যানজট কমাতে প্রথমে যা প্রয়োজন
১৪ জুন ২০২১বিশ্বের সব প্রান্তেই বিশাল নগরকেন্দ্রিক বসতি গড়ে উঠছে৷ লাখ লাখ মানুষ সেখানে বসবাস করছেন৷ কয়েক দশক আগের তুলনায় এমন বসতির আয়তন তিন গুণ বড় হয়ে উঠেছে৷ বিশেষ করে এশিয়া মহাদেশে এমন মেগাসিটির সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ তবে সেইসঙ্গে সমস্যাও বাড়ছে৷ সিটিল্যাব বার্লিনের প্রধান বেনইয়ামিন সাইবেল মনে করেন, ‘‘শহরগুলি আসলে সমাজের কেন্দ্রিভূত ক্ষুদ্র সংস্করণ৷ সেখানে কম জায়গায় অনেক সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, আতশ কাচের মাধ্যমে যা চোখে পড়ে৷''
বিশ্বের সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্রিক বসতি টোকিও শহরাঞ্চল৷ সেখানে প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ মানুষের বাস৷ দ্বিতীয় স্থানে তিন কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যা নিয়ে রয়েছে জাকার্তা৷ দিল্লি, মুম্বই, ম্যানিলা ও শাংহাই শহরেও বিশ কোটিরও বেশি মানুষ থাকেন৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার সবচেয়ে বড় শহর সাঁও পাউলো ও মেক্সিকো সিটিও বিশ লাখের বেশি মানুষের ঠিকানা৷
আধুনিক মেগাসিটিগুলিতে ব্যক্তি পর্যায়ে যাতায়াতের সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে উঠছে৷ সাইবেল বলেন, ‘‘আমার মতে, গাড়ি চড়ে এত অভ্যস্ত হয়ে পড়ার কারণে আমরা গাড়ি ছাড়া কোনো শহর কল্পনাই করতে পারি না৷ কিন্তু একবার সেই অভিজ্ঞতার স্বাদ পেলে আর আগের অবস্থায় ফেরার ইচ্ছা থাকতো না৷''
ভবিষ্যতের পরবহণ ব্যবস্থায় মানুষ ও বিভিন্ন ধরনের যানবাহনকে পরস্পরের থেকে আলাদা রাখা হবে৷ দ্রুতগামী যানবাহনের জন্য একটি রাস্তা, দ্বিতীয়টি পথচারি, সাইকেল ও অন্যান্য যানের জন্য৷ তৃতীয়টি শুধু পথচারিদের জন্য৷
জাপানের টয়োটা কোম্পানির এক মডেল প্রকল্পের আওতায় তথাকথিত এমন ‘ওভেন সিটি' সৃষ্টি করা হয়েছে৷ খোলা আকাশের নীচে এমন ল্যাবে নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে৷ সেখানে ইলেকট্রিক বা হাইড্রোজেন জ্বালানির সব যানবাহন চালক ছাড়াই চলে৷ সৌর অথবা জিও থার্মাল প্লান্ট থেকে সেই জ্বালানি আসে৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে কেন্দ্রীয় স্তরে সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ সেখানে সর্বোচ্চ ৩,০০০ মানুষ থাকতে পারেন৷ বেনইয়ামিন সাইবেল বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত পরিবহণের ক্ষেত্রে আমাদের আরও স্মার্ট কনসেপ্টের প্রয়োজন রয়েছে৷ ৫০ লাখ জনসংখ্যার কোনো শহরে ৩০ লাখ গাড়ি থাকলে এবং সেগুলি প্রায় ৯০ শতাংশ সময় শুধু দাঁড়িয়ে থাকলে অংকের হিসেবে গাড়ির সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব৷ স্মার্ট কার শেয়ারিং কনসেপ্ট থাকলে প্রত্যেকের জন্য পরিবহণের ক্ষেত্রে একই মান বজায় রাখা যেতে পারে৷''
সৌদি আরবে ‘নেওম' নামের প্রকল্পের আওতায় ১৭০ কিলোমিটার দূরত্বের শহরের চারটি কেন্দ্রস্থল যুক্ত করা হচ্ছে৷ সৌদি যুবরাজ সেই প্রকল্পে ৫০,০০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চান৷ সেই শহর হবে পুরোপুরি কার্বন-মুক্ত৷ স্থানীয় ও দুর পাল্লার পরিবহণের জন্য পাতাল পথে ইলেকট্রিক গাড়ি ও দ্রুতগামী ট্রেন চলবে৷ নিজস্ব ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করা হবে৷
নেওম প্রকল্পের মোবিলিটি ডিরেক্টর ফ্লোরিয়ান লেনার্ট বলেন, ‘‘জায়গাটিতে এখনো মানুষের বসবাস ও উন্নয়নের চিহ্ন কম৷ সেখানে আমরা টেকসই অবকাঠামো গড়ে তুলবো৷ সেই সঙ্গে এমন অর্থনৈতিক প্রণোদনা থাকবে, যার জের ধরে সৌদি আরবে নতুন ধরনের পেশা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব হয়৷''
দশ বছরে নেওম প্রকল্পের কাজ শেষ হলে প্রায় ১০ লাখ মানুষ সেখানে বাস করবেন৷ কিন্তু সেই পরিকল্পনা কি সত্যি সফল হবে? সিটিল্যাব বার্লিনের প্রধান বেনইয়ামিন সাইবেল বলেন, ‘‘আমার মতে, এমন প্রকল্পের ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত দেখা যায় যেমনটা ভাবা হয়েছিল, ঠিক তেমনটা মোটেই ঘটে না৷ অর্থাৎ পরিকল্পনা ও বাস্তবের মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকে৷ ম্যানেজমেন্টের দৃষ্টিভঙ্গিতে এটাই হলো জীবন৷ শহর মানে যে শুধু অবকাঠামো নয়, সে কথা অনেকে ভুলে যান৷ কোনো শহরে মানুষের থাকার কারণ এত সহজে পরিকল্পনা বা উপলব্ধি করা যায় না৷''
স্বাচ্ছন্দ্য বোধ এবং নিজেদের সামর্থ্যের নাগালের জায়গাই মানুষের পছন্দ৷ পরিবেশবান্ধব, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আরামপ্রদ পরিবহণ প্রণালীও চাই৷ ভবিষ্যতের শহর থেকে প্রত্যাশার মাত্রাও যথেষ্ট বেশি৷
ক্লাউডিয়া লাসৎসাক/এসবি