1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যাত্রামহল কি এবার ভোটের প্রচারে?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৮ এপ্রিল ২০১৯

ভোটের মরসুমে নয়া মাত্রা জুড়ছে মঞ্চ৷ চলছে রাজনৈতিক যাত্রাপালা৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর জীবনভিত্তিক পালা তৈরি করেছে একাধিক যাত্রা দল৷ একে কেউ বলছেন কৃতজ্ঞতার প্রতিদান, কেউ বলছেন চাটুকারিতা৷

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর জীবনভিত্তিক পালা তৈরি করেছে একাধিক যাত্রা দলছবি: Bangladesch, Jatra, Kunst , Politik, Plakate, Plakat, Wahlplakat

যাত্রায় যখন মমতা

লোকসভা নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে ভারতে৷ সেই প্রচারে সভা-সমিতি-মিছিল যেমন হচ্ছে, তেমনই চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার৷ এই প্রচারে অন্য মাত্রা জুড়েছে যাত্রাপালা৷ বিনোদনের নানা উপকরণ চলে আসায় যাত্রার মতো প্রাচীন শিল্প মাধ্যম এখন কোণঠাসা৷ এর মধ্যেই একাধিক যাত্রা তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনের উপর নির্ভর করে৷ সেই অর্থে এটা রাজনৈতিক দল কর্তৃক প্রচার নয়৷ যাত্রা দলের বিষয় চয়নেই একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে কার্যত প্রচার হয়ে উঠেছে৷

একাধিক পালা তৈরি হয়েছে, যার নামকরণেই রয়েছে মমতার উল্লেখ৷ যেমন, ‘মমতার ডাকে দিল্লি চলো', ‘বাংলার ক্ষমতায় এবার মমতা', ‘দিদি তোমার জবাব নেই'৷ কেন এ ধরনের বিষয় বেছে নেওয়া হচ্ছে? এর উত্তর খুঁজতে ডয়চে ভেলে হাজির হয়েছিল যাত্রাশিল্পের পাড়া কলকাতার চিৎপুরে৷ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত একাংশের বক্তব্য, যাত্রার শিল্পী ও কলা-কুশলীদের পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল সরকার৷

লোকবন্দনা অপেরার ‘মমতার ডাকে দিল্লি চলো' পালায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সীতা ঘোষ৷ তিনি অতীতে ‘মা-মাটির লড়াই' এবং ‘বাংলার মসনদে মমতা' নামের দুটি পালাতেও মমতার ভূমিকায় ছিলেন৷

হারাধন রায়

This browser does not support the audio element.

এই অভিনেত্রী বলেন, ‘‘আগে কোনো সরকার যাত্রার দিকে নজর দেয়নি৷ মমতা সরকার আমাদের গুরুত্ব দিয়েছে৷ শুধু ভাতার ব্যবস্থাই করেনি, শিল্পীদের স্বীকৃতি দিয়েছে৷ সে জন্য আমরা কৃতজ্ঞ৷ গোটা যাত্রা পাড়াই কৃতজ্ঞ৷'' মমতার নামে যাত্রা যে তারই ফলশ্রুতি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷

তবে সবটাই মুখ্যমন্ত্রীর অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ, এমনটা মনে করছেন না যাত্রা দলের সংগঠকরা৷ কলকাতা যাত্রা কর্মী ইউনিয়নের সম্পাদক হারাধন রায় বলেন, ‘‘যাত্রাশিল্পের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর অবদান নিশ্চয়ই আছে৷ তবে শুধু সে কারণে নয়, জীবননির্ভর পালা এর আগেও হয়েছে৷ ১৯৯২ সালে ‘বাংলার বাঘিনী' মমতা বলে আমি একটি যাত্রার আয়োজক ছিলাম৷ সেটা তখনকার সরকার বাধা দিয়েছিল৷ তবে বর্ণময় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের জীবনকেন্দ্রিক পালা নতুন কোনো প্রবণতা নয়৷ এর আগে ইন্দিরা গান্ধী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে নিয়েও যাত্রা হয়েছে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতীত ঘটনাবহুল৷ অনেক সংগ্রামের পথ পেরিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন৷ পালা লেখার জন্য এ ধরনের কাহিনির প্রয়োজন হয়৷ সে কারণে মুখ্যমন্ত্রীর সাদামাটা জীবনকে বেছে নিয়েছেন একাধিক পালানির্মাতা৷ সেই পালা জনপ্রিয়ও হয়েছে৷''

রুমা চক্রবর্তী

This browser does not support the audio element.

নিছকই তোষামোদ?

