ক্যাথলিক গির্জার যাজক সহ অস্ট্রেলিয়ার চার হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বিরুদ্ধে শিশুদের যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে৷ এ সব প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোই ক্যাথলিকদের দ্বারা পরিচালিত৷
বিজ্ঞাপন
অস্ট্রেলিয়ায় অনেকদিন ধরেই শিশুদের যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠছিল৷ ২০১২ সালে সরকার ‘রয়েল কমিশন ইনটু ইন্সটিটিউশনাল রেসপন্সেস টু চাইল্ড সেক্সুয়াল এবিউজ'-কে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দেন৷ এরপর পাঁচ বছর ধরে তদন্ত শেষে শুক্রবার ১৭ ভলিউমের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কমিশন৷ ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিশন এই পাঁচ বছরে আট হাজারেরও বেশি ভুক্তভোগীর সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কথা বলেছে, ৪২ হাজারের বেশি টেলিফোন কল রিসিভ করেছে, আর চিঠি ও ইমেল পেয়েছে প্রায় ২৬ হাজার৷ এছাড়া কমিশন আড়াই হাজারেরও বেশি বিষয় তদন্ত করতে পুলিশের কাছে পাঠিয়েছে৷ এর মধ্যে ২৩০টি বিষয়ে তদন্ত চলছে৷
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
শিশুরা বিকৃতকাম মানুষের সহজ শিকার৷ সারল্যের সুযোগ নিয়ে সহজে ভোলানো যায় তাদের৷ অনেক সময় শিশুরা বুঝতে পারে না, চিনতে পারে না পিশাচের থাবা৷ আর বুঝলেও করতে পারে না প্রতিবাদ, প্রতিরোধ৷ শুধু একটা অস্বস্তি থেকে যায় সারাটা জীবন৷
ছবি: picture alliance/abaca
ভয়াবহ অবস্থা ভারতে
ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের অর্ধেকেরও বেশি বাচ্চা যৌন নিগ্রহের শিকার৷ তবে সবচেয়ে ভয়ংকর সত্য হলো, নাবালিকা বা শিশুর ওপর যৌন হেনস্থার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে পরিবারের মধ্যে, পরিবারেরই কোনো মানসিক বিকারগ্রস্ত সদস্যের হাতে৷ তাই সে সব ঘটনা পুলিশের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, হচ্ছে না কোনো ডাইরি অথবা মামলা৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব
এভাবে প্রতিদিন বিকৃত যৌন নির্যাতনে হারিয়ে যাচ্ছে অগুন্তি শৈশব৷ অনেকক্ষেত্রেই শিশুরা বুঝে উঠতে পারছে না, বলে উঠতে পারছে না তাদের অমানবিক সেই সব অভিজ্ঞতার কথা৷ তাই শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত, বিকৃত মানুষগুলো থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে৷ সমাজবিদরা বলছেন, এ জন্য আগাম সতর্কতার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবক এবং স্কুলের৷ শিশুকে দিতে হবে তার প্রাপ্য শৈশব৷
ছবি: Fotolia/Kitty
যেভাবে বোঝাবেন বাচ্চাদের
সহজ ভাষায় খেলা বা গল্পচ্ছলে শিশুদের এ বিষয়ে একটা ধারণা গড়ে তোলা যেত পারে৷ বাচ্চাদের বলতে হবে যে, তাদের শরীরটা শুধুমাত্র তাদের৷ অর্থাৎ কেউ যেন তাদের ‘গোপন’ জায়গায় হাত না দেয়৷ তাই কোনো আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির আচরণ অস্বস্তিকর ঠেকলে, কেউ তাদের জোর ঘরে কোনো ঘরে নিয়ে গেলে, খেলার ছলে চুমু দিলে বা শরীরের কোথাও হাত দিলে – তা যেন মা-বাবাকে জানায় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিনিয়ে দিন যৌনাঙ্গ
অনেক বাবা-মা নিজ সন্তানের সঙ্গে যৌনাঙ্গ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ করেন৷ কিন্তু এই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং খুব ছোটবেলাতেই ছবি এঁকে অথবা গল্পে-গানে বাচ্চাকে তার শরীরের অন্য সব অঙ্গের মতো যৌনাঙ্গ, লিঙ্গ ইত্যাদি চিনিয়ে দিতে হবে৷ এমনটা করলে কেউ যদি তাদের সঙ্গে পিশাচের মতো ব্যবহার করে, তাহলে শিশুরা সহজেই বলতে পারবে কে, কখন, কোথায় হাত দিয়েছিল৷
ছবি: DW/S.Rahman
