জার্মানির উত্তরে নর্থ সি বা উত্তর সাগরের পানির তাপমাত্রা বেড়েছে এক ডিগ্রির বেশি৷ তার ফলে নর্থ সি-র প্রাণীবৈচিত্র্যের উপর কী প্রভাব পড়েছে, তা নিয়ে গয়েষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা৷
বিজ্ঞাপন
জোয়ার-ভাটা অনুযায়ী জার্মানির নর্থ সি বা উত্তর সাগর উপকূলে ওয়াডেন সি নামের টাইডাল ফ্ল্যাটস দেখা দেয়৷ হাজার হাজার বছর ধরে এই ওয়াডেন সি নানা ধরনের মাছ ও অন্যান্য প্রাণীদের বাসস্থান৷ কিন্তু এখানেও কি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে? নতুন প্রাণীরা বাসা গাড়ছে আর পুরনো বাসিন্দারা উধাও হচ্ছে?
ধীবর আর গবেষকরা মিলে সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন৷ যেমন ডানিয়েল আহরেন্স, যিনি চিংড়ি মাছ ধরেন৷ গত কয়েক বছরে তাঁর জালে বেশ কিছু মাছ উঠেছে, যা সচরাচর এ অঞ্চলে দেখা যায় না৷ মেরিন বায়োলজিস্ট কাই ভ্যাটিয়েন তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা চান – যে কারণে তিনি মাছ-ধরার নৌকায় জেলেদের সঙ্গে সাগরে যান৷
কাঁকড়া ধরার জালের ফুটোগুলো ছোট হয়, তার ফলে অতি ছোট মাছও ধরা পড়ে৷ অর্থাৎ পরিবেশে কী ঘটছে, তা জানার একটা ভালো উপায় হলো, জালে কী উঠছে, তা পরীক্ষা করে দেখা৷ দিনে দশবার অবধি ১০০ কিলো করে মাছ ওঠে এই জালে৷ আসলে ধরা হয় সাগরের ছোট চিংড়ি, কিন্তু সেই সঙ্গে অন্যান্য মাছও ওঠে৷
সাগরের গভীরে বিস্ময়
ইউনেস্কো বিশেষজ্ঞরা বিশ্বের সমুদ্রের তলদেশের এমন পাঁচটি স্পট চিহ্নিত করেছেন যা বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেতে পারে৷ তাদের ধারণা বেশিরভাগ মানুষই এদের খোঁজ জানেন না৷ ছবিঘরে দেখুন সেই ৫টি স্থান৷
ছবি: The Natural Environment Research Council and IUCN/GEF Seamounts Project C/O Alex D Rogers
গভীরে যাও, অনেক দূরে এবং বিস্মিত হও
কোনো দেশের সীমানার মধ্যে পড়ে না সমুদ্রের এমন পাঁচটি স্থানকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দেয়ার কথা ভাবছে ইউনেস্কো৷ এসব এলাকা যেমন সুন্দর, তেমনি বিরল সব প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর বাস সেখানে৷
ছবি: Kevin Raskoff/NOAA/Wikipedia
‘লস্ট সিটি’
মধ্য-আটলান্টিকের প্রায় ৮০০ মিটার গভীরে অবস্থিত এই এলাকায় থাকা অসংখ্য ছিদ্র থেকে মিথেন আর হাইড্রোজেন গ্যাস বের হয়৷ ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেখানকার ইকোসিস্টেম পৃথিবীর অন্য যে-কোনো জায়গার চেয়ে একেবারে ভিন্ন৷ ২০০০ সালে এই ছিদ্রগুলোর দেখা পান বিজ্ঞানীরা৷ তাঁদের ধারণা, প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বছর ধরে এরকম হচ্ছে৷
ছবি: Woods Hole Oceanographic Institute and Charles Fisher, Pennsylvania State University
