শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত মানুষের জীবনে অনেক অভিজ্ঞতা হয়৷ বার্লিনের এক আলোকচিত্রী সেই পরিবর্তন ধরে রাখতে নানা বয়সের মানুষের ছবি তোলেন, তাঁদের কাহিনি শোনেন৷ ছবির এক সংকলন বই হিসেবে প্রকাশ করেছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
নরম ও নাজুক প্রকৃতির হলেও শিশুরা খোলা মনে বিশ্বকে দেখে৷ ৩০ থেকে ৪০ বছর পর প্রত্যেকেই অনন্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়৷ তারপর বার্ধক্য এলেও মানুষ জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থাকে৷
আলোকচিত্রী হিসেবে টোমাস কিয়েরক সাধারণত বিভিন্ন বিজ্ঞাপন এজেন্সি, কোম্পানি ও পত্রিকার জন্য কাজ করেন৷ তবে ‘একশো' নামে তাঁর নিজস্ব ছবির সংকলনের বিষয়বস্তু আলাদা৷ টোমাস বলেন, ‘‘এই বইয়ের মাধ্যমে আমি সব বয়সের, সব মানুষের সৌন্দর্য তুলে ধরতে চেয়েছি৷ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে তরুণ প্রজন্মের মধ্যেই প্রজ্ঞা ও বয়স্কদের মধ্যে কৌতূহল দেখা যায়৷ আসলে তাদের দৃষ্টি আমার কাছে জাদুর মতো মনে হয়৷''
ক্যামেরার চোখে জীবনের গল্প
04:09
বিভিন্ন সংস্কৃতির নারীপুরুষ, এক বছরের শিশু থেকে শুরু করে পাকা চুলের বৃদ্ধ – অনেক মানুষ তাঁর ক্যামেরায় ধরা পড়েছে৷ এমনকি টোমাসের নিজের ৮ বছর বয়সি পুত্র কোলিয়া তাদের মধ্যে রয়েছে৷ বার্লিনে বই প্রকাশের সময় তার বয়স আরও তিন বছর বেড়ে গেছে৷ কোলিয়া মনে করে, ‘‘একদিকে অনেক শারীরিক পরিবর্তন হয়েছে, আমার বয়স বেড়ে গেছে৷ আরও লম্বা হয়েছি, চুল ছোট করে কাটিয়েছি৷ অন্তরেও অনেক পরিবর্তন ঘটেছে৷ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আরও পরিণত, আরও গম্ভীর হয়ে উঠেছি৷''
ফটোকিনা: ফটোগ্রাফি এবং সিনেমাপ্রেমীদের স্বর্গ
ফটোগ্রাফি সংক্রান্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেলা ‘ফটোকিনা’ আবারও শুরু হয়েছে জার্মানির কোলন শহরে৷ ৬৬ বছর ধরে ফটোগ্রাফি এবং সিনেমাপ্রেমীদের কাছে এই মেলাটি অনেকটা স্বর্গের মতো৷ ফটোকিনা-২০১৬ আসর নিয়েই এই ছবিঘর...
ছবি: DW/A. Purwaningsih
যখন থেকে শুরু
‘ফটোকিনা’-র প্রথম আসরটি জার্মানির এই কোলন শহরেই হয়েছিল, ১৯৫০ সালে৷ ১৯৬৬ সাল থেকে দু’বছর পরপর নিয়মিতই অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ আসর৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
এবারের আকর্ষণ
সব আয়োজনেই বিশ্বের সেরা ক্যামেরাশিল্পী এবং ক্যামেরার সমাবেশ হয় এখানে৷ এবার এসেছে ফুজির এই এক্স-টি২ ক্যামেরা৷ ক্যামেরাটি ‘ওয়েদারপ্রুফ’, অর্থাৎ সব রকমের আবহাওয়ায়, যে কোনো জায়গায় এটি নিয়ে কাজ করা যাবে৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
নাইকনের অ্যাকশন ক্যামেরা
নাইকনের এই অ্যাকশন ক্যামেরাটিও ফটোকিনা-২০১৬-র অন্যতম আকর্ষণ৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
হাইস্পিড ক্যামেরা
সনির এই ডিএসএলআর হাইস্পিড ক্যামেরাটিও সবার নজর কাড়ছে৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
