যারা নির্বাচন বয়কট করবে, রাজনীতি থেকে তারা মাইনাস হয়ে যাবে
২৬ আগস্ট ২০২৫
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, রমজান শুরুর এক সপ্তাহ আগে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে নির্বাচন হবে। সরকার আশ্বাস দিয়েছে, এ নিয়ে শঙ্কা নেই।
সালাহউদ্দিন আরো বলেন, ‘‘পিআর বা গণপরিষদের দাবি রাজনৈতিক কৌশল, মাঠ গরম করার জন্য বক্তব্য। দেশে নির্বাচনি আমেজ বিরাজ করছে। যারাই এর বিপক্ষে কথা বলবে, তারাই মাইনাস হয়ে যাবে।''ছবি: DW
বিজ্ঞাপন
আজ মঙ্গলবার গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন বলে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে।
সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, এ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। তবে দুয়েকটি দল বিভ্রান্তির চেষ্টা করছে, এটি তাদের কৌশল হতে পারে।''
‘‘ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য ধরে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যাশা। রাজনৈতিক ইতিহাসে ঐতিহাসিক ঘটনা হবে এবারের নির্বাচন,'' বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আরো বলেন, ‘‘পিআর বা গণপরিষদের দাবি রাজনৈতিক কৌশল, মাঠ গরম করার জন্য বক্তব্য। দেশে নির্বাচনি আমেজ বিরাজ করছে। যারাই এর বিপক্ষে কথা বলবে, তারাই মাইনাস হয়ে যাবে।''
তিনি জানান, ‘‘জুলাই সনদ অঙ্গীকারনামার কিছু বিষয় অযৌক্তিক মনে করেছে বিএনপি। বিকল্প প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশনে আলোচনার সময় দেওয়া হবে।''
সংস্কার কমিশন ও সংস্কারের প্রস্তাবনা
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই রাষ্ট্রযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অংশের সংস্কার কমিটি গঠন করেন। ছবিঘরে থাকছে সেসব সংস্কার প্রস্তাবনার সারসংক্ষেপ।
ছবি: bdnews24.com
নির্বাচন কমিশন সংস্কার
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্দেশ্যে প্রায় ১৫০টির কাছাকাছি সুপারিশ করেছে কমিশন। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ডাকযোগে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, উচ্চ কক্ষের জন্য নির্বাচন, বিরোধী দলকে ডেপুটি স্পিকারের পদ দেয়া ও জাতীয় নির্বাচনে কোন আসনে ৪০ শতাংশের কম ভোট হলে পুনরায় নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়েছে।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সংবিধান সংস্কার
সংবিধান সংস্কার কমিশনে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজকে প্রধান করা হয়। ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমানোসহ সংবিধানে আমূল পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে কমিশন। দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, সংসদের আসন বাড়ানো, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, এক ব্যক্তির দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারার সুপারিশ করা হয়েছে।
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/M. Ponir Hossain
বিচার বিভাগ সংস্কার
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সুপ্রিম কোর্টের স্বাধীন সচিবালয়, বিচারক নিয়োগের জন্য স্বাধীন কমিশন, হাই কোর্টের বিভাগীয় বেঞ্চ, জেলা ও উপজেলা আদালত স্থাপনসহ নানা সংস্কারের সুপারিশ করেছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, বিচারকদের শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
পুলিশ সংস্কার কমিশন
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়া প্রতিবেদনে পুলিশ সংস্কার কমিশন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে। বল প্রয়োগ, আটক, গ্রেপ্তার, তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ, মানবাধিকার, প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক বাহিনী গঠন, থানায় জিডি রেকর্ড, মামলা রুজু, তদন্ত ও ভ্যারিফিকেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। পুলিশের সেবামূলক ও জনবান্ধব কার্যক্রম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
ছবি: Nazmul Hasan/DW
দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন
দুদক সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব পান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। একটি সংস্কার কমিশন গঠিত হয় এবং কমিশন দুর্নীতি প্রতিরোধে ৪৭টির মতো সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা শক্তিশালীকরণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
ছবি: Mamunur Rashid/NurPhoto/picture alliance
জনপ্রশাসন সংস্কার
জনপ্রশাসন সংস্কারকে একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে কমিশন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর বেশ কিছু কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত সংস্কারের সুপারিশ করেছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য ও যোগাযোগ বিভাগকে আলাদা করা, ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা, নাগরিক পরিষেবা উন্নয়নে প্রশাসনের ডিজিটাল রূপান্তর, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের কাঠামো ও প্রক্রিয়াগত সংস্কারের উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
ছবি: bdnews24.com
6 ছবি1 | 6
‘‘সংবিধানের ওপরে স্থান পায় এমন কোনো বিষয় গ্রহণযোগ্য হবে না। আলোচনার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একটি অবস্থানে পৌছাবে বলে প্রত্যাশা,'' যোগ করেন তিনি।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘‘সংস্কারের জন্য যে সাংবিধানিক সংস্কার আনতে চাই, সেগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্ভব। বিধানগুলো আজকেই বহাল হলে কিছু বিষয় সাংঘর্ষিক হতে পারে। বিধানগুলো সংসদ নির্বাচনের পর বাস্তবায়ন করা যাবে।''
তিনি আরো বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে কোনো জটিলতা চায় না বিএনপি। সবার ঐকমত্যে এই সরকার গঠিত হয়েছে, তত্ত্বাবধায়কের বিষয়টি পুনর্বহাল হওয়ার পরে পরবর্তী নির্বাচনে সেটি কার্যকর হতে পারে।''
‘‘এই সরকারের ঘোষিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হবে বলে প্রত্যাশা করছি, অন্য কিছু ভাবার অবকাশ নেই। কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নিলে এটি তাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা। যারা বাহানা দিয়ে বয়কট করবে তারা ভবিষ্যৎ রাজনীতি থেকে নিজেরাই মাইনাস হয়ে যাবে,'' বলেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে জামায়াতের সঙ্গে জোটের সুযোগ নেই। তবে যুগপৎ আন্দোলনে যারা ছিলেন, তাদের সঙ্গে জোট হতে পারে। আগামী সরকারেও তারা থাকতে পারে।''
‘‘এছাড়া কয়েকটি ইসলামী দলের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে জোট হতে পারে, তবে সেটি চূড়ান্ত নয়। এর বাইরে বিগত আন্দোলনে যারা ছিল, তাদের সঙ্গেও জোট হতে পারে। তবে তা আলোচনার পর'', বলেন তিনি।