ঐতিহাসিক যশোর রোডের শতবর্ষী গাছগুলো আগামী ছয় মাস অন্তত কাটা যাবে না৷ হাইকোর্ট এ বিষয়ে ছয় মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেছে৷
বিজ্ঞাপন
হিউম্যান রাইটসঅ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদের করা এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন আদালত৷ প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়৷
ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমকে আইনজীবীরা জানিয়েছেন, হাইকোর্টের এই স্থিতাবস্থা জারির ফলে এখন এই গাছ কাটা যাবে না৷
জানুয়ারির শুরুতে যশোর জেলা প্রশাসনের এক বৈঠকে যশোর রোড হিসেবে পরিচিত বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে যশোর পর্যন্ত সড়কের সম্প্রসারণে দুই পাশের কয়েক হাজার গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়৷ এরপর থেকেই সারা দেশে প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় ওঠে৷
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু দুর্লভ ছবি
সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-র সংগ্রহে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু দুর্লভ ছবি রয়েছে৷
ছবি: AP
উত্তাল মার্চ
১৯৭১ সালের ২৩ শে মার্চ ঢাকার রাস্তায় স্বাধীনতার দাবিতে হারপুন হাতে বিক্ষোভ মিছিল৷
ছবি: AP
যশোরে মুক্তিবাহিনী
২ এপ্রিল ১৯৭১৷ যশোরে মার্চ করছে মুক্তিবাহিনী৷
ছবি: AP
ত্রিপুরায় বাংলাদেশি শরণার্থী
১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল৷ প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে৷ প্রাণ বাঁচাতে ভারতের ত্রিপুরার মোহনপুরের একটি স্কুল ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশিরা৷
ছবি: AP
ভারত সীমান্তের কাছে বাংলাদেশিদের অবস্থান
১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল৷ ভারত সীমান্তের ৩০ মাইলের মধ্যে কুষ্টিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেকেই অবস্থান করছিল৷
ছবি: AP
বেনাপোলের কাছে শরণার্থী শিবির
১৪ এপ্রিল ১৯৭১, যশোরের বেনাপোলের কাছে ভারত সীমান্তে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিল পাঁচ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি৷
ছবি: AP
আহত মুক্তিযোদ্ধা
১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর বোমা হামলায় আহত একজন মুক্তিযোদ্ধাকে চিকিৎসা দিতে নিয়ে যাচ্ছেন বেসামরিক মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধারা৷
ছবি: AP
মুক্তিবাহিনী
১৯৭১ সালের ৩ রা আগস্ট৷ ঢাকার কাছে মুক্তিবাহিনীর সদস্য হেমায়েতউদ্দীন একটি গোপন ক্যাম্প থেকে মেশিনগান তাক করে রেখেছেন৷
ছবি: AP
১৯ বছর বয়সি শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে প্লাটুন
১৩ নভেম্বর ১৯৭১৷ ফরিদপুরে রাইফেল হাতে তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ৷ ৭০ সদস্যের একটি প্লাটুন গড়া হয়েছিল সেখানে৷ সেই প্লাটুন দক্ষিণাঞ্চলে সামরিক ও চিকিৎসা দ্রব্য সরবরাহ করত৷ একদম বামে থাকা ১৯ বছর বয়সি তরুণটি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র৷ ৭০ জনের প্লাটুনের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি৷
ছবি: AP
মুক্তিবাহিনীর পারুলিয়া দখল
১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর৷ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পারুলিয়া গ্রাম দখল করে নেয় মুক্তিবাহিনী৷
ছবি: AP
আখাউড়ায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী
