উত্তাল সত্তরের দশকে যখন গোটা পশ্চিমবঙ্গের পরীক্ষা ব্যবস্থাটাই রাজনীতির দখলে চলে গিয়েছিল, তার পর থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা চালু৷ ছাত্র-শিক্ষকদের সমবেত চেষ্টায় থেকে গেল সেই নিয়ম৷
বিজ্ঞাপন
এবছর প্রায় ১৭ হাজার আবেদন জমা পড়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ৬টি বিষয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য৷ হঠাৎই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি এক বৈঠক ডেকে জানিয়ে দেয়, এবার থেকে শুধুই প্রবেশিকা পরীক্ষা নয়, ৫০ শতাংশ যোগ্যতামান নির্দিষ্ট হবে বোর্ডের পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতে৷ রাজ্য শিক্ষা দপ্তর সেরকমই চাইছে৷ এরপরই শুরু হয় ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিবাদ৷ তাঁদের বক্তব্য ছিল, এর ফলে একে তো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনের অধিকার খর্ব হচ্ছে, পাশাপাশি পিছনের দরজা দিয়ে অযোগ্য ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি করার রাস্তাও খুলে দেওয়া হচ্ছে৷ প্রতিবাদে শুরু হয় অবস্থান-বিক্ষোভ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে ঘেরাও৷ ঘটনা পরম্পরা জটিল থেকে জটিলতর হতে শুরু করে৷ ৯ জুন প্রবেশিকা পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল, ১৫ জুন কর্মসমিতির বৈঠকে সেই পরীক্ষার বিরুদ্ধে মত দেন অধিকাংশ সদস্য৷ রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের পরামর্শ মেনে আলোচনার পর প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় পূর্ব নির্ধারিত তারিখেই৷ ৪ জুলাই ফের সেই পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করে নতুন নিয়মে ভর্তির দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়৷ ১০ জুলাই আবারও সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে প্রবেশিকা পরীক্ষাই বহাল রাখা হয়৷ কর্মসমিতির আগের বৈঠকে অধ্যাপকদের যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ প্রবেশিকার বিরুদ্ধে মত দিয়েছিলেন, তাঁরাই এবার সায় জানান, কিন্তু ভেতরে ক্ষোভ পুষে রেখে৷ সিদ্ধান্ত বদলের কারণ হিসেবে তাঁরা ছাত্র-ছাত্রীদের একগুঁয়ে মনোভাব এবং বাইরের রাজনৈতিক চাপকে দায়ী করেন৷
কলকাতার দেওয়াল কথা বলে
গ্রাফিতি বা দেওয়াল-চিত্র কলকাতায় নতুন নয়৷ রাজনীতি-সচেতন এ শহরে স্লোগান ছাড়াও লেখা হয় অনেক কিছু৷ ভোটে বা মিছিলে যাওয়ার ডাক থেকে পণ্যের বিজ্ঞাপন, দেওয়ালের লাঞ্ছনা চলতেই থাকে৷ এতে মহানগরীর নিজস্ব চরিত্রটাও ফুটে ওঠে বইকি৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
চেনা চেহারা
রাজনৈতিক দেওয়াল লিখন কলকাতার প্রায় সর্বত্র৷ দাঁত বের করা ইটের দেওয়াল, তার ওপরে ভোটের স্লোগান লেখা – এটি কলকাতার খুব চেনা, অতি পরিচিত দেওয়াল-চিত্র৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ভোটের দেওয়াল
অনেকে মনে করেন, দেওয়াল লিখন কলকাতার এক নিজস্বতা, যাতে শহরটার রাজনৈতিক সচেতনতা প্রকাশ পায়৷ এই যেমন, সামনেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট৷ তাই তো প্রার্থীদের সমর্থনে নতুন উদ্যমে শুরু হয়ে গেছে দেওয়াল লেখা৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ছড়ায় দেওয়াল
রাজনৈতিক স্লোগানে ছড়া কাটা কলকাতার পুরনো অভ্যেস৷ এখনও তার কিছু নমুনা খুঁজে পাওয়া যায় শহরের দেওয়ালে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ব্রিগেডে মিটিং হবে
রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের ডাক, সবই পড়ে শহরের দেওয়ালে৷ এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগেও৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
জানান দেওয়া
অথবা শুধুই নিজেদের রাজনৈতিক মতবাদ জানান দেওয়ার জন্য দেওয়াল লেখা হয়৷ বেশি দেখা যায় কল-কারখানার গেটে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বিজ্ঞাপনের দেওয়াল
অনেকেই আবার নিজেদের ব্যবসায়িক বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য বেছে নেন শহরের দেওয়াল৷ নিখরচায় প্রচার৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
অন্য সচেতনতা
তারই মাঝে কোনো দেওয়ালে নজরে পড়ে অন্য ধরনের সমাজ সচেতনতার বার্তা দেওয়ার চেষ্টা৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
সিনেম্যাটিক
‘বিজ্ঞাপন মারিবেন না’ বা ‘দেওয়াল নোংরা করিবেন না’ জাতীয় আবেদন অগ্রাহ্য করেই সরকারি ভবন থেকে গৃহস্থের বাড়ি, সর্বত্র নির্বিচারে দেওয়াল লেখা হয়৷ তাছাড়া ফাঁকা দেওয়াল থাকলে সিনেমার পোস্টার সাঁটা হবে না, তাও কি হয়? এখানে বিজ্ঞাপন মারিবে না বললেও শোনে কে!