ক্যামেরাম্যান হওয়ার উপায়
সনির বুথে গিয়ে যে কেউ অতি আধুনিক মুভি ক্যামেরা চালিয়ে দেখতে পারেন৷ এভাবে অল্প সময়ে ক্যামেরাম্যান হওয়ার সুযোগটা অনেকেই লুফে নিচ্ছেন৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
অন্যরকম
ক্যাননের এই প্রদর্শনীটি হচ্ছে একটি কন্টেইনারে৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
ক্যাননের আয়োজনে ছিল বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়ার ব্যবস্থা৷ ক্যামেরা এবং ফটোগ্রাফির বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করার সুযোগটা অনেকেই ছাড়েননি৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
ফটোগ্রাফি নিয়ে বক্তৃতা
ফটোকিনাতে বিশ্বখ্যাত ফটোগ্রাফাররা এসে ফটোগ্রাফি নিয়ে মন খুলে কথা বলেন৷ তা শুনে অনেক কিছু শেখাও যায়৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
শিক্ষানবিশ
মেলায় এসে একজন খুব মন দিয়ে ক্যামেরা চালানো শিখছেন৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
বড় দিনের উপহার
মেলা শেষে সব কোম্পানিই নতুন নতুন মডেলের ক্যামেরাগুলো বাজারে ছাড়বে৷ বড় দিনের উৎসবের আর বেশি বাকি নেই৷ বড় দিনের উপহার হিসেবে অনেকের কাছে ক্যামেরাই হয়ে উঠবে বড় আকর্ষণ৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
10 ছবি1 | 10
২৪ বছর বয়সি পাউলিন স্ট্রাসবুর্গার বইয়ে নিজের ছবি দেখলে ভাবনায় ডুবে যান৷ তিনি বলেন, ‘‘পার্থক্যগুলি সত্যি চোখে পড়ার মতো৷ বিশের শুরু বা মাঝামাঝি বয়সে মানুষ নিজেকে আরও বয়স্ক ও পরিণত মনে করে৷ অথচ সেই পর্যায়ে মানুষ এত তরুণ থাকে, অনেক কিছু শুরু করে৷''
টোমাস কিয়েরক বার্লিনে তাঁর স্টুডিওয় কালো পর্দার সামনে ছবি তোলেন৷ এক পশু চিকিৎসক তাঁর জন্য মডেল হয়েছেন৷ অবনিশ লুগানি ৮৬ বছর আগে ভারতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷ বয়স হলেও তিনি এখনো বেশ সাবলীল৷ অবনিশ বলেন, ‘‘আয়ুর্বেদীয় রীতি অনুযায়ী সারা জীবন কাটিয়েছি৷ যোগাসন করেছি, ধ্যান করেছি৷ এভাবেই বয়স বেড়েছে৷ আমার মতে, স্বাভাবিক জীবনযাপন করাই ভালো৷ হামবড়া ভাব না দেখিয়ে বিনয়ী থাকা উচিত৷''
টোমাস কিয়েরক অনেক মানুষের সঙ্গে আলাপের সুযোগ পেয়েছেন৷ বিশেষ করে বয়স্ক মানুষের সঙ্গে তাঁর অনেক মূল্যবান অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ তাঁর মতে, ‘‘বিশেষ করে আশি থেকে একশো বছর বয়সিদের জীবন আমার কাছে অত্যন্ত রোমাঞ্চকর মনে হয়েছে, কারণ এই বয়সের বেশি মানুষকে আমি চিনতাম না৷ এমন বয়সে কী করা সম্ভব, তা আমি দেখলাম৷ পরিবর্তন, জীবনের অভিজ্ঞতা, নতুন করে শুরু করার ক্ষমতা ইত্যাদি৷ একজন ৮৪ বছর বয়সে টেনিস খেলা শিখতে শুরু করেছেন৷ এক ৯৯ বছর বয়সি নারী এখনো কতটা সজাগ৷ বেঁচে থাকার আনন্দ ও ইচ্ছার এমন মাত্রা দেখে আমার বিস্ময় জেগেছে৷''
শিশু-কিশোর, প্রাপ্তবয়স্ক, বৃদ্ধ – জীবনের সব স্তরেই অনেক বাহ্যিক পরিবর্তন ঘটে৷ তবে অন্তরের বিকাশ প্রত্যেকের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়৷
