লাক্সারি বা বিলাস বলে কাকে? এ এক আর্থ-সামাজিক, দার্শনিক-নান্দনিক প্রশ্ন৷ সমাজ বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে নাকি লাক্সারির সংজ্ঞাও বদলে যায়৷
বিজ্ঞাপন
সাদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনাথন ফায়ার্স গবেষণা করেন ‘‘লাক্সারি'', অর্থাৎ ‘বিলাস' নিয়ে - বিলাসব্যসন, বিলাসসামগ্রী৷ তিনি ‘‘লাক্সারি'' নামধারী একটি পত্রিকার প্রকাশক – এটিই হল প্রথম পত্রিকা, যা বিলাসব্যসনের নেতিবাচক দিকটি নিয়েও আলোচনা করে থাকে৷ লাক্সারি-র সংজ্ঞাও ক্রমশ বদলে যাচ্ছে৷ যা দুষ্প্রাপ্য, তাই আজ বহুমূল্য৷ ফায়ার্স বলেন, ‘‘ঊনবিংশ শতকে বাড়িতে নিজের বাথরুম থাকাটা চরম বিলাস বলে মনে করা হতো৷ পশ্চিমা বিশ্বে আজ সেটা একটা সামাজিক, এমনকি আইনগত প্রয়োজন৷ কাজেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, কালের হিসেবে বিলাসের একটা নিজস্ব টাইম স্কেল আছে৷ কিন্তু কোথায় সেই টাইম স্কেল প্রয়োগ করা হচ্ছে, তার উপর সব কিছু নির্ভর করে৷ পশ্চিমি দুনিয়ায় বিলাস থেকে প্রয়োজনে পরিবর্তন ঘটে খুব তাড়াতাড়ি৷ অন্যান্য দেশে আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু কালে কালে বিলাস হয়ে দাঁড়ায়৷''
যেমন বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন শুদ্ধ বাতাসের, যা কিনা বিশ্বের বহু অংশে একটা বিলাস হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ অথবা শুদ্ধ পানীয় জল কিংবা শিক্ষা কিংবা খাদ্য৷
বিলাসের সংজ্ঞা
লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়াম৷ এখানে ‘হোয়াট ইজ লাক্সারি?' অর্থাৎ ‘বিলাস কী?' এই নাম দিয়ে একটি প্রদর্শনী চলেছে৷ মানুষের ডিএনএ পরীক্ষা করতে সমর্থ একটি ভেন্ডিং মেশিন সাবধান করে দিচ্ছে যে, আপনার প্রাইভেসির ক্ষতি হতে পারে – অর্থাৎ ব্যক্তিগত তথ্য একটি বিলাসসামগ্রীতে পরিণত হচ্ছে৷
পুরোনো স্থাপত্য রক্ষায় অভিনব উদ্যোগ
03:51
খনিজ সম্পদ ফুরিয়ে যাচ্ছে, অন্যান্য সম্পদ বিরল হয়ে আসছে৷ যেমন প্লাস্টিকের তৈরি আসবাব একটি বিলাস হয়ে উঠছে, কেননা তা তৈরি করতে খনিজ তেল লাগে৷ বিলাস কী, সে বিষয়ে আমাদের সংজ্ঞা ক্রমেই বদলে যাচ্ছে, কেননা সমাজও ক্রমাগত বদলে চলেছে৷ ফায়ার্স বলেন, ‘‘আমরা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছি, যখন ‘লাক্সারি' নামটি দুনিয়ার সর্বত্র – এমন একটা অবস্থা, যে কথাটার আর প্রায় কোনো মানে নেই৷ কিন্তু তবু তা পুরোপুরি উবে যাবে বলে আমি মনে করি না৷ ওটা ভবিষ্যতে আবার ফিরে আসবে, তবে সম্পূর্ণ অন্য মানে নিয়ে৷ সেটা হয়ত কোনো কিছু পাওয়ার পরিবর্তে কোনো কিছু বর্জন, কোনো কিছু খাওয়ার পরিবর্তে কোনো কিছু না খাওয়া হতে পারে!''
প্রকৃতি বনাম সংস্কৃতি এক সুপ্রাচীন বিতর্ক, রোমান্টিক আমল থেকে চলে আসছে৷ ইউরোপ হল সংস্কৃতি তথা সভ্যতার মহাদেশ: আফ্রিকাতে যেমন প্রকৃতি আমাদের মুগ্ধ করে, ইউরোপ নেশা ধরিয়ে দেয় তার স্থাপত্য, শিল্পকলা ও ইতিহাস দিয়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
সংস্কৃতি মানে ইতিহাস: কলোসিয়াম
রোম শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত এই সুবিশাল ক্রীড়াঙ্গণে পঞ্চাশ হাজার দর্শক ধরত৷ এককালে এখানে গ্ল্যাডিয়েটররা প্রাণঘাতী মল্লযুদ্ধ করত, সিংহের মতো হিংস প্রাণীর সঙ্গে লড়ত৷ দু’হাজার বছর আগে তৈরি হয় এই কলোসিয়াম, মধ্যযুগ অবধি একটানা ব্যবহৃত হয়েছে নানা কাজে, এমনকি নাটক মঞ্চস্থ করার কাজেও৷
ইউরোপীয় স্থাপত্যের কাহিনি যে মধ্যযুগে কিংবা রেনেসাঁসে শেষ হয়নি, তার প্রমাণ দক্ষিণ জার্মানির নয়শোয়ানস্টাইন দুর্গ৷ এটি তৈরি হয় উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে৷ বাভারিয়ায় রাজা দ্বিতীয় লুডভিশ প্রখ্যাত সংগীতস্রষ্টা রিশার্ড ভাগনার-এর সম্মানে এই দুর্গটি নির্মাণের নির্দেশ দেন৷ তখন কি তিনি জানতেন যে, এই ‘সোয়ান স্টোন ক্যাসল’ জার্মানির অন্যতম টুরিস্ট অ্যাট্রাকশন হয়ে উঠবে, বিশেষ করে চীনা এবং জাপানি পর্যটকদের কাছে?
