1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যন্ত্রে নির্ভরতা বাড়ছে, কর্মসংস্থান কমছে!

ফয়সাল শোভন
৭ মে ২০১৯

প্রতিযোগিতায় টিকতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা কারখানায় যন্ত্রের ব্যবহার শুরু করেছেন৷ এ কারণে আগের তুলনায় শ্রমিক কম লাগছে৷ কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার পেছনে এটি একটি কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷

Bangladesch Textilfabrik Dhaka
ছবি: Reuters/A. Biraj

তৈরি পোশাক কারখানায় সবচেয়ে বেশি শ্রমিক প্রয়োজন হয় সুইং বা সেলাই পর্যায়ে৷ সেখানেই অটোমেশন বা যান্ত্রিকীকরণের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হচ্ছে বলে জানান শরীফ জহির৷ 

তিনি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক৷ নিজের কারখানার চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘‘যেখানে (জিন্সের প্যান্টের) একটা ব্যাক পকেট (তৈরির জন্য) চার জন অপারেটর দিয়ে কাজ করতে হতো, সেটা একটা যন্ত্র দিয়ে হয়ে যাচ্ছে৷ একজন অপারেটর দিয়েই হচ্ছে চারজনের কাজ৷''

দক্ষতা বাড়ানোর জন্যই অটোমেশনে বিনিয়োগ করতে হবে: শরীফ জহির

This browser does not support the audio element.

তাঁর কারখানার প্রতিটি উৎপাদন লাইনে আগের চেয়ে প্রায় ২০ জন অপারেটর কম লাগছে, কমে যাচ্ছে সময়ও৷ এমন সুবিধার কারণে অনেক উদ্যোক্তাই এখন কারখানায় অটোমেশনের উপর জোর দিচ্ছেন৷ ‘‘বড়-ছোট সবারই একটা রিয়েলাইজেশন এসেছে, যে ৪৫ থেকে ৫০ ভাগ অদক্ষতা নিয়ে আমরা চলছিলাম, সেটা দিয়ে আর সম্ভব না৷ যারা এটাকে উন্নত করতে পারবে, তারাই টিকবে৷ না হলে অনেক কারখানা অর্থ সঙ্কটে পড়ে যাবে৷ দক্ষতা বাড়ানোর জন্যই অটোমেশনে বিনিয়োগ করতে হবে,'' বলেন শরীফ জহির৷

কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার অটোমেশন একটি সুইং যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে, যার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাপড় কেটে তা প্রয়োজনমতো সেলাই করে জোড়া লাগানো যায়৷ এই যন্ত্র ব্যবহার করে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা খুলেছে চীনের প্রতিষ্ঠান তিয়ানইউয়ান গার্মেন্টস কোম্পানি৷ সেখানে প্রচলিত কারখানার চেয়েও ৫০ থেকে ৭০ ভাগ শ্রমিক কম লাগবে৷ কিন্তু উৎপাদন বাড়বে ৭০ ভাগ৷ চীনের কারখানাগুলোও ব্যাপকভাবে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির আওতায় আনা হচ্ছে৷ তাদের সাথে পাল্লা দিতে গত দুই-তিন বছর ধরে কারখানার যান্ত্রিকীকরণ শুরু করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারাও৷

বিজনেস প্রসেসিংয়ে আমরা পিছিয়ে, এই পার্টটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে: সৈয়দ এম তানভীর

This browser does not support the audio element.

‘‘বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে প্রোডাক্ট ডেভেলাপমেন্ট এবং ম্যানুফেকচারিং প্রসেসে অটোমেশন শুরু হয়েছে৷  যেমন, থ্রিডি স্যাম্পলিং, অটোক্যাড, অটোকাটার এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি৷ হাইটেক সেন্সর মেশিন, বারকোড রিডার এসব ব্যবহার করা হচ্ছে৷ কিন্তু বিজনেস প্রসেসিংয়ে আমরা পিছিয়ে আছি৷ এই পার্টটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে,'' বলেন বাংলাদেশে দামি জিন্সের অন্যতম রপ্তানিকারক প্যাসিফিক জিন্সের পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর৷

তৈরি পোশাক শিল্পের যান্ত্রিকীকরণ নিয়ে গত বছর জার্মানির দ্য ইন্সটিটিউট ফুর টেক্সটাইলটেকনিক অফ দ্য আরপিডাব্লিউএইচ আখেন ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় ম্যাককিনসি অ্যান্ড কোম্পানি একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কারখানার সুইং বা সেলাই পর্যায়ে, ৯০ ভাগ শ্রমিকের কাজই এখন যান্ত্রিকীকরণ সম্ভব৷ একইভাবে ওয়্যারহাউজ, বন্ডিং, নিটিং, ফিনিশং প্রতিটি ধাপেই যন্ত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন মাত্রায় শ্রমিক কমিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে৷ যান্ত্রিকীকরণ আর ‘লিড টাইম' (পণ্য সরবরাহের সময়) কমানোর উপরই ফ্যাশন শিল্পের ভবিষ্যৎ ব্যবসা নির্ভর করছে বলেও এই প্রতিবেদনে উঠে আসে৷ 

