দুই শিক্ষার্থীর হামলায় এক শিক্ষকসহ ১৩ জন নিহত হয়েছিল৷ এরপর স্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা হয়েছিল৷ কিন্তু সরকারি ইমিউনিটির কারণ দেখিয়ে প্রায় সবগুলোই খারিজ করে দেয়া হয়৷ শুধু পুলিশের বিরুদ্ধে নিহত শিক্ষকের মেয়ের করা মামলাটি চলেছিল৷

শিক্ষকের মেয়ের অভিযোগ ছিল, হামলাকারীদের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরও পুলিশ তার বাবার চিকিৎসা করতে চিকিৎসকদের সেখানে যেতে দেয়নি৷ মামলাটি সাড়ে ১৩ কোটি টাকায় রফা হয়েছিল৷ নিহতদের পরিবারেরাও দুই হামলাকারীর পরিবার ও হামলাকারীদের বন্দুক পেতে সহায়তা করা দুই ব্যক্তির সঙ্গে ২২ কোটি ৪০ লাখ টাকায় আপস করেছিল৷

সাবেক শিক্ষার্থী জেফ ওয়াইজের হামলায় সাতজন প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ আহত হয়েছিলেন কয়েকজন৷ হতাহতদের পরিবার স্থানীয় স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নয় কোটি ও স্কুলে সংকটকালীন সমস্যা মোকাবিলার পরিকল্পনা তৈরি করা একটি কোম্পানির সঙ্গে ১৩ কোটি টাকায় আপস করেছিল৷

শিক্ষার্থী সেয়ুং-হুইয়ের হামলায় ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন৷ আহত ২৩ জন৷ হতাহতদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবার স্কুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল৷ কিন্তু ২০১৩ সালে ভার্জিনিয়া সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন যে, তৃতীয় পক্ষের কার্যক্রম সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করার আইনি দায়িত্ব স্কুলের নয়৷

অ্যাডাম লানজার গুলিতে ছয় ও সাত বছর বয়সি ২০ জন শিশু ও ছয়জন স্টাফ প্রাণ হারান৷ নিহত পাঁচ শিশু ও চার স্টাফের পরিবার হামলায় ব্যবহার করা বুশমাস্টার এআর-১৫ রাইফেল প্রস্তুতকারক রেমিংটন আর্মসের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল৷ পরে সেটি সাড়ে ছয়শ কোটি টাকায় রফা হয়েছিল৷ যুক্তরাষ্ট্রে গুলির ঘটনায় কোনো অস্ত্র প্রস্তুতকারকের আপসে যাওয়ার এটিই প্রথম ঘটনা৷

সাবেক শিক্ষার্থী নিকোলাস ক্রুজের হামলায় তিনজন স্টাফ ও ১৪ জন শিক্ষার্থী প্রাণ হারান৷ হামলার সময় স্কট পেটারসন নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা স্কুলে দায়িত্বরত অবস্থায় ছিলেন৷ কিন্তু গোলাগুলি চলার সময় তিনি বাইরে থাকায় ব্যাপক সমালোচিত হন৷ পরে তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার মামলা করা হয়৷ এ বছরের শেষে বিচার শুরু হওয়ার কথা৷

শিক্ষার্থী দিমিত্রিয়স প্যাগুর্টজিসের শটগান ও রিভলবার দিয়ে চালানো হামলায় ১০ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হন৷ নিহত দুইজনের পরিবার হামলাকারীর পরিবারের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিরাপদে না রাখার অভিযোগে মামলা করেছে৷ এছাড়া বয়স পরীক্ষা করে না দেখে অস্ত্র বিক্রি করায় অস্ত্র বিক্রির অনলাইন পোর্টাল লাকিগানার ডটকমের বিরুদ্ধেও মামলা করেছে নিহত কয়েকজনের পরিবার৷ দুটি মামলারই প্রক্রিয়া শুরুর অপেক্ষায় আছে৷

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের আর্লিংটন শহরের টিম্বারভিউ হাই স্কুলে বুধবার গুলির ঘটনা ঘটেছে৷ ঐ স্কুলেরই ছাত্র ১৮ বছর বয়সি টিমোথি জর্জ সিম্পকিনস এই ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যায়৷ কয়েক ঘণ্টা পর তাকে আটক করা হয়৷

গুলির ঘটনায় চারজন আহত হয়েছেন৷ এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর৷ আহত চারজনের মধ্যে তিনজন ঐ স্কুলের শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে পুলিশ৷

আর্লিংটনের সহকারী পুলিশ প্রধান কেভিন কোলবাই জানিয়েছে, শ্রেণিকক্ষে ঝগড়া থেকে গুলির সূত্রপাত৷ ‘‘এটা কোনো সাধারণ সহিংস ঘটনা ছিল না৷’’

আটক ছাত্র সিম্পকিনসের পরিবারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, স্কুলে সিম্পকিনসকে বুলি বা উত্যক্ত করা হয়েছে৷ এমনকি দুবার তার জিনিস চুরি করা হয়েছে৷ ‘‘সে যে কাজটা করেছে তা ঠিক করেনি৷ তবে সে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেছ,’’ বলে জানান তিনি৷

সিম্পকিনস বন্দুক কীভাবে পেল তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে৷

২০১৮ সালের মে মাসে হিউস্টনের কাছে সান্তা ফে হাই স্কুলে ১৭ বছর বয়সি এক কিশোর শটগান ও পিস্তল দিয়ে গুলি চালালে ১০ জন মারা যান৷ এদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী ছিল৷

ওয়াশিংটন পোস্টের হিসাব বলছে, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ২৯টি স্কুলে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে৷ ২০১৯ সালে সংখ্যাটি ছিল ২৭৷ পোস্টের হিসাবে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলির ঘটনা ধরা হয়নি৷

২০১৮ সালে ফ্লরিডার পার্কল্যান্ডের এক হাই স্কুলে গুলিতে ১৭ জন নিহত হয়েছিলেন৷ হামলাকারী ঐ স্কুলেরই সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন৷