যানজটের কারণে বছরে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক লাখ কোটি টাকা৷ খোদ সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান জানাচ্ছে এ তথ্য৷ প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক সঞ্চয় চক্রবর্তী মনে করেন, ঢাকার ওপর চাপ যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ৷
বিজ্ঞাপন
২০১১ সালে রাজধানীতে যানজটের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ারস, বাংলাদেশ (আইইবি)৷ তাদের হিসাবে, সে সময় ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা৷ পরের বছর, অর্থাৎ ২০১২ সালে যানজটের আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করে ইউএনডিপি৷ তাতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ হাজার কোটি টাকার মতো৷ আর সর্বশেষ ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে হিসাব করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড (বিওআই)৷ তারা দেখায়, রাজধানীতে যানজটের কারণে বছরে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার, যা মোট জিডিপির ৭ শতাংশের সমান৷
বিনিয়োগ বোর্ডের হয়ে গবেষণাটি করেছেন উপ-পরিচালক সঞ্চয় চক্রবর্তী৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে এই গবেষণা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি৷ তাঁর মতে, ‘‘বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে জেলা শহরগুলোতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার৷ সেই সঙ্গে মানুষের ঢাকামুখী হওয়ার প্রবণতা কমানো দরকার৷ নতুবা কোনো কিছুতেই সফলতা মিলবে না৷''
সঞ্জয় চক্রবর্তী
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে যানজটের অবস্থা আমরা সবাই জানি৷ এ নিয়ে একটি গবেষণা হয়েছে, যেখানে যানজটে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টা উল্লেখ করেছেন আপনারা৷ এই ক্ষতিটা কীভাবে নির্ধারণ করেছেন? আর ক্ষতির পরিমাণটাই বা কী রকম?
সঞ্জয় চক্রবর্তী: ঢাকা শহরে ট্র্যাফিক জ্যামের অর্থনৈতিক ক্ষতিটা কী? এটাই ছিল আমার গবেষণার মূল বিষয়৷ ২০১৪ সালে এক বছরে ঢাকা শহরে ট্র্যাফিক জ্যামের কারণে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সেটা আমি নির্ধারণ করার চেষ্টা করেছি৷ ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক লাখ কোটি টাকা), যা আমাদের মোট জিডিপির ৭ শতাংশ৷ ঐ বছর আমাদের জিডিপির আকার ছিল ১৭ হাজার ৩৮১ কোটি ডলার৷ গাণিতিক একটা হিসাব করেই এই সংখ্যাটা বের করা হয়েছে৷
কাজ করতে গিয়ে কোন কোন বিষয় আপনারা সামনে এনেছেন বা কোন দিকে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ ছিল আপনাদের?
ঢাকার প্রধান সমস্যা যানজট
এক কোটিরও বেশি জনসংখ্যার শহর ঢাকা৷ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এ শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো থমকে থাকে যানজটে৷ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে পড়ে মানুষ, যার প্রধান কারণ অব্যবস্থাপনা ও জনগণের অসচেতনতা৷
ছবি: DW/M. Mamun
গোড়া থেকেই শুরু
বিশাল জনগোষ্ঠীর শহর ঢাকায় যানজটের ফলে যে শুধু সময় নষ্ট হয়, তা নয়৷ ক্ষতি হয় বিপুল পরিমাণ জ্বালানিরও৷ আর এই যানজট শুরু হয় সপ্তাহের একেবারে প্রথম দিনটি থেকেই৷ সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসের সকালে তোলা ছবিটি দেখুন৷ রাজধানী ঢাকার কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ-এর যানজট এটি৷
ছবি: DW/M. Mamun
যেখানে-সেখানে ওঠা-নামা
ঢাকার যানজটের কারণগুলোর একটি হলো যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানো৷ এক্ষেত্রে চালকদের যেমন সচেতনতার অভাব আছে, তেমনি অসচেতন যাত্রীরাও৷
ছবি: DW/M. Mamun
আরো বেশি যাত্রী!