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
শৈল্পিক বেনিয়ম
আবার কোনো দেওয়ালে দেখা যায় শহরটাকে সুন্দর করার চেষ্টা৷ যেমন এই স্কুলের দেওয়ালে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
স্বাগত ব্যতিক্রম
অনেকে আবার মনে করেন, দেওয়াল লেখাটা এই শহরটার একটা বদভ্যেস, যা শুধু চারপাশটাকে কুশ্রীই করে না, আমাদের সৌন্দর্যবোধের অভাবকেই প্রকট করে৷ তারপরেও স্লোগান-লাঞ্ছিত দেওয়ালের মধ্যেই কখনও কখনও চোখে পড়ে যায় অন্য ধারার নান্দনিক ভাবনা৷ এটি অবশ্য একটি ধর্মস্থানের দেওয়াল৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
10 ছবি1 | 10
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে যাদবপুর কলা বিভাগের ৬টি বিষয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষার দায়িত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও থাকবেন৷ আগে যেমন দুটি সেট প্রশ্নপত্র তৈরি হতো, যার একটি করতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের বিশিষ্ট অধ্যাপক-শিক্ষাবিদরা, সেরকম কি তা হলে আর হবে না? খাতা দেখার ক্ষেত্রেও কি বাইরের কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে না? সেই বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জানাচ্ছেন, এই পরীক্ষার ‘আউটসোর্সিং' হবে না৷ বাইরের কোনও প্রতিষ্ঠান এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকবে না৷ বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরাও এখন থেকে এর সঙ্গে যুক্ত থাকবেন৷ কিন্তু তাঁদের সঙ্গে বাইরের কোনও অধ্যাপকও থাকবেন কিনা, সেটা এখনও যথেষ্ট স্পষ্ট নয়৷ এদিকে প্রবেশিকা বিতর্কের আপাতত নিষ্পত্তি ঘটলেও ক্ষুব্ধ উপাচার্য সুরঞ্জন দাস পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন বলে খবর৷ কেন তিনি দায়িত্ব ছাড়তে চাইছেন, সেটা নিয়েও বিভ্রান্তি আছে৷
‘পরীক্ষার নম্বর দিয়ে বিষয় নির্ধারণ ঠিক নয়’
প্রশ্ন উঠছে, কেন যাদবপুরের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রবেশিকা পরীক্ষা চালু রাখার পক্ষে? তাঁদের বক্তব্যও যথেষ্ট যুক্তিগ্রাহ্য, যা অনেকটাই শিক্ষা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মুক্ত ধ্যান-ধারণার প্রতিধ্বনি ঘটাচ্ছে৷ তাঁরা বলছেন, একজন ছাত্র বা ছাত্রী কী পড়বে, তার কী পড়া উচিত, সেটা তার পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতে ঠিক করা উচিত নয়৷ কারণ, এমন হতেই পারে যে, সে পরীক্ষায় ভালো ফল না করলেও ওই নির্দিষ্ট বিষয়ে তাঁর স্বাভাবিক প্রবণতা এবং দক্ষতা আছে, যা কেবল প্রবেশিকা পরীক্ষা বা ইন্টারভিউয়ের মধ্যে দিয়েই বোঝা যায়৷ কাজেই যাঁরা বলছেন যে, প্রবেশিকা পরীক্ষা স্রেফ নিজেদের পছন্দের লোকজনকে ভর্তি করার কৌশল, তাঁরা ঠিক বলছেন না৷ এটা বরং যথার্থ পদ্ধতি, যেখানে পরীক্ষার মার্কশিটের বাইরে থাকা প্রতিভাকে শনাক্ত করা, তাকে বিকশিত করার সুযোগ দেওয়া যাবে৷ শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য যা হওয়া উচিত৷যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের প্রাক্তনী, বর্তমানে দিল্লির অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং দেশের অন্যতম নামী অনুবাদক অরুণাভ সিনহা ডয়চে ভেলেকে ঠিক সেই কথাই বললেন৷ নিজের দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতায় তিনি দেখেছেন, কৃতবিদ্য মানুষদের অনেকেরই পরীক্ষার ফল অত ভালো ছিল না৷ কিন্তু নিজেদের বিষয়ে, নিজেদের কাজে তাঁরা অসামান্য দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন৷ তাঁরাই নতুন জিনিস ভাবতে পেরেছেন, অন্যকে ভাবতে উৎসাহিত করেছেন৷ অরুণাভর মতে, শিক্ষাক্ষেত্রে এই মুক্ত ভাবনার পরিসর থাকা অত্যন্ত জরুরি৷ কারণ, প্রতিভা বা স্বাভাবিক দক্ষতা সবসময় পরীক্ষার মার্কশিটে প্রতিফলিত হয় না!