বাংলাদেশের উদ্যোক্তারাও সেই একই চ্যালেঞ্জের কারণে যান্ত্রিকীকরণের দিকে ঝুঁকছেন বলে জানান তানভীর৷ নিজের প্রতিষ্ঠানের উদারহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মেইন কম্পিটিটর তুরস্ক৷ তারা ইউরোপের খুব কাছে৷ লিড টাইমের দিক থেকে তারা অটোমেটিক জিওগ্রাফিক অ্যাডভান্টেজ পাচ্ছে৷ আমরা যখন অটোমেশনে যাই তখন কস্ট রিডাকশন কিংবা ম্যান পাওয়ার রিডাকশনের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ আমি কম্পিটিটিভ অ্যাডভান্টেজ ক্রিয়েট করতে পারছি কিনা৷''

পোশাক শিল্পে শ্রমিক বাড়ছে না, ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে কমেছে

রানা প্লাজা ধসের পর দেশের তৈরি পোশাক খাত নিয়ে শঙ্কা তৈরি হলেও তার প্রভাব তেমন একটা পড়েনি রপ্তানি আয়ে৷ ২০১৩ সাল থেকে এই খাতে বছরে গড়ে ১০ ভাগের মতো রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে৷ অথচ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে এই সময়ে গার্মেন্টস খাতে কর্মসংস্থান বেড়েছে গড়ে মাত্র ২ ভাগ করে৷ ২০১৩ সালের ৩০ লাখ থেকে  শ্রমিক সংখ্যা বেড়ে ২০১৭ সালে শ্রমিক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ লাখে৷

আবার এই পাঁচ বছরে টেক্সটাইল বা বস্ত্রশিল্পে বাড়ার বদলে বরং ৪ লাখের বেশি কর্মসংস্থান কমে গেছে৷ ২০১৩ সালে যেখানে এই খাতে সাড়ে ১৮ লাখ শ্রমিক নিয়োজিত ছিল, ২০১৭ সালে তা নেমে এসেছে ১৪ লাখে৷ 

উৎপাদনশীলতা বাড়ার কারণেই কম শ্রমিক দিয়ে বেশি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে:ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

This browser does not support the audio element.

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ সিপিডির গবেষক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘উৎপাদনশীলতা বাড়ার কারণেই কম শ্রমিক দিয়ে বেশি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে৷ প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার ফলে আগে যেসব শ্রমিক কারখানার সহজ কাজ যেগুলো করতেন সেই ধরণের কাজ কমে যাচ্ছে৷ সেগুলো এখন মেশিন দিয়েই করা সম্ভব হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে৷'' 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএস-এর হিসাবে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে গোটা ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ৯৫ লাখ শ্রমিক নিয়োজিত ছিল, যা ২০১৭ সালে সাড়ে ৮৭ লাখে নেমে এসেছে৷ অর্থাৎ, এই সময়ে আট লাখ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন এই খাত থেকে৷ বছরে কর্মসংস্থান কমে গেছে ১ দশমিক ৬ ভাগ হারে৷ অথচ ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের আয়ও গড়ে ১০ ভাগের বেশি বেড়েছে এই সময়ে৷ 

এক্সিসটিং যেটা ডমিনেটিং সেক্টর , সেটার এম্পলয়মেন্ট ফল করেছে কিন্তু নতুন অপরচিউনিটিজ ক্রিয়েট হয়নি: ড.সেলিম রায়হান

This browser does not support the audio element.

ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের কর্মসংস্থানের প্রায় ৬০ ভাগই আসে গামের্ন্টস ও টেক্সটাইল শিল্প থেকে৷ সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিং-সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘‘বিদ্যমান প্রধান খাতটিতে কর্মসংস্থান কমে গেছে৷ কিন্তু এমন কোনো নতুন খাত তৈরি হয়নি যার মাধ্যমে এই ক্ষতিটা পুষিয়ে নিয়ে কর্মসংস্থান বাড়াতে পারি৷''         

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে বাংলাদেশের  কর্মসংস্থানের বাজারে কী ধরণের প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে সরকারি সংস্থা এটুআই ও আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থা-আইএলও একটি যৌথ গবেষণা করেছে৷ সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, যান্ত্রিকীকরণের কারণে, বাংলাদেশে ৫টি খাতে ৫৩ দশমিক ৮ লাখ কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে রয়েছে৷ ২০৪১ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতেরই ২৭ লাখ বা বিদ্যমান ষাটভাগ কর্মসংস্থান হারিয়ে যেতে পারে৷ ফার্নিচার শিল্পের ১৩ দশমিক ৮ লাখ, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পর্যটন খাতে ঝুঁকিতে আছে ৬ লাখ করে৷ ১ লাখ কর্মসংস্থান চলে যেতে পারে চামড়া শিল্প থেকেও৷

ফয়সাল শোভন ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক৷@FaisalShovon14
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