ইউরোপ শর্ত সাপেক্ষে ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়াতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ ইইউ যুক্তরাজ্যের সাথে ভবিষ্যতে আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জার্মান সংসদকে জানান তিনি৷
বিজ্ঞাপন
ব্রিটেনকে যাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে কোনো চুক্তি ছাড়া বেরিয়ে যেতে না হয়, সেজন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন জার্মান চ্যান্সেল আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ তিনি জার্মান আইন প্রণেতাদের উদ্দেশ্যে এক বক্তৃতায় এই কথা বলেন৷
সময়সীমা অনুযায়ী আগামী দশ দিনের মধ্যে ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে চুক্তি সহ বা চুক্তি ছাড়া বেরিয়ে যেতে হবে৷ তবে এই সময়সীমা মার্চের ২৯ তারিখের বদলে ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর আবেদন করতে পারেদেশটি৷ এরই মধ্যে সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ককে লিখেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মে৷ এ নিয়ে তাঁর ইউরোপীয় নেতাদের সাথে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে৷
ম্যার্কেল বলেন, আইরিশ ব্যাকস্টোপ পরিকল্পনা নিয়ে যেই অগ্রগতি হয়েছে ইইউর জন্য তা টেরেসা মেকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিতে যথেষ্ট৷ যুক্তরাজ্যে যদি ভোটে ইতিবাচক ফলাফল না আসে তাহলে আরেকটি ইইউ সম্মেলনের আয়োজন করা যেতে পারে বলেও মত দেন তিনি৷
ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্য বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে না
জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগে মে এই ভাষণ দিলেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের বৈঠকের কিছুদিন আগে৷ যেখানে টেরিসা মে জুন পর্যন্ত ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়াতে ইইউ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাতে যাচ্ছেন৷ ম্যার্কেল বলেন, বিচ্ছেদের পরে ব্রিটেনের সাথে সম্পর্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকলে যতটা নিবিড় থাকত ততটা হয়ত আর থাকবে না৷ কিন্তু বন্ধুত্ব আর পারস্পরিক সুবিধার জন্য একসাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি৷ ‘‘ইইউ-তে থাকুক বা না থাকুক যুক্তরাজ্য সব সময়ই আমাদের চিন্তায় থাকবে৷ আন্তরিক সম্পর্কের দুয়ার বিস্তৃতভাবে খোলা থাকবে৷'' বলেন ম্যার্কেল৷
এর আগে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্কও সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টিকে বিকল্প হিসেবে বিবেচনার কথা জানিয়েছেন৷ তবে এ জন্য ২৯ মার্চের আগেই যুক্তরাজ্যের সংসদে বিচ্ছেদ চুক্তি পাসের শর্ত দিয়ে রেখেছেন তিনি৷
ভবিষ্যৎ ইউরোপ
ইইউ সদস্যদের ইউরোপের ভবিষ্যতেরদিকে মনযোগ দেয়ার আহ্বানও জানান ম্যার্কেল৷ বলেন, জোটবদ্ধ যে নীতি ইউরোপ গ্রহণ করেছে সেটি শান্তি বয়ে এনেছে, কিন্তু তা ক্রমাগত বেড়ে চলা হুমকীর মধ্যেও আছে৷ তিনি বলেন ইইউকে সব সময় এই পরিস্থিতি প্রতিহত করে যেতে হবে৷ আইন প্রণেতাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, ‘‘ইউরোপের মানে হল কথা বলা ও লেখা এবং যা সঠিক মনে হয় তা বিশ্বাস করার স্বাধীনতা৷''
এফএস/ডিজি (এপি)
মীমাংসা ছাড়াই ব্রেক্সিট হতে চলেছে?
২০১৯ সালের মার্চ মাসে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করছে৷ অথচ তার আগে দুই পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়ার আশা কমেই চলেছে৷ শেষ পর্যন্ত কোনো রফা ছাড়াই এই বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ হবে – এমন আশঙ্কা আরও দানা বাঁধছে৷
ছবি: Getty Images/L Neal
আগে বিচ্ছেদ, তারপর ভবিষ্যৎ সম্পর্ক
ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুরু থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছে, যে সবার আগে ‘ব্রেক্সিট’ বা বিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়গুলির ক্ষেত্রে দুই পক্ষকে বোঝাপড়ায় আসতে হবে৷ যথেষ্ট অগ্রগতি হলে তবেই ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে৷ কিন্তু ব্রিটেন দু’টি বিষয় নিয়ে একসঙ্গে দর কষাকষি করতে আগ্রহী, যা ইইউ-র কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়৷
ছবি: Reuters/File Photo/Y. Herman
একই আলোচনা, ভিন্ন মূল্যায়ন
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে তৃতীয় দফার আলোচনার শেষে ইইউ-র শীর্ষ প্রতিনিধি মিশেল বার্নিয়ে বলেন, বিচ্ছেদ সংক্রান্ত আলোচনায় যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেনি৷ ফলে আপাতত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শুরু হচ্ছে না৷ অন্যদিকে ব্রেক্সিট মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস কিছু ক্ষেত্রে স্পষ্ট অগ্রগতির উল্লেখ করেন৷
তৃতীয় দফার আলোচনার আগে ভবিষ্যৎ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে ব্রিটেন যে অবস্থান প্রকাশ করেছে, তাকে ‘অসম্ভব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ইইউ-র মিশেল বার্নিয়ে৷ বিচ্ছেদের পরেও একক বাজারে প্রভাব, ইউরোপীয় আদালতের এক্তিয়ার নিয়ে ‘অবাস্তব’ প্রস্তাব নিয়ে বিরক্ত ইইউ প্রতিনিধিরা৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
আয়ারল্যান্ডে ইইউ-র বহির্সীমানা
ব্রেক্সিটের পর আইরিশ প্রজাতন্ত্র ও ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত ইইউ-র বহির্সীমানা হয়ে উঠবে৷ তার ফলে দুই অংশের মধ্যে নিবিড় অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য যা বড় এক হুমকি৷ দুই পক্ষই একটা সমাধানসূত্র চাইলেও এখনো এই প্রশ্নে যথেষ্ট অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Faith
নাগরিকদের অধিকার
ব্রিটেনে বসবাসরত ইইউ নাগরিকরা ব্রেক্সিটের কারণে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন৷ ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁদের সুবিচারের আশ্বাস দিলেও তাঁদের অধিকারের প্রশ্নে চূড়ান্ত নিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে না৷ ইইউ দেশগুলিতে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকার নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে৷ জটিল এই প্রশ্নের স্থায়ী সমাধানসূত্র চাইছে ইইউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’?
ব্রাসেলসে আলোচনায় অগ্রগতির অভাবে ব্রিটেন সরাসরি ফ্রান্স ও জার্মানির মতো ইইউ সদস্য দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে ব্রিটেনের ‘দ্য ডেলি টেলিগ্রাফ সংবাদপত্রের ইঙ্গিত পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ তাঁর স্পষ্ট অবস্থান: ইইউ-র প্রধান মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়ে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত আলোচনার একমাত্র সহযোগী৷