উত্তর কোরিয়ার একটি প্রতিনিধিদল বলেছে যে, পিয়ংইয়াং কোরিয়া উপদ্বীপে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় ‘খুবই আগ্রহী’৷ দক্ষিণ কোরিয়ায় শীতকালীন অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সমাপ্তিপর্বে এ খবর জানা যায়৷
বিজ্ঞাপন
পিয়ংচাং-এর শীতকালীন অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শেষ হয় গত রবিবার৷ তার আগেই কানাঘুষো শোনা যায় যে, দুই কোরিয়াকে আরো কাছাকাছি আনার উদ্যোগ অলিম্পিকের পরেও বজায় রাখার প্রচেষ্টা করা হবে৷
বর্ণাঢ্য সমাপ্তি অনুষ্ঠানে উত্তর কোরিয়ার উচ্চপদস্থ জেনারেল কিম ইয়ং চল যেখানে বসেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা ইভানকাসহ মার্কিন প্রতিনিধিদল তার মাত্র কয়েক আসন দূরে আসন গ্রহণ করে৷ জেনারেল চল অতীতে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর উপর একাধিক আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে৷
ইতিমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি ভবন, তথাকথিত ‘ব্লু হাউস’ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে, জেনারেল চল-এর প্রতিনিধিদল বলেছে, উত্তর কোরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ‘খুবই আগ্রহী’৷
উত্তর কোরিয়াকে কাবু করতে জাতিসংঘের কিছু ‘অস্ত্র’
পারমাণবিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কোনো তোয়াক্কাই করছে না উত্তর কোরিয়া৷ দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান রয়েছে তাই জাতিসংঘেরও৷ দেখা যাক, কত রকমের নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকা পড়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কয়লা এবং লোহার ওপর নিষেধাজ্ঞা
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে উত্তর কোরিয়ার ওপর সব ধরনের কয়লা, লোহা এবং লোহার আকরিক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ওপরের ছবিতে উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন ড্যানডং শহরের লিয়াওনিং গ্রিনল্যান্ড এনার্জি কয়লাখনি৷ খনিটি অবশ্য চীনের৷
ছবি: Reuters/B. Goh
মুদ্রায় নিষেধাজ্ঞা
বিদেশে কোনো ব্যাংক খুলতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷ এমনকি জাতিসংঘের কোনো সদস্য দেশ যাতে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য লাভজনক কোনো আর্থিক লেনদেন বা চুক্তিতে না যায়, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নাগরিক যদি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এমন কোনো ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপন করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে অবশ্যই ওই নাগরিককে বহিষ্কার করতে হবে৷
ছবি: Mark Ralston/AFP/Getty Images
জাহাজ চলাচল
ছবির এই জাহাজটি উত্তর কোরিয়ার৷ ২০১৬ সালের মার্চে ফিলিপাইন্সে এটিকে থামানো হয়৷ উত্তর কোরিয়ার কোনো জাহাজে পণ্য পরিবহনও নিষিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ৷ এমনকি পিয়ংইয়ংযে নিজেদের জাহাজে অন্য দেশের পতাকা লাগিয়ে কাজ চালাবে, সেই পথও বন্ধ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Dumaguing
আকাশেও নিষেধাজ্ঞা
উত্তর কোরিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন্স ‘এয়ার কোরিও’ অবশ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়৷ এখনো তাদের বিমান রাশিয়া আর চীনে যাওয়া-আসা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
জ্বালানিতেও...
