দীর্ঘ পাল্লার আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইলের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ পিয়ংইয়ং-এর দাবি, অ্যামেরিকা মহাদেশের যে কোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম এটি৷ এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠক ডেকেছে৷
বিজ্ঞাপন
সেপ্টেম্বরের পর এই প্রথম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালালো উত্তর কোরিয়া৷ দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনহাপ সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, দক্ষিণ পিয়ংইয়ং-এর সাইন নি থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছে৷ উৎক্ষেপণের পর ক্ষেপণাস্ত্রটি সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছায় তারপর নেমে এসে বুধবার সকালে উত্তর কোরিয়া থেকে ৯৬০ কিলোমিটার দূরে জাপানের জলসীমায় পড়ে৷
উত্তর কোরিয়ার টেলিভিশনে একটি বিবৃতি দেখানো হয়, যেখানে বলা হয়েছে পিয়ংইয়ং নতুন ধরনের আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইলের (আইসিবিএম) এর পরীক্ষা চালিয়েছে, যার নাম হোয়াসং-১৫৷ এতে দাবি করা হয়েছে অ্যামেরিকা মহাদেশের যে কোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম এটি৷ এতে আরও বলা হয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি ভীষণ বড় এবং ভারী ওয়ারহেড বহনে সক্ষম৷
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ইউনিয়ন অফ কনসার্নড সায়েন্টিস্টস' এক বিবৃতিতে বলেছে, উত্তর কোরিয়ার এবারের ক্ষেপণাস্ত্রটি ১৩ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম৷ সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো স্থানে সেটা পৌঁছানো সম্ভব৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস সাংবাদিকদের বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার এবারের ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ছিল আগের যে কোনোটির চেয়ে বেশি৷
যে কোনো ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহারের বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার উপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞারয়েছে৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক সমালোচনা ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই গত কয়েক বছর ধরে একের পর এক পারমাণবিক অস্ত্র ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে আসছে পিয়ংইয়ং৷
যেসব দেশের কারণে টিকে আছে উত্তর কোরিয়া
উত্তর কোরিয়ার উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও এমন কয়েকটি দেশ আছে যারা উত্তর কোরিয়া থেকে পণ্য বা অস্ত্র আমদানি করে৷ চলুন দেখে নিই কোন দেশগুলো আছে এই তালিকায়৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFPGetty Images
অ্যাঙ্গোলা
আফ্রিকার এই দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল নিরাপত্তারক্ষীদের মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ দেয় উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFPGetty Images
চীন
চীন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেশ৷ চীনের শিল্পকারখানায় উত্তর কোরিয়ার অনেক নাগরিক কাজ করে৷ চীনে উত্তর কোরিয়ান অনেক রেস্তোরাঁও রয়েছে, যেখান থেকে উত্তর কোরিয়া বিদেশি মুদ্রা অর্জন করে৷
ছবি: Getty Images/K. Frayer
কঙ্গো
কঙ্গোর সরকার উত্তর কোরিয়া থেকে স্বয়ংক্রিয় পিস্তল এবং অন্য ছোট অস্ত্র আমদানি করে, যা মধ্য আফ্রিকার এই দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল দেহরক্ষী এবং পুলিশ ব্যবহার করে৷
ছবি: Reuters/R. Carrubba
মিশর
অভিযোগ রয়েছে, উত্তর কোরিয়া মিশরকে ক্ষেপণাস্ত্রের উপকরণ পাঠিয়েছে৷ এ অভিযোগ সত্য কিনা সে ব্যাপারে তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: Reuters/Amr Abdallah Dalsh
ইরিত্রিয়া
ইরিত্রিয়া আফ্রিকার ছোট একটি দেশ৷ এই দেশটিরও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে৷ জানা গেছে, তারা উত্তর কোরিয়া থেকে সামরিক উপকরণ কিনে থাকে৷
ছবি: DW
কুয়েত
উত্তর কোরিয়ার অনেক শ্রমিক কুয়েতে নির্মাণ কাজে যুক্ত আছে৷ কুয়েতে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসও আছে৷
ছবি: Imago/Xinhua
মোজাম্বিক
উত্তর কোরিয়া মোজাম্বিককে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সহযোগিতা করছে৷ এছাড়া ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণেও সহায়তা দিচ্ছে দেশটিকে৷
ছবি: Gianluigi Guercia/AFP/Getty Images
নামিবিয়া
দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে সমরাস্ত্র উপকরণ তৈরি করার একটি কারখানা স্থাপনের জন্য উপকরণ এবং কর্মী পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: DW/B. Osterath
নাইজেরিয়া
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় উত্তর কোরিয়া থেকে অনেক চিকিৎসক যান৷ ২০১৩ সালে এক সন্ত্রাসী হামলায় উত্তর কোরিয়ার তিন চিকিৎসক নিহত হয়েছিলেন সেখানে৷
ছবি: picture alliance /AP Photo/L. Oyekanmi
ওমান
ওমানে নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে কাজ করার জন্য উত্তর কোরিয়া তাদের শ্রমিক পাঠিয়ে থাকে৷
ছবি: SR
কাতার
কাতারেও নির্মাণ প্রকল্পে উত্তর কোরিয়ার অনেক শ্রমিক কাজ করে৷ ২০২২ সালে দেশটিতে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে৷ এজন্য সেখানে স্টেডিয়ামসহ বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Zumapress
