রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিন ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আকাশে বিমান ধ্বংসে ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছিলেন বলে তদন্তে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷ তবে তথ্যপ্রমাণের অভাবে আপাতত তদন্তে ইতি টানা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
শুধু ইউক্রেনের উপর বর্তমান হামলাই নয়, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের বিরুদ্ধে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ আনা হলো৷ ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আকাশে মালয়েশিয়ার যাত্রীবাহী বিমান ধ্বংসের জন্যও তাকে পরোক্ষভাবে দায়ী করা হলো৷ যে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে এমএইচ১৭ উড়াল ধ্বংস করা হয়েছিল, পুটিন ব্যক্তিগতভাবে সেগুলি ইউক্রেনের পূর্বে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছিলেন বলে তদন্তে দাবি করা হয়েছে৷ আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুরগামী বিমানটি ইউক্রেনের আকাশে রাশিয়ার তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভেঙে পড়ায় বিমানের ২৯৮ যাত্রী ও বিমানকর্মী নিহত হয়েছিলেন৷
দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর তদন্তকারী দল অবশ্য যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে পুটিন-সহ অন্যান্য সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেশ করতে পারেন নি৷ ফলে তদন্ত আপাতত বন্ধ রাখতে হচ্ছে৷ নেদারল্যান্ডসের কৌঁসুলি ডিগনা ফান ব্যোৎসেলায়ের বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের পর্যায়ে, অর্থাৎ পুটিনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘বাক টেলার’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ইউক্রেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, এমন একাধিক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷ কিন্তু এমন সন্দেহের পক্ষে চূড়ান্ত ও আইনসম্মত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি৷ তদন্তকারীদের সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে বলেন, আদের মতোই রুশ ফেডারেশনকে দায়বদ্ধ করা হবে৷ নিহতদের পরিবারের সদস্যরাও হতাশা প্রকাশ করেছেন৷ উল্লেখ্য, গত প্রায় তিন মাস আগে নেদারল্যান্ডসের এক আদালত দুই রুশ ও এক ইউক্রেনীয় নাগরিককে দোষী সাব্যস্ত করে৷ তাদের অবশ্য আদালতে হাজির করা সম্ভব হয় নি৷
২০১৪ সালে হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখল ও পূবের কিছু এলাকা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে এনেছিল রাশিয়া৷ সেই সময় ডনবাস অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছিল মস্কো৷ কিন্তু এমএইচ১৭ উড়াল ধ্বংসের জন্য যাবতীয় দায় অস্বীকার করে এসেছে সে দেশ৷ তদন্তকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' হিসেবে বর্ণনা করে রাশিয়া তা মেনে নেয় নি৷
ডাচ তদন্তকারীরা অবশ্য আড়ি পেতে রেকর্ড করা একটি টেলিফোন কল শুনিয়ে পুটিনের এক উপদেষ্টার বক্তব্য তুলে ধরেছেন৷ তাতে শোনা যাচ্ছে, যে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত একমাত্র এক ব্যক্তি নিতে পারেন৷ তিনি ফ্রান্সে এক শীর্ষ বৈঠকে ব্যস্ত আছেন৷ আরেকটি কলে পুটিন নিজে লুগানস্ক অঞ্চলের এক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে ‘সামরিক সরঞ্জাম' সম্পর্কে কিছু বলেন৷ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুটিনের আইনি রক্ষাকবচের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে আপাতত কিছু করা সম্ভব নয় বলেও তদন্তকারীরা মন্তব্য করেন৷ তবে তদন্তে উঠে আসা সব তথ্যপ্রমাণ মহাফেজখানায় রাখা থাকবে৷ কোনো এক সময়ে খোদ রাশিয়ায় তদন্ত চালানো সম্ভব হলে হয়তো আদালতে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ উঠে আসবে বলে আশা রয়েছে৷