২৯ নভেম্বর, ১৯৭১৷ আখাউড়ায় অস্ত্র পাহাড়া দিচ্ছে পাকিস্তানি সেনারা৷ তাদের দাবি ছিল, ভারতীয় সৈন্যদের কাছ থেকে এসব অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে৷
ছবি: AP
ভারতীয় সেনাদের হামলা
২ ডিসেম্বর, ১৯৭১৷ যশোরে পাকিস্তানি সেনাদের উপর গোলাবর্ষণ শুরু করে ভারত ৷ এক পাকিস্তানি সেনাসদস্য রাইফেল নিয়ে অন্যত্র যাচ্ছে৷ অন্য সেনারা তখন অস্ত্র তাক করে পরিখার মধ্যে রয়েছে৷
ছবি: AP
ভারতীয় সেনা
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর৷ ভারতীয় সীমান্তের কাছে ডোঙ্গারপাড়ায় খোলা মাঠে মেশিনগান তাক করে রেখেছেন এক ভারতীয় সেনা৷
ছবি: AP
ডিসেম্বরেও ঢাকায় পাকিস্তানি সার্জেন্ট
১২ ডিসেম্বর, ১৯৭১৷ রাজধানী ঢাকার অদূরে একটি এলাকায় একজন পাকিস্তানি সার্জেন্ট দুই সেনাকে নির্দেশনা দিচ্ছে৷
ছবি: AP
যুদ্ধবিরতি
রবিবার ১২ ডিসেম্বর. ১৯৭১৷ ঢাকা বিমানবন্দরে অপেক্ষায় আছেন বিদেশিরা৷ একটি ব্রিটিশ বিমান অবতরণ করেছে৷ ৬ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির সময় বিদেশিদের নিয়ে যাওয়ার জন্যই ঐ বিমানটি পাঠানো হয়েছিল৷
ছবি: AP
ভারতীয় ট্যাংক
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর৷ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্যাংক বগুড়ার দিকে রওনা হয়েছে৷
ছবি: AP
চার রাজাকারকে হত্যার পর মুক্তিবাহিনীর প্রতিক্রিয়া
হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা চার রাজাকারকে হত্যার পর আল্লাহ’র উদ্দেশে শুকরিয়া জানাচ্ছেন মুক্তিসেনারা৷
ছবি: AP
16 ছবি1 | 16
পরিবেশবাদীরা সংবাদ সম্মেলন করে এর প্রতিবাদ জানান৷ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ প্রতিবাদকারীরা যুক্তি দেখান যে, শতবর্ষী গাছগুলো ডিভাইডার হিসেবে রেখে রাস্তা সম্প্রসারণ সম্ভব৷
এছাড়া এই গাছগুলো ও এই সড়কের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিও জড়িত৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় লাখ লাখ বাংলাদেশি এই সড়ক ধরে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন৷
সড়ক বিভাগ যে যুক্তি দেখিয়েছে তা হলো, এই গাছ রেখে রাস্তা সম্প্রসারণ করলে প্রকল্প খরচ বেড়ে যাবে৷ তাছাড়া পণ্য পরিবহনের জন্য এই সড়কের গুরুত্ব বেড়ে গেছে৷
আপাতত জমি অধিগ্রহণ করে গাছ রেখে রাস্তা সম্প্রসারণ করা গেলেও ভবিষ্যতে চার লেন বা ছয় লেন করা হলে এই গাছগুলো কোনোভাবেই রাখা যাবে না৷
তবে তাদের এই যুক্তি কোনোভাবেই মানতে পারছেন না পরিবেশবিদ ও পরিবেশবাদীরা৷
এর আগে এই গাছ না কাটার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকও আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন প্রশাসনকে৷ সেখানে যশোর রোডের ভারতীয় অংশে গাছ না কাটার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কথা তুলে ধরা হয়৷
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে যশোর রোড বলতে দমদম থেকে বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত মহাসড়ককে বোঝায়৷ ওই সড়কের দৈর্ঘ্য ১০৮ কিলোমিটার (কি.মি.)৷ যশোর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত বাংলাদেশ অংশে এর দৈর্ঘ্য ৩৮ কি.মি.৷ ভারতের পেট্রাপোল থেকে কলকাতার দমদম পর্যন্ত ৭০ কি.মি.৷
এর আগে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ও টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন যে, ‘‘যশোর রোডের বাংলাদেশ ও ভারত অংশের গাছগুলো আচ্ছাদন দেয়, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় ‘লিফ এরিয়া ইনডেক্স’ বলা হয়ে থাকে৷ এই যে বৃক্ষ আচ্ছাদন, তা সুন্দরবনের চার ভাগের এক ভাগ৷ গাছগুলো লম্বা সারিতে থাকায় অনেকের সেটি ধারণাতেই নেই৷’’