নিরাশ্রয় আলোকচিত্রীদের ক্যামেরায় লন্ডন
লন্ডনের গৃহহীন, নিরাশ্রয় মানুষদের মধ্যে ১০০ সিঙ্গল ইউজ ক্যামেরা বেঁটে দিয়ে বলা হয়েছিল ছবি তুলতে৷ ৫,০০০ ছবি জমা পড়ে; তার ১৩টি বেছে নেওয়া হয় একটি ক্যালেন্ডারের জন্য৷ নাম: মাইলন্ডন ২০১৭৷ এখানে তার সাতটি ছবি৷
ছবি: Saffron Saidi
বানস্কির ডালমেশিয়ান
স্যাফ্রন সাইদি তাঁর জীবনের অধিকাংশ কাটিয়েছেন নানা সরকারি ও বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানে৷ আর্ট বা শিল্পকলা হলো তাঁর বেঁচে থাকার পথ ও পন্থা৷ পূর্ব লন্ডনের হক্সটনে একটি বারের কাছের দেয়ালে এই আদত বানস্কি ম্যুরালটি আবিষ্কার করেন তিনি – এবং কোনো এক পথচারীকে বলেন তাঁর ডটডট নামধারী কুকুরের গলার দড়িটা ধরতে৷ এই ছবি এখন থাকছে মাইলন্ডন ২০১৭ ক্যালেন্ডারের প্রচ্ছদে৷
ছবি: Saffron Saidi
নীচ থেকে ওপরে
ছবিতে জ্যাকি কুক-এর বন্ধু মায়া লিয়ন্স বেরোচ্ছেন লন্ডনের ম্যানসন হাউস আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন থেকে৷ লিয়ন্স আর কুক একই ড্রামা ক্লাশে যান, আর যান গৃহহীনদের হ্যারিংগে রিকভারি সেন্টারে৷ লিয়ন্স সেখানে মৃৎশিল্প শেখান, কুক শেখান মেডিটেশন বা ধ্যান৷ মাইলন্ডন ২০১৭ ক্যালেন্ডার প্রকল্পটি চলেছে ক্রাউডফান্ডিং থেকে৷
ছবি: Jackie Cook
ড্রাইভার চাই
রিচার্ড ফ্লেচার পথেই রাত কাটান৷ গরমে বেশ চলে যায়, শীতের মাসগুলোতে কোনো নাইট শেলটার খুঁজতে হয়৷ তিনি আর্টস ফ্রিটসোভিয়া নামের একটি আর্টস গ্রুপের সদস্য৷ আর্টস গ্রুপটি মূলত নিরাশ্রয়দের জন্য৷
ছবি: Richard Fletcher
লন্ডন কলিং
হিউ গে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একজন প্রাক্তন সৈনিক; এককালে থাকতেন নিরাশ্রয় সাবেক সৈনিকদের জন্য সৃষ্ট বিগ হাউসে৷ ক্রয়ডনের ঠিক পশ্চিমে ল্যাভেন্ডার ফুলের প্রান্তরে সাইকেল চালাতে গিয়ে এই টেলিফোন বুথটিকে দেখেন তিনি৷
ছবি: Hugh Gary
হঠাৎ দেখা
দিনটা নাকি সত্যিই গরম ছিল৷ বিয়াট্রিস হঠাৎই দেখেন সাদা দেয়ালের ওপর নীল আকাশ৷ তার পরেই লাল ফুলঝারিটাও চোখে পড়ে৷ হয়ে যায় কমপোজিশন৷ তবুও যেন কিছু বাকি ছিল....হাত তুলতেই দেয়ালের গায়ে হাতের ছায়াটা পড়ল...৷
ছবি: Beatrice
বৃষ্টির পরে টেমস
ঝড়বৃষ্টির পরে টেমস নদীর দৃশ্য৷ আলোকচিত্রী সিলিয়ানা থাকেন দক্ষিণ লন্ডনের একটি গির্জায়, আরো ৩০-৪০ জন গৃহহীনের সঙ্গে৷ সকলে মিলে গির্জাটি জবরদখল করেছেন৷ সম্প্রতি গির্জো ছাড়ার নোটিসও এসে গেছে৷ সিলিয়ানা কাফে আর্ট-এর ফটোগ্রাফি মেন্টরিং প্রোগ্রামের সদস্য৷
ছবি: Siliana
সেন্ট পলস যখন পথে
ক্রিস্টোফার ম্যাকটাভিশ ক্যানাডার একটি ছোট শহর থেকে লন্ডনে আসেন ১৯৭১ সালে৷ বাড়ি ছাড়তে হয়েছে ড্রাগস নেওয়ার জন্য৷ ১৯৯৮-৯৯ সাল থেকে লন্ডনে গৃহহীন ও নিরাশ্রয়৷ আজ থাকেন একটি হাউসিং অ্যাসোসিয়েশনের ফ্ল্যাটে৷ ‘কোয়াইআর উইথ নো নেম’-এ গান গেয়ে থাকেন৷ ছবিতে ধরে রেখেছেন ভেজা পাথরে সুবিখ্যাত সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের প্রতিফলন৷