বুধবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রকে ছেড়ে কথা বললেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷ অ্যামেরিকা যদি ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে তাহলে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্যবস্তু বানাবে বলে জানান তিনি৷
বিজ্ঞাপন
পুটিন আরো জানান, রাশিয়া নৌবাহিনীর জন্য নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন-সমৃদ্ধ সাবমেরিন তৈরি করছে, যা দিয়ে ভূমি ও জলে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা যাবে৷
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি' আইএনএফ চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানো সত্ত্বেও রাশিয়া যুদ্ধ শুরু করতে চায় না৷ তবে আঘাতের উত্তর দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন পুটিন৷
তিনি বলেন, ‘‘যে দেশ থেকে রাশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হবে, আমরা শুধু তাদের ওপরেই পালটা হামলা চালাবো না৷ যেখান থেকে এই হামলার সম্পূর্ণ ছক কষা হবে বা যারা এর সাথে যুক্ত থাকবে, সেই দেশগুলিতেও হামলা চালানোর ক্ষমতা আমাদের আছে৷''
তাঁর এই সতর্কবাণী ইতিমধ্যেই রাশিয়ার রাজনৈতিক মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে৷
যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র?
২০১৩ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, আইএনএফ চুক্তি অমান্য করে রাশিয়া গোপনে ক্রুজ-মিসাইল তৈরি করছে৷ এই ক্ষেপণাস্ত্র ৫০০ থেকে ৫,৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে থাকা লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে৷
রাশিয়াএই অভিযোগ অস্বীকার করে এলেও সম্প্রতি স্বীকার করেছে যে তাদের কাছে আসলেই এমন মিসাইল রয়েছে৷ কিন্তু তাদের দৃঢ় বক্তব্য, আইএনএফ চুক্তির কোনো ধারাকেই তারা অমান্য করেনি৷
এদিকে, মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে তাদের কাছে এই মুহূর্তে নতুন কোনো ক্ষেপণাস্ত্র নেই৷
এসএস/জেডএইচ (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতি আগ্রহী কেন ভারত?
ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য ‘এস-৪০০ মিশাইল ডিফেন্স সিস্টেম’ কিনতে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে ভারত৷ রুশ প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময় পাঁচ দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Malgavko
মজবুত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক
গত সপ্তাহে ‘মিশাইল ডিফেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট’-এ স্বাক্ষর করার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এক যৌথ বিবৃতিতে নতুন দিল্লি এবং মস্কোর মধ্যকার সম্পর্ক ক্রমশ আরো মজবুত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন৷ চলতি বছর মোদী এবং পুটিনের এই নিয়ে তৃতীয়বার সাক্ষাৎ হলো৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Y. Kadobnov
এস-৪০০ ডিফেন্স সিস্টেম আসলে কী?
রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০০ সার্ফেস-টু-এয়ার মিশাইল ডিফেন্স সিস্টেম মূলত ধেয়ে আসা ‘ব্যালেস্টিক মিশাইল’ প্রতিরোধ করে৷ এটাকে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আধুনিক এবং মোক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Malgavko
ভারতের আগ্রহ
মূলত চীন এবং পাকিস্তান থেকে কোনো ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের দিকে নিক্ষেপ করা হলে, তা যাতে প্রতিরোধ সম্ভব হয়, সেজন্য এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপন করতে চাচ্ছে ভারতের সামরিক বাহিনী৷ এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে ভারতের পক্ষে অনেক দূরে অবস্থান করা যুদ্ধবিমান, এমনকি রাডার সোনার সিস্টেম সনাক্ত করতে অক্ষম বিমানও ধ্বংস করে দিতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo
আরো চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায়
রাশিয়ার কাছ থেকে চারটি ‘ক্রিভেক-ক্লাস ফ্রিগেট’ কেনারও পরিকল্পনা করছে ভারত৷ এগুলোর মধ্যে দু’টি যুদ্ধজাহাজ গোয়ার শিপইয়ার্ডে জোড়া দেয়া হবে৷ অন্য দু’টো একেবারে তৈরি অবস্থায় রাশিয়া থেকে আনা হবে৷
ছবি: Imago/Itar-Tass
মার্কিন সতর্কবার্তা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছে, যেসব দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে প্রতিরক্ষা এবং গোয়েন্দা খাতের জন্য সমরাস্ত্র কিনবে, সেসব দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে৷ এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য প্রয়োজনীয় সিএএটিএসএ আইন গতবছর অনুমোদন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
মার্কিন সমরাস্ত্রও কেনে ভারত
শীতল যুদ্ধের সময় ভারতের সামরিক সমরাস্ত্রের আশি শতাংশই এসেছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে৷ তবে নব্বইয়ের দশক থেকে আরো কয়েকটি উৎস থেকে সমরাস্ত্র কিনতে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি৷ গত দশ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পনের বিলিয়ন মূল্যমানের সমরাস্ত্র কিনেছে ভারত৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Naveed
ভারত কি ছাড় পাবে?
রাশিয়ার কাছ থেকে ‘এস-৪০০ মিশাইল সিস্টেম’ কেনায় চীনের সামরিক বাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ যদিও ভারত আশা করছে, মার্কিন মিত্র দেশ হিসেবে তাদের এ ধরনের নিষেধজ্ঞায় পড়তে হবে না, তবে ট্রাম্প প্রশাসন ছাড় দেয়ার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি৷