1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যা শিখিয়ে গেলেন তারা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৮ আগস্ট ২০১৮

২৯ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থা৷ এর মাধ্যমে তারা দেশবাসীকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে হয়৷ এখন সবার উচিত তাদের দেখানো পথেই হাঁটা৷

ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman

২৯ জুলাই দুপুরে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে (র‌্যাডিসন হোটেলের উলটো দিকে) বাসচাপায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দু'জন শিক্ষার্থী নিহত হন৷ দুপুর সাড়ে ১২টায় বিমানবন্দর সড়কের বাঁ-পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিলে এ ঘটনা ঘটে৷ নিহতরা হলেন – দিয়া খানম মীম ও আব্দুল করিম৷ এরপর থেকেই ঢাকার স্কুল কলেজেরশিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসেন৷শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামসহ আরো অনেক শহরে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে৷ ৫ আগস্টের পরে অবশ্য শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে উঠে যান৷ ফিরে যান ক্লাসে৷ অবশ্য তাদের ফিরে যেতে সরকারের পক্ষ থেকে যেমন আহ্বান ছিল, ছিল চাপও৷ এরপর তাদের সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় ছিলেন৷ তারাও হামলার শিকার হন, হয় সংঘাত৷

‘‘সড়ক দুর্ঘটনা ও সড়ক ব্যবস্থাপনার আইন মেরামত করতে হবে, ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন করতে হবে’

This browser does not support the audio element.

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের শেষ দু'দিন সায়েন্স ল্যাবরেটরি, জিগাতলা এবং ধানমন্ডি এলাকায় হামলার শিকার হন শিক্ষার্থীরা৷ প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যলয়ও ভাঙচুর করা হয়৷

শিক্ষার্থীরা সড়ক নিরপদ করতে গিয়ে সড়ক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিজেদের কাধে তুলে নেন৷ তারা গাড়ির কাগজপত্র, ফিটসেন পরীক্ষা করেন,  পরীক্ষা করেন ড্রাইভিং লাইসেন্স৷ একইসঙ্গে সড়কে তারা জরুরি লেন চালু করেন অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবার যানবাহনের জন্য৷ একই সড়কে রিক্সা, ভারী ও হালকা যানবাহনের জন্য আলাদা আলাদা লেন চালু করেন তারা৷ এই আট দিনে তারা দেখিয়েছেন কীভাবে সমতার নীতিতে আইন প্রয়োগ করতে হয়৷ তাদের হাতে পুলিশ, প্রশাসন, বিচারক, মন্ত্রী-এমপিদের গাড়িও আটক হয় বৈধ কাগপত্র বা চালকের বৈধ লাইসেন্স না থাকায়৷ তারা এ সব গাড়ি আটক করে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের হাতে তুলে দেন৷ পুলিশ মামলা করে৷ তবে তাদের এই কাজে কিছু জায়গায় বাড়াবাড়ির অভিযোগও পাওয়া গেছে৷ তারপরও তাদের এই কাজকে সাধারণ মানুষ স্বাগত জানায়৷ অভিভাবকরা থাকেন পাশে৷

মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূল খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনা যে কতটা ভেঙে পড়েছিল, এই শিশুরা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে৷ তারা দেখিয়েছে আইন কীভাবে প্রয়োগ করতে হয়৷ আমাদের এখন উচিত হবে, তারা যে বিষয়গুলো দেখিয়েছে সেই অনুযায়ী সড়ক ব্যবস্থাপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া৷''

তিনি বলেন, ‘‘সড়ক দুর্ঘটনা ও সড়ক ব্যবস্থাপনার আইন এখন মেরামত করতে হবে৷ যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, তা সংশোধন করতে হবে৷ এটা সমাজের মানুষের যাতে কাজে আসে এবং দুর্ঘটনা যাতে কমে আসে, সেই দিকটি নিশ্চিত করতে হবে৷''

‘‘রাস্তায় কীভাবে চলতে হয় এবং পরিবহণ খাতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, শিক্ষার্থীরা দেখিয়ে দিল’’