ঢাকার ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়কের মাঝখানে গাড়িগুলোকে এভাবে আকাবাঁকা করে দাঁড় করানোর আরো একটি কারণ যাত্রী ওঠানোর প্রতিযোগিতা৷ সাধারণত একই রুটের বাসগুলো বেশি যাত্রী উঠানোর জন্য এরকম প্রতিযোগিতায় নামে৷ ফলে সৃষ্টি হয় যানজট৷
ছবি: DW/M. Mamun
অপ্রতুল পার্কিং স্পেস
ঢাকার প্রগতি সরণীর একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্রের সামনের সড়কের ফুটপাথটি দখল করে রেখেছে গাড়ি৷ এ শহরের বেশিরভাগ ভবনেরই নেই নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা৷ ফলে এ সব ভবনে আসা গাড়িগুলো পার্ক করা হয় ফুটপাথে কিংবা সড়কের ওপর, যেটা যানজটের অন্যতম একটি কারণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
সচেতনতার অভাব
ঢাকার যানজটের অন্যতম আরেকটি কারণ যত্রতত্র পথচারী পারাপার৷ এ শহরের বেশিরভাগ বাসিন্দাই ‘ট্র্যাফিক ম্যানার’ জানেন না৷ ব্যস্ততম সড়কে যত্রতত্র পারাপার তাই যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ অবশ্য ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত ওভার ব্রিজ অথবা জেব্রা ক্রসিং না থাকাও এর একটা কারণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
জীবনের ভয় নেই?
পর্যাপ্ত ফুট ব্রিজ বা ওভার ব্রিজ না থাকলেও, যে কটি আছে তাও ব্যবহার করতে চান না পথচারীরা৷ ছবিতে দেখুন রাজধানীর প্রগতি সরণীর ওভার ব্রিজের নীচ থেকেই কেমন রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা৷ এই দলে আছে বৃদ্ধ থেকে শুরু করে স্কুল শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
কখনও হকার, কখনও ছিনতাইকারী
যেসব পথচারী ওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে চান, তাদের অনেকসময়ই শিকার হতে হয় নানা বিড়ম্বনার৷ দিনেরবেলায় ওভার ব্রিজগুলো হকারদের দখলে চলে গেলেও, দেখার নেই কেউ৷ আর রাতেরবেলা এ সব ওভার ব্রিজে মানুষ উঠতে চান না ছিনতাইকারীর ভয়ে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বেপথে গাড়ি
যে কোনো বড় রাস্তারই দু’টো দিক থাকে – গাড়ি আসার একদিক আর যাওয়ার একদিক৷ ঢাকা শহরে যানজটের একটা প্রধান কারণ উল্টো পথে গাড়ি চালানো৷ হ্যাঁ, রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যাম হলে অনেককেই দেখা যায় গাড়ি ঘুরিয়ে ঝট করে উল্টো দিকের চলে যেতে৷ এতে করে যানজট তো বাড়েই, দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও থেকে যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
রাস্তার ভাঙার কারণে জ্যাম
ঢাকার যানজটের অন্যতম একটি কারণ দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তা খোড়াখুড়ি৷ ঢাকার গুলশানের এ সড়কটিতে স্যুয়ারেজের লাইন মেরামতের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে কাজ চলছে৷ ফলে দিনেরবেলায় সড়কটিতে লেগেই থাকছে যানজট৷
ছবি: DW/M. Mamun
সেতু নির্মাণের জন্য...
ঢাকা শহরের যানজটের কারণের মধ্যে আছে দীর্ঘ সময় ধরে উড়াল সেতু নির্মাণও৷ উড়াল সেতু নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা হচ্ছে সড়কের বেশিরভাগ জায়গায়৷ ফলে তৈরি হচ্ছে যানজট৷ তাছাড়া এ সব উড়াল সেতু নির্মাণে সঠিক পরিকল্পনারও অভাব আছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাঁধ সাধলো রেল ক্রসিং
ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রেই আছে কমপক্ষে ২০টি রেল ক্রসিং৷ এ সব ক্রসিং থেকে দিনে কমপক্ষে ৭০টিরও বেশি রেলগাড়ি চলাচল করে৷ এক হিসেব মতে, এই ক্রসিংগুলোর কারণে দিনে প্রায় ছয় ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকে ঢাকায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
ডাস্টবিনের কারণেও যানজট
ঢাকা শহরের বেশিরভাগ ডাস্টবিনই সড়কের ওপরে৷ এ সব ডাস্টবিনে উপচে পড়া ময়লা আবর্জনা সড়কের ওপরেও ছড়িয়ে পড়ে৷ ফলে সেসব জায়গায় স্লথ গতিতে চলে যানবাহন৷ তাছাড়া রাতেরবেলা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের নিয়ম থাকলেও তা মানা হয় না৷ যত্রতত্র এ সব ডাস্টবিনের কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয় মহানগরীতে৷
ছবি: DW/M. Mamun
12 ছবি1 | 12
আসলে ট্র্যাফিক জ্যাম কী কারণে হয় – প্রাথমে আমরা সেটা নির্ধারণ করার চেষ্টা করেছি৷ এর অনেকগুলো কারণ আছে৷ তবে আমরা যদি মূল কারণগুলো দেখি, তাহলে প্রশ্ন ওঠে যে, ঢাকা শহরে মানুষ কেন আসতে চায়? মূল বিষয়টা হলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিয়োগ৷ এই তিনটি বিষয়ের কারণে ঢাকা শহরে মানুষ আসছিল, এখনও আসছে৷ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগ, অর্থাৎ ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ ঢাকাতে অবস্থান করছে৷ আমাদের গবেষণায় ছিল, ঢাকা শহরে বাসবাস করা মানুষের এতে কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে৷
আপনারা তো শুধু ঢাকা শহর নিয়েই গবেষণা করেছেন, তাই না?
