আনজেম চৌধুরীকে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আল মুহাজিরুন’-এর নেতা হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷ এই সংগঠনটির সদস্যরা একাধিক হামলায় জড়িত বলে জানা গেছে৷
বিজ্ঞাপন
উগ্র ইসলামপন্থি ধর্মপ্রচারক আনজেম চৌধুরীকে মঙ্গলবার ব্রিটেনের একটি আদালত সন্ত্রাসী সংগঠন পরিচালনার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে৷
বিতর্কিত এই ব্যক্তি ‘আল মুহাজিরুন' সংগঠনের ‘তত্ত্বাবধায়ক' ছিলেন বলে জানিয়েছে আদালত৷ গোষ্ঠীটি যুক্তরাজ্যে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কাজ করছে৷ ২০১০ সালে গোষ্ঠীটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে ব্রিটিশ সরকার৷
জার্মানিতে আলোচিত যত ‘জঙ্গিবিরোধী’ মামলা
এ পর্যন্ত বেশ কিছু উগ্র ইসলামপন্থি বা জঙ্গিদের হামলা এবং হামলার চেষ্টা হয়েছে জার্মানিতে৷ কয়েকদিন আগে সর্বোচ্চ শাস্তিও হয়েছে এক ব্যক্তির৷ ছবিঘরে থাকছে জার্মানিতে আলোচিত কিছু ‘জঙ্গিবিরোধী’ মামলার কথা৷
ছবি: AP
বন শহরে বোমা বিস্ফোরণের ব্যর্থ চেষ্টা
২০১২ সালে বন শহরের কেন্দ্রীয় রেল স্টেশনে তোলা ছবি এটি৷ ছবির ওই নীল ব্যাগে বোমা ছিল৷ এক ডানপন্থি রাজনীতিবিদকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ বোমা রাখা হয়েছিল বলে পুলিশের সন্দেহ৷ হত্যাচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সম্প্রতি এক ব্যাক্তির আজীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে ড্যুসেলডর্ফের আদালত৷ বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়েছে আরো তিনজনের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরের বাস স্টপে হামলা
জার্মানিতে প্রথম ‘উগ্র ইসলামপন্থির’ হামলাটি হয়েছিল ২০১১ সালের মার্চে৷ সেবার ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরের বাস স্টপে দুই মার্কিনিকে গুলি করে হত্যা করেছিল আরিদ উকা নামের এক ব্যক্তি৷ নিহত দুই মার্কিন নাগরিকের কয়েক দিনের মধ্যেই আফগানিস্তানে যাওয়ার কথা৷ জানা যায়, আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে গুলি করে দু’জন নিরপরাধ মার্কিনিকে হত্যা করে আরিদ৷ কসভোতে জন্ম নেওয়া আরিদেরও আজীবন কারাদণ্ড হয়েছে৷
ছবি: AP
সাওয়ারল্যান্ড সেল
‘সাওয়ারল্যান্ড সেল’ হচ্ছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে গড়ে ওঠা ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক জিহাদ ইউনিয়ন বা আইপিইউ-এর জার্মান শাখা৷ ১০ বছর আগে এই সংগঠনের হয়েই যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক স্থাপনাগুলোতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল চার জার্মান এবং এক তুর্কি বংশোদ্ভূত তরুণ৷ ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে পাঁচজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়৷ ২০১০ সালে প্রত্যেকের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়েছে৷
ছবি: AP
নকল পুলিশ
২০১৪ সালে ভুপার্টাল শহরে কমলা রঙের সিকিউরিটি ভেস্ট পরা একদল লোক রাস্তায় নেমে আসে৷ তাদের পোশাকে লেখা ছিল ‘শরিয়া পুলিশ’৷ লোকগুলো বিভিন্ন মানুষকে বার এবং ক্লাব বর্জন করে ইসলামি আইন মেনে চলার পরামর্শ দিতে থাকে৷ ওই লোকগুলোর নেতা হিসেবে কাজ করেছিলেন স্ভেন লাউ নামের এক সালাফিস্ট মুসলমান৷ পরে আইএস-এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ তার বিরুদ্ধে মামলা এখন বিচারাধীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bildfunk/M. Becker
