানে...
শুধু যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়েই নয়, মোজাম্বিক, অ্যাঙ্গোলা এবং কম্বোডিয়ার মতো দেশে ভূমি মাইন খুঁজে বের করায় সহায়তার জন্যও গিলবার্টদের কাজে লাগায় আপোপো৷ সামান্য এক ইঁদুরের সহায়তা নিয়ে শুধু মোজাম্বিকেই ২ হাজার ৫৮৭টি ভূমি মাইন খুঁজে বের করে ধ্বংস করা হয়েছে৷ এছাড়া এক হাজারেরও বেশি এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস আর প্রায় ১৩শ আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলাবারুদেরও সন্ধান দিয়েছে এই ইঁদুর৷
ছবি: Jeroen van Loon
পয়সা উসুল...
আফ্রিকার এই ইঁদুরের ঘ্রাণশক্তি ভীষণ তীক্ষ্ম৷ অন্যান্য ইঁদুরের তুলনায় এরা বেশ শান্ত স্বভাবের৷ প্রতিটি ইঁদুরের প্রশিক্ষণের পেছনে গড়ে ৬শ ইউরোর মতো খরচ হয়৷ তাতে কী! এ ইঁদুর আট বছর বাঁচে৷ এদের পোষ মানানো সহজ, পুষতে তেমন কোনো ঝামেলাও নেই৷ সবচেয়ে বড় কথা, কুকুরকে যেমন একজন প্রশিক্ষক দিয়েই সব শেখাতে হয়, গিলবার্টদের তেমন বায়নাক্কাও নেই৷
ছবি: Jeroen van Loon
জন্ম থেকেই শুরু
আপোপো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের জায়গাতেই ইঁদুরের প্রজনন করায়৷ সংস্থাটি বুনো ইঁদুর পেলেই তাদের দিয়ে শুরু করে বংশ বৃদ্ধির কাজ৷ বাচ্চা ইঁদুর জন্মের পর চোখ খোলার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় প্রশিক্ষণ৷
ছবি: Jeroen van Loon
গিলবার্ট যেভাবে বাঁচায়
সাভেরা কম্বা-র কাশি আর সারছিলই না৷ শরীরের ওজন কমে যাচ্ছিল৷ সবসময় ক্লান্ত লাগতো৷ হাসপাতালে ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললেন, যক্ষ্মা হয়নি৷ অগত্যা থুথুর নমুনা পাঠানো হলো৷ গিলবার্ট শুঁকেই জানিয়ে দিল, যক্ষ্মা হয়েছে৷ যেন নতুন জীবন পেলেন তিনি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)-র এক সমীক্ষা অনুযায়ী শুধু ২০১২ সালেই সারা বিশ্বে যক্ষ্মায় মারা গেছে ১৩ লাখেরও বেশি মানুষ৷সাভেরাকে বাঁচিয়েছৈ ইঁদুর৷
ছবি: Jeroen van Loon
নিশ্চিত হওয়া
হাসপাতালের পরীক্ষায় যক্ষ্মা ধরা পড়েনি, কিন্তু ইঁদুরের নাসিকায় ধরা পড়েছে, রোগীদের এমন থুথু আবার পরীক্ষা করে দেখছেন আপোপো ল্যাব-এর প্রশিক্ষিত কর্মীরা৷ পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পর রোগীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে বলা হবে৷
ছবি: Jeroen van Loon
চটপটে গিলবার্ট
আপোপো-র ইঁদুরগুলোর বিশেষত্ব কী জানেন? ওরা খুব দ্রুত কাজ করে৷ ল্যাবরেটরিতে একজন মানুষ সারাদিনে যতগুলো থুথুর নমুনা পরীক্ষা করতে পারে গিলবার্ট তা করে ফেলে মাত্র সাত মিনিটে৷ যক্ষ্মা হওয়ার ঝুঁকি বেশি এমন সব জায়গা, যেমন শরণার্থী শিবির বা কয়েদখানায় ইঁদুর দিয়ে পরীক্ষা করালে মন্দ কি!
