যুক্তরাজ্যে নতুন ধরনের করোনার প্রকোপ। যাতায়াত বন্ধ করল জার্মানি সহ ইউরোপের একাধিক দেশ।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাজ্যের সমস্ত বিমান বাতিল করে দিল জার্মানি। একই সঙ্গে বাতিল করা হলো দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যোগাযোগও। যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাসের একটি নতুন ধরনের স্ট্রেইন পাওয়া গিয়েছে। যা দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করার পরেই সেখানে যাত্রা বন্ধ করেছে জার্মানি। ইউরোপের আরো বেশ কিছু দেশও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যুক্তরাজ্যে করোনার একটি নতুন ধরন খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সাধারণ করোনার চেয়ে অনেক দ্রুত ছড়াচ্ছে নতুন এই করোনার স্ট্রেইনটি। যে কারণে যুক্তরাজ্যের মানুষকে নতুন করে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দেশের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গেও বৈঠক করেছে।
নতুন করোনা ভাইরাসের কথা শোনার পরেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যাতায়াত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোববার জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রথমে টুইট করে বিমান বন্ধের ঘোষণা করেন। পরে সরকারের মুখপাত্রও সে কথা জানান। বলা হয়েছে, রোববার সকাল ছয়টা থেকে এই নিয়ম কার্যকরী করা হয়েছে। আপাতত ১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। তারপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
এ বছর জার্মানিতে যেভাবে ক্রিসমাস উদযাপন
করোনা সংকট জার্মানিতে ক্রিসমাসের আমেজে কেমন প্রভাব ফেলেছে, দেখুন এই ছবিঘরে...
ছবি: picture alliance/D. Kalker
ড্রেসডেনের গির্জা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তৈরি ড্রেসডেন শহরের ফ্রাউয়েনকির্শে গির্জাটি এই অঞ্চলে সৌহার্দ্যের প্রতীক৷ সাধারণত, এই গির্জায় ক্রিসমাসের সময় ভিড় জমান কয়েক হাজার মানুষ৷ এ বছর তা হবে না৷ বদলে, গির্জার অনুষ্ঠান ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে সবার জন্য৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
বাখের গির্জা
বিখ্যাত সংগীতস্রষ্টা ইওহান সেবাস্টিয়ান বাখ লাইপসিশ শহরের টোমাসকির্শে গির্জার সাথে দীর্ঘ ২৭ বছর যুক্ত ছিলেন৷ তার হাতে গড়া সেন্ট টমাস বয়েজ কয়ার আজও প্রতি বছর ক্রিসমাসের সময় নানা ধরনের ক্যারল পরিবেশন করে৷ এই গির্জায় জমায়েতের অনুমতি থাকলেও অন্যান্যবারের মতো হাজার হাজার মানুষ সেখানে যোগ দিতে পারবেন না৷ আগে থেকে নাম নথিভুক্ত করা হাতে গোনা কয়েকজনই পারবেন অংশ নিতে৷
ছবি: Bachfest Leipzig/J. Schlueter
মিউনিখের ফ্রাউয়েনকির্শে
ক্রিসমাসের ভোর তিনটের সময় প্রতি বছর এই গির্জায় টানা ২০ মিনিট ধরে ঘণ্টা বাজানো হয়৷ ক্রিসমাসের অনুষ্ঠান তারাও সরাসরি সম্প্রচার করবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে৷ সশরীরে অনুষ্ঠান উপভোগ করার অনুমতি রয়েছে মাত্র ১৩০জনের৷
ছবি: picture-alliance/Chromorange/A. Gravante
কোলন ক্যাথিড্রাল
বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ গির্জা কোলনের ক্যাথিড্রাল৷ ৫১৫ ফুট উঁচু এই ক্যাথিড্রালের ক্রিসমাসের বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নিতে সাধারণ মানুষকে আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে৷ মানা হবে অন্যান্য করোনাবিধি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Berg
