বৃহস্পতিবার এই পরিকল্পনা প্রকাশ করে ট্রাম্প প্রশাসন৷ আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি কংগ্রেসে পেশ করা হবে৷ ‘ড্রিমার্স’ নামে পরিচিত নথিপত্রহীন প্রায় ১৮ লক্ষ অভিবাসীকে নাগরিকত্ব দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ড্রিমার্স হচ্ছেন তাঁরা, যাঁদের একসময় শিশু অবস্থায় অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়েছিল৷ ড্রিমার্সদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা, লেখাপড়া ও চাকরি করার সাময়িক অনুমতি দিতে ২০১২ সালে ডাকা (ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভাল) নামে একটি কর্মসূচি চালু করা হয়৷ ড্রিমার্সদের মধ্যে বেশিরভাগই এসেছেন মেক্সিকো, এল সালভেদর, গুয়াতেমালা ও হন্ডুরাস থেকে৷
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন পরিকল্পনায় ‘ডিভি লটারি' কর্মসূচি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে৷ ১৯৯০ সালে এটি শুরু হয়েছিল৷ এর আওতায় প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৫০ হাজার মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ভিসা দেয়া হয়৷ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই কর্মসূচির সমালোচনা করে বলেছেন, এর আওতায় এমন মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে যারা ইসলামি জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে৷ কয়েকজন ডেমোক্রেট রাজনীতিবিদও এই কর্মসূচি বাতিলের পক্ষে৷
পত্রিকার প্রচ্ছদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম বছর
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালের ২০শে জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন৷ তার পরের এক বছরে তিনি বহু আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পত্রিকার প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছেন – তবে সম্মান পেয়েছেন কিনা, তা তিনি নিজেই জানেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/Time Magazine
‘পার্সন অফ দ্য ইয়ার’
২০১৬ সালের শেষে মার্কিন ‘টাইম’ পত্রিকার প্রচ্ছদে সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ‘বছরসেরা ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷ ইতিপূর্বে এই খেতাব পেয়েছেন জন এফ কেনেডি বা মার্টিন লুথার কিং-এর মতো ব্যক্তিত্ব – আবার হিটলার ও স্ট্যালিনের মতো ব্যক্তিবর্গ – ‘টাইম’-এর ভাষায়, এমন সব মানুষ, যারা ‘‘ভালো কিংবা মন্দভাবে....বছরের ঘটনাবলীর উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছেন৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/Time Magazine
হিটলারি মোচ
ট্রাম্পের নির্বাচনের আগেই মেক্সিকোর ‘লেত্রাস লিব্রেস’ পত্রিকা ট্রাম্পকে ‘ফাসিস্তা আমেরিকানো’ (অ্যামেরিকান ফ্যাসিস্ট) গোঁফ পরিয়ে প্রচ্ছদে তাঁর ছবি ছেপেছিল৷ গোঁফটি স্বভাবতই হিটলারি মোচ৷ পত্রিকার রাগের কারণ ট্রাম্পের মেক্সিকো সীমান্তে প্রাকার তৈরির পরিকল্পনা৷
ছবি: Letras libras
‘শার্লি এব্দো’-র হাত থেকে কারো নিস্তার নেই
ট্রাম্পের নির্বাচনের পর পরই ফরাসি ব্যঙ্গ পত্রিকাটি তাঁকে এক হাত নেয়, বিশেষ করে তাঁর ‘গ্র্যাব উওমেন বাই দ্য পাসি’ সংক্রান্ত কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যটির জন্য৷ টিকা নিষ্প্রয়োজন৷
ছবি: Charlie Hebdo
খোকাবাবুর গাড়ি
