যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে যা জানা দরকার
৫ নভেম্বর ২০১৮
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে কেমন দেশ পরিচালনা করেছেন তার মূল্যায়ন জানা যাবে এই নির্বাচনে৷
বিজ্ঞাপন
ইতিহাস বলছে, মধ্যবর্তী নির্বাচনগুলোতে প্রেসিডেন্টের দল সাধারণত ভালো করতে পারে না৷ বেসরকারি সংস্থা ‘দ্য অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্সি প্রজেক্ট'-এর তথ্য বলছে, গত ২১টি মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রেসিডেন্টের দল ‘হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস'-এ মাত্র তিনবার আসন বাড়াতে পেরেছে৷ আর সেনেটে পেরেছে মাত্র পাঁচবার৷
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে হওয়া দুই মধ্যবর্তী নির্বাচনে দুইবারই ডেমোক্র্যাটিক দল হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস ও সেনেটে আসন হারিয়েছে৷ উল্লেখ্য, হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস হচ্ছে মার্কিন সংসদ কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ আর সেনেট উচ্চকক্ষ৷
মঙ্গলবারের নির্বাচনে ‘হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস'-এর সব আসনে (৪৩৫) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ বর্তমান হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির ২৩৫ আসনে প্রতিনিধিত্ব আছে৷ ডেমোক্র্যাট দলের আছে ১৯৩টিতে৷ কংগ্রেসের এই নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ পেতে কোনো দলকে ২১৮টি আসনে জিততে হয়৷
কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেটের আসন সংখ্যা ১০০টি৷ বর্তমান সেনেটে রিপাবলিকানদের আসন সংখ্যা ৫১টি৷ আর ডেমোক্র্যাটদের ৪৭টি৷ বাকি দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী৷
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, মার্কিন কংগ্রেসের দুই কক্ষেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে৷ সেই কারণে তিনি একের পর এক বিল সহজে পাস করিয়ে নিতে পেরেছেন৷
পদত্যাগ আর বরখাস্তে বিপর্যস্ত ট্রাম্প প্রশাসন
২০১৭ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নিজের প্রশাসনকে সুস্থির করতে পারছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ ১৪ মাসেই হোয়াইট হাউস ও মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে এতবার রদবদল এর আগে দেখা যায়নি৷
ছবি: Reuters/C. Barria
নিকি হ্যালি (পদত্যাগ)
এ বছরের শেষে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব ছাড়বেন বলে ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী নিকি হ্যালি৷ ট্রাম্পের বিদেশ নীতির জোরালো সমর্থক ছিলেন তিনি৷ জেরুসালেম ইস্যু, ইরান পরমাণু চুক্তিসহ নানা ইস্যু সফলভাবে সামলেছেন তিনি৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সাউথ ক্যারোলাইনার সাবেক এই রিপাবলিকান গভর্নর ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/G.Melendez
ডন ম্যাকগান (পদত্যাগে বাধ্য)
হোয়াইট হাউসের পরামর্শক ম্যাকগানকে না জানিয়েই ২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট এক টুইটের মাধ্যমে তাঁর পদ খালি হওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প৷ মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের তদন্তে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ যে কয়জন কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় সহায়তা করছিলেন, ম্যাকগান ছিলেন তাঁদের অন্যতম৷
ছবি: Getty Images/D. Angerer
স্কট পুইট (পদত্যাগ)
এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির প্রশাসকের পদ থেকে ২০১৮ সালের ৫ জুলাই পদত্যাগের ঘোষণা দেন পুইট৷ জলবায়ু নিয়ে ট্রাম্পের ভিন্ন চিন্তার অন্যতম সমর্থক ছিলেন তিনি৷ ট্রাম্পের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু সিদ্ধান্তে তাঁর ‘নৈতিক’ অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
রেক্স ডব্লিউ টিলারসন (বরখাস্ত)
