জার্মানির অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে, ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্ত ‘ভুল ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি'৷ হার্লি ডেভিডসন ও বুর্বনসহ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপের চিন্তা করছে ব্রাসেলস৷
বিজ্ঞাপন
স্থগিতাদেশের সময় অতিক্রম হওয়ায় শুক্রবার থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ক্যানাডা ও মেক্সিকো থেকে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আমদানি শুল্ক কার্যকর হলো যুক্তরাষ্ট্রে৷ ইস্পাতের ওপর ২৫ শতাংশ ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর এই শুল্কের পরিমাণ ১০ শতাংশ৷
বন্ধুর কাছ থেকে এমন আচরণ পেয়ে ক্ষুব্ধ এখন ইউরোপ৷ এর আগে, শুল্ক প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনায় বসা সত্ত্বেও আটলান্টিকের দু'পারের মধ্যে এ বিষয়ে সমঝোতা হয়নি৷
বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব
জার্মানির অর্থমন্ত্রী ওলাফ শলৎস ওয়াশিংটনের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘এটি একটি একপাক্ষিক ভুল সিদ্ধান্ত এবং আমি মনে করি একটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি৷''
ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী ব্রুনো ল্য মের-এর ফল ভালো হবে না বলে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘‘এটা যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষকেই ঠিক করতে হবে যে তারা তাদের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার ইউরোপের সঙ্গে বানিজ্যিক দ্বন্দ্বে যাবে কিনা৷''
ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন যে এই সিদ্ধান্ত অন্যদের ‘প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য করবে'৷
বাণিজ্য যুদ্ধ হলে কী ক্ষতি হবে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতি রূপায়ন করতে আমদানির পথে বাধা সৃষ্টি করছেন৷ সেই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে আন্তর্জাতিক মুক্ত বাণিজ্য কাঠামোর মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ তারই কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো৷
ছবি: Imago/Ralph Peters
বাণিজ্য যুদ্ধের অর্থ কী?
কোনো দেশ কোনো এক বা একাধিক পণ্য আমদানির উপর কর, শুল্ক বা অন্য কোনো আর্থিক বোঝা চাপালে বাকি দেশগুলিও পালটা পদক্ষেপ নিতে পারে৷ বিশেষ করে অ্যামেরিকা ও চীনের মতো বিশাল দেশের সংঘাতের জের ধরে গোটা বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরে বাণিজ্য যুদ্ধের আকার নিতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণে আনা মোটেই সহজ হবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Peter
অতীত দৃষ্টান্ত
১৯৩০-এর দশকে শেষ বাণিজ্য যুদ্ধের জের ধরে ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’ বা বিশাল মন্দা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুবার সে বছর শুল্ক সংক্রান্ত নতুন আইন কার্যকর করার ফলে ২০ হাজারেরও বেশি পণ্যের উপর শুল্ক চাপানো হয়েছিল৷ ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য দাবি করছে যে, এ ক্ষেত্রে শুধু নির্দিষ্ট কিছু পণ্য ও দেশের জন্য শুল্ক চাপানো হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/Library of Congress
ট্রাম্প কেন বাণিজ্য যুদ্ধের পথে এগোচ্ছেন?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রতিকূল বাণিজ্য ঘাটতির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই তোপ দেগে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তবে সমালোচকদের মতে, এমন সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ফলে তিনি অ্যামেরিকার সার্বিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের স্বার্থ দেখতে পাচ্ছেন না৷ কারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কাঠামো তোলপাড় হয়ে গেলে আখেরে অ্যামেরিকারই ক্ষতি হবে৷ ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাবে, রপ্তানি কমে যাবে এবং প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
ছবি: picture-alliance/K. Ohlenschläger
পালটা পদক্ষেপ
ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করলে বাকি দেশগুলিও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না৷ ক্যানাডা, মেক্সিকো, চীন, জাপান, ব্রাজিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অ্যামেরিকার বিরুদ্ধেও পালটা পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এমন বাণিজ্য যুদ্ধ এড়াতে দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়ার চেয়ে বহুপাক্ষিক সমাধানসূত্রের পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
অ্যামেরিকার ক্ষতি
সব সাবধানবাণী উপেক্ষা করে ট্রাম্প যদি সত্যি আমদানির উপর বাড়তি শুল্ক চাপান, তার পরিণতি অ্যামেরিকার জন্যও ইতিবাচক হবে না৷ যেমন, ইস্পাত আমদানির উপর শুল্ক চাপালে অ্যামেরিকার বাজারেও তার মূল্য বেড়ে যাবে৷ তার ফলে মার্কিন ইস্পাত কোম্পানিগুলির লাভ হলেও ক্রেতাদের বাড়তি মূল্য গুনতে হবে৷ যে কোম্পানিগুলি ইস্পাত ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করে, তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে৷
ছবি: picture alliance/dpa/R. Weihrauch
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
অ্যামেরিকায় ইস্পাত রপ্তানি করতে না পারলে চীন ইউরোপের বাজারে তা আরও সস্তায় বিক্রি করার চেষ্টা করতে পারে৷ স্বাভাবিক বাণিজ্য ব্যাহত হলে এমন আরও দৃষ্টান্ত দেখা যেতে পারে৷ সামগ্রিকভাবে এমন অস্বাভাবিক প্রবণতা নানাভাবে সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ সাম্প্রতিক নানা সংকট কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি যখন সবে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে, তখন নতুন করে এমন বিপদ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/XinHua
আইনি লড়াই
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংগঠন ডাব্লিইউটিও সাম্প্রতিক কালে বিশ্ব বাণিজ্যের বিধিনিয়ম স্থির করে এসেছে এবং বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করেছে৷ বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হলে মামলার সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে৷ সব পক্ষ ডাব্লিইউটিও-র রায় না মানলে এই সংগঠন অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়তে পারে৷ এমন কাঠামো তার কার্যকারিতা হারালে ভবিষ্যতে সেই ক্ষতি পূরণ করা সহজ হবে না৷
ছবি: Reuters/N. Kharmis
7 ছবি1 | 7
ট্রাম্পের ‘সবচেয়ে প্রিয়' ইউরোপীয় বন্ধু ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বাবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ যুদ্ধ ডেকে আনে৷ ৩০-এর দশকে এমনটিই ঘটেছিল৷''
শেষ মুহূর্তেও অপেক্ষা
ইইউ কর্মকর্তারা শেষ মুহূর্তেও কোনো সুরাহার অপেক্ষা করেছেন৷ তাঁরা আশা করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ইউরোপকে এই শুল্কের বাইরে রাখবে৷ কিন্তু সব আশায় পানি ঢেলে দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রী, যখন তিনি বললেন যে, ইইউ, ক্যানাডা ও মেক্সিকোকে আর কোনো ছাড় দেয়া হবে না৷
এখন প্রশ্ন হলো ইইউ কী করবে?
ব্রাসেলস এরই মধ্যে বিখ্যাত ব্র্যান্ড হার্লি ডেভিডসন ও বুর্বন হুইস্কির ওপর শুল্ক আরোপের বিষয়ে চিন্তা শুরু করেছে৷ তবে ইউরোপীয়ান কমিশন এ বিষয়ে কী চিন্তা করছে তা জানা যায়নি৷
তবে ইইউ, ক্যানাডা ও মেক্সিকো বিষয়টি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ডাব্লিউটিও-র দ্বারস্থ হবে বলেই মনে হচ্ছে৷