শিশুর কথা শুনুন, তার পক্ষ নিন
শিশু যাতে আপনাকে বিশ্বাস করতে পারে, বন্ধুর মতো সবকিছু খুলে বলতে পারে – সেটা নিশ্চিত করুন৷ আপনার বাচ্চা যদি পরিবারের কাউকে বা আপনার কোনো বন্ধুকে হঠাৎ করে এড়িয়ে যেতে শুরু করে অথবা আপনাকে খুলে বলে বিকৃত সেই মানুষের কৃতকর্মের কথা, তবে সময় নষ্ট না করে শিশুটির পক্ষ নিন আর তিরস্কার করে বাড়ি থেকে বার করে দিন ঐ ‘অসুস্থ’ লোকটাকে৷
ছবি: Fotolia/pegbes
স্কুলেরও দায়িত্ব আছে
বাচ্চারা দিনের অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়৷ তাই যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলের একটা বড় দায়িত্ব থেকে যায়৷ তবে স্কুলের মধ্যে, বিদ্যালয় চত্বরেও ঘটতে পারে শিশু নির্যাতনের ঘটনা৷ তাই স্কুল থেকে ফেরার পর বাচ্চা যদি অতিরিক্ত চুপচাপ থাকে, একা একা সময় কাটায় বা পড়াশোনা করতে না চায়, তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলুন৷ জানতে চান কী হয়েছে, প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানান৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
ছেলে-মেয়ে সমান!
আমাদের সমাজে ছোট থেকেই মেয়েদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়৷ মেয়ে হলেই হাতে একটা পুতুল আর ছেলে হলে ধরিয়ে দেয়া হয় বল বা খেলনার পিস্তল৷ ছেলের পাতে যখন তুলে দেয়া হয় মাছের বড় টুকরোটা, তখন মেয়েটির হয়ত এক গ্লাস দুধও জোটে না৷ এ বৈষম্য বন্ধ করুন৷ বাবা-মায়ের চোখে ছেলে-মেয়ে সমান – সেভাবেই বড় করুন তাদের৷ তা না হলে নারীর ক্ষমতায়ন হবে কীভাবে? কীভাবে কমবে শিশু নির্যাতন?
ছবি: picture alliance/abaca
7 ছবি1 | 7
১৯৫০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে কাজ করা প্রায় সাত শতাংশ ক্যাথলিক যাজকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ শুনেছে কমিশন৷ কিন্তু কখনই এ সব অভিযোগের তদন্ত করা হয়নি৷ বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিশুরা এসব অভিযোগ নিয়ে আসলে তাদের শাস্তি দেয়া হয়েছে৷
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কমিশন ১৭৮টি সুপারিশ করেছে৷ এর মধ্যে একটিতে যাজকদের জন্য কৌমার্য গ্রহণ স্বেচ্ছাপ্রসূত করার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ কারণ যাজক হতে বর্তমানে যে শর্ত রয়েছে তা শিশু যৌন হয়রানি অন্যতম কারণ বলে মনে করছে কমিশন৷
মেলবোর্নের আর্চবিশপ গির্জার এমন ‘লজ্জাকর' অতীতের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন৷ তবে কৌমার্য গ্রহণের বিষয়ে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ভ্যাটিকানকে নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷
অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সিনিয়র ক্যাথলিক যাজক জর্জ পেলের বিরুদ্ধেও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে৷ তিনি বর্তমানে ভ্যাটিকানের অর্থ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷ পেলের বিরুদ্ধে আগামী মার্চে একটি শুনানি অনুষ্ঠিত হবে৷ তখন ঠিক করা হবে পেলের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ আছে কিনা৷ প্রতিবেদন বলছে, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার অনেক প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে৷ প্রকৃত সংখ্যা আমরা কখনই জানতে পারবনা৷''
গির্জা ছাড়াও এতিমখানা, খেলাধুলার ক্লাব, স্কুল - এসব প্রতিষ্ঠানেও শিশুরা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে৷ ‘‘এটা জাতীয় ট্র্যাজেডি, যা অনেকদিন ধরে আমাদের অনেক বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে ঘটেছে,'' প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