প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অফিস-আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে। কিন্তু কর্মীদের মধ্যে জীবন এবং চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে।
বিজ্ঞাপন
'অ্যারাইজ শিকাগো' নামের প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রে কর্মজীবীদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করে।
তাদের কর্মী শেলি রুসিকা জানালেন, গত কিছুদিন ধরে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৬০টি করে অভিযোগ পাচ্ছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাত্র ছয় দশমিক দুই ভাগ কর্মী ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য। ফলে মালিকপক্ষ বড় একটা অংশের কর্মীদের প্রাপ্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে। করোনা সংকটেও তাই কর্মীদের মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। লকডাউন উঠে গেলে কর্ম ক্ষেত্রে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার সব উদ্যোগ নেয়া হবে কিনা, নিয়ম অনুযায়ী তারা পারিশ্রমিক পাবেন কিনা- এসব জানতে চেয়ে অনেকেই যোগাযোগ করছেন অ্যারাইজ শিকাগো-র মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে।
যুক্তরাষ্ট্রে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খোলা রয়েছে। সেসব দোকানে, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অনেক কর্মী ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন।
করোনার প্রভাব: অ্যামেরিকার ধনীরা আরো ধনী
করোনা কালে মার্চের মাঝামাঝি থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অ্যামেরিকার ধনীদের সম্পদ বেড়েছে ৪৩৪ বিলিয়ন ডলার৷ এমনটাই বলছে নতুন একটি রিপোর্ট৷ ছবিঘরে জানুন কারা আরও ধনী হলেন৷
অ্যামাজনের জেফ বেজোস
এই দুই মাসে অ্যামাজনের জেফ বেজোস এর সম্পদে যোগ হয়েছে ৩৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ অ্যামেরিকানস ফর ট্যাক্স ফেয়ারনেস এবং ইনস্টিটিউট ফর পলিসি ইনস্টিটিউটের ‘প্রোগ্রাম ফর ইকুয়ালিটি’ র রিপোর্ট জানিয়েছে এই তথ্য৷
ছবি: Reuters/J. Roberts
ফেসবুকের মার্ক সাকারবার্গ
মার্চের মাঝামাঝি থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক সাকারবার্গের সম্পদে যোগ হয়েছে বাড়তি ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
অ্যামেরিকার ছয়শ’র ও বেশি কোটিপতির তথ্য থেকে রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে৷ মার্চের ১৮ তারিখ থেকে মে মাসের ১৯ তারিখ পর্যন্ত লকডাউন চলাকালীন তাদের আয় সংক্রান্ত তথ্য জানিয়েছে ফোর্বস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Saukkomaa
১৫ ভাগ বেশি আয়
প্রতিবেদনটি বলছে, এই দুই মাসে অ্যামেরিকার কোটিপতিদের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৫ ভাগ বেড়েছে৷ ২ দশমিক ৯৪৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক ৩৮২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
ছবি: picture-alliance/newscom/J. Angelillo
বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেট
শীর্ষ পাঁচ ধনী বেজোস, সাকারবার্গ, বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেট এবং ল্যারি এলিসনের মোট ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পদ বেড়েছে৷
এলন মাস্ক
গত দুই মাসে শতকরার হিসেবে বেশি লাভ হয়েছে এলন মাস্কের৷ তার মোট সম্পদ বেড়েছে শতকরা ৪৮ ভাগ৷ এরপরেই আছেন সাকারবার্গ, যার বেড়েছে ৪৬ ভাগ, বেজোসের ৩১ ভাগ৷
ছবি: Getty Images/W. McNamee
অর্থনৈতিক সংকট
করোনা ভাইরাসের এই সংকটকালে প্রযুক্তি সংক্রান্ত কোম্পানিগুলোর আয় অনেক বেশি৷ অথচ পুরো দেশে করোনার কারণে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে৷ ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটি৷
ছবি: Reuters/N. Oxford
7 ছবি1 | 7
কিছু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে সতর্ক হতে শুরু করেছে বলে জানালেন শেলি রসিকা। তিনি জানান, রেমুণ্ডো নামের একটি খাদ্য সামগ্রির প্রতিষ্ঠানে ছয় জন কর্মী সংক্রমিত হয়েছিলেন। তারপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি কর্মীদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।
