এই বার্তা দিতেই নতুন দিল্লির মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল বিজেপির নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছেন৷ নির্বাচনের আগে মোদী সম্পর্কে মার্কিন ভিসা নীতির বদল অবধারিত ছিল বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷
বিজ্ঞাপন
একেই বুঝি বলে গরজ বড় বালাই৷ বহু বছর আগে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ‘‘কেউ যদি অ্যামেরিকায় যেতে না পারেন, তাহলে অ্যামেরিকা আসবে তাঁর দরজায়৷'' কথাটা অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেল মোদীর ক্ষেত্রে৷ ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দূরে সরিয়ে রাখা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আর যে সম্ভব হবে না, সেটা মোটামুটি আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন রাজনৈতিক মহল৷ তলে তলে চেষ্টাও চলছিল বরফ গলানোর৷ তবে মার্কিন প্রশাসনের তরফে সেই ‘ইউ-টার্ন'-টা কবে হবে এবং কখন হবে সেটাই ছিল প্রশ্ন৷
নতুন দিল্লির মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল দিন কয়েক আগে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চান বাধ্যতামূলক কূটনৈতিক নিয়মবিধি অনুসারে৷ জানা গেছে, তাঁকে সেই অনুমতি দেয়া হয় এবং কংগ্রেস-বিজেপি সংঘাত সেখানে বাধাও হয়ে দাঁড়ায়নি৷ সম্ভবত মোদী-ন্যান্সি পাওয়েল সাক্ষাৎ হবে গান্ধীনগরে ১৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে, অর্থাৎ নির্বাচনি আচরণবিধি বলবৎ হবার আগেই৷
২০০২ সালে গুজরাট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দু'বছর পর ২০০৫ সালে মোদী অ্যামেরিকায় যাবার ভিসা চেয়েছিলেন, কিন্ত মোদীকে ভিসা দিতে অস্বীকার করে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ৷ এটা অবশ্য শুধু মোদীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল, অন্যান্য গুজরাটি ব্যবসায়ী বা গুজরাটিদের ক্ষেত্রে নয়৷ কারণ তাঁরই সরকারের আমলে ঐ দাঙ্গা হয়েছিল এবং সেটা তাঁরই প্রচ্ছন্ন মদতে – এমনটাই ছিল অভিযোগ৷ এ জন্য বাজপেয়ী সরকারকে কাঠগোড়ায় দাঁড় করায়নি মার্কিন প্রশাসন৷ বরং প্রশংসাপত্রই দিয়েছে৷ কিন্তু ঐ দাঙ্গার তদন্ত কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে আদালত সম্প্রতি মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ খারিজ করে দেয়৷ এই ছাড়পত্র সম্বল করে বোধহয় ওবামা প্রশাসন মোদী সম্পর্কে মনোভাব পাল্টাচ্ছে৷ মোদী যদি প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে মোদী আর ব্যক্তিবিশেষ থাকবেন না, তিনি তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী৷ তাঁর ভিসা হবে সর্বোচ্চ কূটনৈতিক ভিসা৷
দিল্লিতে সাধারণ মানুষের জয়
দুর্নীতিবিরোধী দল ‘আম আদমি পার্টি’ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে৷ ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে হারিয়ে শুধু দিল্লির দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেনি, ভারতের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়েছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিকল্পে স্বস্তি খোঁজা
আত্মপ্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ৭০টি আসনের মধ্যে ২৮টিতে জিতেছে আম আদমি পার্টি৷ অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক নতুন একটি দলের এমন সাফল্যকে দেখছেন ‘সাধারণ মানুষের জয়’ হিসেবে৷ তাদের এ জয় কংগ্রেস তো বটেই, এমনকি এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ৷আম আদমি পার্টি লোকসভা নির্বাচনের জন্য ভোটারদের সামনে বিকল্প পছন্দ হিসেবে উঠে এসেছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Narinder Nanu
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ
আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, তাঁর দল ৩২টি আসন পাওয়া ডানপন্থী দল বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে রাজ্য সরকারে অংশীদার হবে না৷ ঘুস কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল আম আদমি পার্টি৷ অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন সেই আন্দোলনের পুরোভাগে৷ দিল্লির নির্বাচনে এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেসের ভরাডুবি
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই ভারতীয় রাজনীতিতে বড় দল কংগ্রেস৷ এবারের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে সেই দল হেরে গেছে নবাগত আম আদমি পার্টির কাছে৷ ভোটাররা যে দিল্লিতে অন্তত কংগ্রেসের শাসনে ক্ষুব্ধ এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই৷ মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষিতের নেতৃত্বে টানা ১৫ বছর রাজ্য সরকার পরিচালনা করেছে কংগ্রেস৷ এবার শীলা দিক্ষিত নিজেই হেরেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে৷ মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস৷
ছবি: Reuters
নতুন পথের বাঁকে
ভারতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন শুরু করেছিলেন আন্না হাজারে৷ ৭৪ বছর বয়সি এই সমাজকর্মী সংসদে ‘জন লোকপাল বিল’ পাস করানোর দাবিতে শুরু করেছিলেন অনশন৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালও ছিলেন তখনকার সেই দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে৷ পরে আম আদমি পার্টি গড়েন৷ ‘আম আদমি’, অর্থাৎ সাধারণ জনগণের সমর্থন নিয়ে কেজরিওয়াল এবার এক নতুন পথের বাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছেন ভারতের রাজনীতিকে৷
ছবি: Reuters
‘গণতন্ত্রবিরোধী’ দাবি!
কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন তাঁরা দুর্নীতিকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও এর সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অদূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন৷ কংগ্রেস সমর্থকরা বলছেন, আম আদমি পার্টি এবং এর বাইরের সমাজকর্মীরা প্রকারান্তরে অনির্বাচিতদের কর্তৃত্বের কথা বলছেন, অথচ গণতন্ত্র নির্বাচিত প্রতিনিধির ওপরই জনগণের সেবার দায়িত্ব অর্পণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধর্ষণের বিরুদ্ধে রায়
গত এক বছরে বেশ কয়েকটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে৷ ধর্ষণ রোধ করে দিল্লির নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার৷ এ ব্যর্থতার জন্য দিল্লির ভোটাররা রাজ্য সরকারকেই দায়ী মনে করে৷ বিশ্লেষকদের মতে, নারীর নিরাপত্তা বিধানে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কারণে জনমনে জন্ম নেয়া হতাশারও প্রতিফলন ঘটেছে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে৷
ছবি: Reuters
নতুন চ্যালেঞ্জার
দিল্লির মতো রাজস্থান, ছত্তিশগড় আর মধ্য প্রদেশের নির্বাচনেও বিজেপির কাছে হেরেছে কংগ্রেস৷ আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ড্রেস রিহার্সেলে এমন পরাজয় কংগ্রেসের জন্য নিশ্চয়ই খুব বড় ভাবনার বিষয়৷ আম আদমি পার্টি বিধানসভা নির্বাচনে শুধু দিল্লিতেই অংশ নিয়েছে৷ তবে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনেও অংশ নেয়ার পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে দলটি৷ বিজেপির জন্যও এটা কিন্তু নতুন চ্যালেঞ্জ!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
মোদীকে ভিসা না দেয়া নিয়ে বিতর্কও একটা ছিল৷ সেটা কী? মার্কিন সরকারের দ্বিচারিতা৷ মোদীকে ভিসা দেবার বিরোধীতা করেছিল প্রধানত ইভানজেলিস্ট খ্রিষ্টানরা৷ তাঁদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল ভারতীয় অভিবাসীদের একাংশ৷ অথচ মার্কিন সরকার অনেক স্বৈরাচারী এবং গণহত্যায় অভিযুক্ত সরকার প্রধানকে সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন৷ যেমন ২০১৩ সালের আগস্টে কেনিয়ার সরকার প্রধান কেনিয়াট্টাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকার শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়৷ উল্লেখ্য, ২০০৭-২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার অভিযোগে বিচার হয় কেনিয়াট্টার৷ এটা কী দ্বিচারিতা নয়?
এখন মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ মোদীর হাত যে ধরতে চাইছে, সেটা বড় কথা নয়৷ বড় কথা, মোদী তা গ্রহণ করবেন কিনা৷ তবে দিল্লিতে মোদীর নির্বাচনি জনসভায় জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ কয়েক ডজন দেশের সঙ্গে নতুন দিল্লির মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মোদী৷ বিজেপি শীর্ষ নেতা অরুণ জেটলির কটাক্ষ: মোদী যখন ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন, তখন অ্যামেরিকা ভিসা দেয়নি, এখন মোদীর উচিত নিজে থেকে ভিসার আবেদন না করা৷ এর কারণ, মোদী আর দেবযানি খোবড়াগাড়ে এক পংক্তিভুক্ত নন৷