আইএস কারো শিরশ্ছেদ করলেই ভিডিওতে দেখা যেত৷ হত্যার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে ইসলামি এ জঙ্গি দলের হয়ে হুমকিও দিতেন তিনি৷ তাকে হত্যা করার জন্য সিরিয়ায় অভিযান পরিচালনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ হামলায় কি সত্যিই নিহত হয়েছেন ‘জিহাদি জন'?
বিজ্ঞাপন
২০১৪ সালের আগস্ট মাসে প্রথম দেখা যায় তাকে৷ তখন যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জেমস ফলিকে হত্যা করার ভিডিওচিত্র প্রচার করেছিল আইএস৷ সেই ভিডিওতে একরকম আইএস-এর মুখপাত্রের ভূমিকাতেই ছিলেন ‘জিহাদি জন'৷ এই নামে পরিচিতি পেলেও পঁচিশোর্ধ তরুণের আসল নাম মোহাম্মেদ এমওয়াজি৷ ইরাকি বংশোদ্ভূত এমওয়াজির জন্ম কুয়েতে৷ কুয়েতের নাগরিকত্ব না পাওয়ায় ১৯৯৩ সালে তার পরিবার চলে যায় ব্রিটেনে৷ সেই সূত্রে ব্রিটেনেই বেড়ে উঠেছেন, ইংরেজিটাও শিখেছেন ব্রিটিশ ঘরানার৷ আইএস-এর প্রকাশ করা ভিডিওচিত্রে ব্রিটিশ ঘরাণার ইংরেজিতেই কথা বলতে শোনা গেছে ‘জিহাদি জন'-কে৷
তাকে হত্যা করতে সিরিয়ার রাক্কা অঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি পিটার কুক এ খবর নিশ্চিত করেছেন৷ তবে ‘জিহাদি জন' নিহত হয়েছেন কিনা সে বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি৷ তিনি জানান, হামলার ফলাফল বিশ্লেষণ করা হচ্ছে, বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য শিগগরই প্রকাশ করা হবে৷
তবে যুক্তরাষ্ট এবং ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যমের একটি অংশ ‘জিহাদি জন' নিহত হয়েছেন বলেই ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সামরিক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলাটি ছিল ‘নিখুঁত' আর তাই জিহাদি জন ‘বাষ্পীভূত'৷
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘‘চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা হামলার ফলাফল বিশ্লেষণ করছি৷ তবে প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত ধারণা থেকে বলা যায়, জিহাদি জন আর এই গ্রহে নেই৷''
জিহাদি জন সত্যিই নিহত হয়ে থাকলে এভাবে কোনো ‘জঙ্গিকেও' হত্যা করা ঠিক কিনা এ প্রশ্নে নিশ্চয়ই আলোচনা-সমালোচনা হবে৷ এই প্রশ্ন সামনে রেখেই তাঁর মতামত দিয়েছেন ডয়চে ভেলের গ্রেহেম লুকাস৷
তিনি লিখেছেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ হলেই আইনের আওতায় না এনে কাউকে হত্যা করা যায় কিনা ওয়াশিংটন এবং লন্ডনের তা বলা উচিত৷ ড্রোন সহজলভ্য এবং কার্যকর বলেই তা ব্যবহার করা যাবে – এ কথা বললেই হবে না৷ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে গিয়ে তারা এটা করেছে – এই যুক্তিও যথেষ্ট নয়৷ এ সব সিদ্ধান্ত সরকারের বাইরের মানুষদের নেয়ার বিষয় নয়৷ এভাবে স্পষ্ট, গ্রহণযোগ্য ও আইনি ব্যখ্যা ছাড়া ড্রোনের ব্যবহার চালিয়ে গেলে আইনের শাসন এবং পাশ্চাত্যের গণতন্ত্রের সুনামের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হবে৷ ''
হত্যা, আতঙ্ক আর ঘৃণায় আইএস
শুধু ইরাক আর সিরিয়া নয়, আজকাল বিশ্বের অনেক দেশেই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর তৎপরতার কথা শোনা যায়৷ খেলাফত কায়েমের কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা জঙ্গি সংগঠনটিকে নিয়েই আমাদের আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
তাদের কাছে নারী যেন বাজারের পণ্য
অনেক সময় আটক নারী ও শিশুদের আইএস জঙ্গিরা যৌন দাস হিসেবে ব্যবহার করে৷ সম্প্রতি আইএস-এর কবল থেকে পালিয়ে আসা ৪০ জনেরও বেশি ইয়াজিদি নারীর সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ নারী ও শিশুদের সঙ্গে আইএস-এর এমন আচরণে নিন্দা জানিয়েছেন সবাই৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
সাংবাদিক, এনজিওকর্মী হত্যা করে হুমকি
তাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধ না করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে নিরপরাধ মানুষ হত্যার বেশ কিছু নজীর গড়েছে আইএস৷ বিমান হামলার প্রতিশোধের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন সাংবাদিক, একজন এনজিও কর্মী এবং ব্রিটেনের দু’জন এনজিও কর্মীর শিরশ্ছেদ করেছে তারা৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জেমস ফলিকে৷ গত আগস্টে তাঁর শিরশ্ছেদ করে ভিডিওচিত্র প্রচার করে আইএস৷
ছবি: dapd
মুসলমান হলেও রক্ষা নেই....
