সাবেক পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট মনে করেন, ক্যাথলিক চার্চে শিশুদের যৌন হয়রানির পেছনে গতশতকের ষাটের দশকে সংঘটিত যৌন বিপ্লবের সম্পর্ক রয়েছে৷ ‘পেডোফিলিয়া'র কারণ হিসেবে ‘সৃষ্টিকর্তার অনুপস্থিতিকে' দেখছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
ক্যাথলিক চার্চে যৌন নির্যাতন কেলেঙ্কারির জন্য ১৯৬০-এর দশকের যৌন বিপ্লব, ক্রমবর্ধমান ধর্মনিরপেক্ষতা এবং দুর্বল গির্জা আইনকে দায়ী করেছেন সাবেক পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট৷ বৃহস্পতিবার এক নিবন্ধে একথা লিখেছেন তিনি৷
সাবেক পোপ লিখেছেন, ‘‘১৯৬৮ সালের বিপ্লবে যেসব স্বাধীনতা চাওয়া হয়েছিল তারমধ্যে এই সম্পূর্ণ যৌন স্বাধীনতার ব্যাপারটি ছিল... ৬৮-র বিপ্লবের বাহ্যিক চিত্রের একটি ব্যাপার এমনও ছিল যে পেডোফিলিয়াকে তখন অনুমোদনযোগ্য এবং যথাযথ হিসেবে বিবেচনা করা হতো৷'' পাদ্রীদের জন্য তৈরি জার্মান মাসিক ম্যাগাজিন ‘ক্লেরুসব্লাট'-এ প্রকাশিত তাঁর ছয়হাজার শব্দের নিবন্ধে এসব কথা লেখা হয়েছে৷
যাজকদের যৌন নিপীড়ন নিয়ে ৭ চলচ্চিত্র
গির্জায় শিশুদের ওপর যাজকদের যৌন নিপীড়ন নিয়ে জার্মান ক্যাথলিক চার্চের নতুন গবেষণায় কয়েক দশকের অপকর্ম বেরিয়ে এসেছে৷ অনেক চলচ্চিত্রেই কলঙ্কের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে৷ সে রকম চলচ্চিত্রগুলো নিয়ে সাজানো হয়েছে এই ছবিঘর৷
ছবি: Camino-Filmverleih
‘স্পটলাইট’ (২০১৬)
যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের ক্যাথলিক চার্চগুলোতে শিশুদের যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলো তুলে আনছিলেন ‘বোস্টন গ্লোব’-এর প্রতিবেদকরা৷ তাদের বের করা সেই সত্য কাহিনি অবলম্বনেই এই জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন টম ম্যাককারথি৷ অস্কারের ছয়টি বিভাগে মনোনীত হয় ‘স্পটলাইট’ এবং সেরা পিকচার ও চিত্রনাট্যের পুরস্কার লাভ করে৷ অপরদিকে ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ২০০৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কায় পায়৷
বিভীষিকাময় চিত্র তুলে ধরা চলচ্চিত্র৷ চিলির পরিচালক পাবলো লারাইন নির্মিত এই চলচ্চিত্রে একটি নির্জন বাড়িতে বসবাসরত প্রাক্তন চার যাজকের শিশুদের যৌন নিপীড়নসহ ভয়ানক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করতে দেখা৷ উচ্চ পর্যায়ের যাজক, যারা বিচার ও শাস্তি এড়াতে লুকিয়ে থাকতেন তাদের থেকে এই চলচ্চিত্র নির্মাণের রসদ পেয়েছিলেন পরিচালক৷
ছবি: Fabula
‘ফেরফেহলুং’ (২০১৫)
গ্যার্ড শ্নাইডার নির্মিত জার্মান চলচ্চিত্র ফেরফেহলুংয়ে (অসদাচরণ) একটি যৌন হয়রানির কেলেঙ্কারি নিয়ে তিন যাজক বন্ধুর মধ্যকার সম্পর্কের টানাপড়েন তুলে ধরা হয়েছে৷ তাদের একজনের বিরুদ্ধে কিশোরদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে এবং অপর দুজন তাদের পরিস্থিতিতে বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ তারা যেভাবে এই সত্যের মোকাবেলা করে তাতে শুধু তাদের সম্পর্কই নয়, চার্চে তাদের ক্যারিয়ারের উপরও প্রভাব পড়ে৷
ছবি: Camino-Filmverleih
‘ফিলোমেনা’ (২০১৩)
স্টিফেন ফ্রেয়ার্স এই চলচ্চিত্রে চার্চের আরেক প্রাতিষ্ঠানিক হয়রানির চিত্র উন্মুক্ত করেন৷ যেসব নারীর কাছ থেকে বিবাহ বহির্ভূতভাবে জন্ম নেওয়া সন্তান কেড়ে নেওয়া হয় তাদের বেদনা তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷ ফিলোমেনা লি নামের এমন দুর্ভাগা এক নারীর কাহিনি নিয়ে তৈরি করা হয় এই চলচ্চিত্র৷ ফিলোমিনার ছেলেকে তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় এবং এক সম্পদশালী অ্যামেরিকানের কাছে বিক্রি করা হয়৷