কোস্টারিকা থার্মাল ডোম
ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বাঞ্চলে ৫০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে এই স্থানটি৷ ইউনেস্কো এটিকে ‘সামুদ্রিক মরুদ্যান’ হিসেবে উল্লেখ করেছে৷ এখানে বিশাল বিশাল আকারের মাছ, স্তন্যপায়ী এবং হাঙর, টুনা, ডলফিন ও তিমি রয়েছে৷ বিশেষ করে এখানেই আছে নীল তিমি৷ আর বিরল প্রজাতির লেদারব্যাক কচ্ছপও দেখা যায় এখানে৷
ছবি: picture alliance/WILDLIFE
সাদা হাঙর ক্যাফে
মেরিন বায়োলজিস্টরা ঠিক এই নামটিই দিয়েছেন৷ আসলে এটি কোনো কফি হাউজ নয়, উত্তর অ্যামেরিকার মেইনল্যান্ড এবং হাওয়াই এর মাঝামাঝি অবস্থান এটির৷ খালি চোখে এটিকে তেমন বিশেষ কিছু মনে হবে না৷ কিন্তু সাদা হাঙর সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এই এলাকায়৷ এখানেই তারা খাবার খায় এবং প্রজনন করে৷
ছবি: Pterantula (Terry Goss) via Wikimedia Commons
সারগাসো সাগর
ধারণা করা হয় ১৪৯২ সালে কলোম্বাস এই স্থানটি প্রথম ভ্রমণ করেছিলেন৷ বারমুডার দ্বীপগুলো সারাগাসো সাগরের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে৷ এর বিশেষত্ব হলো ভাসমান শৈবাল, মেরিন বায়োলজিস্টরা যাকে বলছেন, ‘ভাসমান স্বর্ণালী রেনফরেস্ট’৷ এছাড়া এলাকাটি ইউরোপীয় ও অ্যামেরিকান ইল মাছদের প্রজনন ক্ষেত্র৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Courtesy Chris Burville
আটলান্টিকের তীর
ভারত মহাসাগরের আটলান্টিকের তীরে সমুদ্রের ৭০০ থেকে ৪,০০০ মিটার গভীরে প্রবাল প্রাচীর, খাড়ি, সমুদ্র সৈকত এবং লেগুনে দেখা মিলবে বড় বড় বায়ুপরাগী ফুল, চেয়ারের সমান স্পঞ্জ এবং শৈবালের৷ এটি আসলে একটি দ্বীপ, যেটি কয়েক লক্ষ বছর আগে সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছিল৷
ছবি: The Natural Environment Research Council and IUCN/GEF Seamounts Project C/O Alex D Rogers
6 ছবি1 | 6
কি মাছ উঠছে জালে?
মেশিনেই কাঁকড়া আর মাছ আলাদা করা হয়৷ সাথে অপ্রয়োজনীয় যা কিছু ধরা পড়ে, সেটাই বিজ্ঞানীদের কাছে মহামূল্যবান৷ মাছের কানকোর পিছনে একটা ছোট্ট দাগ আছে, নাকি নেই? তার ওপরেই নির্ভর করবে, কোন মাছগুলোকে ল্যাবরেটরিতে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করা হবে৷ আলফ্রেড ভেগেনার ইনস্টিটিউট ফর পোলার অ্যান্ড মেরিন রিসার্চের ল্যাবরেটরিতে মাছগুলো পরীক্ষা করেন জীববিজ্ঞানী কাই ভ্যেটিয়েন৷
তিনি একটি মাছ সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন, যা সাধারণত উত্তর সাগরে পাওয়া যায় না৷ একটি ইউরোপীয় সি-বার্শ মাছ৷ ড্র্যাগনের মতো পাখনা এদের বিশেষত্ব৷ সাধারণত এরা থাকে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ পানিতে৷
