1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যক্ষ্মার বিরুদ্ধে লড়াই

মিরিয়াম গ্যারকে/আরবি৭ আগস্ট ২০১৩

অস্বাস্থকর পরিবেশ, অপুষ্টি, সংকীর্ণ বাসস্থান – এসব কিছুই যক্ষ্মা রোগকে প্রভাবিত করে৷ বৈদেশিক সাহায্য ছাড়া তানজানিয়ার পক্ষে বছরে হাজার হাজার রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব নয়৷ এরপরেও সাফল্য কিন্তু আছে৷

ছবি: Alexander Joe/AFP/Getty Images

জন আন্দ্রেয়া মাশিম্বা এই রকমই একজন রোগী৷ টেমেকে অঞ্চলের একটি হাসপাতালের সামনে কয়েক ঘণ্টা ধরে একটি কাঠের বেঞ্চে বসে আছেন তিনি৷ ‘‘আমি এখানে যক্ষ্মার চিকিৎসার জন্য এসেছি৷ ছয় সপ্তাহ আগে জানতে পারি যে আমি অসুস্থ'', বলেন ৫৮ বছর বয়সি মানুষটি৷ তানজানিয়ার দার এস সালাম-এর একটি শিল্প়াঞ্চল টেমেকে৷ আট লক্ষ অধিবাসীর শহরটিতে বেশির ভাগ মানুষই শ্রমজীবী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী৷ উপার্জনও তাঁদের অত্যন্ত কম৷ জন আন্দ্রেয়া মাশিম্বা অসুস্থ হওয়ার আগে কাঠ কয়লা বিক্রি করতেন৷ তিনি জানান, ‘‘আমার বুকে ব্যথা হতো৷ ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছিলাম আমি৷ তারপর হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারলাম যে আমার যক্ষ্মা হয়েছে৷ আরো পরীক্ষা করে জানা গেল যে, আমার এইচআইভি-র সংক্রমণও রয়েছে৷''

যক্ষ্মা কবলিত দেশগুলির অন্যতম তানজানিয়া

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ২০টি যক্ষ্মা কবলিত দেশগুলি মধ্যে তানজানিয়া অন্যতম৷ বছরে নতুন সংক্রমণ হয় প্রায় ৬০ হাজারের মতো৷ গত তিন দশকে টিবি রোগীর সংখ্যা পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে৷ এইচআইভি-র সংক্রমণ থাকলে যক্ষ্মার কবলেও পড়েন রোগীরা৷ এছাড়া, এইডস রোগীদের মৃত্যুর প্রধান কারণও যক্ষ্মা৷

সঠিক সময়ে ধরা পড়লে ও চিকিৎসা করলে টিবি ভালোও হয়৷ রোগ শনাক্তকরণ ও থেরাপিতে তানজানিয়া অনেক উন্নতি করেছে৷ জানান, সংক্রামক রোগ দমনে সক্রিয় গ্লোবাল ফান্ডের প্রধান ক্রিশ্টোভ বেন৷ তানজানিয়ার একটি হাসপাতালের পরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন তিনি বেশ কয়েক বছর৷

যক্ষ্মা কবলিত দেশগুলি মধ্যে তানজানিয়া অন্যতমছবি: The Global Fund/Juda Mgwenya

ইতোমধ্যে যক্ষ্মা দমনে সাফল্যের হার ৮৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে৷ বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিকের সমন্বয়ে চিকিত্সা করতে সময় লাগে কমপক্ষে ছয় মাস৷ সব মিলিয়ে ১০০ ডলারের মতো খরচ হয়৷ তবে রোগী নিখরচায় চিকিৎসা পান৷ এক্ষেত্রে গ্লোবাল ফান্ড থেকে আর্থিক সহায়তা পায় তানজানিয়া৷ এই প্রতিষ্ঠানটি আবার বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া অর্থ এবং ব্যক্তিগত দান থেকে খরচ চালায়৷ জার্মানি এ পর্যন্ত ১.২ বিলিয়ন ডলার এই ফান্ডে দিয়েছে৷