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পর থেকে জ্বালানি আমদানিতেও কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় উত্তর কোরিয়া৷ ফলে জনজীবনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে বছরে মাত্র ৪০ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারে উত্তর কোরিয়া৷ তাই সে দেশের নাগরিকদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ডিজেল এবং কেরোসিন পেয়েই খুশি থাকতে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং স্থাবর সম্পত্তি
উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকদের ওপরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ জার্মানিসহ এখনো হাতে গোনা যে কয়েকটি দেশে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস আছে, সেখানে উত্তর কোরীয় কূটনীতিকরা চাইলেও একটার বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না৷ দেশের বাইরে দূতাবাস ছাড়া আর কোনো কাজে ঘর ভাড়াও করতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: picture alliance/dpa/S.Schaubitzer
সামরিক প্রশিক্ষণ
কোনো দেশ উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বা আধা সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে না৷ এ বিষয়েও রয়েছে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কিম জং উনের মূর্তি
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের আবক্ষ মূর্তি দেখতে বা পছন্দের কোনো জায়গায় রাখতে চান? তা জাতিসংঘের একেবারেই কাম্য নয়৷ তাই উত্তর কোরিয়ার ওপর যে কোনো ধরনের মূর্তি বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷
ছবি: picture alliance/dpa/robertharding
8 ছবি1 | 8
দক্ষিণ কোরিয়ার ইওনহাপ সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন-এর সঙ্গে একটি সাক্ষাতে এই মন্তব্য করা হয় ও বলা হয় যে, উত্তর কোরিয়ার সৌল ছাড়া ওয়াশিংটনের সঙ্গেও সম্পর্কের উন্নতি ঘটানো উচিত৷
চল ও মুনের সাক্ষাৎ সম্পর্কে ব্লু হাউসের মুখপাত্র কিম অয়-কিওম বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট মুন উল্লেখ করেন যে, দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্কের উন্নতি ও কোরিয়া উপদ্বীপ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রসঙ্গের বুনিয়াদি সমাধানের জন্য যথাশীঘ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সংলাপ সংঘটিত হওয়া প্রয়োজন৷’’
পারমাণবিক প্রসঙ্গটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ
কোরিয়া উপদ্বীপ সংক্রান্ত প্রসঙ্গাবলীর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার এক কর্মকর্তা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সমরাস্ত্র কর্মসূচি ও কোরিয়া উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্রবর্জিত এলাকা করার কথা বলেন৷
রবিবার শীতকালীন অলিম্পিকের সমাপ্তি অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে চল ও মুনের মধ্যে সাক্ষাৎটি সংঘটিত হয়৷ অলিম্পিক চলাকালীন এটা ছিল উত্তর কোরিয়া প্রশাসনের উচ্চপদস্থ সদস্যদের সঙ্গে মুনের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ – যার মধ্যে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের ছোটবোন কিম ইও জং-ও ছিলেন৷
এশিয়ায় ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্য দক্ষিণ কোরিয়া৷ সেখানকার আটটি দর্শনীয় স্থান নিয়ে সাজানো হয়েছে এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/Augenklick/Kunz
সৌল
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী৷ ছবিতে ‘হাই-লাইন-পার্ক সৌলো ৭০১৭’ দেখা যাচ্ছে৷ একটি অব্যবহৃত ওভারপাসকে হাঁটার রাস্তায় পরিণত করা হয়েছে৷ সেখানে আরও আছে রেস্তোরাঁ, ক্যাফে আর প্রদর্শনীর স্থান৷ এটি ছাড়াও সৌলে ঐতিহাসিক অনেক কিছু দেখার আছে৷ যেমন, হ্যানোক এলাকায় গেলে জোসন আমলের ঐতিহ্যবাহী ঘরবাড়ির দেখা মেলে৷
