‘যারা স্বতন্ত্র হয়ে এসেছেন, তারা নিজেরাই একেকজন বিরোধী দল'
১২ জানুয়ারি ২০২৪
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সরকারের জবাবদিহিতার যথেষ্ট সুযোগ থাকবে বলে দাবি করেছেন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন৷ স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টি মিলে নতুন সংসদকে প্রাণবন্ত করে তুলবে বলে মনে করেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়' টকশো-তে, ‘কে সরকারি কে বিরোধী?' বিষয়ক আলোচনায় ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি এবং নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন৷
দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলে জনপ্রিয় হয়েছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৪ আসনে বিপুল ভোটে জয়ী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন৷সংসদ সদস্য হয়েও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এই ধারা অব্যাহত রাখবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সংকট কি এই দেশ থেকে চলে গেছে নাকি? ফেসবুক লাইভতো আমার একটা প্রতিবাদের ভাষা৷ হয়ত আমার প্রতিবাদের মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা আসবে যেহেতু আমি সংসদে কথা বলব৷ কিন্তু এটা চলতে থাকবে৷''
একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে মাত্র ১১ টি আসন পাওয়ায় জাতীয় সংসদে কে বিরোধী দল হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে নির্বাচনের পর থেকেই৷ ৬২ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে জয় লাভ করায় ব্যারিস্টার সুমন মনে করেন, ‘‘যারা এবার স্বতন্ত্র হয়ে এসেছেন, তাদের একেকজনকে আমার মনে হয়েছে একেকটা বিরোধী দলের মতো৷''
তার মতে, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সদস্যরা সংসদে নিজ দলের বিরোধিতা করতে পারে না৷ স্বতন্ত্রদের সেই বাধ্যবাধকতা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় পার্টি ছোট আঙ্গিকে হলেও সাথে যদি স্বতন্ত্ররা থাকেন তাহলে আপনারা একটি প্রাণবন্ত সংসদ দেখতে পাবেন বলে আমার বিশ্বাস৷'' এতে সরকারেরজবাবদিহিতার যথেষ্ট সুযোগ থাকবে বলে মনে করেন এই আইনজীবী৷
সরকার কি সব দলকেই জাতীয় দলে পরিণত করতে চায় কিনা এই প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, বিএনপি বা এমন বড় দলগুলো যখন নির্বাচনে আসে না তখন স্বাভাবিক ভাবে অন্য দল তৈরি হবে৷ তবে এই সংসদে একটা শক্ত বিরোধী দেখবে সবাই৷
অন্যদিকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি মনে করেন এই নির্বাচনকেই মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষ এইবার বিরোধী দলের ডাকে যেই সাড়া দিয়েছেন, তা একেবারে নজিরবিহীন৷ নির্বাচনটি শুরু থেকেই ছিলো ডামি৷ সেখান থেকে ডামি প্রার্থী, ডামি ভোট, ডামি লাইন৷''
সরকার ‘প্রহসনমূলক নির্বাচন' করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘এই নির্বাচনের মধ্যমে আওয়ামী লীগ শুধু পরাজিত-ই হয়নি, মৃত্যুর দিকে চলে গেছে৷ আওয়ামী লীগ যাকে বিজয় বলছে, তাকে আমরা বিশাল পরাজয় বলছি৷''
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন আয়োজন করতে পেরেছে বলে মনে করেন ব্যারিস্টার সুমন৷ তিনি বলেন, ‘‘ভোট সুষ্ঠু না হলে আমি পাশ করতে পারতাম না৷''
