1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যুক্তরাজ্যের স্বপ্নের বিয়ে, পরিণতি বিচ্ছেদে

৭ জুলাই ২০২১

যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হবে এমন মিথ্যা আশ্বাসে ব্রিটিশ নাগরিকদের সঙ্গে ধারকর্জ করে মেয়েদের বিয়ে দেয় পাকিস্তানি পরিবার৷ কিন্তু কনের আর বিদেশ যাওয়া হয় না৷ শেষটা হয় বিচ্ছেদে স্বপ্নভঙ্গের মধ্য দিয়ে৷ এমন ঘটনা হরহামেশা ঘটছে৷

যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হবে এমন মিথ্যা আশ্বাসে ব্রিটিশ নাগরিকদের সঙ্গে ধারকর্জ করে মেয়েদের বিয়ে দেয় পাকিস্তানি পরিবার৷ কিন্তু কনের আর বিদেশ যাওয়া হয় না৷ শেষটা হয় বিচ্ছেদে স্বপ্নভঙ্গের মধ্য দিয়ে৷ এমন ঘটনা হরহামেশা ঘটছে৷
ছবি: ARIF ALI/AFP/Getty Images

সানা হাফিজ তখন সবে দশম শ্রেনীতে উঠেছে৷ এরিমধ্যে যুক্তরাজ্যে জন্ম তার এক আত্মীয়ের সঙ্গে এল বিয়ের প্রস্তাব৷ সানার স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষে করে সরকারি কর্মকর্তা হবেন, পরিবারের ভাগ্য ফেরাবেন৷ বিয়ের প্রস্তাবে তার মনে হলো যুক্তরাজ্য গিয়েও তিনি পড়াশোনা ও চাকরি করে পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারবেন৷ তাই অভিভাবকদের ইচ্ছায় দ্বীমত করলেন না৷ ছেলের পরিবার থেকে বলা হলো দ্বাদশ ক্লাসের পর আর পড়া যাবে না৷ পরিবারের কথা ভেবে সেটিও মেনে নিলেন৷ এরপর হলো বাগদান, বছর পাঁচেক পরে বিয়ে৷

২০১৮ সালে আগস্টে ধারকর্জ করে ধুমধামের সঙ্গেই মেয়ের বিয়ে দেন সানার বাবা-মা৷ কিছুদিন পর স্বামী ও তাদের পরিবার ফিরে চলে গেল যুক্তরাজ্যে৷ কথা ছিল সানাকেও তারা নিয়ে যাবেন সেখানে৷ এরপর সপ্তাহ, মাস, বছর পেরোয়৷ ‘‘এক বছর আমাদের ভালো যোগাযোগ ছিল এবং ফোনে কথা হতো৷ এরপরই তার আচরণের পরিবর্তন হতে শুরু করল৷ আমি যখন যুক্তরাজ্যে আসার জন্য চাপ দিলাম সে আমাকে নিন্দা ও অপমান করা শুরু করল৷ সেই বছরের আগস্টে ডিভোর্স পাঠাল,’’ অশ্রুসজল চোখে ডয়চে ভেলেকে বলেন সানা৷

সানা ও তার পরিবারের জন্য বিষয়টি আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো৷ কেননা এর মধ্যে একে একে আট বছর পেরিয়ে গেছে৷ সরকারি চাকরির স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে পড়াশোনা ছেড়েছে সানা, পরিবারের বেড়েছে ঋণ৷ পুরাতন স্বপ্ন নতুন করে গড়ার আর উপায় নেই তার সামনে তখন৷ ‘‘আমি উচ্চ শিক্ষিত হতে পারতাম, সরকারি চাকরিজীবী হওয়ার সুযোগ থাকত৷ এখন কে আমার এই ক্ষতিপূরণ দেবে?'' এমন প্রশ্ন যে শুধু সানার তা নয়৷ কাশ্মীরের যে মিরপুর জেলায় তিনি বসবাস করেন সেখানকার বহু নারীর চোখে মুখে একই কথা ঘুরে ফিরে৷

পাকিস্তানে দরিদ্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গণবিবাহ

02:06

This browser does not support the video element.

