সাধারণ নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগেও জার্মানির তিন চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী জনমত সমীক্ষায় যথেষ্ট সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হচ্ছেন৷ করোনা সংকট ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ধাক্কায় নির্বাচনি প্রচারও জমছে না৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির সাধারণ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি৷ ২৬শে সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ হলেও চলতি আগস্ট মাসেই ডাকযোগে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়ে যাবেন জার্মানির মানুষ৷ করোনা সংকটের জের ধরে ভোটারদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ আগেই সেই সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ অর্থাৎ রাজনৈতিক দল ও নেতাদের হাতে ভোটারদের মন জয় করার জন্য সময় খুবই কম৷ অথচ নির্বাচনি প্রচার কিছুতেই জমে উঠছে না৷ জনমত সমীক্ষায় তিন চ্যান্সেলর পদপ্রার্থীর মধ্যে কেউই বিপুল সমর্থন পাচ্ছেন না৷ তাদের প্রতি সম্মিলিত সমর্থন, এমনকি ৬০ শতাংশও ছুঁতে পারছে না৷ ফলে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের ক্ষমতাকালের শেষে বিশাল শূন্যস্থান দেখা যাচ্ছে৷
সংসদীয় গণতন্ত্র হিসেবে জার্মানিতে আসনের বিচারে রাজনৈতিক দলগুলির শক্তি নির্ধারিত হয়৷ তবে শীর্ষ নেতার জনপ্রিয়তাও সমর্থন আদায়ে বড় ভূমিকা পালন করে৷ করোনা সংকট ও সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবারের নির্বাচনি প্রচারের উপর গভীর প্রভাব ফেলছে৷ নি্বাচনি ইশতাহার প্রকাশ করা সত্ত্বেও ক্ষমতায় এলে দলগুলির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে পার্থক্য তেমন স্পষ্ট হচ্ছে না৷ বিশাল জনসভা, জ্বালাময়ী ভাষণ, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তীব্র বাক্যবাণেরও তেমন লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না৷ তার উপর তিন শীর্ষ নেতা জনমানসে যথেষ্ট সমীহ আদায় করতে পারছেন না৷
ম্যার্কেলের ইউনিয়ন শিবিরের চ্যান্সেলর পদপার্থী আরমিন লাশেট মনোনয়নের পর প্রাথমিক দুর্বলতা কাটিয়ে জনসমর্থনের বিচারে বাকিদের পেছনে ফেলে কিছুটা এগিয়ে যেতে পেরেছিলেন বটে, কিন্তু তার নিজের রাজ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর ‘দুর্বল প্রশাসক' হিসেবে বদনাম এখনো ঝেড়ে ফেলতে পারছেন না৷ এমনকি নিজের শিবিরের সমর্থকদের মধ্যে অর্ধেকের কাছেও তিনি গ্রহণযোগ্য নয়৷ রাজনীতি সরিয়ে রেখে এসপিডি দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী ওলাফ শলৎস-কে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার বন্যায় বিধ্বস্ত একটি জায়গা পরিদর্শনে গিয়েও তাঁর তেমন লাভ হয় নি৷ উলটে বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর ও অর্থমন্ত্রী হিসেবে শলৎস সংকটের সময়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ভোটারদের কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য নেতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন৷
সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রার্থী হিসেবে আসরে নামলেও একের পর এক ব্যক্তিগত ধাক্কার কারণে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়েছেন সবুজ দলের প্রথম চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী আনালেনা বেয়ারবক৷ মঙ্গলবার তার দল পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির পরিকল্পনা পেশ করলেও জনসমর্থন আদায় করতে পারবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)
জার্মানির যে বন্যা বাংলাদেশের কথা মনে করিয়ে দেয়
জার্মানিতে হঠাৎ বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৮০ জন মানুষ, এখনো নিখোঁজ দেড় শতাধিক৷ ১৪ জুলাইয়ের সেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড নয়নার-আরভাইলার অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতির কিছু ছবি তুলে এনেছেন ডয়চে ভেলের আরাফাতুল ইসলাম৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
ক্ষতচিহ্ন সর্বত্র
জার্মানির বাডনয়নার-আরভাইলার অঞ্চলে গেলেই ছোট্ট একটি খাল চোখে পড়বে৷ ‘আর’ নামের সেই নদী বাংলাদেশের বিবেচনায় অবশ্য খাল বলাই শ্রেয়৷ সাধারণত ষাট বা সত্তর সেন্টিমিটারের বেশি পানি থাকে না৷ কিন্তু টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে হঠাৎ করে সেই নদীর পানি বেড়ে কয়েক মিটার৷ পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ছুটে আসে সেই পানিতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় আশেপাশের এলাকা৷ ছবিতে ‘আর’ নদীর উপরে একটি ভাঙা সেতু দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
ভেঙ্গে গেছে ঘরবাড়ি, বিশেষ করে নীচের তলা
বাড নয়নার-আরভাইলার অঞ্চলের অনেক বাড়ি কয়েকশত বছরের পুরনো৷ সাধারণ সময়ে পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় এই অঞ্চলের সেসব বাড়িঘর পানির তোড় সামলাতে পারেনি৷ সেখানকার অনেক পুরনো বাড়ি পানির ধাক্কায় ভেঙ্গে গেছে, কিংবা নীচের তলার সবকিছু পানিতে ভেসে গেছে৷ ছবিতে ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ির ভেতরের চিত্র দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
উপড়ে গেছে ট্রেন লাইন, ভেঙ্গে গেছে রাস্তা
বাড নয়নার-আরভাইলারের মূল ট্রেনলাইনটি পানির চাপে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে৷ কোথাও কোথাও রেল লাইনের চিহ্নও নেই৷ এমনকি রাস্তাও আর নদীতে বিলিন হয়ে গেছে৷ ছোট্ট নদীটিকে এখন বেশ বড় মনে হয়, যদিও পানি নেমে গেছে আগের মতোই অনেক নীচে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