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সিরীয় শরণার্থীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন পিটার কাসিগ৷ মুসলমান হিসেবে তাঁর নাম হয়েছিল আব্দুল রহমান কাসিগ৷ গত নভেম্বরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় তাঁকেও হত্যা করে আইএস৷ হত্যার পর ভিডিও চিত্রও প্রকাশ করা হয়৷ নৃশংস এ ঘটনাকে ‘শয়তানের কাজ' হিসেবে বর্ণনা করেন বারাক ওবামা৷
ছবি: picture-alliance/AP/Kassig Family
জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, তারপর...
জাপানের দুই নাগরিককে জিম্মি করে প্রথমে ২০০ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে আইএস৷ মুক্তিপণ না পাওয়ায় হারুনা ইউকাওয়াকে হত্যা করলেও সাংবাদিক কেনজি গোতোকে আটকে রাখে৷ গোতো এবং জর্ডানের বৈমানিক আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে জিম্মি করে তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে জর্ডানে আটক আইএস-এর এক নারী যোদ্ধার মুক্তি দাবি করা হয়৷ তাঁকে মুক্তি না দেয়ায় কেনজি গোতো এবং আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে হত্যা করে আইএস৷
ছবি: Reuters/www.reportr.co via Reuters TV
ইরাকে শুরু....
গত বছরের জুন মাসে ঝটিকা আক্রমণের ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় আইএস৷ সুন্দিদের এই জঙ্গি সংঠনটি তারপর ইরাকের বেশ বড় একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে৷ সিরিয়াতেও দখল করে নেয় কিছু এলাকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বাংলাদেশেও তৎপর আইএস...
আইএস সরাসরি যুদ্ধ করছে ইরাক আর সিরিয়ায়৷ যোদ্ধা সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে৷ জার্মানি, বৃটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে জঙ্গি মনোভাবাপন্নরা গিয়েছে ইরাক, সিরিয়ায়৷ এশিয়ার দেশগুলোতেও তৎপর আইএস৷ বাংলাদেশেও আইএস সমর্থক সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে৷
ছবি: Reuters
জুতার নীচে আইএস!
আইএস-এর প্রতি ঘৃণাও বাড়ছে সারা বিশ্বে৷ ইরাকের স্থপতি আকীল খ্রীফ তো আইএস জঙ্গিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে বেছে নিয়েছেন অভিনব এক উপায়৷ পুরোনো জুতা সংগ্রহ করে তার নীচে জুতার পরিত্যক্ত ফিতা, বোতাম ইত্যাদি দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন আইএস জঙ্গিদের চেহারার আদল৷ আকীল খ্রীফ মনে করেন, আইএস জঙ্গিদের স্থান জুতার নীচেই হওয়া উচিত৷
ছবি: Armend Nimani/AFP/Getty Images
বৈমানিককে পুড়িয়ে মারা এবং জর্ডানের ‘প্রতিশোধ’
আটক নারী যোদ্ধাকে মুক্তি না দেয়ায় জর্ডানের বৈমানিক আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারে আইএস৷ ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নিতেও দেরি করেনি জর্ডান৷ আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে (ওপরের ছবি) হত্যা করে আইএস ভিডিও প্রকাশের পরই তাদের নারী যোদ্ধা সাজিদা আল-রিশোয়াই ও আরেক কর্মীকে ফাঁসিতে ঝোলায় জর্ডান সরকার৷