লন্ডনের একটি আদালত উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আসাঞ্জকে ৫০ সপ্তাহের কারাদণ্ড দিয়েছে৷ জামিনের শর্ত ভেঙে ইকুয়েডর দূতাবাসে অবস্থান করায় এই সাজা দেয়া হয়েছে তাঁর৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার শুনানিতে বিচারক ডেবোরাহ টেলর বলেন, আইন ভঙ্গ করে আসামী বড় অপরাধ করেছেন৷ তাই ৪৭ বছর বয়সি আসাঞ্জকে সর্বোচ্চ এক বছরের সাজা দেয়া হয়েছে৷ এদিকে, আসাঞ্জের মুক্তির দাবিতে আদালতের বাইরে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা৷
উইকিলিকস ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অসংখ্য গোপন নথি ফাঁস করে সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন জুলিয়ান৷ ২০১২ সালে সুইডেনে বহিঃসমর্পণ ঠেকাতে যুক্তরাজ্যে জামিনের শর্ত ভেঙে তিনি ইকুয়েডরের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চান৷
এরপর থেকে যুক্তরাজ্যোর ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন তিনি৷ প্রায় সাত বছর পর গত মাসে ইকুয়েডর রাজনৈতিক আশ্রয় তুলে নিলে আসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাজ্য পুলিশ৷ জামিনের শর্ত ভঙ্গ করার অপরাধে তাঁকে এই ৫০ সপ্তাহের সাজা দেয়া হলো৷
উইকিলিকসের মাধ্যমে আফগানিস্তান, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশে যু্দ্ধ সংক্রান্ত গোপন মার্কিন সরকারি নথি ফাঁস করে দেবার পর আসাঞ্জের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ সে সময় মিত্রদের কাছে সহযোগিতা চাইলে সুইডেন আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল৷
আসাঞ্জ শুরু থেকেই আসছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন৷
যুক্তরাষ্ট্র এছাড়াও তাদের মিলিটারি কম্পিউটার সিস্টেমে অনধিকার প্রবেশের অভিযোগ তুলেছে৷ এই অভিযোগের কারণে তাঁকে সে দেশটির কাছে সমর্পণ করার আশঙ্কা রয়েছে৷ বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের আদালতে শুনানি হবার কথা রয়েছে৷
বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অতিথি তিনি!
সারাবিশ্বের সংবাদমাধ্যম যাঁকে নিয়ে আলোড়িত, তাঁকে কেউ কেউ ডাকছেন ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অতিথি’ নামে৷ কে এই ব্যক্তি, জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/P. Nicholls
যার পোষ্য এই বেড়াল
ওপরের ছবিটি ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে তোলা, যখন লন্ডনে অবস্থিত ইকুয়েডরের দূতাবাস ছিল জেমস নামে এই বেড়ালটির ঠিকানা৷ এই বেড়ালের মালিক জুলিয়ান আসাঞ্জ, যার দীর্ঘ ৭ বছর দূতাবাসের ভেতর বন্দি থাকার পালা শেষ৷ এখন তাঁর ঠিকানা মধ্য লন্ডনের একটি জেলখানা৷
ছবি: Reuters/P. Nicholls
কে এই আসাঞ্জ?
উইকিলিকসের মাধ্যমে বহু গোপনীয় নথি ফাঁস করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা আসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা হয়৷ গ্রেপ্তার আতঙ্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানোর ভয়ে ২০১২ সালের আগস্ট থেকে লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে অবস্থান নেন তিনি৷
ছবি: Reuters/P. Nicholls
কেন গ্রেপ্তার?
ইকুয়েডর সরকার আসাঞ্জের রাজনৈতিক আশ্রয় মঞ্জুর করার পর থেকে সেই দূতাবাসেই অবস্থান করছিলেন তিনি৷ বৃহস্পতিবার ইকুয়েডর কর্তৃক ওই রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিলের সিদ্ধান্তে আসার পর গ্রেপ্তারের পদক্ষেপ নেয় লন্ডন পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/R. Pinney
কেন বাতিল রাজনৈতিক আশ্রয়?