২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ট্রাম্পের এক টুইট দেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসন জানতে পারেন, তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে৷ এক বছরের কিছু বেশি সময় এই পদে ছিলেন তিনি৷ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিদ্ধান্তহীনতা, ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ- এমন নানা কারণে রাজনীতি বিশ্লেষকরা তাঁকে আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর খেতাবও দিয়েছেন৷ তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইএ’র ডিরেক্টর মাইক পম্পেওকে৷
ছবি: picture-alliance /AP Photo/J. Gambrell
হোপ হিকস (পদত্যাগ)
২০১৮ সালের ২৯ মার্চ পদত্যাগের ঘোষণা দেন ট্রাম্পের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একজন, হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক হিকস৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর এই পদে তিনি ছিলেন চতুর্থ ব্যক্তি৷ নির্বাচনি প্রচারের সময় ট্রাম্পের প্রেস সচিবের দায়িত্বও পালন করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/C. Barria
ডেভিড জে শুলকিন (বরখাস্ত)
২০১৮ সালের ২৮ মার্চ হোয়াইট হাউসের ভেটেরান অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি ডেভিড শুলকিনকে বরখাস্ত করেন ট্রাম্প৷ সরকারি সফরে ইউরোপ গিয়ে বিনামূল্যে উইম্বলডন টেনিস টুর্নামেন্টের টিকিট গ্রহণ এবং সরকারি অর্থ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে৷ মার্কিন নৌবাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল ডা. রনি জ্যাকসনকে দেয়া হয় নতুন দায়িত্ব৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Reuter
এইচ আর ম্যাকমাস্টার (পদত্যাগ)
দীর্ঘদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, ম্যাকমাস্টারকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে দেখতে চান না ট্রাম্প৷ ২২ মার্চ স্বেচ্ছায় এ পদ থেকে সরে দাঁড়ান ম্যাকমাস্টার৷ তাঁর পদত্যাগের সাথে সাথেই টুইটে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ফক্স নিউজের বিশ্লেষক জন বোল্টনকে নিয়োগের ঘোষণা দেন ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/Newscom
অ্যান্ড্রু ম্যাককেবে (বরখাস্ত)
মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের তদন্ত নিয়ে ট্রাম্পের সাথে বিরোধে জড়ান ম্যাককেবে৷ এমনকি তাঁর নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে টুইটও করেন ট্রাম্প৷ অবসরে যাওয়ার আবেদন জানিয়ে বিচার মন্ত্রণালয়ে তাঁর আপিল খারিজ হওয়ার পরপরই ২০১৮ সালের ১৬ মার্চ ম্যাককেবেকে বরখাস্ত করে হোয়াইট হাউস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Brandon
স্টিভ ব্যানন (বরখাস্ত)
হোয়াইট হাউসের চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট স্টিভ ব্যাননকে ট্রাম্পের সবচেয়ে কাছের মানুষ বলেই বিবেচনা করা হতো৷ ফলে ২০১৭ সালের ১৮ আগস্ট তাঁকে বরখাস্তের ঘোষণা সবার জন্যই ছিল অবাক ঘটনা৷ ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী ব্যাননের জন্যেই এই পদটি সৃষ্টি করেছিলেন৷ পরবর্তীতে হোয়াইট হাউজের অন্য পরামর্শক, শীর্ষ কর্মকর্তা ম্যাক মাস্টার এবং জেনারেল কেলি ছাড়াও ট্রাম্প পরিবারের সাথেও দ্বন্দ্বে জড়ান ব্যানন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Anderson
অ্যান্থনি স্কারামুচি (বরখাস্ত)
হোয়াইট হাউসের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময় দায়িত্ব পালন করা যোগাযোগ পরিচালকের নাম অ্যান্থনি স্কারামুচি৷ ১০ দিনেরও কম দায়িত্ব পালন করে ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই বরখাস্ত হন তিনি৷ এক সাংবাদিককে টেলিফোনে সহকর্মীদের সম্পর্কে অশ্লীল ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি৷ এরপরই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়৷
ছবি: Getty Images/M. Wilson