ছবি: Jeroen van Loon
চিকিৎসা শুরু
সাভেরা কম্বার ওজন এখনো মাত্র ৩৯ কেজি৷ তবে ওষুধ খেতে শুরু করার পর থেকে শারীরিক অবস্থার উন্নতি নিজেই বুঝতে পারছেন, তাই খুব খুশি মনেই ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘ইঁদুর না থাকলে আমি হয়ত মারাই যেতাম!’’
ছবি: Jeroen van Loon
তবু স্বীকৃতি নেই
ইঁদুর দিয়ে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের এই পদ্ধতিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো স্বীকৃতি দেয়নি৷ গত বছর তানজানিয়ায় মোট ১৭শ রোগীর সুচিকিৎসা সম্ভব হয়েছে প্রশিক্ষিত ইঁদুরদের কল্যাণে৷ আপোপো তাই ডাব্লিউএইচও-র স্বীকৃতির আশায় বসে নেই৷ তানজানিয়ার পর মোজাম্বিকেও একটি যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় কেন্দ্র খুলেছে৷ ভবিষ্যতে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও এমন পরীক্ষাগার চালু করার পরিকল্পনা আছে আপোপোর৷
ছবি: Jeroen van Loon
10 ছবি1 | 10
নন্দিতাও একসময় টিবি রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ ৮ বছর রোগের কথা চেপে রেখেছিলেন তিনি৷ ইতিমধ্যে তাঁর সমস্ত চুল পরে যায়৷ বধিরও হয়ে গিয়েছিলেন৷ জীবনের একেবারে কিনারে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু সেই ভয়ংকর প্রতিকূলতাকে জয় করতে পেরেছেন তিনি৷ ফের জীবনে ফিরে এসেছেন৷ এবং সে কারণেই তাঁর মনে হয়, এখন যাঁরা টিবি আক্রান্ত তাঁদের পাশে দাঁড়ানো দরকার৷ নিরন্তর কাউন্সেলিং করা দরকার৷
টমসন রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নন্দিতা জানিয়েছেন, এই একই ধরনের প্রশ্ন তাঁর মনেও এসেছিল৷ কিন্তু কারও কাছে প্রশ্নগুলি করে উঠতে পারেননি তিনি৷ কারণ একটাই, কার কাছে এ সব প্রশ্ন করা যায়, সেটাই বুঝে উঠতে পারেননি তখন৷ চিকিৎসকেরা টিবি-র অষুধের সাইড এফেক্ট নিয়ে কোনো কথা বলতে চান না৷ টিবি রোগীদের কাউন্সেলিংয়েরও কোনো ভালো সংগঠন নেই৷
ভারতে যক্ষ্মার ভয়াবহতা
ভারতে প্রতি তিন মিনিটে যক্ষ্মা বা টিবি-তে মারা যান দুই জন৷ সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় ২০১২ সালে ডিআরটিবি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজারে৷
ছবি: DW/B. Das
যক্ষ্মা রোগের সংক্রমণ যেখানে বেশি
বিশ্বে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ভারতে৷ বিশ্বের মোট টিবি রোগীর ২৬ ভাগই এই দেশে৷ যক্ষ্মা সংক্রামক প্রাণঘাতী রোগ৷ দক্ষিণ এশীয় এই দেশে প্রতি তিন মিনিটে যক্ষ্মায় দুই জন মানুষের মৃত্যু হয়৷
ছবি: DW/B. Das
লাখো মানুষ আক্রান্ত
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে ২০১২ সালে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৮৬ লাখ এবং মারা গেছে ১৩ লাখ রোগী৷ গত দশ বছরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমেছে মাত্র দুই শতাংশ৷
ছবি: DW/B. Das
ডিআরটিবি বা ওষুধ প্রতিরোধক যক্ষ্মা জীবাণু
রেজিসটেন্স টু ড্রাগস বা ওষুধ প্রতিরোধক যক্ষ্মা জীবাণু আরো সমস্যার সৃষ্টি করেছে৷ অর্থাৎ অনেক রোগী এমন সব ওষুধ ব্যবহার করে যার ফলে জীবাণুর উপর ওসব ওষুধের কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না৷ ২০১২ সালে ডিআরটিবি-তে সমস্যাক্রান্ত হয়েছে সাড়ে চার লাখ মানুষ৷ এর মধ্যে অর্ধেকেরই বাস ভারত, চীন ও রাশিয়াতে৷ বিশ্বে মাল্টি ড্রাগ রেজিসটেন্স টিবিতে মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার৷