মেরিন বায়োলজিস্ট কাই ভ্যাটিয়েন বললেন, ‘‘ইউরোপীয় সি-ব্যাস উষ্ণ পানিতে থাকতে ভালোবাসে৷ তবে বিগত কয়েক বছরে এই সি-বার্শ মাছগুলোকে ক্রমেই আরো বেশিভাবে নর্থ সি-তে পাওয়া যাচ্ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের একটা লক্ষণ হতে পারে৷''
গাল্ফ স্ট্রিম নামের উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের পরিবর্তনের ফলেই কি উত্তর সাগরের পানির তাপমাত্রা গত ৪০ বছরে ১ দশমিক ৪ সেন্টিগ্রেড বেড়েছে? এই অপ্রত্যাশিত মাছগুলো কি একটা ব্যতিক্রম, নাকি এরা কোনো ব্যাপকতর পরিবর্তনের সূচক? এই প্রশ্নের উত্তর পাবার জন্য অন্যান্য জেলেদেরও বলা হয়েছে, চিংড়ির সাথে আর কী কী মাছ ধরা পড়ছে, সেটা যেন তারা নোট করে রাখেন৷
মাছ-ধরা জাহাজের ক্যাপ্টেনরা যে এই গবেষণায় সাহায্য করতে রাজি, শুধুমাত্র সেই কারণেই এই গবেষণা সম্ভব হয়েছে৷ নয়ত গবেষকদের পক্ষে সাগরের রহস্য ভেদ করা সম্ভব ছিল না৷ অন্যদিকে মৎস্যশিকারীরা জানতে পারছেন, সাগরের প্রাণীদের জীবন কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে৷ এ এমন একটি প্রকল্প, যা থেকে ধীবর, বিজ্ঞানী ও পরিবেশ, সকলেই উপকৃত হচ্ছেন৷
গবেষণার জাহাজে বসবাসের অভিজ্ঞতা যেমন
ব্রেমারহাফেন থেকে কেপ টাউনে যাচ্ছে গবেষণার কাজে ব্যবহৃত জাহাজ পোলারস্ট্যার্ন৷ সেই জাহাজের একজন ক্রু কিছু বিশেষ ছবি শেয়ার করেছেন ডয়চে ভেলের সঙ্গে৷ তাঁর সমুদ্র জীবনের কিছুটা বোঝা যাবে এ সব ছবিতে৷
ছবি: Eva Brodte
রৌদ্রোজ্জ্বল সুন্দর দিন
গভীর সমুদ্রে একটি জাহাজে দিনরাত কাজ করার অভিজ্ঞতাটা চমৎকার হয়ে ওঠে এমন রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায়৷ তবে সব দিন এমন থাকে না৷
ছবি: Eva Brodte
মেঘাচ্ছন্ন দিনগুলো
মেঘাচ্ছন্ন দিনগুলো জাহাজের ক্রু’দের জন্য সুখকর নয়৷ তবে দিন যেমনই হোক না কেন, কাজ তাদের চালিয়ে যেতে হয়৷
ছবি: Eva Brodte
সবার আগে নিরাপত্তা
জাহাজের ডেকে যাওয়ার আগে প্রত্যেক ক্রু’র নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক৷ আর সেই নিরাপত্তার অনিবার্য অংশ হচ্ছে লাইফজ্যাকেট এবং হেলমেট পরা৷
ছবি: Eva Brodte
নমুনা সংগ্রহ
এই সমুদ্রযাত্রার মূল লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তন সম্পর্কে আরো তথ্য সংগ্রহ৷ ক্রু’রা গবেষণার জন্য পানির নমুনা সংগ্রহ করেন৷
ছবি: Eva Brodte
সমুদ্র থেকে গবেষণাগারে
গবেষকরা বালতিতে করে সমুদ্র থেকে পানি তোলেন৷ এরপর সেগুলো ফিল্টারে পরিশোধনের পর কন্টেইনারে করে গবেষণাগারে নিয়ে যান৷
ছবি: Eva Brodte
ফলাফলের অপেক্ষা
বিজ্ঞানীরা পানির নমুনার মধ্যে থাকা ক্লোরোফিলের মতো রঞ্জক পদার্থগুলো জাহাজের বিভিন্ন গবেষণাগারে পরীক্ষা করেন৷ এ সব পরীক্ষার ফলাফল জানতে উৎসুক তারা৷ আমরাও তা আপনাদের জানাতে পারবো শীঘ্রই৷