১৯৫০-৬০ এর দশকে অঞ্চলটি থেকে বহু মানুষ পাড়ি জমিয়েছেন ব্রিটেনে৷ কেউ বিয়ে করে, কেউ শরণার্থী হিসেবে, কেউবা কাজ ও পারিবারিক সূত্রে৷ এরই মধ্যে তাদের দ্বিতীয় প্রজন্মও ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে সেখানে বসবাস করছে৷ তাদের বিয়ের জন্য পরিবার আসে পাকিস্তানে৷ সানার মতো দরিদ্র পরিবারের মেয়েদেরই তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেছে নেন৷ তারপর একই উদাহরণের পুনরাবৃত্তি চলতে থাকে৷ দেশটির নারী অধিকারীকর্মী ঘাজালা হায়দার লোধিও সে কথাই বললেন৷ ‘‘১৯৯০ এর দশক থেকে এরকম কয়েক হাজার ঘটনা আমি শুনেছি ও দেখেছি৷ আমাদের রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থার কারণে এই কথাগুলো মেয়েরা কাউকে জানায় না,’’ বলেন তিনি৷

এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী আইনজীবী ইফজাল আহমেদ খানও৷ তিনি ডয়চে ভেলের কাছে তেমনই একটি ঘটনা তুলে ধরেন৷ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ভিম্বারে জন্ম নেওয়া এক ব্রিটিশ নাগরিকের সঙ্গে সাত বছর আগে তার এক কাজিনের বিয়ে হয়৷ কয়েক বছর পর তাদের সন্তান হয়৷ এরপর সেই ব্রিটিশ নাগরিক তাদের ফেলে চলে যান৷ পরে তিনি স্ত্রীকে তালাক দেন৷

এত এত ঘটনায় বিয়ে করতে আসা ব্রিটিশ পাকিস্তানিদের নিয়ে দুর্নাম ছড়িয়ে পড়েছে সেখানে৷ লোধি জানান, অর্ধেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় পাত্র আগের বিবাহিত৷ একটি ঘটনায় ছয়বার বিবাহিত একজনের কথাও তিনি জানতে পেরেছেন৷ এই পাত্রদের বয়স হয় ৪০ থেকে ৬০ বছর অবধি৷  

কিন্তু একই ঘটনা একের পর এক কেন ঘটছে? মিরপুর জেলায় অধিকারীকর্মী সর্দার আবরার আজাদের মতে মূল কারণটি দারিদ্র্য৷ পাকিস্তানি পরিবার তাদের মেয়েকে ব্রিটিশ বরের কাছে বিয়ে দিয়ে নিশ্চিত হতে চান, তাদের ভাগ্যও ফেরাতে চান৷ এজন্এয তটাই মরিয়া থাকেন যে ছেলের চরিত্র সম্পর্কেও কোন খোঁজ খবর নেন না৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতারকদের পাল্লায় পড়েন তারা৷ ছেলেরা বিয়ে করে নতুন স্ত্রীর সঙ্গে থাকে, মেয়ের পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এক পর্যায়ে সটকে পড়ে৷

আবার অনেক পরিবারের স্বপ্ন থাকে তাদের মেয়েকে পাঠানো গেলে সে তার ভাইকেও যুক্তরাজ্যে নিয়ে যেতে পারবে৷ এতে গোটা পরিবারের ভাগ্যই বদলে যাবে৷ কিন্তু এই ভাবনা তাদের জন্য অচিরেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়৷ যারা প্রতারণা করে তারাও জানে ভুক্তভোগীরা আইন আদালতের দ্বারস্থ হবে না৷

এস খান/এফএস

জুনের ছবিঘর দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