করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে আগাম সতর্কবার্তা দেয়া হলেও বেশির ভাগ দেশের সরকার প্রধান তা উপেক্ষা করেছে৷ জার্মানির ইন্সটিটিউট ফর ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিস (সিআইডিএস) এর গবেষকরা তা-ই মনে করেন৷
বিজ্ঞাপন
সিআইডিএস-র পরিচালক ক্রিস্টিয়ান হ্যাগেনমিলার বলেন, ‘‘সংকট যে রূপ ধারণ করেছে তাতে বোঝাই যাচ্ছে, অনেক দেশ তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে করোনা ভাইরাস নিয়ে আগাম সতর্কবার্তা আংশিক বা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছে৷
‘‘উপেক্ষার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্র৷ জনস্বাস্থ্যের উপর এই ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসার ঝুঁকি আগে থেকে অনুধাবনের সব ব্যবস্থাই তাদের ছিল৷ তারা বুঝতে পারছিল, কোভিড-১৯ যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে এটাকে মহামারি ঘোষণা করা সময়ের ব্যাপার মাত্র৷ কিন্তু তারপরও তাদের বর্তমান নেতা বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেনি৷ ভাইরাসের বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন মনে করেননি৷’’
করোনা সংকটে পপুলিস্ট নেতারা কোণঠাসা
পপুলিজম বা জটিল সমস্যার চটজলদি সমাধান বাতলে দেবার প্রবণতা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ কিন্তু পপুলিস্ট নেতারা করোনা সংকটের সামনে অসহায় হয়ে পড়ছেন৷
ছবি: Imago Images/Media Punch/O. Contreras
ডনাল্ড ট্রাম্পের দুশ্চিন্তা
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছরে অর্থনৈতিক সাফল্য তুলে ধরে সাফল্যের আশায় ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ প্রথমে করোনা সংকট লঘু করে দেখিয়ে চাপের মুখে কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি৷তবে বৈজ্ঞানিক ও বিশেষজ্ঞদের অবজ্ঞা করে ইস্টারের আগেই পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ করে তুলতে চান ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
বরিস জনসনের উভয় সংকট
সবে ব্রেক্সিট কার্যকর করে জনপ্রিয়তা উপভোগ করছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷ করোনা সংকট তাঁর ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে৷ প্রথমদিকে পরস্পরবিরোধী ও বিভ্রান্তিকর অবস্থান নেবার পর জনসনও কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন৷ ব্রিটেনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবকাঠামো পরিস্থিতি সামলাতে না পারলে জনসনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে৷
ছবি: Reuters/I. Vogler
নরেন্দ্র মোদীর বিড়ম্বনা
ভারতে করোনা সংকট এখনো মারাত্মক আকার ধারণ করেনি৷ কিন্তু সমালোচকরা সরকারের অনেক ‘লোক দেখানো’ পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন৷ তাঁদের মতে, লকডাউন ঘোষণা ও জনমোহিনী ভাষণ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী সংক্রমণ কমাতে যথেষ্ট কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব ভারতকে সংকটে ফেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma
বেপরোয়া বোলসোনারো
অন্যান্য পপুলিস্ট বিশ্বনেতার মতো ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো করোনা সংকট যতটা সম্ভব উপেক্ষা করে চলার চেষ্টা করছেন৷ তিনি বিষয়টিকে নিয়ে ‘অকারণ ত্রাস’ সৃষ্টির সমালোচনা করে থাকেন৷ এমনকি অবিলম্বে দেশে সব বাধানিষেধ তুলে নেবার ডাক দিচ্ছেন তিনি৷ বয়স্কদের ভিত্তিহীন আশ্বাস দিয়ে বলছেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই৷ অনেকের সন্দেহ, প্রেসিডেন্ট নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/A. Borges
সীমান্ত বন্ধ রাখতে চান ল্য পেন
ইউরোপের পপুলিস্ট নেতারা ভাঙলেও মচকাতে প্রস্তুত নন৷ ফ্রান্সের জাতীয় ফ্রন্ট নেত্রী মারিন ল্য পেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের ‘সীমন্তহীনতার ধর্ম’-কে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন৷ তাঁর মতে, যে কোনো পরিস্থিতিতেই সীমান্ত মানুষকে সুরক্ষা দেয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করার কোনো পরামর্শ যে দেয়নি, ল্য পেনের অনুগামীরা সেই খবর রাখেন কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে৷
ছবি: Reuters/E. Gaillard
বিশেষজ্ঞদের পছন্দ নয়
ট্রাম্প, জনসন, বোলসোনারোর মতো নেতারা কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রাহ্য করতে চান না৷ বিশেষজ্ঞরাই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠুন, সেটাও তারা চান না৷ নিজেদের ভিত্তিহীন ধারণাকে জনমোহিনী মোড়কে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে তাঁরা যথেষ্ট সফল হয়েছেন৷ ফলে করোনা সংকটের সময় সাধারণ মানুষের বিপদের আশঙ্কা আরো যাচ্ছে৷
ছবি: Imago Images/Media Punch/O. Contreras
6 ছবি1 | 6
করোনা নিয়ে অসংখ্য সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছিল বলেও মনে করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক মাসে সংক্রমণ নিয়ে প্রায় সাত হাজার সতর্কবার্তা পেয়েছিল৷ কিন্তু মহামারির বিরুদ্ধে কিভাবে লড়াই করা হবে সেটা সম্পূর্ণভাবে কোনো দেশের রাজনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করে৷’’
তবে তিনি স্বীকার করেছেন, সতর্কবার্তা দেওয়া নিয়ে ডাব্লিউএইচও মাঝেমধ্যে ‘দ্বিধাদ্বন্দে’ ভুগেছে৷
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এ সপ্তাহে ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে৷ আক্রান্তদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক৷