1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‘কলকাতায় নির্বাসন’’

শীর্ষ বন্দোপাধ্যায়, কলকাতা১৪ এপ্রিল ২০১৪

বার্লিন নিবাসী আলোকচিত্রী টোমাস মায়ার ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় প্রথম এসেছিলেন এই তো সেদিন৷ কিন্তু কী দারুণ মমতায় তিনি ফ্রেমবন্দি করেছেন দেশান্তরী ভাবনা৷

বার্লিন নিবাসী আলোকচিত্রী টোমাস মায়ারের ক্যামেরায় তোলা কলকাতার এক যৌনকর্মীছবি: DW/T. Meyer

‘‘যদি নির্বাসন দাও, ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াব, বিষ পান করে মরে যাব...''৷ বলেছিলেন যিনি, প্রয়াত কবি সেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে টোমাস মায়ারের আলোকচিত্র প্রদর্শনীর শুরু৷ সিগাল ফাউন্ডেশন ফর আর্টস এবং কলকাতার গ্যোটে ইনস্টিটিউট বা মাক্সম্যুলার ভবনের যৌথ উদ্যোগে এই প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘‘এক্সাইল ইন ক্যালকাটা''৷ বাংলা করলে দাঁড়ায় – ‘‘কলকাতায় নির্বাসন''৷

আসলে এ এক অন্যরকম নির্বাসিতের আত্মকথা৷ ১০ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত প্রদর্শনীটি চলবে কলকাতায় এবং এই প্রথম কোনো প্রদর্শনী প্রায় একই সঙ্গে কলকাতা আর ঢাকায় চলবে৷ টোমাস মায়ার ইতিমধ্যেই ঢাকায় গিয়ে তাঁর তোলা ছবিগুলির প্রিন্ট করাতে ব্যস্ত৷ চলতি সপ্তাহের শেষদিকেই ঢাকাতেও শুরু হয়ে যাবে ‘‘কলকাতায় নির্বাসন''৷

মায়ারের ক্যামেরায় কলকাতার কসাই বাবলুছবি: DW/T. Meyer

মনে হতে পারে, কলকাতা শহর আর তার কয়েকজন বাসিন্দার ছবি-র প্রদর্শনী একই সঙ্গে ঢাকায় করার কী বাধ্যতা ছিল! আসলে সংযোগটা সেখানেই, একেবারে আত্মিক সংযোগ৷ সেই ১৯৪৬ সালে দেশভাগের পর থেকে যত মানুষ নানা সময়ে বাংলাদেশ ছেড়ে কলকাতায় এসে বাসা বেঁধেছেন, টোমাস মায়ারের ছবির বিষয় তাঁরাই৷ যেমন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়৷ ‘‘যদি নির্বাসন দাও...'' কবিতাটি সুনীল কলকাতা শহর নিয়ে লিখলেও আসলে তো তিনি সাবেক পূর্ব বঙ্গের মানুষ৷

এই সূত্র ধরেই টোমাসের ছবিতে জায়গা পেয়েছেন প্রবীণ শিল্পী যোগেন চৌধুরি অথবা নবীন শিল্পী এলিনা বনিক৷ দেশভাগের স্মৃতি এখনও বয়ে বেড়ান যোগেন চৌধুরি, কিন্তু এলিনা সেকথা শুনেছেন তাঁর বাবা-মায়ের কাছে৷ দুই প্রজন্মের মানসিকতাতেও বিস্তর ফারাক৷ এলিনা কখনও বাংলাদেশে, তাঁদের ভিটে দেখতে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করেন না৷ কিন্তু যোগেন চৌধুরি গিয়েছিলেন ছেড়ে আসা দেশ দেখতে৷ তাঁর শৈশবের স্মৃতিজুড়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে ফুলে ভরা একটি গাছ, বাংলাদেশের৷ বিভিন্ন সামাজিক অবস্থানের এবং পেশার মানুষজন ভিড় করেছেন টোমাস মায়ারের প্রদর্শনীতে, যাঁদের প্রত্যেকেরই অস্তিত্বের শিকড় কোনো না কোনো ভাবে রয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে৷

সুনীল, যোগেন বা এলিনা ছাড়াও নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায়, বামপন্থি শ্রমিক নেতা শ্যামল চক্রবর্তী, কলকাতার কুমোরটুলির প্রসিদ্ধ মৃৎশিল্পী গৌরাঙ্গ চন্দ্র রুদ্র পালের মতো চেনা নাম, চেনা মুখ যেমন আছে, তেমনই আছে সাইকেল রিকশা চালক দীপু রায়, বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী উধম মন্ডল, পরিচারিকা কল্পনা মন্ডল, যৌনকর্মী কল্যাণী মন্ডল বা বাবু মোল্লার মতো যুবক, যার পেশা বাজারে মুরগি জবাই করা৷ এঁদের সবারই একটা করে গল্প আছে বলার মতো এবং এক আত্মিক সম্পর্ক বা সম্পর্কহীনতা আছে ওপার বাংলার সঙ্গে৷ এঁরা কেউ বলেন, ‘‘খুব দেখতে ইচ্ছে করে বাপ-পিতামহের দেশটা৷'' আবার কেউ বলেন, ‘‘না, কোনো আকর্ষণ অনুভব করি না৷''

বার্লিনের আলোকচিত্রী টোমাস মায়ার যুক্ত আছেন জার্মানির সুপরিচিত ফোটোগ্রাফি এজেন্সি অস্টক্রয়েৎস-এর সঙ্গে৷ তাঁর মূল কাজের বিষয়টি ছিল বর্ডার অর্থাৎ সীমান্ত৷ সেই সূত্রেই কলকাতা-ঢাকা, বা বৃহত্তর প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ, দুই বাংলার সংযোগের বিষয়টি তাঁর মাথায় আসে৷ ২০১২ সালে তিন সপ্তাহের জন্য কলকাতায় ছবি তুলতে আসেন টোমাস৷ সেই প্রথম তাঁর কলকাতায় ভারতে আসা৷ ফলে মাক্সম্যুলার ভবনের কর্মীদের সাহায্য তাঁকে নিতে হয়েছে৷ প্রদর্শনীর গোটা ২০ ছবি সেই উদ্যোগেরই ফসল৷ সুন্দর ছবি তো বটেই, কিন্তু আরও আকর্ষক সেসব ছবির পিছনের ভাবনা৷ শহর কলকাতায় সাড়া ফেলেছে এই নির্বাসন চিত্রমালা, ঢাকা শহরেও নিশ্চয়ই তাদের সমাদর হবে৷ মনে করিয়ে দেবে দুই বাংলার নাড়ির টানকে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