এসবি/এসিবি (এএফপি, এপি)
ভ্লাদিমির পুটিনের ভিন্ন রূপ
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷ ছবিঘরে পুটিনের ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিক ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/A. Novosti/RIA Novosti/Kremlin
কেজিবি থেকে ক্রেমলিন
পুটিন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নিরাপত্তা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দেন ১৯৭৫ সালে৷ আশির দশকে তিনি কেজিবি এজেন্ট হিসেবে জার্মানির ড্রেসডেনে কর্মরত ছিলেন৷ বার্লিন ওয়ালের পতনের পর রাশিয়ায় ফিরে গিয়ে বরিস ইয়েলৎসিনের ক্রেমলিনে প্রবেশ করেন তিনি৷ ইয়েলৎসিন তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে পুটিনের নাম ঘোষণা করলে তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/M.Klimentyev
প্রথম প্রেসিডেন্সি
বড় পদে যাওয়ার আগ অবধি রাশিয়ার সাধারণ জনতা পুটিনকে বলতে গেলে চিনতেনই না৷ ১৯৯৯ সালের আগস্টে চেচনিয়ার একদল সশস্ত্র মানুষ রাশিয়ার দাগেস্তান দখল করে নিলে পুটিন লাইম লাইটে আসেন৷ প্রেসিডেন্ট ইয়েলৎসিন তখন তাঁকে চেচনিয়াকে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার দায়িত্ব দেন৷ সেবার বর্ষবরণের আগের রাতে অপ্রত্যাশিতভাবে পদত্যাগ করেন ইয়েলৎসিন এবং পুটিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেন৷
ছবি: picture alliance/AP Images
গণমাধ্যমে কঠোর পুরুষ
সোচিতে একটি প্রীতি হকি গেমে পুটিনের দল ১৮-৬ গোলে জয়লাভ করে৷ এরমধ্যে আটটি গোলই করেছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট!
ছবি: picture-alliance/AP/A. Nikolsky
বাকস্বাধীনতায় লাগাম
পুটিন বিরোধীদের এক ব়্যালিতে এভাবে মুখে টেপ লাগিয়ে তার উপরে পুটিন লিখে হাজির হয়েছিলেন এক প্রতিবাদকারী৷ ২০১৩ সালে সেদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা রিয়া নোভোস্টিকে সংস্কারের ঘোষণা দেয় ক্রেমলিন এবং সেটির দায়িত্ব উগ্র পশ্চিমাবিরোধী মতের জন্য পরিচিত এক ক্রেমলিনপন্থির হাতে তুলে দেয়া হয়৷ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রেস ফ্রিডম সূচকে ১৭৮টি দেশের মধ্যে রাশিয়ার অবস্থান ১৪৮তম৷
ছবি: Getty Images/AFP/V.Maximov
পুটিনের ভাবমূর্তি: কাজে বিশ্বাসী এক ব্যক্তি
রাশিয়ায় অনেকে বিশ্বাস করেন পুটিন কাজে বিশ্বাসী৷ এই ভাবমূর্তি গড়তে গিয়ে গণমাধ্যমে মাঝেমাঝেই ঊর্দ্ধাঙ্গ অনাবৃত ঘৌড়সওয়ারের বেশে বা জুডোতে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করার বেশে পুটিনের ছবি প্রকাশ হয়৷ রাশিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারায় পুটিনের প্রশংসা করেন অনেকে, পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্রের অভিযোগও রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Nikoskyi
গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ
২০০৭ সালে পুটিনের দল ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি যখন ব্যাপক ভোটে জয়লাভ করে, তখন সমালোচকরা দাবি করেন, ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া মুক্ত এবং গণতান্ত্রিক ছিল না৷ পুটিনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রণের কণ্ঠরোধে অভিযোগে আয়োজিত এক বিক্ষোভ থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে দাঙ্গা পুলিশ৷ সেই বিক্ষোভ ব়্যালিতে একটি পোস্টারে লেখা ছিল, ‘ধন্যবাদ, না!’
ছবি: Getty Images/AFP/Y.Kadobnov
সাজানো ঘটনা
ক্রাইমিয়ার সেভাস্টোপোলে একটি ছোট সাবমেরিনের মধ্যে দেখা যাচ্ছে পুটিনকে৷ বলা হয়ে থাকে, কৃষ্ণ সাগরের গভীরে তিনি গিয়েছিলেন এই সাবমেরিনে করে৷ এরকম ছবি মাঝে মাঝেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়৷ কখনো তিনি বুনো বাঘকে কাবু করেন চেতনানাশক দিয়ে কিংবা ওড়ের বিলুপ্তপ্রায় সারসের সঙ্গে৷ এভাবে এক দুঃসাহসী অভিযাত্রীর বেশে পুটিনকে উপস্থাপন করা হয়৷