কিন্তু লকডাউন উঠে গেলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনা সঙ্কটের সময়ে কর্মীদের অধিকার আদায়ের দাবি আরো জোরালোভাবে উঠতে শুরু করেছে। বিশেষ করে মেয দিবসে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে এ দাবি তুলে ধরেছে। টার্গেট, ওয়ালমার্ট-এর মতো প্রতিষ্ঠান অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। উবার এবং অন্যান্য রাইড শেয়ার কোম্পানির চালকরা প্রতিবাদ র্যালি বের করেছেন রাস্তায়। ফেডেক্স এবং অ্যামাজনের কর্মীরা কর্মবিরতি পালন করেছেন।
কিন্তু এসবের বিপরীতে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যক্ষ সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে চলছে লকডাউন বিরোধী প্রতিবাদ, বিক্ষোভ। অথচ এখনো অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের করোনায় সংক্রমিত হওয়ার খবর আসছে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ১৯টি রাজ্যের ১১৫ টি মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানের চার হাজার ৯১৩ জন করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন, এ পর্যন্ত মারা গেছেন কমপক্ষে ২০ জন। স্বাস্থ্য সুরক্ষার সব উদ্যোগ না নিয়ে লকডাউন তুলে দিলে কী হতে পারে এই প্রশ্নটা তাই বড় হয়ে উঠছে কর্মীদের মনে।
প্রেসিডেন্টের বিরোধিতা করে ‘বেকার’ তাঁরা
ডনাল্ড ট্রাম্প আর ব্রাজিলের জাইয়া বলসোনারোর কাছে যেন মানুষের প্রাণের চেয়ে দেশের অর্থনীতিই বড়৷ তাদের এমন মনোভাবের বিরোধিতা করে বিপদে পড়েছেন কর্মকর্তারা৷
ছবি: imago images/ZUMA Wire/Y. Gripas
ডা. অ্যন্থনি ফাউচি
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় এলার্জি ও সংক্রামক রোগ ইনস্টিটিউটের প্রধান৷ এছাড়া হোয়াইট হাউসের করোনা ভাইরাস রেসপন্স টিমের একজন বিশেষজ্ঞ৷ করোনা ভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন তথ্য দিতে একসময় ফাউচি নিয়মিত টেলিভিশনে উপস্থিত হতেন৷ কিন্তু ৪ মে’র পর আর তাঁকে টিভিতে দেখা যায়নি৷ কারণ নির্বাচনের বছর হওয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাড়াতাড়ি লকডাউন তুলে দিতে চান, যার বিরুদ্ধে ফাউচি৷ এজন্য তাকে আর টিভির সামনে আসতে দেয়া হচ্ছে না৷
ছবি: imago images/ZUMA Wire/Y. Gripas
ট্রাম্পের সমালোচনায় ওবামা
করোনা মহামারি শুরুর পর ট্রাম্পের নেয়া পদক্ষেপকে ‘অ্যাবসোলিউট ক্যাওটিক ডিজাস্টার’ বলেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ এদিকে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি এক সপ্তাহ আগে লকডাউনে যেতো তাহলে ৩৬ হাজার মানুষের প্রাণ হয়ত বেঁচে যেতো৷ দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৯৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Rehle
লুই হেনরিক মানদেত্তা
তিনি ব্রাজিলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন৷ বর্তমানে এই দেশটিতে করোনার প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে৷ করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের সমর্থক ছিলেন মানদেত্তা৷ কিন্তু তাঁর চরম ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জাইয়া বলসোনারো দ্রুত দেশের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যেতে চান৷ তাই গত মাসের মাঝামাঝি মানদেত্তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/A. Anholete
নেলসন টাইখ
মানদেত্তার পর টাইখকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বানিয়েছিলেন বলসোনারো৷ প্রথমে টাইখ তাঁর প্রেসিডেন্টের মতোই কথাবার্তা বললেও পরবর্তীতে দুজনের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়৷ এমনকি টাইখকে না জানিয়ে বলসোনারো একসময় জিম, বিউটি পার্লার ও সেলুনকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণা করেন৷ এছাড়া ম্যালেরিয়ার ওষুধ ক্লোরোকুইন ব্যবহার নিয়েও বলসোনারোর সঙ্গে টাইখের বিরোধ দেখা দেয়৷ এর ফল হিসেবে গত সপ্তাহে পদত্যাগ করেন টাইখ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Peres
করোনা নিয়ে বলসোনারো
মানুষ মারা গেলেও দ্রুত অর্থনীতি স্বাভাবিক করতে চান ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট৷ যেমন গতমাসে টাইখকে নিয়োগ দেয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি জানি... জীবন অমূল্য৷ কিন্তু অর্থনীতি ও চাকরি অবশ্যই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে৷’’ তারও আগে বলসোনারো এক সাংবাদিককে বলেছিলেন, ‘‘কয়েকজন মারা যাবে৷ আমি দুঃখিত৷ এটাই জীবন৷’’ ব্রাজিলে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