দীর্ঘ টালবাহানার পর মার্কিন কংগ্রেস অবশেষে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলো৷ অবিলম্বে সে দেশে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন৷
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার হামলা মোকাবিলা করতে ইউক্রেন বৈদেশিক, বিশেষ করে মার্কিন সামরিক সাহায্যের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল৷ কিন্তু ওয়াশিংটনে দলীয় রাজনীতির কোপে পড়ে বেশ কয়েক মাস সেই সরবরাহ থমকে গিয়েছিল৷ ফলে যুদ্ধক্ষেত্রেও ইউক্রেন বেশ বেকায়দায় পড়েছে৷ শনিবার মার্কিন সংসদের নিম্ন কক্ষের পর মঙ্গলবার উচ্চ কক্ষও প্রায় ৬০০ কোটি ডলার অংকের সাহায্যের প্রস্তাব অনুমোদন করার পর অবশেষে উৎকণ্ঠা দূর হলো৷
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কিটেলিগ্রাম অ্যাপে এক বার্তায় মার্কিন সংসদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ইউক্রেনকে সাহায্য করতে এই ভোট গণতন্ত্রের বাতিঘর ও মুক্ত বিশ্বের নেতা হিসেবে অ্যামেরিকার ভূমিকা আরো জোরদার করলো৷ রাজনৈতিক বিবাদ কাটিয়ে ইউক্রেন, ইসরায়েল ও তাইওয়ানের জন্য সামরিক সাহায্য অনুমোদন করার পর অ্যামেরিকার ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাব্লিকান দলের নেতারাও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন ও অন্যান্য প্রতিপক্ষকে কড়া বার্তা পাঠানোর কথা বলেন৷ উল্লেখ্য, আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ইউক্রেনের জন্য এটাই সম্ভবত শেষ সহায়তার প্রস্তাব ছিল৷ নির্বাচনের পর সংসদের উভয় কক্ষে রদবদলের প্রেক্ষিতে এমন সহায়তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে৷
ইউক্রেনের কাছে বহু প্রতিক্ষিত অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছে দিতে আরো বিলম্ব এড়াতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ সেনেটে ভোটাভুটির আগেই প্রায় ১০০ কোটি ডলার অংকের সাহায্য প্রস্তুত রেখেছে তাঁর প্রশাসন৷ এর আওতায় সামরিক যান, স্টিনজার এয়ার ডিফেন্স গোলাবারুদ, আর্টিলারি রকেট সিস্টেম চালানোর গোলাবারুদ ইত্যাদি ইউক্রেনে পাঠানোর তোড়জোড় চলছে৷ চলতি সপ্তাহেই তার কিছু অংশ ইউক্রেনে পৌঁছে যেতে পারে৷ সেনেটে ডেমোক্র্যাটিক দলের নেতা চাক শুমার প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির উদ্দেশ্যে এক বার্তায় বলেন, ‘‘আমরা কাজ শেষ করেছি৷ এবার আপনারা সংঘর্ষে জয়লাভ করুন৷''
যুদ্ধক্ষেত্রে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়লেও ইউক্রেন রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে হামলা জোরদার করছে৷ সে দেশের স্মোলেনস্ক অঞ্চলে জ্বালানি অবকাঠামোর উপর ইউক্রেনের ড্রোন হামলার ফলে অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে৷ রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে লিপেটস্ক অঞ্চলে এক শিল্প পার্কের উপর ড্রোন পড়ার পর সেখানকার মানুষদের উদ্ধার করতে হয়েছে৷ রাশিয়ায় এমন বিচ্ছিন্ন হামলা সম্পর্কে ইউক্রেন সাধারণত কোনো মন্তব্য করে না৷ রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের নিজস্ব অবকাঠামোর ক্ষতির প্রতিশোধ নিতে সে দেশ রুশ ভূখণ্ডের উপর একই ধরনের হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অনুমান করা হয়৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ)
ইউক্রেনের পঙ্গু সৈনিকদের নতুন জীবন
রাশিয়ার সঙ্গে সম্মুখসমরে অঙ্গ হারিয়েছেন অনেক ইউক্রেনীয় সেনা৷ কেমন করে তারা খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন এই নতুন জীবনে?