ছবি: DW/B. Das
ভারতে এমডিআর-টিবি বাড়ছে
চিকিৎসার ক্ষেত্রে সঠিক মান বজায় না রাখার কারণে ওষুধ প্রতিরোধক যক্ষ্মা-জীবাণুর উদ্ভব ঘটছে৷ কোনো একটি বিশেষ ওষুধ প্রতিরোধ নয় বরং নানা ওষুধ প্রতিরোধ করতে পারছে এ জীবাণু৷ এসব জীবাণুকে বিশেষজ্ঞরা মাল্টিড্রাগ-রেজিস্টেন্স টিবি বা এমডিআর-টিবি হিসেবে অভিহিত করে থাকেন৷ ২০১২ সালে এ কারণে ভারতে নতুন রোগী হয়েছে ৬৪ হাজার৷
ছবি: DW/B. Das
মনুষ্যসৃষ্ট সমস্যা
ইনি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মনিপুর রাজ্যের এমডিআর-টিবি রোগী৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিআরটিবি মনুষ্যসৃষ্ট, যা যক্ষ্মার সঠিক চিকিৎসা না করার ফলে হয়৷
ছবি: DW/B. Das
বদঅভ্যাস
ম্যাকগ্রিল আন্তর্জাতিক যক্ষ্মা কেন্দ্রের মধুকর পাই জানালেন, ভুল এবং নিম্ন মানের ওষুধ, সঠিক পরীক্ষা না করার কারণে এমডিআর টিবি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷
ছবি: DW/B. Das
চিকিৎসা
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় ভারতে বিনামূল্যে টিবি-র চিকিৎসা দেয়া হয়, যার আওতায় আছে দেশটির ১৫ লাখ রোগী৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা জানালেন, আক্রান্ত অর্ধেক রোগী প্রাইভেট সেক্টরে চিকিৎসকদের কাছে যান, যারা এই রোগের চিকিৎসার সাথে সম্পৃক্ত নন৷
ছবি: DW/B. Das
7 ছবি1 | 7
সম্প্রতি ভারতের একটি ব্যাংকের কাছ থেকে ‘ব্রেভ ফাইটার' পুরস্কারও পেয়েছেন নন্দিতা৷ বহু সংগঠন তাঁর লড়াই এবং কাজকে কুর্নিশ জানিয়েছে৷
এই মুহূর্তে ভারতে টিবি আক্রান্তের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বেশি৷ সারা পৃথিবীর নিরিখে হিসেব করলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় প্রায় এক চতুর্থাংশ৷ তবে সব ধরনের টিবি সাধারণ নয়৷ অ্যাবডোমিনাল টিবি কিংবা হার্টের টিবি ব্যতিক্রমী ঘটনা৷ এবং সে ধরনের টিবি-র ক্ষেত্রে চিকিৎসাও বেশ জটিল৷ তবে নন্দিতার কথায়, সব ধরনের রোগীর ক্ষেত্রেই একই রকম সামাজিক সংকট কাজ করে৷
সবচেয়ে বেশি যক্ষ্মা রোগীর দেশ ভারত
আগে বলা হতো ‘যার হয় যক্ষ্মা, তাঁর নাই রক্ষা’৷ যক্ষ্মা এখন চিকিৎসাযোগ্য৷ অনেক দেশ থেকেই এই রোগ প্রায় নিশ্চিহ্ন৷ তবে ভারতে যক্ষ্মার রোগী এখনো খুব বেশি৷ সবচেয়ে বেশি যক্ষ্মা রোগীর দেখা তাই মিলবে ভারতেই৷
ছবি: imago
সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ কম কার্যকর
দুই সপ্তাহের বেশি সর্দি-কাশি? তাহলে ধরে নিতে হবে আপনার টিবি বা যক্ষ্মা হওয়ার আশঙ্কা আছে৷ এ কথা জানিয়ে নাগরিকদের সতর্ক করার চেষ্টা কয়েক বছর আগেই শুরু করেছে ভারত সরকার৷ কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হচ্ছে না৷ দেশে যক্ষ্মা রোগী বেড়েই চলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রোগী বাঁচাতে গিয়ে সেবিকার মৃত্যু
পশ্চিমবঙ্গের সিউড়ির এক হাসপাতালের একটি খবর কয়েকদিন আগে সংবাদ শিরোনামে এসেছিল৷ হাসপাতালটি যক্ষ্মা রোগীদের জন্যই বিশেষায়িত, অথচ সেখানে রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে এক নার্সই মারা গেলেন যক্ষ্মায় ভুগে৷ এমন খবর সংবাদমাধ্যমের নজর তো কাড়বেই!