রাজার ক্যাথিড্রাল
আখেন শহরের ক্যাথিড্রালটি এক হাজার ২২৪ বছর পুরোনো৷ এই ক্যাথিড্রালে এক সময় জার্মান রাজাদের অভিষেকের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো৷ জনপ্রিয় এই ক্যাথিড্রালেও এবার করোনার কারণে ক্রিসমাসের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন মাত্র ১২০জন৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
হামবুর্গের গির্জা
জার্মানির উত্তরাঞ্চলের ‘মিশেল’ গির্জায় ক্রিসমাসের সময় বেশ কয়েকদিন ধরে চলে টানা প্রার্থনা৷ এ বছর গোটা প্রার্থনাটাই হবে গির্জার ভেতরে ও বাইরে খোলা আকাশের নীচে অনেক বেশি জায়গা জুড়ে৷ কারণ, গুরুত্ব পাচ্ছে শারীরিক দূরত্ব ও করোনাবিধি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বার্লিনের গির্জা
বার্লিনের কাইজার মেমোরিয়াল গির্জা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল৷ আজও এই গির্জার গুরুত্ব মানুষের কাছে বেশ অনেকটাই৷ করোনাবিধি মেনে এখানে অন্যান্য বারের তুলনায় কম দর্শক ভিড় জমাবেন, কারণ, কড়াকড়ি কমানো হয়নি এখনো৷
ছবি: picture-alliance/ ZB
সর্বোচ্চ চূড়া যে গির্জার
বিশ্বের সবক’টি গির্জার মধ্যে সবচেয়ে উঁচু চূড়ার খেতাব রয়েছে উলম শহরের ম্যুনস্টার গির্জার৷ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এই স্থানে এবার ভীড় অনেকটাই কম হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ৷ জার্মানির সবচেয়ে বড় ‘প্রোটেস্টান্ট গির্জা’য় ক্রিসমাস পালন করতে হলে প্রয়োজন হবে আগাম অনুমতির৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Puchner
এগারোটি প্রার্থনার অনুষ্ঠান
হিলডেশহাইম ক্যাথিড্রালে নিয়ম মেনেই পালিত হবে ক্রিসমাস৷ দর্শকের ভীড় সামলাতে মোট ১১টি প্রার্থনা আযোজিত হবে৷ প্রতিবারই বজায় রাখা হবে দূরত্ব৷ একেকটি প্রার্থনা সভায় যোগ দিতে পারবেন সর্বোচ্চ ৮০জন৷
ছবি: Fotolia/panoramarx
নিয়ম মেনেই উৎসব
এরফুর্ট শহরের সবক’টি গির্জাতেই এবার ব্যাপক কড়াকড়ি৷ জার্মানির অন্যান্য গির্জার মতো এখানেও জারি আছে দূরত্ববিধি৷ গির্জার প্রবেশদ্বারের পাশেই রয়েছে হাতধোয়া ও জীবাণুনাশকের ব্যবস্থা৷ এভাবেই সংকটের মধ্যেও সংযতভাবে উৎসব পালন করার পরিকল্পনায় জার্মানির গির্জাগুলি৷
শুধু যুক্তরাজ্য নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করেছে জার্মানি। বলা হয়েছে, খুব প্রয়োজন না হলে কেউ যেন দক্ষিণ আফ্রিকা না যান। কারণ সেখানেও করোনার সংক্রমণ নতুন করে দ্রুত ছড়াতে শুরু করেছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যাঁরা জার্মানিতে এসেছেন ফেডারেল পুলিশ তাঁদের উপর কড়া নজর রাখছে। তাঁদের চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন কি না, সে দিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।
শুধু জার্মানি নয়, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইটালি, নেদারল্যান্ডস সকলেই আপাতত যুক্তরাজ্যে যাতায়াত বন্ধ রেখেছে। ফরাসি বন্দর থেকে যুক্তরাজ্যে পণ্য পাঠানো বন্ধ রাখা হয়েছে। সমস্ত ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে বন্দর এলাকায়। তারই মধ্যে রোববার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বৈঠক করেছেন। যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইন থেকে ইউরোপকে কী ভাবে রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে আগামী ২৭ ডিসেম্বর থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে সরকার। তারই মধ্যে যুক্তরাজ্যের নতুন ভাইরাস কপালে ভাঁজ ফেলেছে সকলের।