বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের কাছে প্রশ্ন ছিল, অ্যামেরিকা বিএনপিকে গাছে তুলে মই সরিয়ে নিয়েছে কিনা। জবাবে তিনি ডয়চে ভেলেকে এই উত্তর দেন।
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায় টক শো এর এই পর্বের আলোচনার বিষয় ছিল 'জাতীয় নির্বাচন ও অসহযোগ'৷ অনুষ্ঠানটিতে অতিথি হিসেবে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান৷
খালেদ মুহিউদ্দীন প্রশ্ন করেন, বিএনপি কি আশা করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বা ইউরোপের কারো কথায় একটি অন্য নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে পারবে? বিদেশিদের উপর কি বিএনপি বেশি নির্ভর করেছিল? এ প্রশ্নের উত্তরে মঈন খান বলেন, ‘‘২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র যখন এক ব্যক্তি বা ব়্যাবের উপরে স্যাংশন দিয়েছিলো। তখন কি বিএনপিকে জিজ্ঞাসা করে দিয়েছিলো?‘‘ বিএনপি সে সিদ্ধান্তে খুশি হয়েছিল কি, ফের জানতে চান ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান। মঈন খান বলেন, ‘‘এটা ভুল ধারণা। বিএনপির এখানে খুশি হওয়ার বা ব্যাজার হওয়ার কারণ নেই। বিএনপি সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্টের কিছু নেই ।‘‘
ড. মঈন খান বলেন, ‘‘আজকে বাংলাদেশে বিএনপি বা ৫৯টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। সারা বিশ্বের যারা ইন্ডিপেন্ডেন্ট অবজারভার, যারা জার্নালিস্ট মানবাধিকার কর্মী, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা, পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশ, জাতিসংঘের বাইরে গিয়েও যারা মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এ ধরনের সংস্থাগুলো প্রত্যএকে বলেছে বাংলাদেশের এই সরকার একদলীয় পদ্ধতিতে গণতন্ত্র হরণ করেছে।‘‘
তার দাবি, এই অভিযোগ শুধু বিএনপি করছে না, এই অভিযোগ সারা বিশ্ব থেকে আসছে।
বর্জনের আন্দোলন প্রসঙ্গে ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ''আমরা নির্বাচন বর্জন করিনি। তামাশার নির্বাচন বর্জন করেছি। নির্বাচনের নামে প্রহসন করছে সরকার। এভাগে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া স্থিতিশীল হতে পারে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে রক্তপাতের মাধ্যমে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র মৃত।''
তার বক্তব্য, দিন এমন ভাবে বদলে গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা ১০০ গুণ বেড়ে গিয়েছে।
খালেদ জানতে চান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নেতিবাচক হিসাবে দেখানোর জন্য কি বিএনপি দায়ী কিনা। জবাবে ড. মঈন খান বলেন, ''মাথা ব্যথা হলে মাথা কাটা যাবে না। বিএনপি ভুল করলে সেটা তারা বুঝেছে। তাই বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা নেই, তেমন না।''
খালেদ ২৮ অক্টোবরের প্রসঙ্গ, ২০১৫ সালে গাড়ি পোড়ানোর প্রসঙ্গের কথা তুললে বিএনপি নেতা বলেন, ''অভিযোগ তো থাকতেই পারে। আওয়ামী লীগের মতো বাকশালী নই। বাংলাদেশে তৃণমূলস্তরে গিয়ে ২৮ অক্টোবরের কথা জিজ্ঞাসা করুন। এটা বিএনপি করেছে নাকি বিএনপির আন্দোলন স্তব্ধ করে দিতে সরকার সংগঠিত করেছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে।'' তার অভিযোগ, সরকারই দেশে বিদেশে বিএনপিকে সন্ত্রাসী দলহিসাবে দেখাতে পরিকল্পিতভাবে এসব করছে।
বিদেশিদের থেকে বিএনপি কী আশা করে, জানতে চান খালেদ মুহিউদ্দীন। মঈন খানের দাবি, তাদের কাছ থেকে সরকারই আশা করে, বিএনপি নয়। বাইরের শক্তি এসে আওয়ামী লীগকে বহাল রাখ, সরকার সেটা চায়।
বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাস
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১১ বার সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ছবিঘরে থাকছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য৷
ছবি: Anupam Nath/AP/picture alliance
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ সে সময় ৩০০ আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়৷ আর সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ছিল ১৫টি৷ ঐ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ৭ এপ্রিল, তেজগাঁওয়ে অবস্থিত তখনকার জাতীয় সংসদ ভবনে৷ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টিতে জয়লাভ করে৷ বঙ্গবন্ধু সে সময় ঢাকা-১২ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন৷
