প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের চীনা পণ্য আমদানির উপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ চীনও প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির সমালোচনা করেন৷ এরপর ৫০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র৷ তার প্রতিক্রিয়ায় চীনও ৫০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক ধার্য করেছিল৷
এরপর সম্পর্ক উন্নত করতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিনিধি দলের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়৷ কিন্তু তাতে কাজ হয়নি৷ ফলে সোমবার আবারও নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র৷ সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি হুমকিও জুড়ে দেন৷ চীন যদি এবারও পালটা ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তাহলে তৃতীয় দফা শুল্ক ধার্যের হুমকি দেন তিনি, এবং তার পরিমাণ ২৬৭ বিলিয়ন ডলার হবে বলেও জানান৷
নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে চীনা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে৷ এরপর জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে সেটা বেড়ে হবে ২৫ শতাংশ৷
তবে ট্রাম্পের হুমকিতে কাজ হবে বলে মনে হচ্ছে না৷ কারণ, মঙ্গলবার চীন জানিয়েছে, তারা পালটা জবাব দেবে৷
নতুন করে চীনা পণ্যের উপর শুল্ক বসানোয় দুই দেশের মধ্যে যে আলোচনা চলছিল তার পরিবেশ ‘বিষাক্ত' হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেছেন চীনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা৷ দেশটির সিকিউরিটিজ রেগুলেটর সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান ফাঙ চিঙ্ঘাই বলেছেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একজন হার্ড-হিটিং ব্যবসায়ী৷ তিনি চীনের উপর চাপ প্রয়োগ করতে চান, যেন আলোচনার সময় তিনি সুবিধা পান৷ কিন্তু আমার মনে হয়, চীনের সঙ্গে এই ধরনের কৌশল কাজ করবে না৷''
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা
২০১৭ সালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৭৫ বিলিয়ন ডলার৷ ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেছে৷ চীন পালটা জবাব দিচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/Minneapolis Star Tribune
তদন্তের ঘোষণা
২০১৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিন পর মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজার বাণিজ্য ক্ষেত্রে চীনের অন্যায় আচরণের তদন্তের ঘোষণা দেন৷ ১৯৭৪ সালের বাণিজ্য আইনের ৩০১ ধারা অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই কোনো দেশের উপর শুল্ক আরোপ করতে পারেন৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
চীনের প্রতিনিধি প্রেরণ
গত মার্চ মাসে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাঁর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা লিউ হে-কে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান৷ সেখানে তিনি মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী স্টেভেন মানুশিন ও বাণিজ্য প্রতিনিধি লাইটহাইজারের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ এই সময় বাণিজ্য ক্ষেত্রে উত্তেজনা প্রশমন নিয়ে দুই পক্ষ কথা বলে৷ লিউ হে এখন চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: Reuters/J. Lee
চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
চলতি বছরের ২২ মার্চ ৬০ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করা হবে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ চীনের বিরুদ্ধে তিনি মেধাসত্ত্ব চুরির অভিযোগ আনেন৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
চীনের জবাব
পালটা প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীনও ৫০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের মতোই তারা এসব পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হবে বলে জানায়৷ ট্রাম্প সমর্থক ভোটাররা বেশি বাস করেন এমন সব রাজ্যের সয়াবিন, মাংস, হুইস্কিকে শুল্কের আওতায় আনার কথা জানায় চীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা?
গত এপ্রিলে যাত্রীবহণকারী গাড়ি আমদানির উপর শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয় চীন৷ এ ধরনের গাড়ির উপর ধার্য থাকা শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হবে বলে জানায় দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/Li Xueren
হুমকি স্থগিত
মে মাসের ২০ তারিখে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী স্টেভেন মানুশিন জানান, দুই দেশ বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে৷ তাই যুক্তরাষ্ট্র আপাতত চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের বিষয়টি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি৷
ছবি: Reuters/A.P. Bernstein
আবারও ঘোষণা
শুল্ক আরোপ স্থগিত রাখার তিন সপ্তাহ পর ট্রাম্প প্রশাসন আবারও ৫০ বিলিয়নের সমপরিমাণ চীনা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়৷ পালটা প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীনও সমপরিমাণ মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করে৷
ছবি: picture-alliance/MediaPunch/CNP/C. Kleponis
কার্যকর
অবশেষে ১৫ জুন যুক্তরাষ্ট্র জানায় যে, ৬ জুলাই থেকে ৩৪ বিলিয়নের সমপরিমাণ চীনা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে৷ চীন বলেছে, এর ফলে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য যুদ্ধ’ শুরু হতে পারে৷ বিষয়টি নিয়ে তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে বলেও জানায় চীন৷