বিশ্বের সেরা ১০ বিশ্ববিদ্যালয়
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় স্থান দখল করেছে৷ কোনটি আছে শীর্ষে, কোনটি সবচেয়ে পুরোনো জেনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Richie - sa
১. কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য
১২০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ বিশ্বের চতুর্থ পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয় এটি৷ আর ইংরেজি ভাষাভাষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অবস্থান প্রথম৷ এখানকার ৯০ জন শিক্ষার্থী নোবেল জিতেছেন৷
ছবি: Fotolia/Konstiantyn
২. ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, যুক্তরাষ্ট্র
ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসাডেনাতে ১৮৯১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ‘থ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে৷ ১৯২০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে বর্তমান নামকরণ করা হয়৷ এখানকার ৩৪ জন সাবেক শিক্ষার্থী নোবেল বিজয়ী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.Chiu
৩. স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম বড় ক্যাম্পাস এই বিশ্ববিদ্যালয়টির৷ একইসাথে ভীষণ নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়৷ এই প্রতিষ্ঠানের ২১ জন শিক্ষার্থী নোবেল জিতেছেন৷ ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এটি৷
ছবি: King of Hearts/Wikimedia Commons/dpa
৪. অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ইংল্যান্ড
ইংরেজি ভাষাভাষি দেশগুলোর মধ্যে অক্সফোর্ড সবচেয়ে পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬ জন শিক্ষার্থী নোবেল জিতেছেন৷ ইন্দিরা গান্ধী, বিল ক্লিন্টন, অং সান সুচিসহ বিশ্বের ৩০ জন রাষ্ট্রপ্রধান এবং যুক্তরাজ্যের ২৬ জন প্রধানমন্ত্রী এখানে পড়েছেন৷ এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১০৯৬ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Burton
৫. ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বা এমআইটি, যুক্তরাষ্ট্র
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ৮৫ জন শিক্ষার্থী নোবেল জিতেছেন৷ এর মধ্যে আছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনান৷
ছবি: AFP/Getty Images
৬. হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র
১৬৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত৷ এখানকার ৪৫ জন শিক্ষার্থী নোবেল জিতেছেন৷ ৩০ জন শিক্ষার্থী হয়েছেন রাষ্ট্রপ্রধান আর ৪৮ জন পুলিৎজার জিতেছেন৷
ছবি: Getty Images
৭. প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয় এটি৷ ১৭৪৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এখানকার ৪০ জন শিক্ষার্থী নোবেল জিতেছেন৷
ছবি: cc-by-carbonnyc
৮. ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডন, যুক্তরাজ্য
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজধানীর কেন্দ্রে অবস্থিত৷ স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিংসহ মোট ১৪ জন শিক্ষার্থী নোবেল জিতেছেন৷ ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী এখানে পড়েছেন৷
ছবি: Getty Images/J.Li
৯. সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি জুরিখ, ইটিএইচ জুরিখ
১৮৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ৷ আলবার্ট আইনস্টাইনসহ এখানকার ২০ জন শিক্ষার্থী নোবেল জিতেছেন ৷