নার্সের যক্ষ্মায় ভুগে মৃত্যু ওই হাসপাতালকে এতটাই আলোচনায় এনেছে যে, সব ত্রুটি-বিচ্যূতিই উঠে আসছে সংবাদমাধ্যমে৷ হাসপাতালে বিড়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে – এমন ছবিও প্রকাশ করছে সংবাদমাধ্যমগুলি৷
ছবি: C. Khanna/AFP/Getty Images
ছুটিতে গেলে আর ফেরে না...
১২০’শ শয্যার ওই হাসপাতালটির এক কর্মী জানিয়েছেন, যক্ষ্মার ভাইরাসে সংক্রমিত বেশ কয়েকজন কর্মী অসুস্থতার কারণে ছুটি নিয়ে বাড়িতে গিয়ে আর ফেরেননি৷ তাঁরা বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তা জানে না৷
ছবি: C. Khanna/AFP/Getty Images
সব সরকারি হাসপাতালের অবস্থা এক
ভারতের সব সরকারি হাসপাতালের অবস্থাই প্রায় এক৷ সিউড়ির হাসপাতালটির মতো অ্যান্যান্য যক্ষ্মা হাসপাতালেও চিকিৎসক, নার্স এবং রোগীসহ সবাই কোনো ‘মাস্ক’ না পরেই ঘুরে বেড়ান৷ বেশির ভাগ সরকারি হাসপাতালই অপরিচ্ছন্ন৷ অথচ যক্ষ্মা হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখা তো বটেই, সেখানে সবার মাস্ক পরাটাও জরুরি৷
ছবি: DW/B. Das
6 ছবি1 | 6
মাত্র ১৭ বছর বয়সে টিবি ধরা পড়েছিল নন্দিতার৷ বিশ্বের সঙ্গে এই সময়েই ধীরে ধীরে পরিচয় ঘটে তরুণ-তরুণীদের৷ কেরিয়ার, প্রেম এই সমস্ত বিষয়েই এই বয়সে সকলের উত্তরণ হয়৷ অথচ নন্দিতার ক্ষেত্রে এর কিছুই ঘটেনি৷ সকলেই তার দিকে প্রশ্নের তীর ছুড়ে দিয়েছেন৷ সকলেই তাঁর অসুখকে সন্দেহ করেছেন৷ একঘরে হয়ে থেকেছেন নন্দিতা৷ এমনকি তাঁর চিকিৎসকও বলেছিলেন, অসুখের বিষয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করতে নয়৷ ভবিষ্যতে কারও যাতে এই সমস্যাগুলির মুখোমুখি হতে না হয়, তার জন্যই তাঁর নতুন প্রকল্প শুরু করেছেন নন্দিতা৷
টিবি রোগীদের নিয়ে কাজ করা একটি এনজিও-র কর্মী মঞ্জু আশাও একইরকম সামাজিক সমস্যার কথা বলেছেন৷ নন্দিতার কাজকে তিনি কুর্নিশ জানিয়েছেন৷