ট্যাবলেট ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রয়োজন

ট্যাবলেট ও পুষ্টিকর খাদ্যের ওপর এক গাদা পুস্তিকা নিয়ে উঠানে চাদর পেতে বসে আছেন ২৭ বছরের লোয়িক৷ পরনে হলুদ টি-শার্ট ঝকঝক করছে৷ লোয়িক এলাকার একজন স্বেচ্ছাসেবী এবং টিবি রোগীদের দেখাশোনা করেন৷ আজ তিনি ২১ বছর বয়সি এলিজাবেথকে বোঝাবেন, কীভাবে ট্যাবলেট নিতে হবে এবং দেড় বছরের মেয়েকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে৷ চার মাস আগে টিবি ধরা পড়েছে এলিজাবেথের৷

লোয়িক টিবি রোগীদের গড়ে তোলা একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন৷ এটির লক্ষ্য ভুক্তভোগীদের রোগ সম্পর্কে বোঝানো এবং চিকিত্সার সময় তাঁদের দেখাশোনা করা৷ ‘‘আমি জানিনা কতজনের জীবন আমি রক্ষা করতে পেরেছি'', বলেন লোয়িক৷ কয়েক বছর আগে তাঁর নিজেরও টিবি হয়েছিল৷ এখন গড়ে প্রতিদিন তিন জন রোগী দেখেন তিনি৷ ‘‘আমার এলাকায় সবসময় ঘোরাঘুরি করতে হয় আমার৷ হলুদ টি-শার্ট দেখেই লোকে চেনে আমাকে৷ তখন তারা কাছে এসে রোগের লক্ষণগুলি বর্ণনা করেন আমাকে'', জানান লোয়িক৷

রোগীর বাড়িতে গিয়ে দেখাশোনা করা

রোগীর বাড়িতে গিয়ে দেখাশোনা করলে হাসপাতালগুলির ভার লাঘব হয় অনেকটা৷ এছাড়া রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসা পেতে পারেন তাঁরা৷ গ্লোবাল ফান্ড-এর ক্রিশ্টোফ বেন এটিকে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে মনে করেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘সাধারণত শনাক্ত না হওয়া অসুখই বেশি বিপজ্জনক৷ এ জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিত্সাখাতে আরো অর্থ বিনিয়োগ করা প্রয়োজন৷''

সাফল্যের হার বেশি হলেও কখনও কখনও ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে পড়ে টিবির ব্যাকটেরিয়ারা৷ সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজে লাগে না৷ এক্ষেত্রে রোগীদের শেষ ভরসা তানজানিয়ার উত্তরে মোশি এলাকার কিনবোংগোটো হাসপাতাল৷ এই অঞ্চলের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ৷ ৩২০ বেডের হাসপাতালে ৪০টি বেড সংরক্ষিত করা আছে ওষুধ প্রতিরোধী রোগীদের জন্য৷ কিন্তু বর্তমানে এ ধরনের ৪৫ রোগীর চিকিত্সা করা হচ্ছে৷ গ্লোবালের ফান্ডের আর্থিক সহায়তায় এই বিভাগটি এখন বিস্তৃত করা হচ্ছে৷

এই রকমই এক রোগী মেরি৷ মশির হাসপাতালে চিকিৎসা হচ্ছে তাঁর৷ হাসপাতালের ডাক্তার কিসংগা জানান, ‘‘মেরির শরীর ওষুধ প্রতিরোধী৷ আট সপ্তাহ ধরে কাশছেন তিনি, সাথে জ্বর৷ শরীর ক্ষীণ হয়ে পড়েছে, বুকে ব্যথা৷'' আরও আট সপ্তাহ থাকতে হবে তাঁকে হাসপাতালে৷ কিন্তু মেরি আশাবাদী৷ ভালো হয়ে তাঁর ছোট্ট ব্যবসাটি আবার চালাতে পারবেন বলে মনে করেন এই তরুণী৷

জন আন্দ্রেয়া মাশিম্বাও বিশ্বাস, ভালো হয়ে আবার কাঠ কয়লা বিক্রির কাজটা করতে পারবেন তিনি৷ তবে এর আগে পরিবারকে তাঁর এইচআইভি-তে সংক্রমণের বিষয়টা জানাতে হবে৷ কেমন করে এই সংক্রমণ হয়েছে, সেটা অবশ্য জানেন না মাশিম্বা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