হ্যাঁ, শুধু ঢাকা শহর নিয়েই গবেষণা করেছি আমরা৷
এর সঙ্গে অন্য শহরগুলো, যেমন চট্টগ্রামের ট্র্যাফিক জ্যামের বিষয়টি কি আসেনি? সারাদেশে ট্র্যাফিক জ্যামের কারণে কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে? এ ধরনের কোনো তথ্য কি আপনাদের কাছে আছে?
বিনিয়োগ বোর্ডের এই ধরনের গবেষণার কোনো পরিকল্পনা নেই৷ তবে একটা জিনিস বলতে পারি যে, মোট জিডিপির ৩৫ ভাগই ঢাকা শহরকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে৷ বাংলাদেশের মোট আয়তন এক লাখ ৪৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার আর ঢাকা শহরের আয়তন ৩৬৮ বর্গ কিলোমিটার৷ অথচ এতটুকু অঞ্চল তৈরি করছে ৩৫ ভাগ জিডিপি৷ প্রাদেশিক সরকার না হওয়াতে ঢাকা শহর একটি মাত্র বড় শহর, যা মানুষের শরীরের হার্টের মতো৷ অর্থাৎ যদি সেটা ‘ফেল' করে তাহলে পুরো শরীরটাই ‘ফেল' করবে৷ যদি ৪-৫টা হার্ট থাকতো, তাহলে একটা হার্ট নষ্ট হলেও অন্যগুলো দিয়ে ‘সার্ভাইভ' করতে পারতাম আমরা৷ ভারতে যেমন প্রতিটি রাজ্যে প্রাদেশিক সরকার আছে৷ ফলে ঢাকায় যখন অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তখন পুরো অর্থনীতিই দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷
ঢাকায় এত কষ্ট, জীবন নষ্ট!
প্রাণ আছে ঢাকা শহরে৷ ঢাকার মানুষেরও অফুরন্ত প্রাণশক্তি৷ নাগরিক জীবনে কত রকমের দুর্ভোগ৷ নগরবাসীর কাছে সবই যেন তুচ্ছ৷ চলুন দেখে নিই ঢাকার চিরচেনা কিছু দুর্ভোগের চিত্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Abdullah
গ্যাস সংকটে নাজেহাল নগরবাসী
গত কিছু দিন ধরে ঢাকায় চলছে ভয়াবহ গ্যাস সংকট৷ আবাসিক গ্যাস সরবরাহ অনেক ক্ষেত্রে প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছু জায়গায় মানুষ বিকল্প উপায়ে রান্নাবান্না করছে, কেউ বা গভীর রাতে একটু গ্যাসের দেখা পেলে তা দিয়েই কোনোরকমে সেরে নিচ্ছেন রান্না৷ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ কয়েকদিন আগে ‘তিন দিনের মধ্যে সংকট কেটে যাবে’ বললেও সংকট একেবারেই কাটেনি৷
ছবি: Reuters/S. Marcus
প্রধানমন্ত্রী যা বললেন
চলমান গ্যাস সংকট নিয়ে জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়েছে৷ এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘‘এই সমস্যা প্রতি শীতেই হয়৷ তবে আমরা বসে নেই৷ সংকট কাটানোর চেষ্টা করছি৷’’
ছবি: Reuters
ঢাকা: বসবাসের জন্য অন্যতম নিকৃষ্ট শহর
২০১৪ সালে বিশ্বের সব শহরের মধ্যে বসবাসের জন্য সবচেয়ে নিকৃষ্ট শহর হয়েছিল ঢাকা৷ গতবছর সেই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দুই নাম্বারে৷ সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের পরেই ছিল বাংলাদেশের রাজধানীর নাম৷
ছবি: Getty Images
পানি সংকটের শহর
ঢাকার বড় একটি অংশে পানি সংকট খুব পুরোনো বিষয়৷ দিন যাচ্ছে, সংকট আরো তীব্র হচ্ছে৷ পানীয় জলের জন্য পাড়ার টিউবওয়েলের সামনে লম্বা লাইন, গলির কোনো কলের নীচে থালা বাসন ধোঁয়ায় ব্যস্ত নারী – এমন ছবি ফি বছরই পত্রিকায় শোভা পায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Abdullah
জলাবদ্ধতার শহর
একটু ভারি বৃষ্টি হলেই শহরে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা৷ দেখে মনে হয় যেন বন্যা শুরু হয়েছে৷ পথ চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে৷ নীচু এলাকার ঘর-বাড়িতেও ঢুকে পড়ে পানি৷
ছবি: picture alliance/Zumapress.com
যানজটের শহর ঢাকা
ঢাকার যানজটের কথা কে না জানে! এক ঘণ্টার পথ যেতে কখনো কখনো তিন-চার ঘণ্টাও লাগে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Abdullah
দূষণেরও রাজধানী?