সুদান
উত্তর কোরিয়া সুদানে যেসব সামরিক উপকরণ পাঠায়, তার মধ্যে রকেট কন্ট্রোল সেকশন এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Shazly
সিরিয়া
দীর্ঘ সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলা দেশটিও উত্তর কোরিয়ার উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম৷ জানা গেছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকার উত্তর কোরিয়া থেকে অনেক সমরাস্ত্র এবং উপকরণ কিনে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Press Service of the President
উগান্ডা
আফ্রিকার দেশ উগান্ডারও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে৷ উত্তর কোরিয়ার সেনারা উগান্ডায় বিমানবাহিনীর পাইলট এবং টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন৷
ছবি: AP
সংযুক্ত আরব আমিরাত
ইউএই-তে উত্তর কোরিয়ার অনেক রেস্তোরাঁ এবং নির্মাণ কোম্পানি রয়েছে, যেখানে কাজ করার জন্য সবসময়ই উত্তর কোরিয়া থেকে কর্মী পাঠানো হয়৷ এছাড়া উত্তর কোরিয়া থেকে স্কুড মিসাইল কিনে থাকে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/A. Widak
15 ছবি1 | 15
বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া
নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথ তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে ‘সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্র' ঘোষণা করার এক সপ্তাহের মাথায় এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানো হলো৷ এ ব্যাপারে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমরা ব্যাপারটা দেখছি৷''
জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘উত্তর কোরিয়ার এমন আচরণ বরদাস্ত করা হবে না৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এক হয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হবে, যাতে শান্তিপূর্ণ সমাধানে আসা যায়৷'' উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে পূর্ণ অবরোধের আহ্বান জানিয়েছে জাপান৷ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট যথারীতি এর নিন্দা জানিয়েছেন৷
এদিকে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এ ব্যাপারে আজ জরুরি বৈঠক ডেকেছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোঘেরিনি একে আন্তর্জাতিক নীতির লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন৷ বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য এটা একটা বড় হুমকি বলে উল্লেখ করেছেন তিনি৷
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ টুইটারে এই পরীক্ষার নিন্দা জানিয়ে পিয়ংইয়ং-এর উপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন৷
যে দেশে জিন্স ‘হারাম’, গাঁজা ‘হালাল’
দেশটি এতটাই যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী যে সেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবেই ‘জিন্স’-এর পোশাক পরা নিষিদ্ধ৷ অথচ অন্যদিকে যে যত খুশি ‘গাঁজা’ সেবন করতে পারবেন! এমন দেশ উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে জানুন মজার কিছু তথ্য৷
ছবি: Getty Images/C. Chu
ইচ্ছে মতো চুল কাটা মানা
হ্যাঁ, উত্তর কোরিয়ায় যার যেমন খুশি চুল কাটবেন সে উপায় নেই৷ স্বৈরশাসক কিম জং উন ক্ষমতায় আসার পর পরই ঠিক করে দিয়েছেন, দেশের সব পুরুষকে বিশেষ ১০টি আর মেয়েদের ১৮টি হেয়ার স্টাইলের মধ্যেই যে কোনো একটি বেছে নিতে হবে৷ আর কিম জং উন যেভাবে চুল কাটান সেভাবে দেশের আর কেউ কাটাতে পারবেন না৷
ছবি: picture alliance/AP Images
যে দেশে ‘স্বর্গ’ আছে...
উত্তর কোরিয়ার সব মানুষ মন থেকে নিজের দেশকে ‘স্বর্গ’ না বললেও, যাঁরা গাঁজা সেবন করেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বলেন৷ এ দেশে যে যত খুশি গাঁজা খেতে পারেন৷ গাঁজা সেখানে কোনো নিষিদ্ধ মাদক নয়৷ সুতরাং যে যত খুশি গাঁজা খেলে কোনো সমস্যাই নেই৷
ছবি: picture alliance/Photopqr/l'Alsace
সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম
বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামটি কিন্তু উত্তর কোরিয়ায়৷ নাম রুনগ্রাদো মে ডে স্টেডিয়াম৷ ১৯৮৯ সালের পহেলা মে স্টেডিয়ামটির কাজ শেষ হয়েছিল বলে নামের সঙ্গেও জুড়ে দেয়া হয়েছে ‘মে দিবস’৷ ১ লক্ষ ৫০ হাজার দর্শকের আসন আছে স্টেডিয়ামটিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জন্মদিনেও বাধা...
উত্তর কোরিয়ায় বছরের বিশেষ দু’টি দিনে কেউ জন্ম নিলে সেই দিনে জন্মদিন উদযাপন করা যাবে না৷ উত্তর কোরিয়া সাবেক দুই শাসক কিম ই সুং এবং কিম জং ইল মৃত্যুবরণ করেছিলেন বলে সেই দিনগুলোতে দেশের কোনো সাধারণ মানুষের জন্মদিন উদযাপন রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ৷ এ নিয়ম মানতে গিয়ে প্রায় ১ লাখ মানুষকে ৮ জুলাই বা ১৭ ডিসেম্বরের জন্মদিন উদযাপন করতে হয় একদিন পর, অর্থাৎ ৯ জুলাই এবং ১৮ ডিসেম্বরে৷
ছবি: Fotolia/Jenny Sturm
যুক্তরাষ্ট্র ‘শত্রু’, তাই...
এক সময় উত্তর কোরিয়ায় সমাজতন্ত্র কায়েমের চেষ্টা ছিল, কিন্তু এখন যে ধরনের শাসন চলছে তাকে সমাজতান্ত্রিক বলার উপায় নেই৷ দেশের নাম ‘ডেমোক্র্যাটিক পিপল’স রিপাবলিক অফ কোরিয়া’, অথচ ঘোষিতভাবেই চলছে একদলীয় শাসন৷ তবে সমাজতন্ত্র না থাকলেও উত্তর কোরিয়ার সেই ‘শীতল যুদ্ধের’ সময়কার যুক্তরাষ্ট্রবিরোধিতা ঠিকই আছে৷ যুক্তরাষ্টের মানুষ বেশি জিন্স পরে বলে এ দেশে জিন্স পরা নিষিদ্ধ৷