তুরস্কে আটক মার্কিন যাজক অ্যান্ড্রু ব্রুনসনের বিষয়টির কূটনৈতিক সমাধানে একমত যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক৷ অবশ্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছেন, দ্রুত যাজককে ছেড়ে না দেয়া হলে তুরস্ককে কঠোর পরিণাম ভোগ করতে হবে৷
বিজ্ঞাপন
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলুর সাথে শুক্রবার সিঙ্গাপুরে একটি আঞ্চলিক সম্মেলনের সাইডলাইনে বৈঠকে বসেন পম্পেও৷ সেখানে তাঁরা যাজকের ইস্যুটি দ্বিপাক্ষিকভাবে মোকাবেলার বিষয়ে একমত হন৷
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর গ্রেপ্তার করা হয় ৫০ বছর বয়সি মার্কিন যাজক ব্রুনসনকে৷ তাঁর বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা' এবং ‘গুপ্তচরবৃত্তির' অভিযোগ আনা হয়৷
অ্যান্ড্রু ব্রুনসন এখন তুরস্কে গৃহবন্দি আছেন৷ বিচারে দোষী প্রমাণিত হলে তাঁকে ৩৫ বছর পর্যন্ত কারাভোগ করতে হতে পারে৷
যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে৷ এ সব অভিযোগের সপক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই বলেও মনে করে যুক্তরাষ্ট্র৷
১ আগস্ট তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিচারমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র৷ দু'জনেই এর্দোয়ানের ঘনিষ্ট বলে পরিচিত৷ যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা থেকে আসা এই যাজক ২৩ বছর ধরে তুরস্কে বাস করছেন এবং ইজমির রিসারেকশন চার্চ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন৷
‘আসলেই কি হয়েছে মতৈক্য?'
পম্পেও তাঁর সাথে সিঙ্গাপুরে আসা মার্কিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘তুরস্ককে মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে, যাজককে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়টি বেশি গেরি হয়ে যাচ্ছে'৷
দুই তুর্কি মন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘‘তাঁদের বোঝানো হয়েছে এই ব্যাপারটিতে আমরা কতোটা সিরিয়াস৷ তুরস্কের সাথে আমাদের বিরোধের অন্যতম ইস্যু এটি৷''
পম্পেও বলেন, ‘‘সোজা কথা, ব্রুনসন এবং তুরস্ক সরকারের আটকে রাখা অন্যান্য মার্কিন নাগরিকের দ্রুত দেশে ফেরা নিশ্চিত করতে হবে৷ অনেকদিন ধরে তাঁদের আটকে রাখা হয়েছে৷ তাঁরা নির্দোষ৷''
তবে চাভুসোগলু অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছেন না৷ পম্পেওর সাথে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি জানান, ‘‘আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, হুমকি-ধামকি কিংবা অবরোধের ভয় দেখিয়ে কোনো কাজ হবে না৷''
এডিকে/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)
এর্দোয়ানের পক্ষে, বিপক্ষে যারা
ক্ষমতা বাড়ানোর গণভোটে জয়ের পর এর্দোয়ানকে নিয়ে আলোচনা চলছে গোটা বিশ্বেই৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ তুর্কি তাঁর ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষে রায় দিয়েছেন, তবে বিপক্ষেও আছেন অনেক মানুষ৷ রবিবারের সেই গণভোটের পর বিক্ষোভ হয়েছে ইস্তানবুলে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Gurel
প্রতিবাদ, গ্রেপ্তার
রবিবারের গণভোটের পর থেকে তুরস্কের ইস্তানবুলে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছিলেন রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের ক্ষমতা বাড়ানোর বিপক্ষে থাকা একদল প্রতিবাদকারী৷ শুরুতে পুলিশ তাদের বাধা না দিলেও বুধবারের খবর হচ্ছে, অন্তত ৩৮ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ৷
ছবি: Reuters/K. Aslan
অল্প ব্যবধানে জয়
তুরস্ক সরকারের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, রবিবার ভোট দেওয়া তুর্কিদের মধ্যে ৫১ দশমিক চার শতাংশ ভোটর ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছেন৷ এই ভোট সেদেশের প্রেসিডেন্টের হাতে অভূতপূর্ব ক্ষমতা তুলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট৷ বিক্ষোভকারীরা অবশ্য মনে করছেন, ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা হয়নি৷ ৬০ শতাংশ ভোট পুর্নগণনার দাবি জানিয়েছেন এর্দোয়ানের বিরোধী পক্ষ৷
ছবি: Reuters/K. Aslan
অভিনব প্রতিবাদ
ইস্তানবুলে প্রতিবাদকারীরা হাড়ি পাতিল হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন৷ তারা সেসব দিয়ে শব্দ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ কেউ কেউ আবার এর্দোয়ানকে ‘চোর, খুনি’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন৷ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিক্ষোভের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Gurel
ভিন্নচিত্র
তুরস্কের সামগ্রিক চিত্রটা অবশ্য ভিন্ন৷ এর্দোয়ানের ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষের মানুষরা তুরস্কের বিভিন্ন শহরে আনন্দ মিছিল করেছেন৷ অনেক নারীও তাঁকে ভোট দিয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Gurel
এর্দোয়ানের জনপ্রিয়তায় কমতি নেই
একরোখা আচরণের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর্দোয়ান এক সমালোচিত চরিত্র হলেও নিজের দেশের জনগণের মধ্যে তাঁর সমর্থন তেমন একটা কমেনি বলেই মনে হচ্ছে৷ গতবছর তাঁর বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছিল কার্যত জনগণ প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের পাশে থাকায়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/L. Pitarakis
‘ডিক্টেটর’ এর্দোয়ান?
গণভোটে জয়ের পর এর্দোয়ান কি ‘ডিক্টেটরদের’ মতো ব্যবহার শুরু করবেন? এটা সত্য যে, এর ফলে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে৷ তুরস্কের সংবিধানে পরিবর্তন আনার ইচ্ছা বহু আগেই প্রকাশ করেছিলেন তিনি৷ এখন সে পথ পরিষ্কার৷ তবে সিএনএনকে তিনি জানিয়েছেন, গণভোট তাঁকে ‘ডিক্টেটর’ বানাচ্ছে না৷ বরং নতুন ব্যবস্থা তাংর জন্যনয়, তুরস্কের মঙ্গলের জন্যই, বলেন এর্দোয়ান৷