একটি কৌশলপত্রে চীন ও রাশিয়াকে মূল সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ‘চিহ্নিত' করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের এমুন আচরণকে ‘সাম্রাজ্যবাদী' বলে আখ্যায়িত করেছে রাশিয়া৷ চীন বলছে, এটা তাদের ‘স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা'৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল' শিরোনামের একটি নথি প্রকাশ করে৷ সেখানে চীন ও রাশিয়াকে সবচেয়ে বড় সামরিক হুমকি বলে উল্লেখ করে নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে৷
‘‘দিন দিন এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, চীন ও রাশিয়া এমন একটি কর্তৃত্বপূর্ণ মডেলে পুরো বিশ্বের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে, যেখানে জাতিগুলোর অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক সিদ্ধান্তে তারা হস্তক্ষেপ করতে পারে৷'' প্রকাশিত নথির ১১ পৃষ্ঠার সংস্করণে এমনটিই লেখা ছিল৷
নতুন কৌশলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নীতিতে একটি মৌলিক পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে৷ ২০০১ সালের নাইন ইলেভেনের পর মধ্যাপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাস দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মোতায়েন ও যুদ্ধ করাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এতদিনের প্রতিরক্ষা কৌশলে৷ কিন্তু সে জায়গা থেকে কিছুটা সরে আসার কথা বলা হচ্ছে এখন৷
কৌশলপত্রটি প্রকাশের সময় দেশটির প্রতিরক্ষা সচিব জেমস ম্যাটিস বলেন, ‘‘চীন একদিকে তার লুটেরা অর্থনীতি দিয়ে প্রতিবেশীদের গ্রাস করে ফেলতে চাইছে, অন্যদিকে দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক প্রভাব বাড়াচ্ছে৷''
রাশিয়া সম্পর্কে বলেন, ‘‘রাশিয়া তার নিকটতম রাষ্ট্রগুলোর সীমানা লঙ্ঘন করেছে৷''
ম্যাটিস ঘোষণা দেন, ‘‘আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে যে যুদ্ধ চালাচ্ছি, তা চালিয়ে যাবো, কিন্তু এখন থেকে আমাদের মূল লক্ষ্য সন্ত্রাসবাদ নয়, বড় শক্তিগুলোর সঙ্গে পাল্লা দেয়া৷''
গেল ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও অনেকটা একই সুরে কথা বলেছিলেন৷
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন প্রতিরক্ষা কৌশলের পর আবারো স্নায়ুযুদ্ধের আভাস পাচ্ছে চীন৷ তারা একে যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা বলে উল্লেখ করেছে৷ রাশিয়া বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রই কেবল সামনে আসছে৷
এক বছরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতি
হোয়াইট হাউসে এক বছর পূর্ণ করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তাঁর নানা বিতর্কিত মন্তব্য ও পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও কাঠামোয় ভাঙন ধরাতে পারেনি৷ নিজের অনেক হুমকিও এখনো পর্যন্ত কার্যকর করেননি ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
বিশ্বে ভগ্ন ভাবমূর্তি
গ্যালপ সংস্থার জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী, এক বছরে অ্যামেরিকার বাইরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ৪৮ শতাংশ থেকে কমে ৩০ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে৷ তবে ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রবক্তা ট্রাম্প দেশের মধ্যে নিজের সমর্থকদেরই গুরুত্ব দেন৷ বিদেশে নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে চিন্তিত নন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Hassan
অনির্দিষ্ট পররাষ্ট্র নীতি
মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে এতকালের প্রচলিত ধারা ভেঙে অনেক ক্ষেত্রে ট্রাম্প সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন৷ তাঁর সিদ্ধান্ত প্রায়ই অনিশ্চয়তায় ভরা থাকে৷ ফলে আগে থেকে তাঁর উদ্দেশ্য বোঝা প্রায়ই সম্ভব হয় না৷ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের প্রধান কর্ণধারের এমন খামখেয়ালিপনা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা কাঠামোর স্থিতিশীলতার জন্য মোটেই সহায়ক হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Harnik
একলা চলো রে
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অস্বীকার করে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে প্যারিস চুক্তি বর্জন করেছেন, তার ফলে বাকি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ও ক্রোধ দেখা গেছে৷ ট্রাম্প অ্যামেরিকাকে বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন করার কথা বলে এসেছেন৷ কার্যক্ষেত্রে অবশ্য ন্যাটোর মতো জোট ত্যাগ করেননি তিনি৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
ইরানের বিরুদ্ধে তোপ
২০১৫ সালে ওবামা প্রশাসন বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করতে যে চুক্তি করেছিলো, ট্রাম্প তার ঘোরতর বিরোধী৷ বিশেষ করে সে দেশের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও আঞ্চলিক সংকটে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ৷ তবে চরম সমালোচনা সত্ত্বেও তিনি এখনো এই চুক্তি থেকে সরে আসেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Marovich
ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার আশায় এ পর্যন্ত সব মার্কিন প্রশাসন ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার কমবেশি চেষ্টা চালিয়ে এসেছে৷ জেরুসালেম শহরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করার মাধ্যমে ট্রাম্প সেই ধারা ভেঙে দিয়েছেন৷ দেশ-বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরোয়া করেননি তিনি৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
উত্তর কোরিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি
নরম-গরম বার্তা পাঠিয়ে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন সম্পর্কে নিজের অবস্থান অস্পষ্ট রেখেছেন ট্রাম্প৷ কখনো ‘লিটল রকেট ম্যান’-কে ধমক দিয়েছেন, কখনো তাঁর সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি৷ চীনকে কাছে টেনে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচিতে রাশ টানার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/E. Contini
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর
বেআইনি অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তার ব্যয়ও মেক্সিকোকে বহন করতে হবে বলে দাবি করেছিলেন তিনি৷ মেক্সিকো ও ক্যানাডার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করারও হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ এখনো পর্যন্ত দুটি ক্ষেত্রেই কোনো অগ্রগতি ঘটেনি৷