রাস্তায় পড়ে আছে দামি গাড়ি
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার রাস্তাঘাটে এখনো পড়ে আছে অনেক গাড়ি৷ হঠাৎ বন্যায় সেসব গাড়ি দুমড়েমুচড়ে গেছে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
নেই বিদ্যুৎ কিংবা পানির সংযোগ
১৪ জুলাই বন্যার পর এখনো সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা যায়নি৷ বরং যেভাবে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা পুনরায় কবে চালু করা যাবে তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে৷ তবে, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সেখানে সব বাড়ির সামনে সাময়িক পানি কন্টেইনার বসানো হয়েছে৷ গাড়িতে করে পানিভর্তি সেসব কন্টেইনার নিয়ে যাওয়া হয়৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
বিকল্প ব্যবস্থা জেনারেটর
বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চালু না থাকলেও অনেক বাড়িতেই জেনারেটর চালু করা হয়েছে৷ এসব জেনারেটর থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে ঘরবাড়ির ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারসহ অন্যান্য কাজ করা হচ্ছে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
বড় চ্যালেঞ্চ আবর্জনা পরিষ্কার
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় হাজার হাজার টন ময়লা আবর্জনা সৃষ্টি হয়েছে যা না সরালে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন৷ আপাতত তাই বড় বড় ট্রাকে করে ময়লা আবর্জনা সরাতেই ব্যস্ত অনেকে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
সহায়তায় সেনাবাহিনী
আরভাইলার অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সেনাবাহিনীও নিয়োগ করা হয়েছে৷ সেনা সদস্যরা এলাকাটি পরিষ্কারে সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন গাড়িতে তেলও ভরে দিচ্ছে বিনামূল্যে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
সময় লাগবে অনেক
বাংলাদেশের মতো দেশগুলো এরকম বন্যার সঙ্গে পরিচিত হলেও জার্মানিতে গত অর্ধশতকে এরকম বন্যা দেখা যায়নি৷ শীতপ্রধান এই দেশটিতে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ জার্মানিতে এখন ঘনঘন দীর্ঘ সময় ধরে অবিরাম ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে যা অতীতে দেখা যায়নি৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
বড় ক্ষতির মুখে ওয়াইন উৎপাদকরা
জার্মানির বাড নয়নার-আরভাইলার এলাকা ওয়াইনের জন্য বিখ্যাত৷ সেখানকার পাহাড়ে আঙ্গুর চাষ করা হয়৷ বন্যার কারণে ওয়াইন উৎপাদকরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন৷ যেসব ওয়াইনের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলো বিক্রি করে ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করছেন অনেকে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
মানুষ মানুষের জন্য
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাধারণ মানুষ গিয়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন৷ কেউ কাজ করছেন সংগঠনের ব্যানারে, কেউবা একান্তই ব্যক্তি উদ্যোগে৷ তারা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি খাবার এবং পানীয়ও পৌঁছে দিচ্ছেন৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
গরম খাবারের আয়োজন
বাড নয়নারে গরম খাবারের আয়োজন করেছেন একদল স্বেচ্ছাসেবী৷ সেখানে কাজ করা প্রীতি জানান, প্রতিদিন ছয়হাজারের মতো মানুষকে গরম খাবার সরবরাহ করছেন তারা৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
যার যা প্রয়োজন নিয়ে যাচ্ছেন
রাস্তার পাশে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী সাজিয়ে রাখা হয়েছে৷ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা সেখান থেকে নিজেদের প্রয়োজনমত জিনিসপত্র নিয়ে যেতে পারছেন৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
চালক, আরোহীদের জন্য পানীয়
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে এভাবে পানীয় সরবরাহ করছেন একদল স্বেচ্ছাসেবী৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
মানুষ মানুষের জন্য
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের পাশে দ্রুত দাঁড়িয়েছেন অন্যান্য এলাকার মানুষেরা৷ এই কঠিন সময়ে সাধারণ মানুষের এই সহযোগিতায় কৃতজ্ঞ বাড নয়নার-আরভাইলার অঞ্চলের বাসিন্দারা৷ বিভিন্ন বাড়ির সামনে তাই তারা ধন্যবাদ সূচক বিভিন্ন ব্যানার টাঙ্গিয়েছেন৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
পর্যটকরা ফিরবেন কবে?
বাড নয়নার-আরভাইলার অঞ্চল অনেকটাই পর্যটন নির্ভর৷ প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ সেখানে হাইকিং করতে কিংবা ওয়াইন পরখ করতে যান৷ তবে, পাহাড় ঘেরা এই অঞ্চলে পর্যটকরা আবার কবে যেতে পারবেন তা নিশ্চিত নয়৷ কেননা, বন্যার ক্ষতি মেরামতে আপাতত সেখানে স্বেচ্ছাসেবী, সাংবাদিক ও জরুরি সেবা প্রদানকারী ছাড়া অন্য কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
আরো দেখুন
জার্মানিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড নয়নার-আরভাইলার অঞ্চল থেকে শুক্রবার ফেসবুকে একাধিক লাইভ করেছেন ডয়চে ভেলের সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম৷ সেসব লাইভে সেখানকার পরিস্থিতি আরো বিস্তারিত দেখতে চাইলে ‘‘আরো+’’ লিংকে ক্লিক করুন৷