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
নতুন করে শেখা
ওলেকজান্দর রেভতিউখ (মাঝে) কোচের বক্সিং মিটে সজোরে আঘাত করছেন৷ ৩৩ বছর বয়সি এই ইউক্রেনীয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে তার বাঁ হাত ও বাঁ পা হারিয়েছেন৷ দেশটির দক্ষিণাংশে জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে মাটিতে পুঁতে রাখা মাইনে তার অঙ্গহানি হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘অবস্থা অনেকটা নবজাতকের মতো৷ সবকিছু শুরু থেকে শিখতে হচ্ছে৷’’
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
অসংখ্য যোদ্ধার পঙ্গুত্ব বরণ
যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কতজন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তার আনুষ্ঠানিক কোনো ড্যাটা নেই৷ তবে সংখ্যাটি ২০ থেকে ৫০ হাজার হবে বলে ধারণা মানবাধিকার সংগঠন প্রিন্সিপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাসি নায়েম৷ যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা একাকীত্বে ভোগেন এবং সামাজিক বৈষম্যের শিকার হন বলে জানান তিনি৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
পরিবর্তন ও অন্তর্ভুক্তি
মাইন বিস্ফোরণে দুই পা হারানো আন্দ্রিই পিলিপচুকের বয়স ২৮ বছর৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা যখন আমার ডান পা কেটে নিলেন, আমি মন খারাপ করিনি৷ কারণ এটি এতটাই থেঁতলে গিয়েছিল, যে একে বাঁচানো সম্ভব ছিল না৷ কিন্তু তারা যখন আমার বাঁ পাটিও কেটে নিলেন তখন আমি খুব কষ্ট পেয়েছি৷’’
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
কোন পথে ভবিষ্যৎ?
সন্তান ঘরে ফেরার পর তাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ওলেকজান্দর রেভিতুখের মা৷ রেভিতুখ আগে হাঙ্গেরিতে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করতেন৷ যুদ্ধ শুরুর দুই মাসের মাথায় তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন৷ এখন তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রবীণ যোদ্ধাদের নানা বিষয়ে পরামর্শ দেন৷ তার ভাবাদর্শ হলো, পথ কোথাও না কোথাও খোলা আছে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরত
অঙ্গ হারিয়েও কেউ কেউ যুদ্ধে ফেরত গেছেন৷ ২৮ বছর বয়সি ম্যাঙ্গো মৌরিপোলে একটি হাত হারান৷ এমনকি রাশিয়ানরা বন্দিও করেছিল তাকে৷ ফেরত এসে তিনি তার কমান্ডার ও কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে সমর্থ হন যে, তিনি ডিউটিতে ফিরতে পারবেন৷ যদিও তিনি আর ট্যাঙ্ক চালাতে পারবেন না, একটি বায়োনিক হাত পাবার আশা তার৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
রোবোড্যাড
রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে চারটি হাত-পা-ই হারান ৪০ বছর বয়সি আন্তন ইভান্তসিভ৷ ‘‘যখন আমি বুঝতে পারলাম আমি আর কখনো পুরোপুরি আমার সন্তান ও স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরতে পারব না, এটা মেনে নেয়া কঠিন ছিল,’’ বলেন তিনি৷ তার বায়োনিক হাত পা আছে, যা দিয়ে তিনি দৈনন্দিন জীবনে ফিরে আসতে পেরেছেন৷ তবে তখন থেকে তার সন্তানেরা তাকে ‘রোবোড্যাড’ বলে ডাকে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
অল্প অল্প করে ফেরা
আহত হবার পর নৌসেনা রোস্তিস্লাভ প্রিস্তুপা আংশিকভাবে প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিলেন৷ বন্ধুরা তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করছেন৷ তিনিও মনে করেন, বাঁচতে হলে ফিরতে হবে৷ প্রতি বছর যুদ্ধের কারণে প্রতিবন্ধী যুদ্ধফেরত ইউক্রেনীয়দের সংখ্যা বাড়ছে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
নেটওয়ার্ক: বন্ধু ও পরিবার
নিঝিনে ওলেকজান্দর রেভিতুখ তার দাদীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন৷ তার পরিবার তাকে সহায়তা করছে৷ তিনিও মনে করেন, ফিরতে পারবেন স্বাভাবিক জীবনে৷ তিনি এখন মোটিভেশনাল কোচ হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করছেন৷ ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চান৷