1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌যশোর রোডের লড়াই

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৭ এপ্রিল ২০১৭

চওড়া করা হবে যশোর রোড৷ সেই কারণে কেটে ফেলতে হবে রাস্তার দু'ধারের প্রায় চার হাজার গাছ, যাদের বয়স গড়ে ৩০০ বছর৷ শুরু হয়েছে সেই গাছ বাঁচানোর লড়াই৷

Indien Bildergalerie Jangalmahal
প্রতীকী ছবিছবি: DW/P. Samanta

রাহুল দে বিশ্বাস৷ একজন সমাজকর্মী৷ ১৫ এপ্রিল, বাংলা বছরের প্রথম দিন, বনগাঁ থেকে হাবড়া – যশোর রোড ধরে ৩০ কিলোমিটার রাস্তা হাঁটলেন রাহুল৷ ‘যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটি'-র একজন প্রচারক হিসেবে৷ কারণ ভয়ংকর এক পরিবেশবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ৷ রাস্তা চওড়া করতে, রাস্তার দু'ধারের হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলার৷

ব্রিটিশ আমলে তৈরি, কলকাতার সঙ্গে বাংলাদেশের যশোরের সংযোগরক্ষাকারী যশোর রোড চওড়া করা হবে, ফ্লাইওভার, ওভারব্রিজ তৈরি হবে, আর সেই উন্নয়ণযজ্ঞে আহুতি দেওয়া হবে প্রায় ৪০০০ গাছ৷ সুপ্রাচীন বৃক্ষ সব, যাদের গড় বয়স ৩০০ বছর৷ কাজেই রাহুল এবং তাঁর মতো অনেকেই পথে নেমেছেন প্রতিবাদ জানাতে৷ রাহুল ডয়চে ভেলেকে জানালেন, অনলাইনে এবং কাগজে-কলমে, দু'ভাবেই সই সংগ্রহ করছেন ওঁরা৷

বিভাস রায় চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

সেই দরখাস্ত ওঁরা পৌঁছে দেবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিচার বিভাগ এবং পরিবেশ সুরক্ষার আইনি কর্তৃপক্ষ ‘‌গ্রিন বেঞ্চ'‌-এর কাছে৷ আবেদন জানাবেন, গাছ না কেটে যেন বিকল্প পথ খোঁজা হয় উন্নয়ণের৷ কিন্তু গাছ কাটার বিরুদ্ধে কথা বলছেন বলে ওঁদের নামের পাশে উন্নয়ণ-বিরোধী তকমা বসে গেছে৷

এমনকি যে সোশ্যাল মিডিয়াকে ওঁরা সচেতনতার প্রচার এবং সমর্থন জোগাড়ে ব্যবহার করছেন, সেখানেই গোপন বিরোধিতার মোকাবিলা করতে হচ্ছে৷ ওঁদের তৈরি ফেসবুক পাতার বিরুদ্ধে দলে দলে রিপোর্ট করে, সে পাতা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে৷ ওঁরা বলছেন, ওঁরা কেবল গাছ বাঁচানোরই পক্ষে৷ তাও ওঁদের গায়ে রাজনীতির রং লাগানোর চেষ্টা চলছে৷

কবি বিভাস রায়চৌধুরি৷ পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকা বনগাঁর বাসিন্দা৷ তিনি ব্যক্তিগতভাবে যুক্ত হয়েছেন যশোর রোডের এই গাছ বাঁচাও আন্দোলনের সঙ্গে৷ জানালেন, অনেকের অনেক ধরনের স্বার্থ জড়িয়ে আছে এই গাছ কাটার উদ্যোগে, যাদের মধ্যে আছে স্থানীয় মাফিয়ারা৷ যে কারণে সাধারণ মানুষ, চরম ক্ষতি হতে যাচ্ছে জেনেও মুখ বুজে থাকছে৷ বরং পরিবেশকর্মীদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন গরিব মানুষ, যাঁদের ভয়ডর কম, হারাবারও বিশেষ কিছু নেই৷

রাহুল দে বিশ্বাস+

This browser does not support the audio element.

তবে বিভাস রায়চৌধুরি এটাও মেনে নিচ্ছেন, যে রাস্তায় নেমে যে আন্দোলন হচ্ছে, তা মূলত আবেগপ্রসূত, সাধারণ পরিবেশপ্রেমী মানুষের বেদনাসঞ্জাত৷ কিন্তু এত গাছ কেটে নিলে যে পরিবেশ বিপর্যয় হবে যশোর রোড ও সংলগ্ন এলাকায়, সেকথা নীতি-নির্ধারকদের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না৷ তাই একমাত্র বিচারবিভাগীয় হস্তক্ষেপেই এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে৷

যে কাজটি করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা কমিটি ‘‌এপিডিআর'‌৷ ওদের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে, যেটি খোদ প্রধান বিচারপতির এজলাসে শুনানি হবে৷ আর পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট পরিবেশ আন্দোলনকারী, যাঁর হাত ধরে এই রাজ্যে একাধিক পরিবেশ সুরক্ষার আইনি বন্দোবস্ত সম্ভব হয়েছে, সেই সুভাষ দত্তকেও পাশে চাইছেন ওঁরা৷

আর সুভাষ দত্ত নিজে ডয়চে ভেলেকে জানালেন, যেহেতু একটি মামলা ইতোমধ্যে দায়ের হয়ে গেছে, স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে তাঁর কিছু করার সুযোগ এই মুহূর্তে নেই৷ তবু তিনি উদ্যোগী হবেন৷ কারণ তাঁর চোখে অতিকায় সব গাছের ডালপালার সবুজ চাঁদোয়াও যশোর রোডের এক সম্পদ৷ সরকারের উচিত ছিল, গাছ বজায় রেখেই যশোর রোডের সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেওয়া৷ কিন্তু পরিবেশ সুরক্ষার ব্যাপারে সব দলের সরকার, এমনকি বিচার বিভাগের ভূমিকাও খুব হতাশাজনক৷ গত তিন দশকের পরিবেশ সৈনিক সুভাষ দত্ত অবশ্য এখনই হাল ছাড়তে রাজি নন৷ তবে সবাই এখন তাকিয়ে আছেন ২৮ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের শুনানিতে কী হয়, সেই দিকে৷ আর অন্যদিকে যশোর রোডের গাছ কাটার কাজও কিন্তু শুরু হয়ে গেছে৷ সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে সেই সব রক্তাক্ত ছবি৷

সুভাস দত্ত

This browser does not support the audio element.

যশোর রোডের গাছ বাঁচাও আন্দোলনকে কি আপনি সমর্থন করেন? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷

 

 

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