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেন, ‘‘পুরো পরিবহণ সেক্টরকে সিন্ডিকেটের হাত থেকে বাইরে নিয়ে আসতে হবে৷ পরিবহণ মাস্তান নয়, পরিবহণ সেক্টরে সত্যিকারের ট্রেড ইউনিয়ন চালু করতে হবে৷'' 

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাস্তায় কীভাবে চলতে হয় এবং পরিবহণ খাতে কীভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, তা আমাদের শিক্ষার্থীরা দেখিয়ে দিল৷''

তিনি বলেন, ‘‘পরিবহণ খাতে নৈরাজ্য চলছিল৷ তবে এখন সুশাসন প্রতিষ্ঠার সময় এসেছে৷ বাস কোম্পানিগুলোকে আইনের আওতায় আনতে হবে৷ চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে৷ তাদের চুক্তিভিত্তিক নয়, বেতনের আওতায় আনতে হবে৷ তাহলে প্রতিযোগিতার মাধমে বেপরোয়া ড্রাইভিং কমবে৷ এছাড়া সড়ক ব্যবহারকারী হিসেবে যাত্রী এবং পথচারীদের সচেতন হতে হবে৷ আইন মানতে হবে সবাইকে৷''

গত ২৫ বছরে নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াম কাঞ্চন৷ তাঁর আন্দোলনের নাম ‘নিরাপদ সড়ক চাই'৷ ইলিয়াস কাঞ্চন ডয়চে ভেলেকে জানালেন, ‘‘বাচ্চারা আমাদের দেখিয়েছে যে আমরা, এ দেশের মানুষরা, কেউই আইন মানি না৷ আমাদের যাদের ক্ষমতা আছে, তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করি শুধু৷ আইন যাঁদের হাতে, যাঁরা আইন প্রয়োগ করেন, তাঁরাও আইন মানেন না৷ সাধারণ মানুষ, চালকদের কথা না হয় বাদই দিলাম৷''

‘যাঁরা আইন প্রয়োগ করেন, তাঁরাও আইন মানেন না’

This browser does not support the audio element.

তাঁর কথায়, ‘‘২৫ বছর ধরে আমি যে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি, সেটা যে মানুষের প্রাণের দাবি – তা এই ছেলেমেয়ারা প্রমাণ করে দিল৷''

নতুন সড়ক পরিবহণ আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পরিবহণ আইনের সঙ্গে সড়ক নিরপত্তা বিষয়টি যুক্ত করতে হবে৷ তা না হলে আইনটি পূর্নাঙ্গ হবে না৷ চালকদের শাস্তি আছে, কিন্তু মালিকদের জরিমানা থাকলেও কোনো শাস্তি নেই৷ কোনো মালিক যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক বা ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই – এমন কাউকে  ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ দেন, তাহলে দায় কার? ওই ড্রাইভারের কারণে যদি কারুর মৃত্যু হয়, তার জন্য তো মালিকেরও শাস্তি হওয়া দরকার৷''

তিনি বলেন, ‘‘পরিবহণ ও সড়ক নিরাপত্তার সাথে অনেক বিষয় এবং মন্ত্রণালয় জড়িত৷ সবগুলোকে আইনের আওতায় আনতে হবে৷ শুধু চালকদের দায়ী করার কোনো মানে হয় না৷''

এদিকে সরকার এরইমধ্যে নতুন আইনসহ আরো কিছু কাজ শুরু করে দিয়েছে৷ শুরু হয়েছে বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ৷ লাইসেন্সবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে অভিযান৷ গাড়ির কাগজপত্র ঠিক করতে এখন বিআরটিএ-তে লম্বা লাইন পড়ছে৷ ঢাকার স্কুল-কলেজের সামনে স্পিড ব্রেকার ও জেব্রা ক্রসিং-এর কাজ শুরু হয়েছে৷

পরিবহণ মালিক সমিতি বুধবার এক জরুরি বৈঠক করে চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানোর নিয়ম বাতিল করেছে৷ অর্থাৎ এখন থেকে চালক ও বাসের অন্যান্য কর্মচারীরা মাসিক বেতন পাবেন৷ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করার কাজ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