যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারিকে অগ্রাহ্য করে মধ্যমপাল্লার নতুন একটি ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ইরান৷ ক্ষেপণাস্ত্রটি ২ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে এবং একাধিক পরমাণু ওয়্যারহেড বহনেও সক্ষম৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার তেহরানে অনুষ্ঠিত এক সামরিক কুচকাওয়াজে বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করা হয়৷ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারে ঐ কুচকাওয়াজে ‘খোরামশাহর' নামের এই ক্ষেপণাস্ত্রটিও প্রদর্শিত হয়৷ এ কুচকাওয়াজের কিছুক্ষণ পরই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটির পরীক্ষা চালায় তেহরান৷ ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আমির হাতামি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘যারা আমাদের সাথে হুমকির ভাষাতে কথা বলবে, তাদের জন্য দেশের নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করতে আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে৷ আর এজন্য ইরানের কোন দেশের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হবে না৷''
বলা বাহুল্য, ইরান ঠিক এমন সময়ক্ষেপণাস্ত্রটির পরীক্ষা চালালো, যখন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বিশ্ব নেতারা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে মিলিত হয়েছেন৷ এই অধিবেশনেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী করেছিলেন৷ শুধু তাই নয়, সেসময় ইরানকে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা থেকে বিরত থাকার জন্য আবারো হুঁশিয়ার করেছিলেন ট্রাম্প৷ এমনকি ১৫ই অক্টোবর ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুতে মার্কিন কংগ্রেসে রিপোর্ট করবেন বলেও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প৷
গত আগস্টে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রেখে একটি আইন প্রণয়ন করে৷ একই সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়৷ সে সময়ই হোয়াইট হাউসের এই পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছিল ইরান৷
সামরিক কুচকাওয়াজ চলার সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি আবারও বলেছেন, অ্যামেরিকা না চাইলেও ইরান তাদের প্রতিরক্ষা ও সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাবে৷ এর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘‘২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ইরান যে পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছেছে, তা বাতিল করাই ট্রাম্প প্রশাসনের মূল লক্ষ্য৷ এ জন্য তারা যেকোনো একটি অজুহাত খুঁজছে৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে হওয়া ওই চুক্তিতে ইরানকে ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি কমানো বা বাতিলের কথা বলা হয়নি৷''
বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘‘গত বছর থেকে কার্যকর হওয়া পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে আগামী আট বছর নিউক্লিয়ার ওয়্যারহেড বহনে সক্ষম কোনো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি না চালানোর জন্য বলা হয়েছিল ইরানকে৷''
নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে ইরানের রাজধানীতে একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ অংশ নিচ্ছেন ৭৮টি দেশের কার্টুন আঁকিয়ে, তাঁদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও দু’জন আছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
ছেলেমানুষি
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচার-ব্যবহার কোনো প্রবীণ বা অভিজ্ঞ রাজনীতিকের মতো নয় – কোথায় যেন তার মধ্যে ছেলেমানুষি মিশে আছে৷ কার্টুনের খোকা ট্রাম্প...
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
পিনোকিও
কলোডির গল্পের কাঠের পুতুল পিনোকিও-র নাক সে মিথ্যে কথা বললেই আরো খানিকটা লম্বা হয়ে যেতো৷ ট্রাম্পের লম্বা নাকের অর্থ যদি মিথ্যাভাষণ হয়, তবে সেই নাকের ওপর টুইটারের লোগোর মতো দেখতে ছোট ছোট পাখি বলে দিচ্ছে, ট্রাম্প কিভাবে মিথ্যাভাষণ করে থাকেন৷ কার্টুনিস্টের কল্পনায় একেবারে সামনের পাখিটি আবার নখে বোমা ঝুলিয়ে চলেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
টুইটারের লোগো, কিন্তু মুখটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের
ট্রাম্প যে টুইট করতে ভালোবাসেন, সেটা বিশ্বের বাকি মানুষজনের মতো কার্টুনিস্টদেরও নজর এড়ায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
সীমান্তে প্রাচীর
সারা বিশ্ব থেকে মোট ১,৬১৪টি ব্যঙ্গচিত্র তেহরানের ট্রাম্প কার্টুন প্রতিযোগিতায় এসে পৌঁছেছে – তার মধ্যে দু’টি ব্যঙ্গচিত্র এসেছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে, বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন৷ ট্রাম্প যে মেক্সিকো সীমান্তে প্রাকার নির্মাণ করতে চান, এই প্রসঙ্গটিকে বিষয়বস্তু করেছেন বহু কার্টুনিস্ট৷ ছবিতে কিউবার এক কার্টুনিস্টের পাঠানো ব্যঙ্গচিত্রটি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
মেলানিয়ার মুখে হাসি ফোটানোর পন্থা
ইটালির এক কার্টুনিস্টের ব্যঙ্গচিত্রে ট্রাম্প মেলানিয়ার ঠোঁটের কোণ টেনে ধরে তাঁকে জোর করে হাসাচ্ছেন৷ এখানে দু’জনের সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে: ট্রাম্পদের দাম্পত্য জীবন কি সুখের? ওদিকে মেলানিয়া এ পর্যন্ত ক’বার ট্রাম্পের হাত ঠেলে সরিয়ে দিয়েছেন, তার হিসেব রাখছেন ট্যাবলয়েড সাংবাদিকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
‘অ্যামেরিকা মানে তো আমি!’
কার্টুনটিতে নানা দেশের পতাকা উড়ছে – শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে পতাকার জায়গায় উড়ছেন ট্রাম্প স্বয়ং৷ তেহরানে এর আগেও কার্টুন প্রতিযোগিতা হয়েছে এবং তার সবটাই যে বিতর্ক মুক্ত, এমন নয়: যেমন ইসলামিক স্টেট সন্ত্রাস গোষ্ঠীকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রতিযোগিতা সাহসী বলে প্রশংসা পেলেও, হলোকস্ট নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রতিযোগিতা কতটা সুরুচির পরিচায়ক, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
এ কেমন বৈরি
দেশ বা প্রশাসন হিসেবে ইরান যে ঠিক মানবাধিকারের আলোকবর্তিকা নয়, তা বলা চলে৷ তবে ইরান-মার্কিন সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতিতে কার্টুনিস্টরা ট্রাম্পকে তুলোধোনা করলে তেহরানের আপত্তি না থাকারই কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
বিজয়ী ইরানেরই
জ্বলন্ত মাথার চুল আর একশ’ ডলার নোটের তৈরি সুট পরিহিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যঙ্গচিত্র এঁকে প্রায় দেড় হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের প্রথম পুরস্কার লাভ করেছেন ইরানি কার্টুনিস্ট হাদি আসাদি৷ তাঁকে অভিনন্দন৷