ছবি: Shahriar Sedighi
সংস্কৃতি মানে শিল্পকলা: মিকেলআঞ্জেলোর ডেভিড
ইটালি তথা বিশ্বের প্রখ্যাততম ভাষ্কর মিকেলআঞ্জেলো বুয়োনারোতি ১৫০১ সাল থেকে ১৫০৪ সাল অবধি এই মূর্তিটি গড়েন৷ সাড়ে চার মিটারের বেশি উচ্চতার শ্বেতপাথরের ভাস্কর্যটিতে আজ ফ্লোরেন্স শহরে গ্যালেরিয়া অ্যাকাদেমিয়া মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে৷ অনেকের মতে ডেভিড হল চিরকালের শ্রেষ্ঠ ভাস্কর্য এবং ভাস্কর্যের ইতিহাসে এর পাশে দাঁড়ানোর মতো কোনো নারীমূর্তি নেই৷
১৯৩৫ সাল যাবৎ অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা-র প্রাসাদোপম অপেরা ভবনে আয়োজিত হচ্ছে এই বাৎসরিক বলনাচের আসর, যার নাম ভিয়েনা-র অপেরা বল৷ ভিয়েনা-র সঙ্গীত ও নাচের ঐতিহ্যের সঙ্গে তাল রেখে এখানে মূলত নাচা হয় ওয়ালৎস নাচ৷
জার্মানিতে আজও কিশোর-কিশোরীরা নাচের স্কুলে গিয়ে বনেদি নাচ শেখে বটে এবং সে নাচ নাচার মওকাও পাওয়া যায় কোনো-কোনো ‘ফর্মাল অকেশনে’; নয়তো ইউরোপ জুড়ে নতুন প্রজন্মের প্রাণপাখি বাঁধা ডিস্কোর বিট-এ!
ছবি: Yuri Arcurs/Fotolia
প্রকৃতি এখানে সাজানো বাগান: নয়হাউস প্রাসাদ
জার্মানির পাডারবর্ন শহরের নয়হাউস প্রাসাদ-দুর্গের নির্মাণকার্য চলেছিল ত্রয়োদশ থেকে ষোড়শ শতাব্দী অবধি৷ কিন্তু তার বাগানে যে ঝোপের কেয়ারি, সেটা প্রাসাদের বাদবাকি স্থাপত্যের মতোই ঐতিহ্যমণ্ডিত ও নয়ানাভিরাম৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel
প্রকৃতি এখানে ক্রীড়াঙ্গণ: গার্মিশ-পাটেনকিয়ার্শেন
ফ্রান্সে বলে: এবার ছুটিতে কোথায় যাচ্ছেন, গ্রামাঞ্চলে, পাহাড়ে, নাকি সমুদ্রসৈকতে? সেটা যেমন গরমে, তেমনই শীতে, কেননা শীতে রয়েছে বরফ এবং স্কি খেলা৷ কাজেই গোটা আল্প্স পর্বতমালা আজ প্রায় একটা স্কি খেলার স্থানে পরিণত হয়েছে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে ২০১২ সালের পয়লা জানুয়ারি দক্ষিণ জার্মানির গার্মিশ-পাটেনকিয়ার্শেন-এ স্কি জাম্পিং প্রতিযোগিতা৷
ছবি: dapd
প্রকৃতি এখানে বেলাভূমি: বার্লিনে সূর্যস্নান
গ্রীষ্ম এসে গেছে, অথচ কাছাকাছি না আছে সাগর, না আছে বেলাভূমি৷ এমন পরিস্থিতিতে বার্লিনের মাঝখানেই গড়ে ওঠে বালুচর, সূর্যস্নানের জন্য তার উপর বসিয়ে দেওয়া হয় ডেকচেয়ার৷ প্রকৃতিকে শহরের মধ্যে টেনে আনা: তা হলই বা কৃত্রিম৷
ছবি: picture alliance / AP Photo
প্রকৃতি এখানে সংস্কৃতির অঙ্গ: চ্যান্সেলরের অফিসের বাইরে বুনো শেয়াল
অনেক সময় প্রকৃতিকে যাও, যাও বললেও সে যেতে চায় না: তাই আজ রাজধানী বার্লিনের মতো ত্রিশ লাখ মানুষের শহরেও যত্রতত্র বুনো শূকরী ঘোরে তার ছানাপোনা নিয়ে; বুনো খরগোশ লাফায় মাঠেঘাটে; দিনদুপুরে শিয়াল রাস্তা পার হয় – অথবা খোদ চ্যান্সেলরের দপ্তরের সামনেই তার দেখা পাওয়া যায়!