শহরের প্রায় সব পুকুর ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে ভবন৷ ঢাকা প্রায় পুরোপুরিই ইট-পাথরের শহর৷ ধুলা আর যানবাহন, কলকারখানার ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশ৷ পানিতে প্লাস্টিক, আবর্জনা, কলকারখানা থেকে আসা বিষাক্ত রাসায়নিক৷ শব্দ দূষণও আছে ভয়াবহ মাত্রায়৷ হরতাল বা ঈদের ছুটি ছাড়া ঢাকাবাসী প্রিয় শহরের শান্ত রূপ আর কখনো দেখতে পায় কিনা সন্দেহ৷ দূষণেও বাংলাদেশের ‘সেরা’ শহর ঢাকা৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
পরিবহন সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব মানুষের কর্মঘণ্টার ক্ষতি একরকম নয়৷ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী আর একজন ছাত্রের কর্মঘণ্টার মূল্যের মধ্যে তফাৎ আছে৷ আবার ধরা যাক, সিগন্যালে যখন যানজটের কারণে একটি বাস আটকে থাকে, তখন দেখতে হবে বাসে কত যাত্রী আছে৷ অথবা রাস্তায় কত ট্রাক চলছে...৷ সেক্ষেত্রে প্রতিটি ট্রাকের ক্ষতি আলাদাভাবে বের করতে হবে৷ ফলে এই ক্ষতির পরিমাণ কম-বেশি হওয়ার সুযোগ আছে৷
কোনো গবেষণাই শতভাগ ঠিক – এটা বলার সুযোগ নেই৷ এটা ‘ফোরকাস্টিক মডেল' না, এটা ‘ডিটারমিনেস্টিক মডেল'৷ আমি আমার গবেষণায় বলেছি যে, আমি কোন জায়গা থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়েছি৷ আমি যাদের কাছ থেকে ডেটা নিয়েছি, সেটা আমি উল্লেখ করেছি৷ সেই তথ্যে যদি কোনো ধরনের ‘লুপ হোল' থাকে, তাহলে আমাদের গবেষণাতেও কিছু ভুল থাকতে পারে৷ প্রতিটি রিসার্চেই তাই থাকে৷ তবে এর আগে কোনো গবেষণায় দেখানো হয়নি যে, একজন মানুষ যদি সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়, তবে তাতে ক্ষতি কী? ফিলিপাইন্সে এমন একটি গবেষণা হয়, যেটা আমরাও এখানে করার চেষ্টা করেছি৷ একজন মানুষ যদি ২৫-৩৫ বছর বয়সে মারা যায়, তাহলে সে আরো কত বছর বেঁচে থাকলে আমাদের জিডিপিতে কী পরিমাণ ‘আউটপুট' দিত, সেটা আমরা গাণিতিক হিসেব করে দেখিয়েছি৷
আপনারা গবেষণাটা কতদিন ধরে করেছেন?
এটা মূলত বিভিন্ন ‘সেকেন্ডারি ডেটাবেস' থেকে তথ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে৷ প্রায় ৬-৭ মাস ধরে আমি কাজটি করেছি৷
আচ্ছা, এই ক্ষতি থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী?