বড় বড় কথা বলা সেই আইএস জঙ্গি
২০১৩ সালের অক্টোবরে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস-এ যোগ দিতে ডিন্সলাকেনের সালাফিস্ট মুসলমান নিলস ডি. সিরিয়ায় যায়৷ এক বছর পর আবার ফিরে আসে জার্মানিতে৷ ফিরে এসে সিরিয়ায় সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে জানায় সগর্বে৷ তারপর গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ চার বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তার৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল
২০১৬ সালের জুলাই মাসে মামলার চূড়ান্ত শুনানির দিন হ্যারি এস. আদালতে বলে ‘‘সিরিয়ায় যাওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল৷’’ ব্রেমেনে খ্রিষ্টান থেকে মুসলমান হওয়া তরুণটি তার এক বছর আগেই সিরিয়ায় গিয়ে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর সঙ্গে তিন মাস কাটিয়ে এসেছে৷ সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দেয়ার অপরাধে তিন বছরের জেল হয়েছে তার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Marks
6 ছবি1 | 6
এই গোষ্ঠীর কয়েক সদস্য ২০১৩ সালে ব্রিটিশ সেনা লি রিগবিকে হত্যা এবং ২০১৭ ও ২০১৯ সালে লন্ডন ব্রিজে হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷
বিচারক মার্ক ওয়াল উলউইচ ক্রাউন কোর্টে চৌধুরীকে বলেন, ‘‘আপনার সংগঠনের মতো সংগঠনগুলো আদর্শিক কারণের প্রতি সমর্থনে সহিংসতাকে স্বাভাবিক করে তুলছে৷''
‘‘এগুলোর অস্তিত্ব এগুলোর একক সদস্যদেরকে এমন কর্মকাণ্ডে জড়াতে উদ্বুদ্ধ করছে যা তারা হয়ত এরকম না হলে করতেন না৷ সেগুলো মানুষের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করছে যারা অন্যথায় শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতেন,'' যোগ করেন বিচারক৷
চৌধুরীর যাবজ্জীবন সাজার অধীনে সর্বনিম্ন কারাদণ্ডের মেয়াদ ২৮ বছর৷ ৮৫ বছর বয়স না হওয়া অবধি তিনি মুক্তি পাবেন না৷
বিচারক জানিয়েছেন যে, তাকে এত দীর্ঘমেয়াদে সাজা দেয়ার কারণ হচ্ছে তিনি ‘‘তরুণদেরকে মৌলবাদী কর্মকাণ্ডে জড়াতে উদ্বুদ্ধ করেছেন৷''
এর আগে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট'-এর প্রতি সমর্থন জানানোয় ২০১৬ সালে সাড়ে পাঁচ বছর কারাভোগের সাজা হয়েছিল চৌধুরীর৷ তবে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে মুক্তি পান তিনি৷
আল মুহাজিরুনের সঙ্গে চৌধুরীর সম্পৃক্ততার বিষয়টি মার্কিন এক গোপন অভিযানে উন্মোচিত হয়৷ সেই অভিযানে দেখা গেছে যে, গোষ্ঠীটি নিষিদ্ধ হলেও নিউইয়র্কভিত্তিক ‘ইসলামিক থিঙ্কার সোসাইটিসহ' অন্য বিভিন্ন নামে সক্রিয় রয়েছে৷ মার্কিন সেই অনুসন্ধানের পর ব্রিটেন এবং ক্যানাডা পুলিশ তদন্ত শুরু করে৷
নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের উপকমিশনার রেবেকা উইনার মনে করেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাজা এক ‘‘ঐতিহাসিক'' ব্যাপার কেননা তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির ঊধ্বর্তন পদে থাকা একজন ‘‘নির্লজ্জ, প্রবল মৌলবাদী৷''
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত যারা ‘ফুট সোলজার' মানে যারা গোষ্ঠীটির অন্তর্ভূক্ত হয়ে বিভিন্ন হামলায় অংশ নেন, তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়৷''