পশ্চিমে সুপারমার্কেটের সামনে আজও রাখা থাকে ছোট ছোট খেলনার গাড়ি; পয়সা ফেললে সেগুলো হেলে-দোলে, আলো জ্বলে, ভেঁপু বাজানো যায়৷ কচিকাঁচারা ঐ রকম খেলনার গাড়িতে চড়ে ভারি মজা পায়৷ ‘নিউ ইয়র্কার’ পত্রিকার প্রচ্ছদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষটিকে খোকা সাজিয়ে সেরকম একটি গাড়িতে চড়িয়েছেন কার্টুনিস্ট ব্যারি ব্লিট৷
ছবি: The New Yorker
ছিন্নমস্তা
স্ট্যাচু অফ লিবার্টিকে স্বাধীনতা তথা মার্কিন মুলুকের প্রতীক বলা চলে৷ জার্মান সাপ্তাহিক ‘ডেয়ার স্পিগেল’ তার প্রচ্ছদে দেখিয়েছে, ট্রাম্প কিভাবে তাঁর ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে তথা সারা বিশ্বে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের শিরশ্ছেদ করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.-U. Wärner
পালে হাওয়া (নেই)
‘নিউ ইয়র্কার পত্রিকার প্রচ্ছদের জন্য ডেভিড প্লাঙ্কার্টের আঁকা কার্টুনটির উপজীব্য হলো, শার্লটভিলের ঘটনাবলীর পর ট্রাম্প যেভাবে তথাকথিত ‘হেট গ্রুপ’-গুলির পালে হাওয়া লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন – পালের আকারটি যে ক্লু-ক্লুক্স-ক্ল্যানের সদস্যদের মুখোশ সদৃশ, সেটা নিশ্চয় কাকতালীয়! বস্তুত ট্রাম্পের উদ্দেশ্য ছিল, তাঁর কট্টর অনুরাগীদের মন রাখা৷
ছবি: The New Yorker
আবার হিটলার
জার্মানির ‘ডেয়ার স্পিগেল’ পত্রিকার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ‘ডেয়ার স্ট্যার্ন’ পত্রিকাই বা কম যাবে কেন – তারা ট্রাম্পকে দিয়ে নাৎসি স্যালুট দিইয়েছে তাদের প্রচ্ছদে এবং সংশ্লিষ্ট রচনাটির শীর্ষক রেখেছে ‘জাইন কাম্ফ’ বা ‘তাঁর লড়াই’ – অবশ্যই হিটলারের ‘মাইন কাম্ফ’ বইটির অনুকরণে৷ হিটলারের সঙ্গে ট্রাম্পের তুলনা জার্মানির কেন্দ্রীয় ইহুদি পরিষদের কাছে হিটলারের অপরাধকে ছোট করা বলে মনে হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Sohn
রুশি কনে
টাইম ম্যাগাজিনের ২০০৯ সালের একটি ভুয়ো প্রচ্ছদ নাকি ফটো হিসেবে ফ্লোরিডা থেকে স্কটল্যান্ড অবধি ট্রাম্পের গোটা পাঁচেক গল্ফ ক্লাবে ঝোলানো ছিল৷ টাইম ম্যাগাজিন সংশ্লিষ্ট ক্লাবগুলিকে ঐ ছবি নামিয়ে নিতে বলে বটে, কিন্তু ততদিনে ‘ফেক’ ছবিটি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে ও তার নানা সংস্করণ টুইটারে প্রকাশিত হয়েছে: যেমন টাইম পত্রিকার প্রচ্ছদ থেকেই ‘পার্সন অফ দ্য ইয়ার’ ছবিটি নিয়ে ট্রাম্পকে রুশি কনের সাজে দেখানো হয়েছে!
এ সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে অভিবাসন ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর প্রবেশ করা ১০ লক্ষের বেশি অভিবাসীর সংখ্যা কমে অর্ধেক হয়ে যেতে পারে, বলে মনে করছেন অভিবাসন নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্টরা৷
যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর তৈরির জন্য কংগ্রেসের কাছে ২৫ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে হোয়াইট হাউস৷ এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে থাকা নথিপত্রহীন প্রায় এক কোটি দশ লক্ষ অভিবাসীর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে আরও শক্তিশালী করার প্রস্তাব করা হয়েছে৷
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন এই পরিকল্পনা ইতিমধ্যে ডেমোক্রেটদের সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ বিশেষ করে নথিপত্রহীন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান ও পারিবারিক ভিসা কর্মসূচি সংকুচিত করার বিষয়টি কংগ্রেসে পাস করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন ডেমোক্রেট সেনেটর বিল নেলসন৷