‘‘নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ইসলাম মুসলিম এবং অমুসলিমের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না৷ সংখ্যালঘুদের জীবন, সম্পদ ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ব্যাপারে সজাগ এবং সমনীতির কথা বলে ইসলাম৷'' এ কথাগুলো শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের৷
বিজ্ঞাপন
[No title]
ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘যারা ইসলামের নামে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করে, সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে হামলা করে, তারা আসলে ইসলামের কেউ নয়৷ তারা ব্যক্তিস্বার্থে এ সব করে থাকে৷''
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে দেয়া সেই সাক্ষাৎকারের উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ এখানে তুলে দেয়া হলো৷
ডয়চে ভেলে: সংখ্যালঘুদের নিরপত্তার ব্যাপারে ইসলামের বিধান কী?
ফরিদ উদ্দিন মাসউদ: ইসলাম নিরাপত্তার ব্যাপারে মুসলিম-অমুসলিমের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না৷ তাই মুসলমানদের জন্য যে নিরাপত্তা, সংখ্যালঘুদের জন্যও একই নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে৷ বিদায় হজের ভাষণেও আমাদের প্রিয় নবী অমুসলিমদের জান-মাল হেফাজতের কথা বলেছেন৷ তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলেছেন৷
এই নিরাপত্তা বা হেফাজতের বিষয়টি কীভাবে করা হবে?
একটা উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে৷ ইসলামের বিধান অনুয়ায়ী একজন মুসলিম যদি একজন অমুসলিম সংখ্যালঘুকে হত্যা করে, তাহলে এর শাস্তি ইসলামে মৃত্যুদণ্ড৷ মুসলমান হওয়ার কারণে সে কোনো ছাড় পাবে না৷ ইসলামে অপরাধী অপরাধীই৷
যে দেশগুলোতে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ প্রতিবছর যেসব দেশে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে আছে তার তালিকা প্রকাশ করে৷ ছবিঘরে ২০১৫ সালের জুলাইতে প্রকাশিত সবশেষ প্রতিবেদনের তথ্য থাকছে৷
ছবি: DW
প্রথম: সিরিয়া
সুন্নিপ্রধান দেশ সিরিয়ায় শিয়া, বিশেষ করে আলাউইট সম্প্রদায়ের লোকজন সহ খ্রিষ্টান, কুর্দ, ফিলিস্তিনি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা হুমকির মুখে রয়েছে৷ আইএস, হিজবুল্লাহ ছাড়াও সিরিয়ার শাসকপন্থি গ্রুপ সাবিহা এ সব হুমকির অন্যতম কারণ৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ হুমকি বলতে গণহত্যা, রাজনৈতিক হত্যা ও সহিংস দমননীতি বুঝিয়েছে৷
ছবি: Reuters/SANA
দ্বিতীয়: সোমালিয়া
সরকারের সঙ্গে আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সংঘাত এখনও চলছে৷ আর এর শিকার হচ্ছে বান্টু (বেশিরভাগ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী) ও বেনাদিরি (বেশিরভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী) গোষ্ঠীর মানুষজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Warsame
তৃতীয়: সুদান
দেশটির দারফুর অঞ্চলে বসবাসকারী নন-আরব মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর খার্তুম সরকারের নিপীড়নের অভিযোগে দু’টি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ২০০৩ সালে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে৷ সেটি এখনও চলছে৷ ফলে দারফুরে বসবাসকারী ফুর, জাঘাওয়া, মাসালিট সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষদের জীবন সংকটে রয়েছে৷
ছবি: GetttyImages/AFP/C. Lomodon
চতুর্থ: আফগানিস্তান
বিদেশি সৈন্য চলে যাবার পর সেখানে আবারও তালেবানের শক্তি বেড়েছে৷ ফলে হাজারা, পশতুন, তাজিক, উজবেক, তুর্কমেন, বেলুচি সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষের উপর নির্যাতনের আশঙ্কা বাড়ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Aref Karimi
পঞ্চম: ইরাক
দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ শিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত৷ তারপরও সেখানে শিয়া গোষ্ঠীর লোকজনের জীবন বিপদমুক্ত নয়৷ সংকটে রয়েছে সুন্নি, কুর্দ, তুর্কমেন, খ্রিষ্টান, ইয়াজিদি, শাবাক, বাহাই, ফিলিস্তনি সহ অন্যান্যদের জীবনও৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
ষষ্ঠ: ডিআর কঙ্গো
স্থানীয় মায়ি-মায়ি মিলিশিয়া, উগান্ডা ও রুয়ান্ডার বিদ্রোহী এবং কাতাঙ্গান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কারণে মানুষের প্রাণ যাওয়া অব্যাহত আছে৷ ফলে সংকটে আছে হেমা, লেন্ডু, হুতু, লুবা, লুন্ডা, টুটসি, বাটওয়া সহ আরও কয়েকটি গোষ্ঠীর জনগণ৷
বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের হামলায় সংকটে রয়েছে ইসলাম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজন৷ এছাড়া কচিন, কারেনি, কারেন, মন, রাখাইন, শান, চিন এবং ওয়া জাতির জনগণও ভালো নেই সেখানে৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশ, ভারতের অবস্থান
‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’-এর তালিকায় বাংলাদেশ ৪১তম আর ভারত ৫৪তম অবস্থানে আছে৷ বাংলাদেশে আহমদিয়া, হিন্দু সহ অন্য ধর্মাবলম্বীরা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী উপজাতির লোকেদের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে৷ আর ভারতে আসামিজ, বোড়ো, নাগা, ত্রিপুরা সহ অন্যান্য উপজাতি এবং কাশ্মিরী, শিখ, মুসলিম ও দলিতরা হুমকির মুখে আছে৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
এরশাদের শাসনামলে ঢাকায় সংখ্যালঘুদের ওপর উসকানিমূলক হামলা এবং সাম্প্রতিক সময়ে রামুতে বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছি আমরা৷ আমরা বিবৃতি দিয়ে বলেছি যে, এটা অন্যায়৷ আমরা বিচার দাবি করেছি দুর্বৃত্তদের৷ কিন্তু আমাদের মাওলানাদের কথা তো সংবাদমাধ্যম প্রচার করে না৷ ইমামরা খুতবায়ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিরুদ্ধে বয়ান করেন৷
হ্যাঁ হয়েছে৷ আর যারা করেছে, তারা ইসলামের নামে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে৷ কিন্তু এ দেশের প্রকৃত আলেম-ওলামারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন৷ জামায়াত, মুসলিম লীগ ইসলামের নামে ইসলামবিরোধী কাজ করেছে৷ তারাই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করেছে৷ বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে৷
সংখ্যালঘুদের ওপর এই যে নির্যাতন, এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের কাছে আপনি কী আহ্বান জনাবেন?
আমার আহ্বান একটাই৷ যদি মুসলমান হন, যদি ইসলামের অনুসারী হন, তাহলে সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করা আপনার ইমানী দায়িত্ব৷ তাদের নিরপত্তা দেয়া ইসলামেরই বিধান৷ তাদের ওপর হামলা বা নির্যাতন ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ৷
আপনি কি ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের সঙ্গে একমত? জানান নীচের ঘরে৷