ছবি: AP
দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন, প্রথম নারী সাংসদ
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ হয়৷ সেবার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ছিল ৩০টি৷ তবে ঐ সংসদেই প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ ভোটে একজন নারী সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ খুলনা-১৪ থেকে নির্বাচিত হন সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ৷ প্রথম অধিবেশন বসেছিল ২ এপ্রিল৷ নির্বাচনে মাত্র মাস ছয়েক আগে প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি ২০৭টি আর আওয়ামী লীগ ৫৪টি আসন পেয়েছিল৷
ছবি: imago stock&people
তৃতীয় সংসদ নির্বাচন
ভোটগ্রহণ হয় ১৯৮৬ সালের ৭ মে৷ জাতীয় পার্টি ১৫৩টি, আওয়ামী লীগ ৭৬টি আর জামায়াতে ইসলামী ১০টি আসন পায়৷ বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করেছিল৷
ছবি: http://www.parliament.gov.bd
চতুর্থ সংসদ নির্বাচন
১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ আওয়ামী লীগ, বিএনপি সহ বেশ কয়েকটি দল এই নির্বাচন বর্জন করেছিল৷ জাতীয় পার্টি আসন পেয়েছিল ২৫১টি৷ সংরক্ষিত মহিলা আসন সংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এই সংসদে মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩০০টি৷
ছবি: http://www.parliament.gov.bd
পঞ্চম সংসদ নির্বাচন
তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি, আওয়ামী লীগ ৮৮টি আর জাতীয় পার্টি ৩৫টিতে জয়লাভ করে৷ এছাড়া নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে ৩০ জন মহিলাকে সাংসদ নির্বাচিত করা হয়৷ অবশ্য তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি সংবিধানের অংশ ছিল না৷ পরের সংসদে সেই বিল পাস হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images
ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি৷ আওয়ামী লীগ সহ অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করেছিল৷ ফলে মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল মাত্র ২১ শতাংশ৷ ৩০০টি আসনের মধ্যে বিএনপি ২৭৮টিতে জয়লাভ করেছিল৷ মাত্র চার কার্যদিবসে সংসদ বসার পর তা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়৷ এই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয়৷
ছবি: picture-alliance/Dinodia Photo
সপ্তম সংসদ নির্বাচন
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬, বিএনপি ১১৬ ও জাতীয় পার্টি ৩২টি আসনে জয়লাভ করে৷ পরে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ৷
ছবি: Reuters
অষ্টম সংসদ নির্বাচন
ভোটগ্রহণ হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর৷ অষ্টম সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০০টি৷ কারণ সংরক্ষিত মহিলা আসন সংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় শুরুতে কোনো মহিলা আসন ছিল না৷ পরে আইন করে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ এ উন্নীত করা হয়৷ নির্বাচনে বিএনপি ১৯৩ আর আওয়ামী লীগ ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছিল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
নবম সংসদ নির্বাচন
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত সবশেষ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর৷ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার পেয়েছিল ২৬৩টি আসন৷ আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট পায় ৩৩টি আসন৷
ছবি: picture-alliance/A.A./N. Kumar
দশম সংসদ নির্বাচন
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি৷ ফলে ১৫৩ জন সাংসদ কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই সাংসদ নির্বাচিত হন৷
ছবি: DW/M. Mamun
একাদশ সংসদ নির্বাচন
বাংলাদেশের সবশেষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালে৷ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হওয়া এই নির্বাচনে সংসদের ৩০০ আসনের ২৮৮টিই পেয়েছিল ক্ষমতাসীন দল ও মহাজোট৷ সেই নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোট পড়েছে পাঁচ ভাগের চার ভাগ৷ ঘটেছে নজিরবিহীন ঘটনাও৷ ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে৷ প্রায় আট হাজার কেন্দ্রে পড়েছে ৯০ শতাংশের বেশি৷