ওপরের ছবিটি লন্ডনের সেই দূতাবাসের, যেখানে আসাঞ্জকে রাখা বাবদ প্রতি বছর ইকুয়েডর সরকারের খরচ হচ্ছিল আনুমানিক এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার! ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনভেনশন এবং দৈনন্দিন প্রটোকল লঙ্ঘনের’ কারণে তাঁর অ্যাসাইলাম বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো৷ কিন্তু শুধুই কি এটাই কারণ?
ছবি: Getty Images/AFP/D. Leal-Olivas
অভদ্র অতিথি
প্রেসিডেন্ট মোরেনো বলেন, ‘‘আমরা এই স্পয়েলড ব্র্যাট, অর্থাৎ বখে যাওয়া ছেলের রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল করছি৷’’ এর কারণ আসাঞ্জের বিভিন্ন উদ্ভট অভ্যাস৷ আসাঞ্জ নাকি মধ্যরাতে দূতাবাসের ভেতর সশব্দে স্কেটবোর্ডিং করতেন৷ এছাড়া, তাঁর বিরুদ্ধে ছিল দূতাবাসের কর্মীদের শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ৷ এত টাকা খরচ করে যে অতিথিকে রাখছিল ইকুয়েডর সরকার, সেই দেশের দূতাবাসের দেওয়ালেই নাকি নিজের মল-মূত্র ছড়াতেন এই ইন্টারনেট-সৈনিক!
ছবি: Reuters/P. Nicholls
অফিস থেকে বেডরুম
ইকুয়েডরের দূতাবাস আয়তনে খুব একটা বড় না হলেও একটি অফিসঘরকে সাজানো হয় আসাঞ্জের শয়নকক্ষ হিসাবে৷ কিন্তু দূতাবাসের ভেতর ধীরে ধীরে পালটাতে থাকে আসাঞ্জের ব্যবহার৷ দূতাবাসের কর্মীরা বলছেন, প্রায়ই নাকি নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াতেন আসাঞ্জ৷ স্নান করতেন না মাসের পর মাস৷ মধ্যরাতে স্কেটবোর্ডিং করার পাশাপাশি জোরে জোরে গানও চালাতেন তিনি, যা একটি দূতাবাসের জন্য বেমানান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Voskresenskiy
জাতীয় লজ্জা
ছোট দেশ ইকুয়েডর আসাঞ্জের কাণ্ড-কারখানাকে মোটেও ভালো নজরে দেখেনি৷ জানা গেছে, আসাঞ্জের আচরণকে দূতাবাসের ভেতর অনেকেই দেখতেন ‘ইকুয়েডরের লজ্জা’ হিসাবে৷ ফলে, বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন শুধু আন্তর্জাতিক চাপে নয়, আসাঞ্জের অভদ্র আচরণের কারণেও ইকুয়েডর বাতিল করেছে তাঁর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন৷ সাথে, জুটেছে ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অতিথি’ হবার বদনামও৷
ছবি: picture-alliance/J.Wiseman
গোপন তথ্য ফাঁস
উইকিলিকস বিখ্যাত বিভিন্ন রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁস করার জন্য৷ এবং ইকুয়েডরের কাছে আশ্রয় পাওয়া সত্ত্বেও আসাঞ্জ ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট মোরেনোর বেশ কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ফাঁস করে দেন৷ এর সাথে, গোপন অ্যাকাউন্টে থাকা বিশাল অঙ্কের অর্থের হদিশও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন আসাঞ্জ৷
ছবি: Reuters/P. Nicholls
আসাঞ্জের পক্ষে যারা...
উইকিলিকসের খবর সামনে আসার পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন কোণ থেকে উঠে আসছিল আসাঞ্জের পক্ষে আওয়াজ৷ বৃহস্পতিবার আসাঞ্জ গ্রেপ্তার হবার পরও দেখা যায় একই রকমের প্রতিক্রিয়া৷ ইকুয়েডর দূতাবাসের সামনেই প্রতিবাদে নামেন বেশ কয়েকজন৷ দাবি জানান আসাঞ্জকে মুক্ত করার৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কী হতে চলেছে ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অতিথি’ হিসাবে খ্যাত ব্যক্তির সাথে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে৷