দেশ দুটি থেকে জার্মানিতে আসা যাত্রীদের দুই সপ্তাহের কোয়ারান্টিনের নিয়ম তুলে নিয়েছে জার্মানি৷ এমন সময়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, যখন করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো ইউরোপ৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার থেকে বেশ কয়েকটি দেশের ওপর থেকে করোনা সংক্রান্ত কড়াকড়ি বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করেছে জার্মানি৷ এর মধ্য়ে ওমিক্রনের উচ্চ সংক্রমণ ঘটছে এমন কিছু দেশের নামও রয়েছে৷
বিধিনিষেধ তুলে নেয়া নয়টি দেশের মধ্য়ে যুক্তরাজ্য ও সাউথ আফ্রিকা ছাড়াও আফ্রিকার দক্ষিণের বেশ কয়েকটি দেশও রয়েছে৷ এসব দেশই ২০২১ সালের শেষ দিকে উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট ছড়াতে পারে, এমন তালিকাতে ছিল৷
তবে কোয়ারান্টিনের নিয়ম প্রত্যাহার করা হলেও এসব দেশকে উচ্চঝুঁকির তালিকাতে রাখা হয়েছে৷ এই তালিকার দেশগুলোতে নানা ধরনের বিধিনিষেধ থাকলেও টিকা নেয়া যাত্রীদের জন্য নিয়মে রয়েছে শিথিলতা৷
ওমিক্রনের প্রভাব
করোনার নতুন সংস্করণ ওমিক্রন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ৷ ইসরায়েলের পর জাপানও সোমবার বিদেশিদের সে দেশে ঢোকা নিষিদ্ধ করেছে৷
ছবি: Pavlo Gonchar/Zumapress/picture alliance
বিদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
ওমিক্রন ঠেকাতে রোববার মাঝরাত থেকে ইসরায়েলে বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে৷ মঙ্গলবার থেকে একই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে যাচ্ছে জাপান৷ দেশটিতে এখনও ওমিক্রনে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া না গেলেও এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা৷ এজন্য সমালোচনা শুনতেও রাজি আছেন বলে জানান তিনি৷ কতদিন পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে তা অবশ্য জানাননি তিনি৷
ছবি: Koji Sasahara/AP/picture alliance
এখন পর্যন্ত যেসব দেশে পাওয়া গেছে
ওমিক্রন সংক্রমণের কথা প্রথম জানায় সাউথ আফ্রিকা৷ এরপর থেকে এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, বতসোয়ানা, ব্রিটেন, ক্যানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, হংকং, ইসরায়েল, ইটালি, নেদারল্যান্ডস ও স্কটল্যান্ডে ওমিক্রন পাওয়া গেছে৷
ছবি: Pavlo Gonchar/Zumapress/picture alliance
পর্তুগালেও?
পর্তুগালের শীর্ষ ফুটবল লিগে খেলা ক্লাব বেলিনেজিস লিসাবনের ১৩ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন৷ সেগুলো ওমিক্রন সংস্করণের হতে পারে বলে সোমবার দেশটির স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট জানিয়েছে৷ তারা বলছে ক্লাবটির একজন খেলোয়াড় সম্প্রতি সাউথ আফ্রিকা সফর করেছেন৷
ছবি: Pavlo Gonchar/Zumapress/picture alliance
ঝুঁকি ‘অনেক বেশি’
ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে এখনও কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি৷ তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সোমবার ওমিক্রনের বৈশ্বিক ঝুঁকি ‘অনেক বেশি’ বলে জানিয়েছে৷ অবশ্য করোনার এই নতুন সংস্করণ ভবিষ্যতে ঠিক কতটা প্রভাব ফেলবে সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও বেশি কিছু জানেন না বলেও মনে করছে ডাব্লিুএইচও৷ এর আগে ওমিক্রন সংস্করণকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছিল সংস্থাটি৷
ছবি: Denis Farrell/AP/picture alliance
মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর সীমান্ত খুললো
করোনার কারণে দেড় বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর সোমবার থেকে মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর সীমান্তের জোহর-সিঙ্গাপুর কজওয়ে ব্রিজ খুলে দেয়া হয়েছে৷ ওমিক্রনের কারণে সেটা আবারও শিগগিরই বন্ধ করতে হবে না, বলে আশা প্রকাশ করেছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি শিয়ান লং৷ ছবিতে ব্রিজ দিয়ে একটি বাস চলতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Johor Bahru/AP/picture alliance
অস্ট্রেলিয়ায় সীমান্ত খোলার পরিকল্পনা স্থগিত
বুধবার থেকে দক্ষ জনশক্তি ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সীমান্ত খোলার পরিকল্পনা করেছিল অস্ট্রেলিয়া৷ কিন্তু ওমিক্রনের কারণে সোমবার সেই পরিকল্পনা দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন৷ অস্ট্রেলিয়ায় এখন পর্যন্ত পাঁচজন ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন৷
ছবি: Mark Baker/AP/picture alliance
6 ছবি1 | 6
জার্মানির সংক্রামক রোগতত্ত্ব প্রতিষ্ঠান রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট- আরকেআই ৩০ ডিসেম্বরই জানিয়েছিল যে মঙ্গলবার থেকে ওমিক্রনের কারণে আর কোনো দেশকে উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্টের তালিকায় যুক্ত করা হবে না৷ ওমিক্রন প্রথম সনাক্ত হয়েছিল সাউথ আফ্রিকায়, এরপর ভ্যারিয়েন্টটি খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে৷
ওমিক্রনে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হওয়া দেশগুলোর একটি যুক্তরাজ্য৷ জার্মানির আরো দুই প্রতিবেশী ফ্রান্স ও ডেনমার্কেও উচ্চ হারে ওমিক্রনের সংক্রমণ ঘটছে৷
উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্টের তালিকায় থাকা দেশগুলোর জন্য টেস্ট বা টিকা থাকলেও যাত্রীদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিন কোয়ারান্টিনের নিয়ম ছিল৷ জার্মানির নাগরিক বা বাসিন্দাদের জন্যও এই নিয়ম কার্যকর ছিল৷ অন্যদিকে উচ্চ ঝুঁকির তালিকায় টিকার প্রমাণ দেখাতে পারলে কোয়ারান্টিনে না থাকলেও চলবে৷ টিকা না নেয়া যাত্রীদের ১০ দিন কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে, তবে টেস্টে নেগেটিভ রেজাল্ট এলে তা পাঁচদিনে নেমে আসবে৷
নভেম্বর এবং ডিসেম্বরের শুরুর দিকে ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল জার্মানি৷ বিশেষ করে টিকা না নেয়াদের জন্য এসব বিধি বেশ কঠোর ছিল৷ তাতে কাজও হয়েছিল৷ সংক্রমণ বেশ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল৷ তবে আরকেআই-এর পরিসংখ্যান বলছে, এখন সংক্রমণ আবার ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে৷
এখন পর্যন্ত পাওয়া বিভিন্ন তথ্যে জানা যাচ্ছে যে ওমিক্রন আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় শরীরে কম ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে৷ কিন্তু এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ হার অনেক বেশি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে, যা পুরো স্বাস্থ্যখাতে প্রভাব ফেলতে পারে৷
জার্মানির প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ এরই মধ্য়ে বুস্টার ডোজও পেয়ে গেছেন৷ সবশেষ তথ্য বলছে বুস্টার ডোজ ওমিক্রনের বিরুদ্ধেও কার্যকর৷ তবে এখনও ২৫ শতাংশ মানুষ কোনো টিকার এক ডোজও নেননি৷