মুখ্যমন্ত্রীর অবদানের ফলস্বরূপ তাঁর নামে পালা তৈরি হচ্ছে, এমনটা সবাই মনে করেন না৷ একাংশের মত, এর পিছনে তোষামোদও রয়েছে৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যাত্রাকর্মী বলেন, ‘‘বাম আমলের তুলনায় এখন যাত্রাশিল্প বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, এটা ঠিকই৷ বিপুল টাকা খরচ করে জানুয়ারিতে যাত্রাউৎসবও হচ্ছে৷ তবে এত মমতানির্ভর পালা সে কারণে হচ্ছে না৷ আদতে শাসকদলের নেকনজরে থাকতে কে না চায়? তাই পুরস্কার বা সম্মাননার কথা ভেবে এ ধরনের পালা তৈরির হিড়িক পড়ে গিয়েছে৷''

আর এক যাত্রাকর্মী বললেন, ‘‘কংগ্রেস আমলে সরকারের সমালোচনা করে কোনো যাত্রা মঞ্চস্থ করলে সেটা বন্ধের চেষ্টা চালানো হতো৷ পরে বাম আমলে সমালোচনামূলক পালা হলে সেটা পাল্টে ফেলতে বাধ্য করা হতো৷ আর তৃণমূলের রাজত্বে সবটাই পক্ষে৷ সমালোচনা করা হচ্ছে না৷''

তবে রাজনীতিকদের সমালোচনা হচ্ছে না, তা নয়৷ মমতার জীবননির্ভর একাধিক যাত্রাপালার প্রযোজক কনক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শাসকদলের অত্যাচারের মুখে যাঁরা পড়েছেন, তাঁদের কথাও দেখানো হচ্ছে৷ ‘চাঁপাডাঙ্গার বউ' পালায় তুলে ধরা হয়েছে কিভাবে রাজনীতিক ও গুন্ডারা প্রতিবাদের কন্ঠ রোধ করছে৷ দুর্নীতিগ্রস্থ রাজনীতিকদের ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে, এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে৷'' একইভাবে বিমুদ্রাকরণের ফলে দেশের মানুষের যে সমস্যা হয়েছিল, তার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে ‘ভালো মানুষের ভাত নেই'৷ রূপশ্রী, কন্যাশ্রী নিয়ে মমতার সাফল্য তুলে ধরেছে ‘দিদি তোমার জবাব নেই' পালা৷

সীতা ঘোষ

This browser does not support the audio element.

জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে নেই

মমতার জীবননির্ভর পালা যে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে, সে কথা বলছেন মমতার ভূমিকায় থাকা অভিনেত্রীরাই৷ শুধু গ্রামবাংলা নয়, খোদ শহরের বুকেও রমরমিয়ে এসব পালা চলেছে৷ ‘বাংলার ক্ষমতায় এবার মমতা' পালার মমতারূপী রুমা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মানুষ পালা দেখে আমাকেই মুখ্যমন্ত্রী বলে মনে করেছিল৷ যাত্রা মঞ্চস্থ হওয়ার পর আমাকে গ্রামের মানুষেরা তাঁদের অভাব-অভিযোগ জানাতে ছুটে এসেছিলেন৷ কোথাও রাস্তা হয়নি, কোথাও চাষের জল দরকার, এসব অভিযোগ নিয়ে তাঁরা আমাকে অভিযোগ জানাতে ব্যগ্র ছিলেন৷''

সীতা ঘোষও বলেন, ‘‘দিদির বলা কথাগুলো চরিত্রের মধ্যে দেওয়া আছে৷ সেগুলোই বলেছি৷ দর্শকদের বাহবা পেয়েছি৷ জঙ্গলমহল, অনশন মঞ্চ, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, ব্রিগেডের জোট সবটাই দেখানো হয়েছে৷ এরই মধ্যে ৪০টা শো হয়েছে৷ বিভিন্ন জায়গায় নেতাদের বা পার্টি অফিসের ডাকে এই পালা দেখানো হয়েছে৷ অনুব্রত মণ্ডল, মদন মিত্র, অরূপ বিশ্বাস সকলেই যাত্রা দেখেছেন, বাহবা দিয়েছেন৷ দিদি নিজে আমায় জন্মদিনে চিঠি দিয়েছে৷''  

এ বছর নির্বাচন হচ্ছে বলে নয়, আগেও মমতার জীবননির্ভর যাত্রা হয়েছে৷ কিন্তু, ভোট মরসুমে এই যাত্রাকে প্রচার হিসেবেই দেখছে বিরোধীরা৷ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘মা-মাটি-মানুষের যাত্রা সারা বছরই চলছে৷ দলের নেতা-নেত্রীরা নানাভাবে যাত্রা করে চলেছেন৷ কাজেই মঞ্চের যাত্রায় নতুন কী আর পাওয়া যাবে?''

বিরোধীদের দাবি, এটা নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল৷ তাই ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ গত মঙ্গলবার ‘মমতার ডাকে দিল্লী চলো'-র একটা শো ছিল৷ কিন্তু সেটা বাতিল করা হয়েছে৷ আয়োজকদের তরফে বলা হয়েছে, পালা মঞ্চস্থ করার অনুমতি পাওয়া যায়নি৷ কমিশন সায় দেয়নি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