কুয়র্ট ও ক্নুট-এর বিকাশ কি একই রকম হবে? স্কুল-কলেজ, পেশা বা বৃহত্তর জীবনে কি বুদ্ধিমত্তার একই রকম প্রতিফলন দেখা যাবে? তিন বছর বয়সে কুয়র্ট ও ক্নুট শিশুদের জন্য উপযুক্ত এক আইকিউ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে৷ তাতে ক্নুট কুয়র্ট-এর তুলনায় ভাল ফল করেছে৷ এমনটা কেন হলো?
ক্নুট-এর বাবা-মা তার সঙ্গে অনেক সময় কাটান৷ তার সঙ্গে খেলেন, কথা বলেন৷ এভাবে তার চিন্তাভাবনায় যুক্তি ও আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে বোধ অনেক বাড়ছে৷ অন্যদিকে কুয়র্ট-এর বাবা-মা নিজেদের স্মার্টফোন নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন৷ ছেলেকে একাই খেলতে হয়৷ এই বয়সেই ক্নুট-এর যথেষ্ট বুদ্ধি হয়েছে৷ জিন শুধু ভিত্তিমাত্র৷ তার বিকাশের জন্য বাস্তব জগতের প্রয়োজন রয়েছে৷
শিশুদের আইকিউ বাড়ানোর সহজ উপায়
আইকিউ, অর্থাৎ বুদ্ধি বেশি শানানো না হলে এখন প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় টেকা দায়৷ কিন্তু শিশুদের আইকিউ কীভাবে বাড়ানো যায়? খুব সহজ কিছু উপায় দেখিয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞ ক্যারেন কুইন৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/beyond/Vladimir Godnik
সব বিষয়ে কথা বলুন
আপনার সন্তানের সঙ্গে সম্ভব হলে সব বিষয়েই কথা বলবেন৷ এতে অল্প অল্প করে জ্ঞান তো বাড়বেই, পাশাপাশি ভাষায় দক্ষতাও বাড়বে৷ শিশু বেশি কথা বললেই ভালো৷ কথা বলায় নিরুৎসাহিত করা তাদের বিকাশের জন্য ক্ষতিকর৷ এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু খুব কম কথা বলে, তাদের তুলনায় বেশি কথা বলতে অভ্যস্ত শিশুদের বুদ্ধি অন্তত ২৮ পয়েন্ট বেশি৷
ছবি: Fotolia/athomass
ভাবনা আর দেখার জগতটা বড় করুন
নানা ধরনের রং, বিভিন্ন আকৃতির বস্তু, নানা রকমের ফল এবং প্রাণী দেখাতে হবে শিশুদের৷ স্কুলে যদি সে ব্যবস্থা থাকে তাহলে তো কথাই নেই৷ তবে নিজেও এমন কিছু বই কিনে দিন, যা পড়ে বা যেসব বইয়ের ছবি দেখে শিশু এ সব সম্পর্কে জানতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Eisenhans
গুনতে শেখান
বাচ্চাদের খুব সহজেই গুনতে শেখানো যায়৷ এই যেমন যদি বলেন, ‘‘পাঁচ মিনিটের মধ্যে খাবার তৈরি হয়ে যাবে’’ – তাহলে কিন্তু শিশু ৫ সংখ্যাটার সঙ্গে পরিচিত হলো৷ যদি বলেন, ‘‘তোমার তিনটা চকলেট আছে, আমার আছে দুটো’’ – তাহলে আপনি ওকে ২ আর ৩ শিখতে সহায়তা করলেন৷ চকলেট যদি হাতে নিয়ে দেখান – তাহলে ওরা আরো উৎসাহ নিয়ে সংখ্যাগুলো শেখার সঙ্গে সঙ্গে গুণতেও শিখবে৷
ছবি: Colourbox/Abbyasov Alexey
স্মৃতি পরীক্ষা
কোনো বই পড়া শেষ হলে আপনার সন্তানকে বইয়ের গল্পটা নিজের মতো করে বলতে বলুন৷ এভাবে শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়ানো যায়৷ স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর আরো সহজ উপায়ও আছে৷ টেবিলের ওপর কিছু ক্যান্ডি রেখে সন্তানকে দেখান৷ দেখা হয়ে গেলে ক্যান্ডিগুলো কাগজ বা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন৷ তারপর ওকে বলুন টেবিলের ফাঁকা জায়গায় সমান সংখ্যক চকলেট ক্যান্ডির মতো সাজিয়ে রাখতে৷ এভাবেও শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়ানো যায়৷
ছবি: Fotolia/Tatyana Gladskih
খেলনা
পাজল, লেগো কাঠের তৈরি নানা ধরণের ব্লক – এ সব বাচ্চাদের জন্য স্রেফ খেলনা হলেও, ওদের বুদ্ধাঙ্ক বা আইকিউ বৃদ্ধিতে খুব ভালো ভূমিকা রাখে৷
ছবি: picture alliance/landov
সমস্যার সমাধান
নিজের কাপড় নিজেকেই পরতে দিন৷ খুব বেশি সময় লাগছে? বিরক্ত হবেন না৷ ওকে সময় দিন, ওর মতো করে কম সময়ে কাজটা শেষ করার সুযোগ দিন৷ ধীরে ধীরে ও সমস্যাটার একটা সমাধান ঠিকই বের করবে৷ এভাবে রাতের খাবারে কী কী খাওয়া যায়, ও কোথায় বেড়াতে যেতে চায় – এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগও দিন বাচ্চাদের৷ এর ফলে ওদের চিন্তা করা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়বে৷