বিরোধীদের আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়েছে কিনা এমন প্রশ্নে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘আন্দোলন চলমান আছে এবং সামনে তা আরও বেগবান হবে৷'' তবে বিরোধী দলের উপরে সরকারের দমন নিপীড়নের সমালোচনা করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘বিরোধী দলগুলো কখনো এটা ভাবতে পারেনি যে সমাবেশের উপর এভাবে স্যাবোটাজ হবে৷ ২৭,০০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ যে দমনপীড়ন হয়েছে তা ৭১ এর গণহত্যা ছাড়া অন্য সকল কিছু হার মানিয়েছে৷ আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের উপরে চাপ তৈরি করতে চেয়েছিলাম৷''
প্রতিটি ঘটনাকে 'স্যাবোটাজ' বলা হলে বারবার হরতাল কেন দিতে হয় ব্যারিস্টার ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের এই প্রশ্নের জবাবে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ ভোট বর্জনের জন্য হরতাল ডেকেছি৷''
বিরোধীরা আন্দোলনের মধ্যেই আছে উল্লেখ করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক৷ তবে ‘প্রবল রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে নিরস্ত্র জনগণ' কীভাবে লড়াই করবে তা নিয়ে আবার নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে বলে মনে করেন জোনায়েদ সাকি৷
এসএইচ/এফএস
যাদের জয়-পরাজয়ে অনেক চমক
সাতবারের সংসদ সদস্যের পরাজয়, প্রতিমন্ত্রীকে বিরাট ব্যবধানে নতুন প্রার্থীর হারিয়ে দেয়া, নৌকা পেয়েও ১৪ দলের হেভিওয়েটদের জিততে না পারা- এমন বেশ কিছু চমক ছিল এবারের নির্বাচনের ফলাফলে৷ বিস্তারিত ছবিঘরে....
ছবি: Prodip Sagor
হারলেন ‘বঙ্গবীর’
টাঙ্গাইল-৮ আসন থেকে নির্বাচনে লড়াই করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী৷ গামছা প্রতীক নিয়ে ৬৭ হাজার ৫০১ ভোট পেয়েছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা৷ কিন্তু নৌকা প্রতীকে অনুপম শাহজাহান পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৪০১ ভোট৷
ছবি: Shamim Mamun
আবার সংসদে ‘বহিষ্কৃত’ লতিফ
কাদের সিদ্দিকী না জিতলেও সংসদ সদস্য হয়েছেন তার বহুল আলোচিত ভাই, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী৷ তিনি ট্রাক প্রতীকে ৭০ হাজার ৯৪০ ভোট পেয়েছেন৷ প্রায় ১৭ হাজার ভোটে হারিয়েছেন নৌকার মোজহারুল ইসলাম তালুকদারকে৷
ছবি: Shamim Mamun
বিমান প্রতিমন্ত্রীকে মাটিতে নামালেন ব্যারিস্টার সুমন
যুবলীগ থেকে হয়েছেন বহিষ্কৃত, আবেদন করেও পাননি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন৷ সেই ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন হারিয়ে দিয়েছেন সরকারের বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীকে৷ তা-ও প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে৷ হবিগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র লড়ে প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার ভোট পেয়েছেন সুমন৷ অন্যদিকে নৌকার মো, মাহবুব আলী পেয়েছেন সাড়ে ৬৯ হাজার ভোট৷
ছবি: Prodip Sagor
নৌকা পেয়েও ডুবলেন ইনু
কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে ১৪ দলীয় জোটের হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু৷ কিন্তু হেরে গেছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনের কাছে৷ ট্রাক প্রতীক নিয়ে বিজয়ী প্রার্থী পেয়েছেন এক লাখ ১৫ হাজার ৭৯৯ ভোট, অন্যদিকে ইনু পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪৪৫ ভোট৷
ছবি: DW
তীরে ভিড়তে পারেননি বাদশাও
১৪ দলের প্রার্থী হয়ে তিনবার রাজশাহী-২ আসনে সংসদ সদস্য হয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশা৷ ৩১ হাজার ৪৬০ ভোট পেয়ে তিনি হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শফিকুর রহমানের কাছে৷ ৫৫ হাজার ভোট পেয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের এই সহ-সভাপতি৷