ছবি: Imago/Zuma Press
‘ব্যাড এডুকেশন’ (২০০৪)
হত্যা রহস্য ঘিরে এই চলচ্চিত্র তৈরি হলেও এখানে বোর্ডিং স্কুলে এক কিশোরের একজন ক্যাথলিক যাজকের দ্বারা যৌন নিপীড়নের বিষয়টি উঠে আসে৷ নিপীড়িত ওই শিশুকে পরে দেখা যায় হিজড়ার ভূমিকায়, যিনি নিপীড়ক ফাদারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন এবং তাকে ব্ল্যাকমেইল করেন৷
ছবি: Imago/United Archives
‘দ্য ম্যাগডালেনে সিস্টারস’ (২০০২)
ক্যাথলিক চার্চ পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান ম্যাগডানেলে আশ্রয় কেন্দ্র, ম্যাগডালেনে লন্ড্রিজ নামে পরিচিত, সেটি ‘পতিত’ নারীদের সংশোধনাগার হিসেবে ব্যবহৃত হত৷ পিটার মুলানের ২০০২ সালের এই চলচ্চিত্র ওই রকম একটি আশ্রয় কেন্দ্র ঘিরে, পরিবার থেকে পাঠানো চার তরুণীর প্রতি সিস্টারদের নিষ্ঠুরতা ও হয়রানির ঘটনা এখানে তুলে ধরা হয়েছে৷ এই ধরনের সর্বশেষ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৬ সালে বন্ধ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/United Archives/Impress
‘প্রাইমাল ফিয়ার’ (১৯৯৬)
একজন প্রভাবশালী আর্চবিশপকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার জন্য অভিযুক্ত হন ১৯ বছরের এক বালক৷ এর বিচার প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে আসে, সবার সম্মানের চোখে থাকা ওই আর্চবিশপের নিপীড়নের স্বভাব ছিল এবং তিনি ছেলেদের যৌন সম্পর্কে বাধ্য করতেন৷
ছবি: Imago/United Archives
7 ছবি1 | 7
পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট লিখেছেন, ‘‘পেডোফিলিয়া কেন এত বেড়েছে? চূড়ান্তভাবে এর কারণ হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার অনুপস্থিতি৷'' তিনি এক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চুক্তিগুলোতে সৃষ্টিকর্তার কথা উল্লেখ করার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার প্রসঙ্গটি টেনে এনে লিখেছেন, এটা পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষতার এক নেতিবাচক উদাহরণ৷
জার্মানিতে ইওসেফ রাটসিঙ্গার হিসেবে জন্ম নেয়া বেনেডিক্ট উল্লেখ করেছেন যে ষাটের দশকে তাঁর নিজের এলাকা বাভারিয়ায় সিনেমায় যৌনতার উপস্থিতি এবং বিভিন্ন সেমিনারে ‘সমকামীদের চক্র' তৈরির মতো ব্যাপারগুলো ‘‘মোটামুটি উন্মুক্ত এবং উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবেশ বদলে দিয়েছে৷'' তিনি সেসময় নৈতিক ধর্মবিজ্ঞানের ব্যর্থতাকেও এজন্য দায়ী করেছেন৷
প্রসঙ্গত, আয়ারল্যান্ড, চিলি, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গির্জায় যৌন নিগ্রহের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের কোটি কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে গির্জা কর্তৃপক্ষ৷ এসব নিগ্রহের অনেকগুলো গত শতকের ষাটের দশকের আগেও ঘটেছে৷
কেউ কেউ পোপের এই নিবন্ধের প্রশংসা করলেও অনেকে সেটির সমালোচনাও করেছেন৷ গির্জা বিশ্লেষকরা মনে করছেন যৌন নিগ্রহ বিষয়ক ২০১৯ সালের সামিটের ভিত্তিতে বর্তমান পোপের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে এই নিবন্ধ এক বাধা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে৷