ছবি: picture alliance/Yonhap
বুলগুকসা টেম্পল
গিওংজু শহরের এই বৌদ্ধমন্দির কমপ্লেক্সটি ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়৷ সেখানে পর্যটকরা চাইলে ভিক্ষুদের সঙ্গে কিছুদিন থেকে মেডিটেশনে অংশ নিতে পারেন৷
ছবি: picture alliance/robertharding/M. Runkel
পুসান
রাজধানী সৌলের পর বন্দরনগরী পুসানেই সবচেয়ে বেশি মানুষের বাস৷ সেখানকার সৈকত আর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এশিয়ার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয়৷
ছবি: picture alliance/Yonhap
সেওরাকসান ন্যাশনাল পার্ক
সারা বছরই সেখানে পর্যটকরা ঘুরতে যান৷ তবে শরৎকালে সেই পার্ক এমন রঙ ধারণ করে, যা দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে অন্যতম সুন্দর বলে গণ্য৷ ছোট ছোট পাহাড়ের মাঝে লাল আর হলুদ বনের সৌন্দর্য আগতদের মুগ্ধ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Gilbert
ডিমিলিটারাইজড জোন
যাঁরা উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাস জানতে আগ্রহী, তাঁরা দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত পানমুনজম এলাকায় যেতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Kalker
জেজু দ্বীপ
দক্ষিণ কোরিয়ার উপকূলের কাছে অনেকগুলো দ্বীপ আছে৷ এরমধ্যে জেজু একটি৷ ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকায় রয়েছে এই আগ্নেয় দ্বীপের নাম৷ সেখানে গেলে ‘হেনিয়ো’দের দেখা মিলবে৷ তাঁরা হচ্ছেন নারী ডাইভার৷ কোনো যন্ত্রের সহায়তা ছাড়াই হেনিয়োরা সাগরতল থেকে শামুক, সাগরের শজারু, শেলফিশ সংগ্রহ করেন৷
ছবি: picture alliance/Yonhap
হোংদে ফ্রি মার্কেট
সৌলের এই মার্কেটে প্রত্যেক সপ্তাহান্তে চারুকলার শিক্ষার্থীরা তাঁদের তৈরি শিল্পকর্ম বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন৷ আর যাঁরা ডিপার্টমেন্ট স্টোরের ভক্ত তাঁরা চাইলে পুসানের শিনসেগে সেন্টারে যেতে পারে৷ ১৪ তলা বিশিষ্ট এই মার্কেট বিশ্বের অন্যতম বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোর৷
জিমজিলবাং নামে পরিচিত এসব ঐতিহ্যবাহী গোসল ঘর অনেক কোরীয়র কাছে বেশ জনপ্রিয়৷ সেখানে গিয়ে তাঁরা সাওনা, স্টিম বাথ ইত্যাদি করে থাকেন৷ এছাড়া আছে মাসাজ সুবিধা৷ চাইলে কেউ সেখানে সারা রাত থাকতেও পারেন৷
ছবি: Wikipedia/Korean Culture and Information Service
8 ছবি1 | 8
ট্রাম্প প্রশাসন নিশ্চিত করে কিছু বলছে না
পিয়ংইয়াং যে নিরস্ত্রীকরণ সম্পর্কে আন্তরিক, উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক প্রস্তাবের অর্থ তাই কিনা, তা অপেক্ষা করে দেখা হবে বলে হোয়াইট হাউস রবিবার জানায়৷
‘‘পিয়ংইয়াং আলোচনায় আগ্রহী – আজকের এই বার্তা নিরস্ত্রীকরণের পথে প্রথম পদক্ষেপের আভাস দিচ্ছে কিনা, সময়ের অগ্রগতিতে আমরা তা দেখবো’’ বলে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারা স্যান্ডার্স একটি লিখিত বিবৃতিতে মন্তব্য করেন৷ ‘‘ইত্যবসরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বহির্বিশ্বকে পূর্বাপর স্পষ্ট করে দিতে হবে যে, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিগুলি থেকে কোনো ফললাভ হবে না৷’’
স্যান্ডার্স স্বয়ং পিয়ংচাংয়ের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রতিনিধিদলে ছিলেন৷ তিনি আরো বলেন যে, উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক সমরাস্ত্র কর্মসূচি পরিত্যাগ না করা অবধি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর ‘সর্বাধিক চাপ অভিযান’ চালিয়ে যাবেন৷
শুক্রবার ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা করে যে, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা লঙ্ঘণ করছে, এমন একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ চীন ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপে উষ্মা প্রকাশ করে ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনের পরিবর্তে তাদের স্বকীয় নিয়মকানুন প্রয়োগের অভিযোগ করে৷