ছবি: Rubel Mahfuz
ব্যবসায়ী আজাদে ধরাশায়ী নৌকা
ফরিদপুর–৩ আসনে নৌকার প্রার্থীর সাথে নির্বাচনি প্রচার থেকে উত্তেজনা চলছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের৷ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা লড়েছেন ঈগল প্রতীক নিয়ে৷ ৬৯ হাজার নয় ভোটের ব্যবধানে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা শামীম হককে হারিয়েছেন৷ এক লাখ ৩৪ হাজার ৯৮ ভোট পড়েছে তার পকেটে৷
ছবি: T.K Himel
সহকারীর কাছে মঞ্জুর হার
১৯৮৬ সাল থেকে সাতবার জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে কখনো হারেননি জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু৷ অষ্টমবারের মতো সংসদ সদস্য হওয়ার পথে হোঁচট খেলেন নিজের সাবেক এপিএসের কাছে৷ স্বতন্ত্রপ্রার্থী মো: মহিউদ্দীন মহারাজ পেয়েছেন ৯৯ হাজার ২৬৮ ভোট৷ অন্যদিকে আনোয়ার হোসেন পেয়েছেন ৭০ হাজার ৬৮১৷
ছবি: bdnews24
ঈগলের কাছে হারলেন গোলাপ
এবারের নির্বাচনে অন্যতম আলোচিত আসন ছিল মাদারীপুর-৩৷ এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান ওরফে গোলাপকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম৷ ঈগল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৬৩৩ ভোট৷ অন্যদিকে সোবহান পেয়েছেন ৬১ হাজার ৯৭১ ভোট৷ এই আসনে নির্বাচনি প্রচারে একজনের মৃত্যু হয়েছিল৷
ছবি: Pradyut Kumar
তৃণমূল বিএনপি মহাসচিবের জামানতও গেল
তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার শুধু হারেননি, জামানতও হারিয়েছেন৷ নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে লড়াই করে মাত্র তিন হাজার ১৯০ ভোট পেয়েছেন তিনি৷ অন্যদিকে এই আসনের জয়ী প্রার্থী আওয়ামী লীগের গোলাম দস্তগীর গাজী পেয়েছেন এক লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোট৷ মোট প্রদত্ত ভোটের অন্তত সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট না পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়৷ সেই হিসাবে জামানত বাঁচাতে তৈমুরের প্রয়োজন ছিল অন্তত ২৬ হাজার ৫৭৮ ভোট৷
ছবি: Youtube/Independent Television
জামানত হারালেন শমসের মবিনও
তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপার্সন শমসের মবিন চৌধুরীর পরিণতিও হয়েছে দলের মহাসচিবের মতো৷ সিলেট-৬ আসনে মাত্র ১০ হাজার ৯৩৬ ভোট পেয়েছেন তিনি ৷ ভোট পড়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ৭০২টি। জামানত বাঁচাতে তার প্রয়োজন ছিল অন্তত ১৪ হাজার ৫৮৭ ভোট৷ এই আসনে বিজয়ী নৌকার নুরুল ইসলাম নাহিদ পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৭৭৮ ভোট৷
ছবি: DW
এমপিকে হারালেন কল্যাণ পার্টির ইব্রাহিম
রাজনীতিতে, টেলিভিশনের টক শোতে বরাবরই সরব কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম৷ কক্সবাজার-১ আসন থেকে হাতঘড়ি প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৮১ হাজার ৯৫৫ ভোট৷ তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী, বর্তমান এমপি জাফর আলম পেয়েছেন ৫২ হাজার ৯৮৬ ভোট।
ছবি: DW
আলোচিত শাহজাহান ওমরের বড় জয়
নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমরের জেল থেকে ছাড়া পাওয়া, আওয়ামী লীগের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে যোগ দেয়া চমক তৈরি করে রাজনৈতিক অঙ্গনে৷ নির্বাচনে ৯৫ হাজার ৪৭৮ ভোট পেয়েছেন আলোচিত এই নেতা৷ তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কের পার্টির আবু বকর সিদ্দিক পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৬২৪ ভোট৷