আমি আমার গবেষণায় দু'ধরনের পরামর্শ দিয়েছি৷ ঢাকা শহরে মানুষের যে ‘মুভমেন্ট', সেটা ‘অ্যারেঞ্জ' করা৷ তার মানে এই নয় যে, কাউকে বলা আপনি এদিকে যেতে পারবেন না বা ওদিকে যেতে পারবেন না৷ আগে এর ‘অরজিন'-টা খুঁজতে হবে যে, ঢাকা শহরে মানুষ কেন আসে? মূল কারণ হলো, যেমনটা আগে বলেছি – শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিয়োগ৷ এর বাইরে প্রশাসনিক কিছু বিষয় আছে, যেমন সচিবালয়, উচ্চ আদালত ইত্যাদি৷ সুপারিশে আমরা বলেছি যে, অনেকটা বাধ্য হয়েই মানুষ ঢাকায় আসে৷ এখন যদি আমরা ঢাকা শহরের মতো অন্য বিভাগীয় শহর বা জেলা শহরকে ‘গ্রোথ সেন্টার' হিসেবে ‘ডেভেলপ' করতে পারি, অর্থাৎ শহরগুলোতে যদি সব রকম সুবিধা তারা পায়, পুরো না হলেও ঢাকার কাছাকাছি সুযোগ-সুবিধা থাকে, তাহলেও তারা আর ঢাকায় আসবে না৷ দ্বিতীয়ত, অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে৷ আমাদের মূল জায়গায় হাত দিতে হবে৷ এক্ষেত্রেও বিভাগীয়, জেলা বা উপজেলা শহরগুলোকে ‘গ্রোথ সেন্টার' হিসেব গড়ে তুলতে পারলে ঢাকার উপর চাপ কমানো যাবে৷ আরেকটা হলো ‘ডিজিটালাইজেশন' করা৷ মানুষ যেন ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে তার কাজ করতে পারে৷ তাহলে রাস্তায় মানুষের ‘মুভমেন্ট' বা যাতাযাত অনেক কমে যাবে৷ এটা যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে অনেক উন্নতি হবে৷
সাক্ষাৎকারটি কেমন লাগলো? আপনি কি সঞ্চয় চক্রবর্তীর সঙ্গে একমত? জানান নীচের ঘরে৷
যানজটিল কলকাতা
কলকাতা যেমন মিছিলের শহর, আবর্জনার শহর, তেমন যানজটের শহর হিসেবেও এর কুখ্যাতি রয়েছে৷ তবে পুরনো এই মহানগরী তার এই বদনাম আজকাল অনেকটা ঘোচাতে পারলেও, যানজটের হাত থেকে পুরোপুরি নিস্তার পায়নি৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
গাড়ির মিছিল
লোক বাড়ছে কলকাতায়, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়িও৷ বিশেষ করে অফিস যাওয়ার ব্যস্ত সময়ে গাড়ির অবিরল স্রোত লেগেই থাকে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
নিরুপায় অপেক্ষা
কখনও যদি বড় ধরনের যানজটে আটকে যায় গাড়ি, চুপচাপ বসে অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
আইন ভাঙার স্বভাব
কলকাতার যানজটের অন্যতম কারণ, গাড়িচালকদের এবং পথচারীদেরও আইন মেনে না চলার বদভ্যেস৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
যত্রতত্র পার্কিং
বড় রাস্তার ধারে গাড়ি পার্ক করতে অনুমতি দেয় পুরসভাই, কারণ তার থেকে ভালো আয় হয়৷ কিন্তু তাতে রাস্তা সরু হয়ে যায়, যানজট বাড়ে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ধীরগতির যান
পুলিসের নিষেধ আছে হাতে টানা রিক্সার মতো ধীরগতির যানের বড় রাস্তায় আসার, তবু তারা আসে৷ ট্র্যাফিকের গতি মন্থর হয়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বেপরোয়া অটোরিক্সা
ট্র্যাফিক সংকেত না মেনে বেপরোয়া চালানো এবং যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলায় বিশেষ দুর্নাম কলকাতার অটোরিক্সার৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
দোষী পথচারীরাও
আছে ফুটব্রিজ, আছে জেব্রা ক্রসিং, তাও কলকাতার লোকের বদভ্যাস যেখানে সেখানে রাস্তা পার হওয়া৷ দুর্ঘটনা ঘটে প্রায়ই, তাও অভ্যাস বদলায় না৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
পরিকল্পনায় খুঁত
যানজট কমাতে অনেক ফ্লাইওভার হয়েছে, কিন্তু রাস্তা চওড়া নয় বলে তাদের মুখে যানজট হয়৷ এ নিঃসন্দেহে পরিকল্পনারই খুঁত৷