ওয়াল্টার এম. শাওব জুনিয়র (পদত্যাগ)
ট্রাম্পের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বরাবরই আপত্তি ছিল গভর্নমেন্ট এথিক্স ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ওয়াল্টার শাওবের৷ এরই জের ধরে গেল জুলাইতে পদত্যাগ করেন৷ তিনি প্রায়ই ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘হাস্যকর পুঁজিবাজার’ বলে ডাকতেন৷
রিন্স প্রাইবাস (পদত্যাগে বাধ্য)
যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক অ্যান্টনি স্কারামুচির সঙ্গে প্রকাশ্যে ঝগড়া করে চাকরি হারিয়েছেন হোয়াইট হাউসের সাবেক চিফ অফ স্টাফ রিন্স প্রাইবাস৷ মাত্র ছয় মাসে তাঁর উইকেট পতন হয়৷ প্রাইবাস সেই সব ডানপন্থি কর্মকর্তাদের একজন, যাঁরা স্কারামুচির নিয়োগের বিরোধিতা করেছিলেন৷
ছবি: Reuters/M. Segar
শন স্পাইসার
এবারও সেই স্কারামুচিই বিবাদের কারণ৷ প্রেসিডেন্ট ভবনের সাবেক প্রেস সচিব শন স্পাইসার বিবাদে জড়িয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ও প্রেসের সঙ্গেও৷ পদত্যাগের আগে স্কারামুচির নিয়োগের চরম বিরোধিতা করেছিলেন স্পাইসার৷
ছবি: Reuters/K.Lamarque
মাইকেল ডুবকে (পদত্যাগ)
স্কারামুচির আগে মাইকেল ডুবকে ছিলেন হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান৷ গেল মে মাসে তাঁকে সরিয়ে দেয়া হয়, কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগটি ঠিকমতো সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Walsh
জেমস কোমি (বরখাস্ত)
হিলারি ক্লিনটনের ই-মেল কেলেঙ্কারির তদন্ত ‘ঠিকমতো করতে পারেননি’ এই অভিযোগে এফবিআই-এর এই পরিচালককে অব্যাহতি দেন ট্রাম্প৷ নিন্দুকেরা অবশ্য বলেন যে, ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার সঙ্গে ‘রাশিয়ার সম্পর্ক’ তদন্তের মুখে পড়ার শঙ্কায় তাঁকে বহিষ্কার করা হয়৷
ছবি: Reuters
মাইকেল ফ্লিন (পদত্যাগে বাধ্য)
গেল ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন পদত্যাগে বাধ্য হন৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ট্রাম্প দায়িত্ব নেবার আগেই রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ‘আলাপ’ করা এবং এ বিষয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ভুল তথ্য দেয়া৷
ছবি: Reuters/C. Barria
16 ছবি1 | 16
মঙ্গলবারের নির্বাচনের পর হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে আসতে পারে বলে দুই দলেরই বিশ্লেষকরা মনে করছেন৷ আর সেনেটে রিপাবলিকানদের আসন আরো বাড়বে বলে তাঁদের ধারণা৷ কারণ, ১০০ আসনের সেনেটের মাত্র ৩৫টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার৷ এর মধ্যে ২৪টি আসনই ডেমোক্র্যাটদের দখলে আছে৷ ফলে রিপাবলিকানদের দখলে থাকা মাত্র নয়টি আসনে মঙ্গলবার ভোট হবে৷ সেক্ষেত্রে রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের কিছু আসন এবার বাগিয়ে নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও মনে করছেন সেনেটে রিপাবলিকানরা নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারলে সেটিকেই তিনি বিজয় হিসেবে ধরে নেবেন৷
ট্রাম্পের ইম্পিচমেন্ট?
মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হলে ৬৭ জন সেনেট সদস্যের ভোট প্রয়োজন হয়৷ মঙ্গলবারের নির্বাচনের পর ট্রাম্পকে সরিয়ে দেয়ার মতো সেনেটে ঐ সংখ্যক সদস্য থাকবে বলে কেউ মনে করছেন না৷
তবে কংগ্রেসের দুই কক্ষের মধ্যে ডেমোক্র্যাটরা যদি অন্তত একটির নিয়ন্ত্রণ পায়, তাহলে পরবর্তী দুই বছরে ইচ্ছেমতো নীতি বাস্তবায়ন করতে ট্রাম্পকে বেগ পেতে হবে৷ ট্রাম্পের সমর্থক এবং ‘ওমেন ফর ট্রাম্প'-এর নেতা অ্যামি ক্রেমার মনে করছেন, একটি কক্ষের নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্র্যাটদের কাছে যাওয়াটা সর্বনাশা হবে৷ ‘‘যদি তারা হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের নিয়ন্ত্রণ পায়, তাহলে তিনি (ট্রাম্প) ‘লেম-ডাক' (অকার্যকর) প্রেসিডেন্ট হয়ে পড়বেন এবং তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারবেন না,'' বলে মনে করেন ক্রেমার৷