গবেষণা অনুযায়ী, প্রতি বছর পৃথিবীতে ১৬ লাখ যমজ শিশু জন্ম নেয়৷ পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ৪০টি শিশু জন্মে একটি যমজের ঘটনা ঘটছে৷
গবেষণার জন্য ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের ১৬৫টি দেশের তথ্য সংগ্রহ করেছেন গবেষকরা৷ এছাড়া ১১২টি দেশের ১৯৮০-১৯৮৫ সালের যমজ জন্মহারের উপাত্ত নিয়েছেন৷ ‘‘বিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে শুরু করে যেকোন সময়ের চেয়ে তুলনামূলক ও বাস্তব সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে যমজের হার এখন বেশি এবং সম্ভবত এটা সর্বকালের মধ্যেই সর্বোচ্চ,’’ জানান গবেষক দলের প্রধান ক্রিশ্চিয়ান ম্যনদে৷
অবশ্য দুই সময়কালেই আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বেশি যমজের তথ্য মিলেছে৷ সেখানকার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে অন্য অঞ্চলের মানুষের ‘জিনগত পার্থক্য' এর অন্যতম কারণ হতে পারে বলে মনে করেন ম্যনদে৷
দক্ষিণ পশ্চিম নাইজেরিয়ার ইগবো ওরা শহরে গেলে যে কেউ ধন্ধে পড়বেন৷ কেননা জোড়া চেহারার বহু মানুষের দেখা মিলবে সেখানে৷
ছবি: Reuters/A. Sotundeনাইজেরিয়ার ওইয়ো রাজ্যের ইগবো ওরা শহরে পর্যটকরা পথে পথে একটি ব্যানারের দেখা পাবেন৷ তার মূল কথা একটাই, ‘স্বাগত বিশ্বের যমজদের রাজধানীতে৷’ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলে তার প্রমাণও মিলবে৷ দেখা মিলবে অনেক যমজ মানুষের সাথে৷
ছবি: Reuters/A. Sotundeছবির এই যমজ ভাইদের নাম কেহিন্দে এবং তাইয়ু কোলাওলে৷ কার নাম কোনটি সেটি মনে রাখাটা অবশ্য মুশকিল হতে পারে৷ ১৯৭০ এর দশকে এক ব্রিটিশ গাইনি বিশেষজ্ঞের গবেষণা অনুযায়ী এই অঞ্চলে প্রতি হাজারের মধ্যে যমজ জন্মের হার ৫০টি, যা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বেশি৷
ছবি: Reuters/A. Sotundeকেহিন্দে এবং তাইয়ো আদেরগোবা ভাইয়ের মধ্যে মিল ও ভাব দুইই বেশ৷ শুধু চেহারা নয়, সেখানকার যমজদের নামেও থাকে মিল৷ ইয়োরুবা সম্প্রদায়ের মানুষেরা যমজদের একটি নামই রাখেন৷ নামের আগে একজনের ক্ষেত্রে তাইয়ু আরেকজনকে কেহিন্দে বলে ডাকেন, যা দিয়ে বোঝা যায় কে আগে জন্ম নিয়েছে, কে পরে৷
ছবি: Reuters/A. Sotundeইগবো ওরা শহরেই যমজ জন্মের প্রবণতা বেশি, কিন্তু তার মধ্যেও এগিয়ে ইয়োরুবা সম্প্রদায়ের মানুষ৷ তাদের ১০০ জন ছাত্রছাত্রীর একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের এসেম্বলিতে নয় যমজের দেখা পেয়েছেন রয়টার্সের সাংবাদিক৷ বন্ধুবান্ধব আর শিক্ষকরা তাদের গুলিয়ে ফেলে নাতো!
ছবি: Reuters/A. Sotundeনবজাতক যমজ শিশুকে কোলে নিয়ে ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছেন এক মা৷ এই শহরের মানুষদের বেশিরভাগের বিশ্বাস ওকরা পাতা খাওয়ার অভ্যাসের কারণেই এত যমজ শিশুর জন্ম দেন তাঁরা৷ এই পাতা পানিতে সেদ্ধ করে খাওয়াটা ইগবো ওরার মানুষদের খুবই প্রিয়৷
ছবি: Reuters/A. Sotundeওকরা পাতার বিষয়টি ঠিক সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ অনেকের ধারণা আমালা নামের আরেক খাবার এর জন্য দায়ী৷ লাল আলু আর কাসাভা থেকে তৈরি আটা দিয়ে এই খাবার বানানো হয়৷ এর পেছনে একটি ব্যাখ্যাও আছে৷ খাবারটি নাকি বিশেষ হরমোন তৈরি করে, যা ডিম্বাণুর উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়৷
ছবি: Reuters/A. Sotundeকারণ খুঁজতে রয়টার্স দ্বারস্থ হয়েছিল নাইজেরিয়ার রাজধানী লাগোসের একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের কাছে৷ তিনি বলেছেন, লাল আলুর যেই খাবারের কথাটি মানুষ বলছেন সেটি সঠিক নয়, কেননা একই ধরণের খাবার বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও প্রচলিত আছে৷ তাঁর মতে সম্ভবত নিজেদের মধ্যে বিবাহ আর জিনগত ঐতিহ্যের কারণেই এখানকার নারীদের যমজ জন্মদানের প্রবণতা বেশি৷
ছবি: Reuters/A. Sotundeকিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা মানতে রাজি নন স্থানীয় অধিবাসীরা৷ তাঁদের মতে ওকরা পাতা খাওয়ার উপরই বিষয়টি নির্ভর করে৷ এজন্য সেটি সেদ্ধ করে জমিয়ে না রেখে সাথে সাথেই খেতে হবে৷ ওয়েনিক বেমিমোর নামের এক নারী এর প্রমাণ পেয়েছেন বলে রয়টার্সের সাংবাদিককে জানান৷ ‘‘আমি অনেক ওকরা পাতা খাওয়ায় আট জোড়া যমজ সন্তানের জন্ম দিতে পেরেছি,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/A. Sotunde গবেষণা অনুযায়ী সন্তান জন্মের জন্য বিভিন্ন চিকিৎসা প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি যমজ জন্মহার বাড়ার অন্যতম কারণ৷ এছাড়াও নারীদের মধ্যে বেশি বয়সে সন্তান জন্ম দেয়ায় প্রবণতা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়াও আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷
দরিদ্র দেশগুলোতে যমজ জন্মহার বেশি হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ম্যনদে৷ এইসব দেশে যমজ সন্তান জন্মের ক্ষেত্রে শিশু মৃত্যুর হার বেশি থাকে৷ সেই সঙ্গে মায়েরাও গর্ভধারণকালে ও সন্তান জন্মের পরে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভোগেন৷
গবেষকদের ইয়্যোরোন স্মিড্ঠ জানান, সাব-সাহারভুক্ত আফ্রিকায় অনেক যমজ ভাইবোনের একজন জন্মের প্রথম বছরেই মারা যায়৷ কিন্তু এই চিত্র উন্নত দেশে আলাদা৷ স্মিড্ঠ বলেন, ‘‘পশ্চিমা অনেক উন্নত দেশের জমজ হার এখন সাব-সাহার আফ্রিকার কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ কিন্তু বেঁচে থাকার সম্ভাবনায় (এই দুই অঞ্চলের মধ্যে) বিরাট পার্থক্য আছে৷’’
আঙ্কিতা মুখোপাধ্যায়/এফএস