ছবি: picture-alliance/Beyond
সৃষ্টিশীল কাজ
বাসায় ছবি আঁকার কাগজ, রং, তুলি, কাঁচি, আঠা, ব্রাশ – এ সব রাখতে ভুলবেন না৷ এ ধরনের জিনিস নিয়ে খেলতে খেলতেও অনেক শিশু সৃষ্টিশীল কাজে আগ্রহী হয়ে ওঠে৷ পরবর্তী জীবনে এই আগ্রহটাই হয়ত ওকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে৷
ছবি: picture-alliance/beyond/Vladimir Godnik
7 ছবি1 | 7
মানুষের জিন ও তার পরিবেশ বুদ্ধির উপর কোন মাত্রায় প্রভাব রাখে,যমজ ভাইবোনদের নিয়ে এক গবেষণায় তা বোঝার চেষ্টা চলছে৷ যমজ সন্তানদের আইকিউ অন্যান্য ভাইবোনদের তুলনায় প্রায় সমান হয়৷ কিন্তু তারা যদি ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠে, তখন সেই মিল কমতে থাকে৷ ফলে বোঝা যায়, আইকিউ-এর উপর পরিবেশের কতটা প্রভাব রয়েছে৷
১০ বছর বয়সে এক আইকিউ পরীক্ষায় কুয়র্ট ক্নুট-কে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে৷ কারণ কুয়র্ট-এর স্কুলে শিশুদের চাহিদার প্রতি আরও মনোযোগ দেওয়া হয়৷ ক্নুট-এর ক্ষেত্রে সিলেবাসের কাঠামো অনুযায়ী শিক্ষা দেওয়া হয়৷ সেখানে শিশুদের নিজস্ব আগ্রহ বা ক্ষমতার তেমন গুরুত্ব নেই৷অর্থাৎ বুদ্ধির বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবেশ অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে৷ তারপর পেশাগত শিক্ষার পর্যায়ে এসে ক্নুট ও কুয়র্ট নিজেদের আগ্রহ অনুযায়ী অগ্রসর হতে শুরু করে৷ বুদ্ধিমত্তার উপর জিনের প্রভাব সারা জীবন ধরে বাড়তে থাকে৷
৫০ বছর বয়সে আবার দুই ভাইয়ের দেখা৷ কুয়র্ট ডাক্তার হয়েছে৷ ক্নুট আসবাবপত্র তৈরির কাজ করে৷ তারা যে যার আগ্রহ অনুযায়ী জীবনে এগিয়ে গেছে৷ তাদের বুদ্ধিমত্তা একদিকে উত্তরাধিকার, অন্যদিকে পরিবেশের প্রভাবের সংমিশ্রণ৷
শিশুর হ্যান্ডশেক তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে যা জানান দেয়
হ্যান্ডশেক করার সময় আলতোভাবে বা জোরে ঝাঁকুনি দেয়ার মধ্যে মানুষের ব্যক্তিত্ব কিছুটা বোঝা যায়৷ তবে সমীক্ষা বলছে, শিশুদের করমর্দনের মধ্য দিয়ে ওদের পরবর্তী জীবনে স্বাস্থ্য কেমন থাকবে – তার কিছুটা আগাম সংকেত পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance
আলতো হ্যান্ডশেক, হালকা অসুস্থ
হ্যাঁ, এমনটাই জানা গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণা থেকে৷ গবেষণাটি করেছেন একদল শিশু বিশেষজ্ঞ এবং খেলাধুলা বিষয়ক চিকিৎসকরা৷
সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করে চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণির প্রায় ৫০০টি শিশু৷ এদের মধ্যে যারা দুর্বলভাবে হ্যান্ডশেক করেছে, তারা লেখাপড়াতেও দুর্বল৷ এমনকি তাদের নাকি মনোযোগও কম৷ আর যারা জোরে হ্যান্ডশেক করেছে, তারা নাকি লেখাপড়ায় তুলনামূলকভাবে ভালো৷
ছবি: picture-alliance/W. Bahnmüller
সতর্কতা
যে সব শিশু নরম বা আলতোভাবে হ্যান্ডশেক করে, পরবর্ত্তীতে অর্থাৎ বড় বয়সে তাদের কার্ডিওভাস্কুলার এবং ডায়েবেটিস রোগের ঝুঁকি থাকতে পারে বলে সাবধান করেছেন গবেষকরা৷
ছবি: Colourbox
কেন এমন হয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বিষয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন৷ তবে তাঁদের ধারণা, আলতোভাবে হ্যান্ডশেক করার সাথে শরীরের পেশীর সম্পর্ক রয়েছে৷ গবেষকরা মনে করেন, শিশুর শরীরের পেশীগুলোর দিকে আগে থেকে গুরুত্ব দিলে হয়ত এ সমস্যা এড়ানো সম্ভব৷
ছবি: Colourbox/Praisaeng
গবেষকদের বিশ্বাস
শিশুর হ্যান্ডশেক করা থেকেই আগামীতে শিশুর চিকিৎসক নিজের সেই ছোট্ট রোগী স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটি ইঙ্গিত পেতে পারেন বলে মনে করছেন গবেষকরা৷
ছবি: Kinderklinik Datteln
ডাক্তাররের সাথে করমর্দন করুন
কোনো শিশুর তার ডাক্তারকে করমর্দন করাটা কিন্তু শুধু ভদ্রতা নয়, জরুরিও বটে৷ কারণ হ্যান্ডশেক চিকিৎসককে শিশুর রোগ নির্ণয়ে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে বলে সমীক্ষায় বলা হয়েছে৷